আমি একটি মেসেজ পেয়েছি...
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ০৩ জুলাই, ২০১৪, ০৭:৫৪:২৫ সন্ধ্যা
আমি একটি মেসেজ পেয়েছি । মেসেজ টি আসমান থেকে এসেছে। তবে মেসেজটি সকল মানুষের কাছেই এসেছে।
কথা হচ্ছে মোবাইলে যদি মেসেজ আসে আমরা কত জনে ঐ মেসেজ পড়ে থাকি ।
মোবাইলে এত হাবিঝাবি মেসেজ থাকে যে যারা পড়তে জানেন তারাও ঐ গুলো পড়ার জন্য এত আগ্রহ দেখান না। সেজন্য শতকরা ৯০ ভাগের মত মোবাইল ব্যবহার কারী মোবাইলের মেসেজ পড়ে দেখেন না। আবার আমার মনে হয় ৬০ ভাগ মোবাইল ব্যবহার কারী মোবাইলের মেসেজ পড়তেই জানেন না।
যাক, ওরা পড়তে না জানলেও আমার তেমন মাথা ব্যথা হওয়ার কথা নয়।
তবে আমি আজ যে মেসেজের কথা বলব তা এসেছে আরশের মালিকের পক্ষ থেকে । অর্থাৎ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ।
মেসেজ টি এসেছে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ।
# আরো হাজার হাজার মেসেজ ইনবক্সে জমা পড়ে আছে । মানুষের জন্যই এই মেসেজ #
# আরো হাজার হাজার মেসেজ ইনবক্সে জমা পড়ে আছে । মানুষের জন্যই এই মেসেজ #
আমি আসমানী কিতাব আল-কোরআনেই কথাই বলছিলাম।
ঐ যে বললাম মেসেজ না পড়ার ভাইরাস আমাদের মধ্যে বিরাজমান সেজন্যই মেসেজ গুলো এতদিন '' না পড়া মেসেজ '' অপসনে জমা পড়েছিল ।
সেখান থেকে একটি মেসেজ খুলে দেখলাম।
মেসেজে বর্ণিত ঘঠনা খুবিই সুন্দর । আমার আল্লাহ, আমার মালিক যে এত সুন্দর করে অথিতের সত্য ঘঠনাকে ফুটিয়ে তুলে বর্ননা করতে পারেন তা আমার ধারনাই ছিল না।
মেসেজ টিতে একটি সত্য ঘঠনাকে গল্পের মত করে উপভোগ্য করে প্রাঞ্জল ভাষায় সুন্দর সাবলিল গতিতে বর্ননা করা হয়েছে ।
বর্ননা কৃত ঘঠনাটি হযরত ইউসুপ [আ:] এর সময়ের ।
হযরত ইউসুপ [আ:] আপন ভ্রাতাকে নিজের কাছে রাখার জন্য(মিথ্যা) 'চোর' সাব্যস্ত করলেন ।
ঘঠনাটি এরকম:
মিশর সহ আশেপাশের দেশে চরম আকারে দূর্ভিক্ষ দেখা দিলে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে । ততদিনে হযরত ইউসুপ [আ:] মিশরের শাসক পদে অধিষ্টিত হওয়ার মত সর্বময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিলেন । অর্থ বিভাগ সহ রাষ্ট্রের অন্যান্য বিষয়ও উনার নিয়ন্ত্রনাধীন ছিল ।
তিনি সুনিপুন দক্ষতার সাথে পরিকল্পিতভাবে দূর্ভিক্ষের মোকাবিলা করে যাচ্ছিলেন ।
রাজভান্ডার থেকে বিগত সাত বছরে সংরক্ষন করে করে জমিয়ে রাখা খাদ্য দ্রব্য সমূহ অল্প দামে জনগনের কাছে বিলি করতে লাগলেন ।
পার্শ্ববর্তী দেশ ' কেনান ' ছিল ফিলিস্তিনের একটি জায়গা যেখানে হযরত ইউসুপ [আ:] এর বাবা ও ভাইয়েরা থাকত । ঐ জায়গাটা বর্তমানে 'খলীল' নামে একটি সমৃদ্ধ শহর হিসেবেই আছে । ঐ শহরে হযরত ইব্রাহিম [আ:], হযরত ইসহাক [আ:], হযরত ইয়াকুব [আ:] ও হযরত ইউসুপ [আ:] এর সমাধি অবস্থিত ।
দূর্ভিক্ষের করাল থাবায় পতিত হয়ে ইউসুপ [আ:] এর ভাইয়েরা যখন খাদ্যের সন্ধানে মিশরের রাজদরবারে আগমন করল তখন মিশরের বাদশা ভাইদেরকে চিনে ফেললেন । কিন্তু ভাইয়েরা উনাকে চিনতে পারলো না ।
এরও ৩৩ বছর আগে যখন ইউসুপের বয়স ৭ বছর তখন ঐ ১০ বৈমাত্রেয় ভাইপাহাড়ে খেলতে গিয়ে ইউসুপ কে কুয়ার মধ্যে ফেলেদিয়েছিল ।
