সুজাতা সিং বরখাস্ত ?
লিখেছেন লিখেছেন একটি সকাল ৩১ জানুয়ারি, ২০১৫, ০১:৪৭:২১ দুপুর
সুজাতা সিং বরখাস্ত ঘটনার নেপথ্যে অতি অবশ্য হিসেবে উঠে এসেছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে ভারত সফর করেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা। কূটনৈতিক সূত্রমতে ড্যান মজিনাকে ভারতের আমন্ত্রনে ড্যান মজিনা তখন ভারত সফর করেননি বরং ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তেই তিনি দিল্লী সফর করেন। বাংলাদেশে তখন তীব্র রাজনৈতিক সঙ্কট বিরাজমান ছিল এবং ভারতের কংগ্রেস সরকার বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ্যেই আওয়ামী লীগের পক্ষে তাদের শক্ত অবস্থানের কথা ব্যক্ত করে। অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশে রাজনৈতিক সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং সবদলের অংশগ্রহনে একটি অবাধ সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য চেষ্টা চালায়। তাই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের ঠিক দুই মাস আগে ড্যান মজিনার এ দিল্লি সফর নিয়ে ঢাকায় বেশ গুঞ্জন তৈরি হয় তখন। বাংলাদেশে বিষয়ে বিশেষ করে ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান বিষয়ে অবহিত হওয়া, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরা এবং বাংলাদেশের তখনকার ইস্যু বিষয়ে বিষয়ে দুই দেশের পক্ষে একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে আসার কোন সুযোগ আছে কি-না এসব বিষয়কে সামনে রেখেই তখন তিনি দিল্লি সফর করেন বলে ধারণা করেন অনেকে।
ড্যান মজিনার এ সফরের পরও ভারতের কংগ্রেস সরকার বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের প্রতি তাদের সমর্থন জোরালোভাবেই ধরে রাখে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাত্র একমাস আগে ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকা সফরে এসে সুজাতা সিং একতরফা নির্বাচনের পক্ষে কংগ্রেস সরকারের অবস্থান জানিয়ে দেন। এমনকি তিনি একতরফা নির্বাচনে অংশগ্রহনের জন্য এরশাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন এবং এরশাদও তা আবার সাথে সাথে ফাঁস করে দেন। অনেকের মতে কার্যত গোটা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া সত্ত্বেও সেসময় আওয়ামী লীগ শুধুমাত্র ভারতের একনিষ্ট সমর্থনের ওপর দাড়িয়ে বাংলাদেশে একটি একতরফা জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যায় এবং তা সম্পন্ন করে । বাংলাদেশে সংঘাত নিরসন করে একটি শান্তিপূর্ণ স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য আরো অনেক দেশ এবং সংস্থার সব চেষ্টা মূলত ব্যর্থ হয়ে যায় বাংলাদেশ বিষয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ভারত সরকারের অনমনীয় অবস্থান এবং আওয়ামী লীগের প্রতি অন্ধ সমর্থনের কারনে। কারো কারো মতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়টি ভুলে গেছে বলে মনে হয়না এবং সুজাতা বরখাস্তের পেছনে বাংলাদেশের ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি পূর্ব অবস্থারও যোগসাজশ থাকতে পারে
সুজাতা সিং বাংলাদেশে বিতর্কিত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের অল্প আগে ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর দুই দিনের সফরে ঢাকা আসেন। এসময় তিনি অন্যান্যের মধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাথে বৈঠক করেন এবং একতরফা নির্বাচনে অংশ গ্রহনের জন্য তার ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। এরশাদ সংবাদ সম্মেলন করে তার ওপর চাপ প্রয়োগের কথা সবাইকে জানিয়ে দেন। এরশাদ জানান, সুজাতা সিং তাকে অনুরোধ করেছেন জাতীয় পার্টি যেন নির্বাচনে অংশ নেয়। তা নাহলে জামায়াত-শিবিরসহ উগ্র মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর উত্থান ঘটবে বাংলাদেশে। তারা বাংলাদেশের ক্ষমতা গ্রহণ করবে। এরশাদ বলেন, আমার কাছে সুজাতা সিং জানতে চেয়েছেন আমি সেটা চাই কি-না। জবাবে আমি বলেছি 'দেশের এখন যে অবস্থা তাতে নির্বাচন করা সম্ভব হবে না, নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। সারাদেশে, গ্রামে-গঞ্জে সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা সবাই নিরাপত্তাহীনতায়, আমার দলের নেতা ও প্রার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, কেউ নির্বাচনি এলাকায় যেতে পারছি না।' তখন সুজাতা সিং আমাকে বলেছেন 'কেন, এই সরকার তো ভালো কাজ করেছে, আপনি থাকুন'।
সাংবাদিকদের এরশাদ বলেন, আমি তাকে বলেছি-আপনি রাস্তায় গিয়ে একশজন মানুষকে জিজ্ঞাসা করুন, কেউ এ সরকারের পক্ষে বলবে না, তারা সবাইকে শত্রু বানিয়ে ফেলেছে। তাদের বাক্সে কোনো ভোট পড়বে না।
এরশাদের এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পরিস্কার হয়ে যায় সুজাতা সিংয়ের তখনকার ঢাকা সফরের উদ্দেশ্য এবং একতরফা নির্বাচনে কংগ্রেস সরকারের প্রকাশ্য অবস্থানের কথা। একজন কূটনীতিক হিসেবে তার এ জাতীয় দূতিয়ালি এবং বিতর্কিত ভূমিকা দারুনভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয় কূটনৈতিকসহ বিভিন্ন মহলে। বাংলাদেশে তখনকার সংঘাতপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তার এ সফর দেশের রাজনৈতিক গতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে মনে করা হয়।
অবশ্য সুজাতা সিং পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভারত চায় নির্বাচনে সর্বোচ্চ সংখ্যক দল অংশগ্রহণ করুক।
Collected
বিষয়: বিবিধ
১০০৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন