আমার আল্লাহ অনেক অ..নে..ক বিশাল...

লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ০৯ এপ্রিল, ২০১৫, ০৭:০৬:২৭ সন্ধ্যা

আমি ডিগ্রী পরীক্ষা দেওয়ার পর একটানা অনেক দিন পর্যন্ত গ্রামের বাড়ীতে থাকতে হয়েছিল । সে সময় বাবার ইন্তেকাল হলে বাড়ী থেকে আবার শহরে চলে যেতে আম্মার অনুমতির জন্য অপেক্ষা করছিলাম । কিন্তু আম্মা সহজে অনুমতি দিতে চাচ্ছিল না, কিসের জন্য যেন অপেক্ষা করতে থাকেন । যেন বাবা আবার চলে আসবে তখন আমি শহরে চলে যেতে পারবো এমনতরো ভাব । দিন চলে যায়, মাসের পর বছরও যায়, তবুও অনুমতি মেলে না । অপেক্ষা করতেই থাকি । তখন কোন কাজ ছিল না । নামাজ পড়তাম আর বাবার কবর জিয়ারত করতাম । মাঝে মাঝে অধৈর্য হয়ে যেতাম, ইতিমধ্যে ডিগ্রী পরীক্ষার ফলাফলও বের হল,পাশ করলাম । কিন্তু তবুও আম্মার অনুমতি মেলেনা । আসলে এই অনুমতি না মেলাতে আমার প্রচ্ছন্ন সমর্থনও ছিল বলতে হবে । আমরা আম্মার অবাধ্য হওয়ার শিক্ষা পাইনি কখনো । খুবই ভদ্র আর শান্ত ছিলাম ।

সে সময় এরশাদের বিরুদ্ধে তুমূল আন্দোলন চলছিল, কিছুদিনের মধ্যে নয় বছরের রাজার দশ বছরের সাজা হবে ।

ইতিমধ্যে মাষ্টার্সের রেজিষ্ট্রেশনের সময় এসে যায় । আর আমি এতদিন ইরিগুলার হওয়ায় প্রাইভেটে পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই । তো যেদিন রেজিষ্ট্রেশনের শেষ তারিখ সেদিন ভাগ্য ক্রমে হরতাল পড়ে যায় । অনেকটা অসহযোগ আন্দোলনের মত দেশের অবস্থা । দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুবই নাজুক ছিল ।

শেষ পর্যন্ত আমি একা একা ৪৫ কিলোমিটারের মত পথ সাইকেল চালিয়ে শহরে এসে রেজিষ্ট্রেশ করে যায় ।

আমার ডিগ্রী, মাষ্টার্স দুটিই চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ছিল । একটি নিয়মিত একটি প্রাইভেট ।

এর কিছুদিন পর বাড়ীতে থাকতে থাকতে আবার অধৈর্য হয়ে গেলাম । চিন্তা করলাম শহরে গিয়ে কিছু একটা করবো । আর কিছু একটা করতে গেলে তো অনেক টাকা লাগবে ।

একদিন হন্ত দন্ত হয়ে আম্মার কাছে গিয়ে বললাম-' আম্মা , টাকা লাগবে, টাকা দেন ।

আম্মা বললেন- টাকা লাগলে দিব, কত টাকা ?

আমি বললাম- দুই লাখ টাকা ।

আমার আম্মা সব সময় রাশভারী গম্ভীর টাইপের মহিলা । তিনি অনেক্ষন কোন কথা বললেন না । আম্মা মনে করেছিলেন আমি সর্বোচ্চ পাঁচশত টাকা চাইব । এখন আমার জবানে দুই লাখ টাকার কথা শুনে আম্মা বললেন- এতটাকা কি করবি !

আমি বললাম- শহরে গিয়ে ব্যবসা করব ।

আম্মা অনেকক্ষন চুপ থেকে অবশেষে ঠান্ডা শীতল কণ্ঠে বললেন - আল্লাহকে বলনা !

আমি বললাম- কাকে বলতাম ?

আম্মা বললেন- আল্লাহর কাছে বল ।

আমি আবার বললাম - কার কাছে বলতাম ?

আম্মা বললেন- কেন, আল্লাহর কাছে । আম্মা হাসতেছে আমার দিকে থাকিয়ে ।

আমি দুই লাখ টাকার জন্য আল্লাহর কাছে বলতাম ?

কেন ? অসুবিধা কি, কিছু লাগলেতো আল্লাহকেই বলতে হবে ।

আমি বললাম -না, আমি দুই লাখ টাকার জন্য আল্লাহর কাছে বলতে পারবো না ।

আম্মা বললেন - কেন ?

আমি বললাম - আমি এত সামান্য জিনিসের জন্য আল্লাহর কাছে হাত পাতবো, আর আল্লাহ আমাকে বলবেন, তুমি শেষ পর্যন্ত আমার কাছে এটাই চাইলা ? টাকার মত ময়লা জিনিস, আর তাও মাত্র দুই লাখ টাকা ? না না তা আমি চাইতে পারবো না । আমার আল্লাহ এত বিশাল, এত বিশাল- যে তাঁর কাছে দুই লাখ টাকা চাইতে আমার লজ্জা লাগবে ।

সেদিন ছাত্র বয়সে আমার যুক্তি ছিল টাকার জন্য যদি আল্লাহর কাছে চাইতেই হয় তাহলে আমি প্রথমেই এক কোটি টাইবো, আর সেটাও হবে আমার আল্লাহর জন্য খুবই সামান্য কিছু ।

আমি তো সেই আল্লাহর বান্দা যাঁর আছে অফুরন্ত ভান্ডার । যে বিশ্ব জাহানের মালিক ।

এ প্রসঙ্গে আমি একটি ঘঠনা শেয়ার করতে চাই, ঘঠনাটি ছাত্র জীবনে কোন একটি বইতে পড়েছিলাম । এক জঙ্গলে থাকতেন এক দরবেশ, তো তিনি খুবই সাদা সিদা চলাফিরা করতেন । পল্লীর এক ধনীলোক চিন্তা করলেন দরবেশকে কিছু দান করলে উনার জীবনটা একটু সচ্ছল ভাবে চলতে পারবে । এটা চিন্তা করে ধনী লোকটি বেশকিছু খানা-পিনা, টাকা-পয়সা, সোনা-দানা, নতুন কাপড় ইত্যাদি নিয়ে জঙ্গলের মধ্যে দরবেশের সাথে দেখা করতে গেলেন ।

দেখলেন গভীর জঙ্গলের ভিতর বড় বড় পাথরের একটিতে দরবেশ আনমনে বসে আছেন । পরনে ছিড়া কাপড় ।

লোকটি দরবেশ কে সালাম জানালে দরবেশ লোকটির দিকে তাকিয়ে আসার কারন জানতে চাইলেন । লোকটি তার মনের কথা দরবেশকে খুলে বললেন । এও বললেন যে দরবেশের আর্থিক অবস্থা সচ্চল হওয়ার জন্য এসব এনেছেন ।

দরবেশ কিছুক্ষন নিরব থেকে লোকটিকে বললেন - তোমার ডান দিকে তাকাও ।

লোকটি ডানদিকে তাকালে দেখতে পেল ডান পাশের সব পাথর স্বর্ন হয়ে গেছে ।

এরপর দরবেশ বললেন- তোমার বাম দিকে তাকাও ।

লোকটি বামদিকে তাকালে দেখতে পেল বাম পার্শ্বের সব পাথরও স্বর্ন হয়ে গেছে ।

দরবেশ বললন- এই সব স্বর্ন আমার, আমার আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন বটে কিন্তু এগুলোতে আমার কোন প্রয়োজন নেই । তুমি এখন যেতে পার ।

এই হচ্ছে ঘঠনা । আল্লাহর একজন প্রিয় বান্দার যদি এত এত স্বর্ণ থাকতে পারে তাহলে আল্লাহর ধন-ভান্ডারের শেষ আছে কি ?

# সাগর পাড়ে গিয়ে টিকটিকি পানি খাওয়ার জন্য সাগর থেকে অনুমতি নেয়না ।

# আবার মন্ত্রীর আগমনে কেউ স্বারক-লিপি দিয়ে মুরগী দাবী করেনা ।

# যদিও সার্টের বোতাম ছিড়ঁলেও সেটা লাগাবার জন্য আল্লাহর সাহায্য চাওয়া উচিত কিন্তু সেদিন আমি আল্লাহর বিশালত্বের কথা চিন্তা করেই দুই লাখ টাকা চাইতে লজ্জা পেয়েছিলাম ।

শেষ পর্যন্ত আম্মার গিয়ে বলেছিলাম - আম্মা আমার টাকা লাগবে না ।

বিষয়: বিবিধ

১২২৩ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

313948
০৯ এপ্রিল ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১৪
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : মাশ-আল্লাহ খুবই সুন্দর লিখেছেন! তবে আমাদের সকলের উচিৎ আমাদের যা কিছুই প্রয়োজন তা শুধুমাত্র আল্লাহর কাছেই চাওয়া, তার কাছেই প্রার্থনা করা। ভালো লাগলো আপনার লেখাটি অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
০৯ এপ্রিল ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২৩
254951
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : আমার ছাত্রজীবনের ইমোশনটি চিত্রায়িত করেছি মাত্র ।
# যদিও সার্টের বোতাম ছিড়ঁলেও সেটা লাগাবার জন্য আল্লাহর সাহায্য চাওয়া উচিত কিন্তু সেদিন আমি আল্লাহর বিশালত্বের কথা চিন্তা করেই দুই লাখ টাকা চাইতে লজ্জা পেয়েছিলাম ।
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।Good Luck Good Luck
313949
০৯ এপ্রিল ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২৯
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : লেখাটি সোনার বাংলাদেশ ব্লগেও প্রকাশিত হয়েছিল । দেখতে চাইলে লিংকে ক্লিক করতে পারেন ।
Good Luck সোনার বাংলাদেশ ব্লগ
313952
০৯ এপ্রিল ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩৪
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৯ এপ্রিল ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩৮
254957
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন ।Good Luck
313957
০৯ এপ্রিল ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪০
শেখের পোলা লিখেছেন : এর পরেও কিছু জানার রয়ে গেল! অপেক্ষায় থাকলাম৷ ধন্যবাদ৷
০৯ এপ্রিল ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪৬
254958
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : কি জানার আছে বলুন, আমিও যে জানতে চাই ভাইজান । Good Luck
313961
০৯ এপ্রিল ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫২
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : শক্ত ভাবে কলম ধরে এমন শক্তিশালী ঈমানী লিখা সহজ। অনেক শুকরিয়া ভাইয়া
০৯ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৮:০৬
254962
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : সুন্দর উৎসাহমূলক মন্তব্যের জন্য আপনাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ ।Good Luck
313962
০৯ এপ্রিল ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫৫
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ভাল লাগলো।
০৯ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৮:০৭
254964
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : আন্তরিক ধন্যবাদ সম্মানীত মোহাম্মদ লোকমান ভাইয়া । Good Luck
313996
০৯ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১০:৩৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : কেন ভাই?
যেকোন অবস্থাতেই আল্লাহরই শুধু সাহাজ্য চাই!!
১৯ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৮:২৭
256855
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : ঠিক বলেছেন, আপনার সাথে একমত ।Good Luck
314018
১০ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১২:৪৬
আফরা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ ।
১৯ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৮:২৭
256856
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ ।Good Luck
314025
১০ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০১:১৫
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় ভাইয়া। মহান রাব্বুল আলামিনের উপর ভরসাময় সুন্দর উপলব্ধি এবং অভিব্যক্তি। ভীষণ ভালো লাগলো। জাজাকাল্লাহু খাইর।
১৯ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৮:২৮
256857
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : সুন্দর মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন ।Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck
১০
314038
১০ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০১:৪৩
আবু জান্নাত লিখেছেন : ঈমান জাগানিয়া সুন্দর পোষ্টটির জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া। জাযাকাল্লাহ খাইর
১৯ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৮:২৮
256858
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : সুন্দর মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন ।Good Luck Good Luck Praying Praying
১১
314048
১০ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৪:৩০
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : আমাদের সকলের উচিৎ আমাদের যা কিছুই প্রয়োজন তা শুধুমাত্র আল্লাহর কাছেই চাওয়া, তার কাছেই প্রার্থনা করা। ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ ভাইজান ।
১৯ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৮:২৮
256859
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : আমাদের সকলের উচিৎ আমাদের যা কিছুই প্রয়োজন তা শুধুমাত্র আল্লাহর কাছেই চাওয়া, তার কাছেই প্রার্থনা করাPraying Praying Praying Praying
১২
314093
১০ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ১২:১৫
কাহাফ লিখেছেন :
চমৎকার শিক্ষণীয় লেখনী! জাযাকাল্লাহু খাইরান!
১৯ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৮:২৯
256860
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File