সেদিন ১০ ভাই বাড়িতে ফিরে বাবা ইয়াকুব নবীকে বলেছিল : ইউসুপকে বাঘে খেয়ে ফেলেছে । প্রমান হিসেবে ইউসুপের গায়ের জামায় রক্ত মেখে বাবাকে দেখিয়েছিল ।
আমরা জানি কুয়া থেকে পানি তুলতে গিয়ে ব্যবসায়ী কাফেলা ইউসুপ কে পায় এবং তারা মিশরে গিয়ে মিশরের আজিজ কে অল্প দামে বিক্রি করে দেয় ।
আজিজের স্ত্রী জুলেখা ইউসুপের মিথ্যা কলংকের অপবাদ দিতে চাইলে আল্লাহপাক ইউসুপকে জেলের ভিতরেই হেফাযত রাখলেন ।
যাই হোক হযরত ইউসুপ [আ:] বৈমাত্রেয় ভাইদের প্রতিজনকে একটি উঠের বুঝা পরিমান খাদ্যশস্য দিলেন এবং খাদ্যের বিনিময়ে দেয়া মূল্যও ওদের অগোচরে ওদের খাদ্যশস্যের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেরত দিলেন ।
এবং বিদায় বেলায় বলে দিলেন যে সামনের বার আবার আসার সময় ওদের অপর ভাই বেনিয়ামিন কে যেন সাথে আনতে ভুলে না যায় ।
সাথে সাথে এটাও বলে দিলেন যে বেনিয়ামিনকে সাথে আনতে না পারলে ওরা আর খাদ্য বরাদ্ধ পাবে না ।
ওরা দেশে গিয়ে পিতা হযরত ইয়াকুব [আ:] কে অনেক বলে কয়ে আল্লাহর নামে শফৎ করে বেনিয়ামিন কে নিয়ে আবার মিশর গেলেন খাদ্যশস্য আনতে ।
মিশরে ওরা রাজকীয় মেহমান হিসেবে স্থান পেলেন । থাকার জন্য প্রতি দুই জনের জন্য একটি রুম বরাদ্ধ হল । ৫ রুমে ১০ ভাই এবং বেনিয়ামিনের জন্য আলাদা একটি রুম দেয়া হল ।
পরে হযরত ইউসুপ [আ:] ছোট ভাই বেনিয়ামিনকে নিজের কাছে নিয়ে গেলেন । অত:পর নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন- আমি তোমার হারিয়ে যাওয়া বড় ভাই ইউসুপ ।
তিনি আরও বললেন- আল্লাহ যখন আমাদের পরস্পরের যোগাযোগ করেই দিলেন সুতরাং তুমি অতীথের দু:খ কষ্টের কথা ভুলে যাও ।
এই হল আমার পঠিত একটি মেসেজের বর্ণনা ।
আল কোরআনে এরকম হাজার হাজার মেসেজ ইনবক্সে জমা পড়ে আছে । আমাদেরকে অর্থসহকারে কোরআন পড়তে হবে । তবেই আমরা মেসেজের সারমর্ম বুঝতে পারবো ।
হযরত ইউসুপ [আ:] আপন ভাই কে নিজের কাছে রাখার জন্য (মিথ্যা) 'চোর' সাব্যস্ত করলেন.....
[আলোচ্য ঘঠনাটি আল-কোরানের সূরা ইউসুপের আয়াত ৫৮ থেকে ৭৯ অবলম্বানে ]
...........................................................................
তথ্যসূত্র ;
১] আল কুরআনুল হাকিম- মাওলানা আমীমুল ইহসান, মাওলানা আবদুল্লাহিল বাকী, এ এফ এম এ মান্নান অনুদিত ।
২] হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী [র:] কর্তক বঙ্গানুবাদে কোরআন ।
৩] ইসলামী ফাউন্ডেশান কর্তৃক অনুবাদকৃত আল-কুরআনুল করীম ।
৪] পবিত্র কোরআনুল করীম । মূল: তফসীর মারেফুল কোরআন । অনুবাদ: মাওলানা মুহিউদ্দীন খান । সৌদি বাদশার পৃষ্টপোষকতায় মদীনা মনোয়ারা থেকে প্রকাশিত ।
৫] তাফহীমূল কোরআন : সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী (রঃ)।
বিষয়: বিবিধ
১৫০৯ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া
আমি এখন মোটামোটি সুস্থ, আলহামদুলিল্লাহ ।
নিয়মিত লিখতে চেষ্টা করবো ।
আপনাকেও রমজান মোবারক । ভাল থাকবেন ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন