বেরসিক উইপোকার ষড়যন্ত্রে সোলেমান [আ:] এর মৃত্যুসংবাদটা অবাধ্যপ্রবন জ্বীন শ্রমিকরা জেনে গেল
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ২৫ মে, ২০১৫, ১২:৩০:০৬ দুপুর
আল কোরআনের বর্ননা অবলম্বনে... আমি নিজেই কোরআন অধ্যয়ন করে লিখেছি ।
হযরত সোলেমান [আ:] তের বছর বয়সে রাজকার্য হাতে নেন । ক্ষমতা নেওয়ার চার বছর পর থেকেই বায়তুল মোকাদ্দাসের নির্মান কাজ শুরু করেন । মারেফুল কোরআনের অন্য জায়গায় আছে হযরত দাউদ [আ:] ই বায়তুল মোকাদ্দাসের নির্মান কাজ শুরু করেছিলেন ।
এই সময়টা ছিল প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ [স:] এর আগমনের প্রায় ১৭০০ বছর আগের ঘঠনা ।
হযরত সোলেমান [আ:] ৫৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছিলেন ।
আল্লাহপাক যখন হযরত সোলেমান [আ:] কে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হতে বললেন- তখন তিনি চিন্তা করলেন বায়তুল মোকাদ্দাসের অসমাপ্ত কাজ তিনি থাকতে শেষ না করলে তা থেকে যাবে ।
কারন ঐ কঠিন কাজ সমূহ হযরত সোলেমান [আ:] অবাধ্য প্রবন জ্বীনদের দ্বারা করাচ্ছিলেন।
ঐ সব শক্তিশালী জ্বীনেরা হযরত সোলেমান [আ:] এর ভয়ে কাজ করতো ।
জ্বীনেরা কাজ না করলে আল্লাহ জ্বীনদের জলন্ত আগুনের শাস্তির হুমকি দিয়েই রেখেছিলেন।
আল্লাহ পাক হযরত সোলেমান [আ:] কে কয়েকটি বিষয়ে বিশেষত্ব দিয়েছিলেন ।
সমগ্র বিশ্বের উপর তাঁর কর্তৃত্বতো ছিলই । এরপরও জ্বীনজাতী, পক্ষীকূল ও বায়ুর উপর ও তাঁর হুকুম কার্যকর ছিল ।
হযরত সোলেমান [আ:] এর কাছে একটি বিস্ময়কর উড়ন্ত সিংহাসন ছিল যেটা আকাশে বায়ূর সাহায্যে উড়ে বেড়াত ।
ঐ সিংহাসনে তিনি পরিবার পরিজন ও সভাসদ সহ আরোহন করতেন ।
এই সিংহাসনের অধিকারী হওয়ার ব্যাপারে একটি ঘঠনা জড়িত ।
হযরত হাসান বসরী [রহ:] বলেন- একদিন হযরত সোলেমান [আ:] নিজ ঘোড়া পরিদর্শনে এতই মশগুল ছিলেন যে নিজের অজান্তেই আসরের নামাজ ক্বাজা হয়ে যায় ।
নামাজে এই অমনোযোগিতার কারন ছিল 'ঘোড়া' ।
এটা বুঝতে পেরে হযরত সোলেমান [আ:] নামাজ ক্বাজার দরুন অনুতপ্ত হয়ে সমস্ত ঘোড়া গুলোকে আল্লাহর রাস্তায় কোরবানী করে দিলেন ।
ঘোড়া গুলো রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ছিল না, হযরত সোলেমান [আ:] এর নিজস্ব সম্পত্তি ছিল ।
সে সময় সোলেমানী শরীয়ত অনুযায়ী গরু-মহিষের ন্যায় ঘোড়া কোরবানী ও জায়েজ ছিল ।
হযরত সোলেমান [আ:] নামাজের পাবন্দী করতে নিজের যাতায়াতের একমাত্র বাহন ঘোড়া সমূহকে আল্লাহর রাস্তায় কোরবানী করাটা আল্লাহর পছন্দ হল ।
আল্লাহর তা এতই পছন্দ হল যে তিনি হযরত সোলেমান [আ:] কে ঘোড়ার চেয়ে উত্তম বাহন সিংহাসন দিয়েছিলেন যা আঁকাশে বায়ুর সাহায্যে উড়ে বেড়াতো ।
এই সিংহাসনে তিনি নিজের পরিবার পরিজন ও সভাসদ গন সহ এক সাথে পরিভ্রমন করতে পারতেন ।
এই উড়ন্ত সিংহাসন সকাল বেলা একমাসের পথ ও বিকালবেলা একমাসের পথ অর্থাৎ একদিনে দুই মাসের পথ অতিক্রম করতে পারতো ।
হযরত সোলেমান [আ:] এর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে তিনি ওজু করে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হয়ে বায়তুল মোকাদ্দাসের মেহরাবে প্রবেশ করলেন ।
মেহরাবটি স্বচ্ছ কাচের নির্মিত ছিল । বাইরে থেকে ভিতরের সবকিছু পরিস্কার দেখা যেত ।
হযরত সোলেমান [আ:] মেহরাবের ভিতর লাঠিতে ভর দিয়ে এমন ভাবে দাড়ালেন যেন শরীরের ভারসাম্য ঠিক থাকে । যথাসময়ে দেহপিঞ্জর থেকে প্রান বের হয়ে গেলেও তাঁর অসাড় প্রানহীন দেহ যেন লাঠিতে ভর করে দাড়িয়ে থাকে এই ছিল হযরত সোলেমান [আ:] এর পলিসি ।
ঐদিকে জ্বীনেরা মনে করতে থাকে হযরত সোলেমান [আ:] নামাজ পড়ছেন । তারা নিজেদের কাজ করতে থাকে । দিনের পর দিন, মাসের পর মাস জ্বীনেরা এভাবে কাজ করতে থাকে হযরত সোলেমান [আ:] কে জীবিত মনে করে । কারন হচ্ছে এর আগে হযরত সোলেমান [আ:] একটানা এক বছর দুই বছর মসজিদে এতেকাফ নিতেন । তাই জ্বীনেরা মনে করেছিল তিনি জীবিতই আছেন । কোন সময় ভয়ে ভয়ে দুর থেকে উকি দিয়ে দেখলে জ্বীনেরা দেখতো যে হযরত সোলেমান [আ:] দাড়িয়েই আছে । এভাবে একবছর অতিক্রান্ত হয়ে গেল । ততদিনে বায়তুল মোকাদ্দাসের অসমাপ্ত কাজও সমাপ্ত হয়ে গেল ।
আল্লাহ পাক যথা সময়ে হযরত সোলেমান [আ:] এর ভর দেয়া লাঠিতে উইপোকা লাগিয়ে দিয়ে রেখেছিলেন । তারা আল্লাহর হুকুমে এমন সময় লাঠিকে কমজোর করে দিল যখন আর হযরত সোলেমান [আ:] দাড়িয়ে থাকার দরকার ছিল না । আল্লাহর হুকুমের কোনই নড়চড় নেই ।
জ্বীনেরা যখন শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারলো যে হযরত সোলেমান [আ:] আর জীবিত নেই তখন হৈ হুল্লোড় করে যে দিকে পারলো পালিয়ে গেলো । আসলে তাদেরকে আর দরকারও ছিলনা । এখানে উল্লেখ্য যে বায়তুল মোকাদ্দাসের মূল কাজ কিন্তু হযরত সোলেমান [আ:] এর জীবদ্দশাতেই শেষ হয়ে গিয়েছিল । কিছু বাড়তি অতিরিক্ত সৌন্দর্য বর্ধকের কাজ ছিল যা পরবর্তীতে করানো হয়েছিল ।
হযরত সোলেমান [আ:] জীবদ্দশায় বায়তুল মোকাদ্দাসের কাজ শেষ হওয়ায় তিনি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার নিদর্শন স্বরূপ বার হাজার গরু, বিশ হাজার ছাগল কোরবানী করে মানুষকে আপ্যায়ন করিয়েছিলেন এবং আনন্দ উৎসব করেছিলেন ।
অত:পর তখন হযরত সোলেমান [আ:] 'ছখরার ' উপর দন্ডায়মান হয়ে আল্লাহ তা আলার কাছে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ !
আপনি আমাকে শক্তি ও সম্পদ দান করেছেন । ফলে বায়তুল মোকাদ্দাসের নির্মান কাজ সমাপ্ত হয়েছে ।
হে আল্লাহ ! আমাকে এই নিয়ামত এর শুকরিয়া আদায় করার তৌফিক দিন এবং আমাকে আপনার দ্বীনের উপর ওফাত দিন ।
হেদায়াত প্রাপ্তির পর আমার অন্তরে কোন রকম বক্রতা সৃষ্টি করবেন না ।
হে আমার পালন কর্তা,
যে ব্যক্তি এই মসজিদে প্রবেশ করবে, আমি তাঁর জন্য আপনার কাছে পাঁচটি বিষয় প্রার্থনা করছি ।
১] গোনাহগার ব্যক্তি তওবা করার জন্য এ মসজিদে প্রবেশ করলে আপনি তার তওবা কবুল করুন এবং তার গোনাহ মাফ করুন ।
২] যে ব্যক্তি কোন ভয় ও আশংকা থেকে আত্বরক্ষার উদ্দেশ্যে এই মসজিদে প্রবেশ করবে আপনি তাকে অভয় দিন এবং আশংকা থেকে মুক্তি দিন ।
৩] রুগ্ন ব্যাক্তি এ মসজিদে প্রবেশ করলে তাকে আরোগ্য দান করুন ।
৪] নি:স্ব ব্যাক্তি এ মসজিদে প্রবেশ করলে তাতে ধনাঢ্য করুন ।
৫] এ মসজিদে প্রবেশকারী যতক্ষন এখানে থাকে ততক্ষন আপনি তার প্রতি কৃপা দৃষ্টি রাখুন ।
তবে কেউ কোন অন্যায় ও অধর্মের কাজে লিপ্ত হলে তার প্রতি নয় [কুরতুবী]
এ থেকেই জানাগেল যে বায়তুল মোকাদ্দাস নির্মানের কাজ সোলাইমান [আ:] এর জীবদ্দশাতেই শেষ হয়ে গিয়েছিল । ইতিপূর্বে বর্নিত ঘঠনাও এর পরিপন্থী নয় । কারন বড় বড় নির্মান কাজে মূল কাজ শেষ হয়ে গেলে ও কিছু কিছু কাজ অবশিষ্ট থাকে । এখানেও সে ধরনের কাজই অবশিষ্ট ছিল । এর জন্যই সোলেমান [আ:] উপরোক্ত কৌশল অবলম্বন করেছিলেন ।
শেষ পর্যন্ত আল্লাহ পাক যদি হযরত সোলেমান [আ:] এর লাঠিতে উইপোকা লাগিয়ে না দিতেন তাহলে জ্বীনেরা জানতেই পারতো না যে হযরত সোলেমান [আ:] ইন্তেকাল করেছেন ।
[ বি:দ্র: আল কোরআনের সুরা সাবার ১২, ১৩, ১৪ নং আয়াত অবলম্বনে ।]
তথ্যসূত্র: পবিত্র তফসীর মারেফুল কোরআনের ১১০৫, ১১০৬ ,১১০৭ পৃষ্টা দ্রষ্টব্য ।
এবং তফসীর ইবনে কাছির, পৃষ্টা. ২০ থেকে ২৪ দ্রষ্টব্য ।
শিক্ষনীয়: এখানে শিক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে--
প্রথমত: হযরত সোলেমান [আ:] এত ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির অধিকারী হয়েও মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে পারেনি । এতএব আমরা যেন মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকি ।
দ্বিতীয়ত: জ্বীনেরা এর আগে দাবী করতো যে ওরা গায়েব জানে । মুহুর্তের মধ্যে পৃথিবী ঘুরে আসতে পারে বলে এই গায়েব জানার ফর্মূলা আবিস্কার করে নিজেদেরকে অনেক উচ্চ তপকার হিসেবে ভাব দেখাতো । এখানে হযরত সোলেমান [আ:] এর মৃত্যুর সংবাদ জ্বীনেরা এক বছর পর্যন্ত জানতে না পারায় জ্বীনদের গায়েব জানার ভন্ডামী প্রকাশ হয়ে পড়ে । এতে সাধারন মানুষেরা জ্বীনদের জারিজুরি বুঝে ফেলে এবং জ্বীনেরা এতে লজ্জিত হয় ।
...............................................................................................
আসুন আমরা পবিত্র কোরআনকে অর্থসহকারে বুঝে পড়তে চেষ্টা করি ।
ইহা একটি আসমানী মেসেজ পরিবেশনা
ইতিপূর্বে প্রকাশিত আরো কয়েকটি আসমানী মেসেজ পরিবেশনা হল:
আমি একটি মেসেজ পেয়েছি
আব্বা, সব বাড়িতে একই সেইম, চাচার বাড়ি কোনডা ?
ফুফুর স্নেহ, আদর, মহব্বত
শান্তনা
%%
================================================
বিষয়: বিবিধ
২১৯৬ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চমৎকার শিক্ষণীয় ঘটনার সাবলীল উপস্হাপনা বিমুগ্ধ করল!
কোরআনী এই সব কাহিনীর বহুল প্রচার মুমিনদের ঈমানী শক্তি বৃদ্ধিতে স হায়ক হবেই ইনশা আল্লাহ!
অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহু খাইরান!!
ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য ।
রানী বিলকিসের যে সিংহাসনের কথা বলা আছে পবিত্র ক্বুরআনে সেটা কি তাহলে একই জিনিস ?
এটা নিয়েও লিখার ইচ্ছা আছে । প্রচুর স্টাডি করতে হবে আগে ।
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।
পড়তে ভালোই লাগে প্রচন্ড !
এবার রমজানে ৮খন্ড মারেফুল কুরআন নিলাম ইসলামিক ফাউন্ডেশন এরটা।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
পড়ে ভালো লাগলো।
অনেক শিক্ষনীয় পোস্ট।
মন্তব্য করতে লগইন করুন