পরাজিত এক তরুনীর গল্প(!)
লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:১৫:০৯ রাত
ঢাকা মেডিকেলের মর্গের বারান্দায় ষ্ট্রেচারে সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটা লাশ পড়ে আছে।হয়তো মর্গের ভিতরে জায়গা সংকুলান হয় নি,তাই।লাশের আকৃতি দেখে মনে হচ্ছে লাশটি কোন মহিলার।
মর্গের এডমিনেষ্ট্রেটর আফনান সাহেব,একজন বয়কে বললেন এটাকে ভিতরে ঢুকাও!একথা বলে তিনি নিজের রুমে ঢুকতে যাবেন,হঠাৎ করে কি যেন দেখে থমকে দাড়ালেন!লাশটির সাদা কাপড় ভেদ করে লাশটির একটি হাত বাহিরে ঝুলে আছে!আর সেই হাতে এখনো ষ্পষ্ট হয়ে আছে ডিজাইন করা গাঢ় মেহেদী রং!
একদম স্তবদ্ধ হয়ে গেলেন আফনান সাহেব।অনেকটা শান্ত নিস্প্রভ হয়ে নিজ চেয়্যারে গিয়ে বসলেন।এরপর বেল টিপে বয়কে ডাক দিলেন।বয়কে বললেন,বারান্দার লাশটার কেস কি?
জবাবে বয় বললেন,স্যার বিষ খাইছিল!নতুন বউ!কি যে হইছিল,একেবারে পুরো বোতল পেটে চালান মারছে।আফনান সাহেব বললেন,ঠিক আছে। তুমি যাও।
মর্গের এডমিনেষ্ট্রটর হবার পর,এবার নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো তাকে লাশ দেখে স্তবদ্ধ হতে হল!এর আগের বার নিজের বোনের লাশ দেখে তিনি এমন শান্ত এবং নিস্তবদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।
আফনান সাহেবরা তিন ভাই এক বোন।বোনের নাম সাফায়ান!আফনান সাহেব সকলের বড়।তাদের বাবাও ঢাকা মেডিকেলের দ্বিতীয় শ্রেনীর কর্মচারী ছিলেন।অনেকটা সেই সুবাদেই আফনান সাহেবের চাকরিটা হয়।
তিনটি ভাইয়ের একটি বোন,স্বাভাবিক কারনে তার প্রতি আদরটাও কিছুটা বেশি ছিল।কিন্তু আমাদের দেশের মধ্যত্তিদের সাধারনত আদর প্রকাশ পায় কড়া শাসনের মাধ্যমে!সবকিছুতেই অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি এবং নিয়ম নিয়তির তোয়াক্কা করতে হয়!
সাফায়ান যখন মেডিকেলের ১ম বর্সে ভর্তি হয়,পরিবারের সকলেই তাকে বিয়ে দেবার জন্য উঠে পড়ে লাগে।সাফায়ান তখন বিয়ের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না।আফনান সাহেব কড়া কন্ঠে বলেছিলেন,জামাই ডাক্তার।বিযের পরও তুমি পড়াশুনা করতে পারবা।সাফায়ান এর প্রচন্ড আপত্তি স্বত্ত্বেও খুব ঘটা করে তার বিয়ে ব্যবস্থা করা হল।
বিয়ে শেষে,বিদায় বেলা!সাফায়ান অস্বাভাবিক শান্ত ছিল।বাঙ্গালী অন্যান্য ললনাদের মতো তার চোখে পানি ছিল না।এরকম দেখে সকলে অবাক হলেও সেটাকে কেউ পাত্তা দেয় নি।
সাফায়ান আফনান সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নেবার সময় তার কানে কানে বলে,ভাইয়া আমার পড়ার টেবিলের ড্রয়ারে একটা ডাইরি রেখেছি।সময় করে পড়ে নিও!
সাফায়ান এর বিয়ের পরের দিন সকাল বেলা ওর শ্বশুর বাড়ি থেকে ফোন আসে।তাদের সবাইকে জলদি ঢাকা মেডিকেলে আসতে বলে।
বাড়ির সবাই মেডিকেলে উপস্থিত হবার আগেই সাফায়ান পরাপারে পাড়ি জমিয়েছে!
বিষয়টা কেমন জানি সকলের কাছে স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হতে লাগল!কিছুক্ষন পর আফনান সাহেব নিজেকে সামলে নিয়ে দ্রুত বাসায় আসলেন।রাতে ক্লান্ত থাকবার কারনে ডায়রিটা পড়া হয় নি।
ডায়রিতে লেখা ছিল,“ভাইয়া আমার জীবনের সব সিদ্ধান্ত তোমরা একাই গ্রহন করলা।আমাকে তোমরা কোনদিন একটা কথাও জিজ্ঞেস করলা না।আমি কিসে পড়তে পছন্দ করি তাও কোনদিন জানতে চাও নি।তোমাদের ইচ্ছা হল,আমাকে ডাক্তার বানানো।তাই সাইন্সে পড়াতে বাধ্য করলে।কিন্তু তোমরা জানতে চাও নিিআমি ডাক্তার হতে চাই কিনা!এবার বিয়ের সিদ্ধান্তটাও তোমরাই নিয়ে নিলা।আমাকে একটা বার জিজ্ঞেস করাবার প্রয়োজনও বোধ করলা না।আমার কোন ইচ্ছারই তোমরা মূল্য দিলা না।তাই জীবনের শেষ সিদ্ধান্তটা অন্ত্যত আমার ইচ্ছায় হোক!ভাল থেকো তোমরা”।
বিষপান করে আত্নহত্যার পর সাফায়ানের বডিটা এভাবেই মর্গের বারান্দায় পড়ে ছিল।সাদা কাপড়ে মোড়ানোর পরও,এ পাশ দিয়ে সাফায়ানের মেহেদী রাঙ্গানো হাতটি দেখা যাচ্ছিল।সে দৃশ্য আজও আফনান সাহেবকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৯ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন