লাখ লাখ কচি প্রানের আর্তনাদ আমরা পরীক্ষা দিতে পারবো কি?

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ৩১ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৩:৩৩:৪৩ দুপুর

শিশির ভেজা ভোরে আর হাঁটতে বেরোতে ইচ্ছে করে না।পূর্ব আকাশের সূর্যকিরনে আর রোদ পোহাতে ইচ্ছে করে না।হাতে কলম নিয়ে বানিয়ে গল্প লিখতেও ইচ্ছে করে না।চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে খবরের কাগজ অবলোকন করার সাহসও আমরা হারিয়ে ফেলছি। আমরা খুব দুঃসময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিন খবরের কাগজে মানুষ পুড়িয়ে মারার ছবি দেখে, মানুষকে হত্যা করার খবর পড়ে দিন শুরু করতে হয়, মাঝেমধ্যে খবরের কাগজটি সরিয়ে রাখি; যেন চোখের সামনে থেকে সরিয়ে নিলেই সেই দুঃসহ ঘটনাগুলো জীবন থেকে সরে যাবে। তার পরও আমরা আশায় বুক বেঁধে আছি, এই দেশ এর থেকে অনেক বড় বিপর্যয়ের পরও মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।মানুষ হত্যার এই নৃশংসতা নিশ্চয়ই একসময় বন্ধ হবে তবে কবে? মা তাঁর সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর পর একটুখানি শান্তিতে থাকতে পারবেন কখন? বাবা সকালে বের হয়ে বিকেলে ফিরতে পারবেন কি? ট্রাক ড্রাইভারের স্ত্রী, হেলপারের আপনজনকে ভয়াবহ আতঙ্ক নিয়ে অপেক্ষা করতে হবে না তো? একজন বাসযাত্রীকে পুলিশ পাহারায় পথ চলতে হবে না তো? একজন ট্রেনের যাত্রীকে নিজের জীবন হাতে নিয়ে ট্রেনে উঠতে হবে না তো? সাধারণ মানুষের জন্য গভীর ভালোবাসার কথা মনে করে,লাখ লাখ কচি মুখ যারা পরীক্ষার দিন গুনছে,দুটি বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে ছাত্র/ছাত্রী অভিভাবক ও শিক্ষক বৃন্দ।মাত্র একদিন পর তাদের পরীক্ষা।কচি প্রানগুলোতে থমথমে ভাব।এই বিভিষিকায় তারা বলছে মনে হয় কিছুই মনে থাকছে না।আমার মেয়েটির রাত জাগা পরিশ্রম দেখে বুকে কষ্ট ধারন করি।সে বলে আব্বু পরীক্ষা দিতে পারবো তো?

এই নৃশংসতা আর তাণ্ডব বন্ধ হবে, সেটা আমরা কেউ মনে করতে পারি না।দুটি রাজনৈতিক দল কেউ ক্ষমতায় আর কেউ ক্ষমতার বাইরে, রাজনীতির কথা বলে এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যে একসময় রাজনৈতিকজগতে পুরোপুরি মূল্যহীন হয়ে যেতে পারে, অন্তত সেই কথাটি মনে রেখে কি তারা এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে পারে না? একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা আজ মানুষকে জিম্মি করে ফেলেছে।এই দুই জোট এখন গনমানুষের শক্রুতে পরিনত হয়েছে।তারা মানুষের জন্য রাজনীতি করছে না।নিজেদের ক্ষমতার লড়াই করে যাচ্ছে।মসনদ দখল করলেই সোনার ডিম হাতে পাবে।এরা ভাঁড় ও ভন্ডের দল।জনগনের সরকার হলে নিশ্চই সরকার নিরাপত্তা দিতে পারতো।তাদের কাছ থেকে আশার কোন আলো নেই।

মন্ত্রী আর সরকারি দলের নেতারা মুখে যতই শব্দবোমা ফাটান না কেন, নিজেদের রাজনৈতিক লাভালাভের কাছে গণদাবির কোনো মূল্য নেই।এসব কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নেই, অনুমোদনও নেই। আছে বিতৃষ্ণা আর আতংক। মানুষের জানমাল বিপন্ন হচ্ছে। বোমার আঘাতে ঝলসে যাওয়া, মৃত্যুবরণ করা একজন মানুষও এ পর্যন্ত দেখা গেল না যাদের মধ্যে চেনা নেতা-নেত্রী বা তাদের স্বজন রয়েছেন। মৃত্যুপুরীর পথে যাদের পাঠানো হয়েছে-হচ্ছে, তারা অতি সাধারণ মানুষ। কোনো রাজনীতির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই। অথচ জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে পথে নেমে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির হিংস্রতার শিকার হচ্ছে তারা। প্রাইমারি স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত লাখ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের স্বাভাবিকতায় নেমে আসছে বিপর্যয়। এতকিছু দেখেও সরকার পরিচালনাকারী এবং হরতাল-অবরোধ ডাক দেয়া নেতা নেতৃদের তেমন কিছু যায় আসে না। কারণ রাজনীতি করার সুবাদে আল্লাহ তাদের বিত্ত-বৈভবের অভাব রাখেননি।মানুষের পেটে খাবার না থাকলেও তাদের খাবারের অভাব নেই।তাদের অনেকের পরিবার দেশের বাইরে।তাদের সন্তানদের নিয়ে কোন চিন্তা নেই কারন তারা এদেশে পড়ছে না।তাদের কেউ কেউ আবার রাতভর টকশোতে খিস্তিখাউর করছেন।যার যার দলের পক্ষে স্তুতি গাইছেন।এরাও সুবিধা বাদী।আবার কেউ কেউ জনগনের জন্য কথা বলছেন কিন্তু তাদের সুন্দর বানীগুলোর তোয়াক্কা তারা করছে না।কয়েকদিন ধরে পরীক্ষার্থীদের স্বপক্ষে কথা বলা হচ্ছে অবরোধ বন্ধ করার জন্য কিন্তু লাগাতার হর্তালের কথা শুনে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সংকিত।পিএসসি-জেএসসি পরীক্ষায় সাধারণ নাগরিকের সন্তানরা পড়ে বলে তা হরতালের আঘাতে বিপর্যস্ত হয়। সামনের হর্তাল দেশবাসীর সন্তানদের অনুষ্ঠেয় এসএসসি পরীক্ষাকেও কর্মসূচির নামে বন্দি করে ফেলবে।এর ফলে জাতির ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? আমরা কি সোমালিয়ার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি? এর দায় সরকারের, কারন তারা প্রথমে জনগনের মেন্ডেট ছাড়া ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে এবং তারা জানে আজকের এই পরিস্হিতি দাঁড়াবে।ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েই তারা থেমে থাকে নি।তারা বিরোধী মত ও তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধাগ্রস্ত করেছে।তাদের মন্ত্রি এমপিরা বিরোধীদের উস্কে দিয়েছে আন্দোলন করার জন্য।একটি বড় দলের নেত্রীর অফিসকে ও তার কাজ কর্মকে সরকারী বাহিনী দিয়ে বেরিকেড দিয়ে রাখা হয়েছে।তার অফিসে বিদ্যুতের লাইন কেটে দেয়া,ডিস ও ইন্টারনেট লাইন কেটে দেয়া কোন ধরনের গনতন্ত্র? সরকার কোন বিচক্ষনতার পরিচয় দিচ্ছে না।একটি দেশে সরকার যে রকমেরই হোক,দেশের অভিভাবক।সংলাপ করার দায়িত্ব সরকারের।কিন্তু তাদের কাছ থেকে সে আওয়াজ আসছে না।দেশের শত শত বুদ্ধিজীবি ,রাজনীতিবিদ ও লেখকবৃন্দ অনুরোধ জানাচ্ছে কিন্তু তাদের কর্নকূহরে প্রবেশ করছে না।এমন বুদ্ধি ও বিবেকহীন ক্ষমতাসীন বা ক্ষমতার বাইরের রাজনীতিবিদদের আমাদের পাশের দেশে ইদানীং ঘটে যাওয়া ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ' নরেন্দ্র মোদি'র কার্যক্রম দেখেও কি শিক্ষা নিতে পারে না?

ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা এসেছেন। গত রবিবার রাতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সৌজন্যে দিল্লীর রাষ্ট্রপতি ভবনে একটি ভোজসভার আয়োজন করা হয়, সে অনুষ্ঠানে সোনিয়া গান্ধী, ড. মনমোহন সিংসহ সরকার ও বিরোধী দলের শীর্ষ রাজনীতিক, চলচ্চিত্র, শিল্প-সাহিত্য, সংগীত ও ক্রীড়াঙ্গনের সব তারকা উপস্থিত ছিলেন। ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজ হাতে কোমল পানীয়ের গ্লাস তুলে দেন বিরোধী দল কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর হাতে। এ সময় তারা পরস্পর খোশগল্পে মেতে ওঠেন এবং তাদের দুজনকেই হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়। এমন রাজনৈতিক সহিষ্ণুতায় বিমোহিত মার্কিন রাষ্ট্রপতি ভারতীয়দের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন- 'আমরা আপনাদের বন্ধুত্ব ও দোস্তিকে অনুভব করি এবং আমি খুবই সম্মানিত বোধ করছি।' এর মধ্য দিয়ে ভারতীয়দের জাতীয় ঐক্য ও অভিন্নতার দিকটি উজ্জ্বলভাবে প্রতিভাত হয়। একটি সভ্য জাতি হিসেবে তাদের অগ্রযাত্রার এটি এক উজ্জ্বলতম ও গৌরবদীপ্ত দিক। ভারত ও আমেরিকার মধ্যে শুধু ৪ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তিই নয়, পারমাণবিক শক্তিকে কল্যাণমুখী ব্যবহার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের প্রশ্নে যে কয়টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে সেগুলো মূলত ভারতের সপক্ষে। সন্দেহাতীতভাবে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের মৃদু টানাপড়েন বিশ্বরাজনীতিতে অনুভূত হচ্ছিল। ওবামার সফর ভারতীয় রাজনীতিকদের সাবলীলতা ও সহিষ্ণুতা শুধু বারাক ওবামাকেই বিমোহিত করেনি- চীন, পাকিস্তানসহ সমগ্র বিশ্বকে একটি নতুন বার্তা দিল এবং বিশ্বশান্তির পক্ষেও একটি রাখিবন্ধন রচনা করল। ওবামা নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ পাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতকে সমর্থনেরও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। এখান থেকে আমরা কোনো শিক্ষাই গ্রহণ করব না, বরং দুটি জোটই নিজ নিজ আঙ্গিক হতে এই দুটি দেশের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ অথবা কৃপাভিক্ষার দৈন্যতা দেখাব। 'সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়' সংবিধানের এ কথাটি আজ মিছে হতে চলছে। ক্ষমতাসীন জোটের অপ্রতিরোধ্য নেতা প্রতি পদে পদে আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ করে, বিদ্রূপ করে ও কটাক্ষ হেনে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন। দাম্ভিক উন্নাসিকতার পরিণতি বোধ হয় তারা উপলব্ধি করেন না। মোদি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় তো বসেই গেছেন। প্রবীণ নেতা আদভানিকে প্রণাম করলে, মনমোহন, সোনিয়াকে যথাবিহিত সম্মান দিলে, ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে বারাক ওবামাকে সম্মান দিলে দেশের জন্য কতটুকু কল্যাণ বয়ে আনা যায় মোদি সেটা অনুধাবন করেন। কিন্তু হায়! দুর্ভাগ্য আমাদের।হায়! দুর্ভাগ্য স্বাধীন বাংলাদেশের।

আমাদের এসব ভাঁড় নেতারা সামান্য অসুখে বা শরীরের রুটিন চেকআপের জন্য হামেশা থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র ছোটেন। অস্পৃশ্য সাধারণ মানুষ অসুস্থ হলে এদের কী হবে সেই ভাবনা আন্দোলনওয়ালাদের নেই। হরতাল-অবরোধের কারণে মুমূর্ষু অবস্থায়ও সাধারণ মানুষের হাসপাতালে না যেতে পারাটা নিয়ে এদের ভাবনার কিছু থাকে না। আমাদের মহামান্য নেতারা যেন বলতে চান, তোমাদের হাসপাতালে যাওয়া, পড়ালেখা, পরীক্ষা ইত্যাদি তুচ্ছ কারণে হরতাল-অবরোধ উঠিয়ে নিয়ে আন্দোলনে হেরে যাওয়ার মতো এতবড় ভুল আমরা করতে পারি না! হরতাল-অবরোধের কারণে হাভাতে সাধারণ মানুষের ছেলেমেয়েরা পরীক্ষা দিতে না পারলে, বিয়ে অনুষ্ঠান বিঘ্নিত হলে, ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হলে, কৃষক বিপন্ন হলে, পর্যটন শিল্প মুখ থুবড়ে পড়লে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আর শ্রমজীবী মানুষের চুলায় হাঁড়ি না চড়লে আমাদের কী! একবার ক্ষমতায় যাই তারপর সব সোনার বাটি হাতে নিব। এসব ছোটখাটো বিষয় হিসাবে আনলে চলবে না। আমরা এখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য লড়াই করছি! পাবলিককে এ সামান্যক্ষতিতো মেনে নিতেই হবে! দিনকয়েক আগে বিএনপিপন্থী এক প্রবীণ সাংবাদিক একাত্তর টেলিভিশনের এক টকশোতে বলেই ফেললেন, আন্দোলন সফল করতে হলে সহিংসতা হবেই। এ রকম বোমা হামলায় মানুষ মারা যেতেই পারে। তার অনায়াসে বলে যাওয়া কথায় বিএনপি নেতাদের মনোভাব স্পষ্ট হল। সাধারণ মানুষের জীবন আন্দোলনের জেতার হাতিয়ার বলেই তারা মনে করেন।আমি যদি সেই নেতার একটি আংগুলে দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালিয়ে এক মিনিট ধরে রাখি তিনি কি এক মিনিট ধৈর্য ধরতে পারবেন?

এসব কল্পকথা নয়-রূঢ় বাস্তব। তাই কার্যত হরতাল-অবরোধ এখন মানবতাবিরোধী কর্মসূচি হিসেবে প্রতিপন্ন হয়েছে। এ কারণেই ভুক্তভোগী মানুষ এসব বিধ্বংসী হরতাল-অবরোধ আইন করে বন্ধ করার কথা বলছে। সেদিন এক প্রথিতযশা রাজনীতিক, আইনবিদ বললেন আইন করে হরতাল বন্ধ করা যাবে না। এটি সংবিধানপরিপন্থী। এতে মানুষের মৌলিক অধিকার লংঘিত হবে। আমি তন্নতন্ন করে সংবিধান খুঁজে হরতালের কথা পেলাম না। থাকলেও বা কী! সংবিধানের এত কিছু ছেড়াখোরা করতে পারি আর জনস্বার্থের বিবেচনায় এটা সংশোধন করা যাবে না কেন? যে হরতাল জনগণকে বিপন্ন করে তাকে আইন করে বন্ধ করলে মহাভারত অশুদ্ধ হবে?

আসলে এ অস্ত্রটা ক্ষমতায় আসা-যাওয়া করা সব পক্ষ ব্যবহার করতে চায়। মানুষের আর দেশের কতটা ক্ষতি হবে তা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন নেই। এ কারণে সংসদে নিরংকুশ সংখ্যাগোরিষ্ঠতা থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকার হরতাল বন্ধের ব্যাপারে আইন পাসের চিন্তা করতে পারছে না।জামাত সহিংসতা করে বলে যে অভিযোগ রয়েছে,তারা কি পারছে জামাতের কার্যক্রমকে বন্ধ করে দিতে? আজ তারা বলছে বিএনপি-তোমরা জামাতকে ছেড়ে দাও।বিএনপি জামাত থেকে সরে গেলে ক্ষমতাসীন দল তাদের লুপে নিবে যেমন নিয়েছে এরশাদকে।এ ফন্দিফিকির হলো বিএনপির মত একটি বড় দলকে নিস্প্রভ ও অকার্যকর করা ও নিজেদের মসনদকে স্হায়ী করা। বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি বরাবর হরতালবিরোধী। কিন্তু সুবিধাবাদী রাজনীতিকদের পথ ভিন্ন। আওয়ামী লীগ নেতারা জানেন একদিন তাদের বিরোধী দলে যেতে হবে। তখন তারা এ অস্ত্রটিই ব্যবহার করবেন। মানুষকে, দেশের অর্থনীতিকে বিপদের মধ্যে ফেলে তারা মোক্ষলাভের জন্য হরতালের মত অস্ত্র দিয়ে অন্যদের রুখে দিবেন ।

প্রতিদিন পেট্রলবোমায় ঝলসে যাওয়া অসহায় মানুষের মিছিল বাড়ছে। পরিবারগুলোকে অন্ধকার গন্তব্যের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে আবার অনেকে নিজের জীবন ও পরিবারকে বিপন্ন করে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। তারপরও আন্দোলনকারীদের তা মন ছুঁয়ে যাচ্ছে না। প্রতিদিন অবরোধ অব্যাহত রাখার অমানবিক ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে যোগ হচ্ছে নতুন উপাদান। বিএনপি নেতারা বলছেন, পেট্রলবোমা ককটেল তারা ছুড়ছেন না, ছুড়ছে সরকারি এজেন্টরা। এসব বাণী সাধারণ মানুষ কীভাবে নিচ্ছে তার প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। আবার এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে ককটেল আর পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করতে গিয়ে ধরা পড়ে যারা গণধোলাই খেয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ হচ্ছে, তারা সব বিএনপি আর ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ত। মগবাজারে বিপুল ককটেল আর বোমা তৈরির সামগ্রীসহ ধরা পড়ে শিবির নেতা। লালবাগে বোমা তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরণে নিহত হয় বিএনপি নেতা। তারপরও বিএনপি নেতারা জনগণের সঙ্গে প্রতিদিন উপহাস করেন। অবরোধ পালন করা, না করা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। এরপরও যদি অমানবিকভাবে কেউ ভীতি ছড়ায় তবে তার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। বিএনপি জোট বুঝে গেছে এসব কর্মসূচিতে সুবিধা হচ্ছে না। তাই আরও হরতাল এবং অসহযোগ কর্মসূচির কথা ভাবছে বিএনপি। লাখ লাখ শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে ভাবনার কথা একবারও শোনা গেল না। পত্রিকার খবরে দেখা গেল, এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে দলীয় অনেক নেতা ভাবলেও তাদের মধ্যে দুঃসাহসী কেউ নেই যে এ যৌক্তিক কথাটি খালেদা জিয়ার কাছে উত্থাপন করতে পারেন। পরীক্ষার মতো এত তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে ভাববার অবকাশ হয়তো নেই খালেদা জিয়ার। পত্রিকা লিখেছে বিএনপি নেতারা মনে করছেন এবার নেত্রী তার আপসহীন ইমেজ আবার গড়ে তুলতে চান!এ দুর্দিনে দুঃসংবাদ এলো খালেদা জিয়ার ছেলে কোকো মৃত্যুবরণ করেছেন। তার এ অকালমৃত্যুতে সবাই মর্মাহত। কিন্তু এর মধ্যে আবার রাজনৈতিক ভুলের কাদায় পা ডোবাল বিএনপি। সমবেদনা জানাতে এসে খালেদা জিয়ার অফিসের গেট থেকে ফিরে যেতে হল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। বলা হয়েছে শোকাহত খালেদা জিয়াকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। তাই বিস্মিত হই স্থায়ী কমিটির পাকা পাকা নেতারা থাকতে কেউ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কী ব্যবহার করা উচিত তা বুঝতে পারলেন না। নাকি তাদের ডিঙ্গিয়ে আরও বড় সিদ্ধান্তদাতাও আছেন! এ সুবাদে দুই নেত্রীর দেখা হলে কিছুটা বরফ গলতে পারত বলে সাধারণ মানুষের মনে কিঞ্চিৎ আশা দোলা দিয়েছিল। কিন্তু তার পরও বলবো মানুষের সমস্যা সমাধান করার জন্য দুই নেত্রীকে আগামী কালের মধ্যেই একটি আপোষের নীতিতে আসুন।বাস্তবতা বলছে দেশে আর মানুষের জন্য ভাবার কেউ নেই। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সাধারণ মানুষের। অস্ত্রশক্তি মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজন গণশক্তির। কোনো নেতৃত্বের প্রয়োজন নেই। রবীন্দ্রনাথ যেমন বলেছেন আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে। সেইভাবে নিজেদের রক্ষা করার জন্য আমরা সবাই নেতা, সবাই কর্মী। হাজার বছরের বাংলার ইতিহাস পড়লে দেখা যাবে গণবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে বহুবার বাঙালি ফুঁসে উঠেছিল। নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে এনেছে।গণশক্তি বিস্ফোরণ ঘটায় যথাসময়ে। আলামত কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েক জায়গায় পেট্রলবোমা আর ককটেল ছুড়তে গিয়ে সাধারণ মানুষের হাতে ধরা পড়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছে শিবির ও বিএনপি কর্মীরা। ২৪ জানুয়ারি ঢাকায় শিক্ষক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মীসহ পেশাজীবীরা সন্ত্রাস বন্ধের স্লোগান দিয়ে পথে নেমেছিলেন। আজকে বড় প্রয়োজন দেশের সব মানুষের একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলানো।আমরা একটি তৃতীয় শক্তি চাই যাতে করে একটি স্বস্তি নিতে পারি,লাখ লাখ কচি প্রান যারা আমাদের ভবিষ্যত,তাদের আর্তনাদকে সম্মানিত করে তাদের আশু পরীক্ষায় অবতীর্ন করতে পারি।

বিষয়: বিবিধ

১০৩২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File