তাওহিদ-শির্ক ও সুন্নাত-বিদা'আত।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৭ মার্চ, ২০১৫, ০৮:৩৯:৩০ রাত
দ্বীন শিখার যেমন শেষ নেই তেমনি আল্লাহর গুনগান করে শেষ করা যায় না।আল্লাহ ও তাঁর রসুল সম্পর্কে যতই ভাবতে থাকি, ততই অন্তর আলোড়িত করে।সেই ছোট গল্পটির মত-'ছোট প্রান ছোট ব্যাথা,ছোট ছোট দু:খ কথা নিতান্তই সহজ সরল।সহস্র বিশৃত রাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি, তারি দু'চারিটি অশ্রু জল। অন্তরে অতৃপ্তি রবে,সাঙ বলে মনে হবে, শেষ হয়ে হইলো না শেষ।তাওহিদকে জানতে ও বুঝতে গিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছি।দৈনন্দিন যে ইবাদতগুলো করছি তাতে দেখছি বড় শির্ক না থাকলেও ছোট শির্ক মনের অজান্তে লুকিয়ে আছে।আর কোটি কোটি আজকের মুসলিম তারাতো বিভক্ত হয়ে তাদের গলায় রশি বেধে সে রশি লাগিয়ে দিয়েছে অসংখ্য দলের নেতা ও বিভিন্ন ত্বরিকতের পীর বুজুর্গের হাতে আর তারা তাদের টেনে নিয়ে যাচ্ছে জাহান্নামের দিকে। 'ইসলাম নিয়ে জন্মেছি আমরা মুসলমান সম্প্রদায় কিন্তু যিনি এই ইসলামের ধর্মের মালিক তার আদেশ নিষেধ মেনে আমরা চলছি না।তাঁর রাজ্যে বসবাস করার জন্য সংবিধান(Constitution) রুপি আলকুরআন আমাদের জীবনের কাছে নেই এবং সেটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার মত মানুষিকতা ও আমরা সমাজ জীবনে গড়ে তুলছিনা অনেকে।আবার যারা এর জন্য কিছু কাজ করছি তাও নির্ভেজাল নয়।ধর্মের কাজের সাথে অধর্মকে মিলিয়ে তা পালন করছি।ইসলামের জ্ঞান আহরন করতে গেলে প্রথম বিষয়টিই হলো আল্লাহ সম্পর্কে জানা ও বুঝা।তাওহিদ হলো আল্লাহর একত্ব।একজন মুসলিমকে মুসলিম হতে হতে হলে এক আল্লাহর উপর ঈমান আনতে হয় অর্থাৎ তাওহিদের উপর বিশ্বাস স্হাপন করতে হয়।এই বিশ্বাস যদি স্হাপন করা না হয় তাহলে বান্দাহের কোন আমলই আল্লাহর কাছে কবুল হবে না।এই বিষয়টি শরিয়তে এত গুরুত্বপূর্ন যে,অধিকাংশ মুসলমানের অজানা এবং তারা এই বিশ্বাসকে অন্তরে স্হাপন না করেই তাদের দৈনন্দিন হাজারো ইবাদত করে যাচ্ছে।নামাজ ,যাকাত,রোজা,হজ্জ ও জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ এ সমস্ত সব কিছুর উপর হলো তাওহিদের মর্যাদা।যার মধ্যে তাওহিদের মর্যাদা নেই তার কোন ইবাদত কস্মিনকালেও গ্রহনযোগ্য হবে না।এ বিষয়টি ইবাদত কারিদের প্রথমে স্পষ্ট করতে হবে।তাওহিদ ও শির্ক সম্পর্কে প্রতিটি মুসলমান কম বেশি জানে যদিও এর গভীর রুপটি সম্পর্কে ধারনা আছে খুব কম মানুষের।তবে এটিকে আমাদের বিশ্লেষন করে বুঝতে হবে আমাদের কাছে কেয়ামত এসে যাওয়ার আগ পর্যন্ত।
এই তাওহিদ শব্দটি আরবি 'ওয়াহেদ' শব্দ থেকে এসেছে।আমরা যারা আরব দেশগুলোতে ভাগ্যক্রমে এসেছি তারা আরবি ভাষার ছোট ছোট শব্দ বা বাক্য সম্পর্কে অবগত আছি।অত্যন্ত দু:খের সাথে বলতে হয় যখন আমাদের ভাইরা ইউরোপ বা ফারিইষ্টে যায় তখন সে দেশের ভাষাটি প্রথমে শিখে নেয়।আর সবার আগে শিখে ইংরেজি।কারন হলো তাকে পার্থিব কিছু অর্জন করতে হবে।কিন্তু যে সব ভাইরা আরব দেশগুলোতে বিশ বা ত্রিশ বছর পার করে দিলেন তাদের ৯৫% আরবি ভাষাটার দিকে নজর দেন না।তবে সামান্য কিছু শিখেন জীবনের তাড়নায় যা দিয়ে তারা কামাই রোজগার করতে পারে।গত বাইশ বছরে এমন অসংখ্য মানুষকে দেখেছি যারা মুসলিম ঘরে জন্মেছে কিন্তু ছহিশুদ্ধ কুরআন পড়তে জানে না।একজন গ্রামীন অশিক্ষিত হলে বলা যায় বেচারা নিরক্ষর।কিন্তু যদি তিনি হন ডাক্তার,ইন-জিনিয়ার বা অন্য কোন ভাল পেশার কর্মকুশলী,তারাও নামাজে ইমামতি করতে গেলে সুরা ক্কেরাত ঠিকমত পড়তে জানে না।অথচ তারা দীর্ঘকাল এই জাজিরাতুল আরবে বসবাস করছে।আমরা মুসলমান এতটুকুই কি আমাদের পরিচয়? না আমাদের ধর্মগ্রন্হ পড়তে ও বুঝতে হবে প্রতিদিনের ধর্মকর্ম পালনের জন্য।যাই হোক,তাওহিদের অর্থ হলো একত্ববাদ।আল্লাহকে এক হিসেবে জানা মানা ও একমাত্র তাঁরই খালেস ইবাদত করা।এই বিষয়ের আলোকে একজন মুসলমান নিজেকে আলোকিত করে তোলে এবং এর বিপরীত আক্কিদাকে নিজের মন মষ্তিষ্ক থেকে দূর করে দেয়। এরই নাম তাওহিদ।আল্লাহ পাক এক এবং তাঁর সাথে কাউকে শরিক করা যাবে না।তাওহিদের বিপরীত হলো শির্ক।শির্ক শব্দটির অর্থ হলো অংশ গ্রহন করা বা করানো।আমরা সাধারনত 'অংশ' ব্যাবহার করার ক্ষেত্রে শরিক শব্দটি ব্যাবহার করে থাকি।যেমন-এই বাড়িটির কতটি শরিক বা কুরবানিতে কতজন শরিক ইত্যাদি।কিন্তু বান্দাহ যখন আল্লাহর ইবাদত করবে তখন তার সাথে কোন শরিক থাকতে পারবে না।এমনকি সামান্য পরিমান ও শরিক থাকবে না।এই দু'টো জিনিসের বিস্তারিত কনসেফ্ট যদি একজন মুসলমান না জানে তাহলে তার ইবাদতে ঢুকে যেতে পারে শির্ক।সেজন্য বান্দাহকে খুব সতর্ক থাকতে হবে তার প্রতিটি ইবাদতে।
আরবিতে একটি প্রবাদ আছে প্রতিটি জিনিস জানতে হলে তার বিপরীত জিনিস জানতে হয়।কারন বিপরীত জিনিস জানলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়।যেমন-সাদা ও কালো দুটো রং।যদি কালো না থাকতো তাহলে সাদার মুল্যায়ন হতো না।তেমনি তাওহিদকে বুঝতে হলে শির্ককে বুঝতে হবে।ওমর রা: বলেছেন,' যে ব্যাক্তি জাহেলিয়াত জানলো না সে ইসলাম বুঝতে সহায়ক নয়।আল্লাহ পাক আমাদের ইসলাম গ্রহনের বা ঈমান নবায়নের জন্য যে কালিমা-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বা আল্লাহ ব্যাতীত সত্য কোন মা'বুদ নেই-এই কালিমা দিয়েছেন,এখানে দুনিয়ার সমস্ত ভ্রান্ত মা'বুদকে অস্বীকার করতে বলেছেন।সেজন্য আলোর গুরুত্ব বুঝতে হলে অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে হয়।আমরা যদি অমাবশ্যা রাতে ভ্রমনে বের হই তাহলে বুঝতে পারি পূর্নিমার রাতের কত কদর।সেজন্য কুরআন ও হাদিসে তাওহিদ ও শির্ককে বিশ্লেষন করা হয়েছে যাতে বান্দারা বুঝে ইবাদত করতে পারে।ঈমানের সাথে তাওহিদ ওতোপ্রোতভাবে জড়িত।কারো ঈমান আছে আর যদি তাওহিদ না থাকে তাহলে সে শির্ক ও কুফরিতে নিমজ্জিত হয়ে যেতে পারে।সুরা আল বাক্কারার ১৬৩ আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন,'তোমাদের উপাস্য এক আল্লাহ,তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং তিনি রাহমান ও রাহিম।' সুরা ইখলাসেও আমরা দেখতে পাই,'আল্লাহ একক ও অদ্বিতীয়।' যখন 'আহাদ'বলা হয় তখন আর কোন দ্বিতীয় বা তৃতীয় আসার সুযোগ নেই। সেজন্য কালিমাকে আমাদের অন্তরের অন্তস্হল থেকে বুঝতে হবে।আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা'বুদ নেই এবং মোহাম্মদ সা: আল্লাহর বান্দাহ ও রসুল।তাহলে বুঝা গেল তাওহিদ ছাড়া ঈমানের কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই।বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠি যারা কাফের ও মুশরিক তারাও আল্লাহকে বিশ্বাস করে এবং বিভিন্ন নামে ডাকে।হিন্দুরা ও আল্লাহকে বিশ্বাস করে এবং ঈশ্বর বলে ডাকে যদিও তাদের আরো অনকে দেবতা আছে কিন্তু ইলাহ বলতে তারা ঈশ্বরকেই বুঝায়।আমাদের মুসলমান সমাজে আল্লাহকে যারা নিরাকার বলে তারা হলো মিথ্যাবাদি।আল্লাহর আকার আছে তবে আমরা জানি না তা কেমন।এই নিরাকার কথাটি এসেছে হিন্দুদের থেকে।তাওহিদ বুঝার জন্য আমরা মোটামুটি তিনটি দিক কে আমাদের সামনে নিয়ে আসতে পারি। প্রথম ও দ্বতীয়টি হলো-তাওহিদে রুবুবিয়াহ ও উলুহিয়া।সমস্ত কাফের মুশরিকরা তাওহিদে রুবুবিয়াহকে মেনে নিয়েছে তার পরও তারা কেন কাফের মুশরিক তা আমাদের বুঝতে হবে।আমরা যদি ইহুদি ,খৃষ্টান ,হিন্দু ,বৌদ্ধ বা অন্যান্য ধর্মাবলম্বিদের প্রশ্ন করি তোমাদের কে সৃষ্টি করেছেন? তখন তারা আল্লাহর কথাই বলে।খৃষ্টানরা ঈসা আ;কে মুল সৃষ্টিকর্তা বলে না।এভাবে সবাই আল্লাহর রুবুবিয়াতকে স্বীকার করে নেয় ও রব মেনে নেয়।কিন্তু রবের অনেকগুলো অর্থ রয়েছে।রব মানে সৃষ্টি কর্তা,যিনি জন্ম ও মৃত্যু দেন,যিনি রিজিকদাতা,যিনি সমস্ত নেয়ামতের মালিক,যিনি সমস্ত সৃষ্টির স্রষ্টা, তাদের রক্ষনাবেক্ষন ও নিয়ন্ত্রন করেন।এই ক্ষমতাগুলো রুবুবিয়াতের সাথে সম্পৃক্ত।এই ব্যাপারে মক্কার কাফেররা নিশ্চিত ছিল যে সৃষ্টিকর্তা একজনই।তাদের যে লাত,ওজ্জা,হোবল ও মানাত সহ ৩৬০ টি মূর্তি ছিল,এগুলো যে সৃষ্টিকর্তা নয় তারা ভাল করেই জানতো।এর প্রমান হলো আল্লাহ পাক আয়াত নাজিল করে রসুল সা:কে বললেন তাদের জিজ্গেস করুন,'কে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে সেই মহাশক্তিশালী আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন।সুরা যুখরুফের ৮৭ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'আর তুমি যদি তাদের জিজ্গেস কর-কে তাদের সৃষ্টি করেছে তারা নিশ্চই বলবে,আল্লাহ।তাহলে কেন তারা ফিরে যাচ্ছে? আজকের পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে যদি জিজ্গেস করা হয় আল্লাহ সম্পর্কে তাহলে আস্তিকের সংখ্যাই বেশী হবে।এই বিশ্বাসটিই যথেষ্ট নয়।কারন তারা আল্লাহকে এক মা'বুদ হিসেবে স্বীকার করে ইবাদত করতে বিশ্বাসী নয়।সমস্ত নবী রসুলকে এই তাওহিদ নিয়েই আল্লাহ পাঠিয়েছেন।সুরা আ'রাফের ৫৯ আয়াত থেকে পর পর কয়েকজন নবী( নুহ আ;,হুদ আ; সালেহ আ; ও শোয়াইব আ একটি দাওয়াত দিয়েছিলেন,'হে আমার সম্প্রদায়!আল্লাহর ইবাদত কর।তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন উপাস্য নেই।' এ সব যামানায় আস্তিকই ছিল বেশির ভাগ মানুষ।দুনিয়াতে যতরকম গোলমাল লেগেছে এর মুলে ছিল তারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে না।তাওহিদে উলুহিয়াই হলো মু'মিন ও কাফেরদের মধ্যে প্রধান প্রতিবন্ধকতা।উলুহিয়া শব্দটি এসেছে ইলাহ শব্দ থেকে।ইলাহ শব্দটির অর্থ যিনি ইবাদত পাওয়ার উপযুক্ত।ইবাদতের মধ্যে তাওহিদকে প্রতিষ্ঠিত করাই হলো মু'মিনদের মুল কাজ।তাওহিদে উলুহিয়া যদি মানুষের অন্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তাহলে সব রকম ভূয়া বা নকল ইলাহ ও সব রকম অপকর্ম তিরহিত হয়ে যায়।সুরা আল আম্বিয়ার ২৫ আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন,'তোমার পূর্বে আমরা কোন রসুল পাঠাইনি যার কাছে আমরা প্রত্যাদেশ না দিয়েছি এই বলে যে,'আমি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই,কাজেই আমারই উপাসনা কর।' এই ইবাদত নিয়েই আল্লাহ পাক নবী রসুলদের পাঠিয়েছেন পরীক্ষা করার জন্য।কারন মানুষতো আল্লাহকে স্বীকৃতি দিচ্ছে তুমিই আমাদের রব।পরীক্ষাটি হয়ে যাবে ইবাদতের মাধ্যমে।মক্কার কাফেররা যখন এক আল্লাহকে বিশ্বাস করলো তখন আল্লাহ পাক রসুলের মাধ্যমে জিজ্গেস করলেন তাহলে ৩৬০ টি মূর্তির কেন তোমরা ইবাদত কর? এ কথার উত্তরে তারা সুরা যুমারের ৩ আয়াতে বলে,'আমরা তাদের উপাসনা করি এজন্য যে,তারা আমাদের আল্লাহর নিকটবর্তী নিয়ে যাবে%
বিষয়:
১১৭৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আরবিতে একটি প্রবাদ আছে প্রতিটি জিনিস জানতে হলে তার বিপরীত জিনিস জানতে হয়।কারন বিপরীত জিনিস জানলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়।যেমন-সাদা ও কালো দুটো রং।যদি কালো না থাকতো তাহলে সাদার মুল্যায়ন হতো না।
ধন্যবাদ ভালো লিখেছেনঃ
মন্তব্য করতে লগইন করুন