সন্তানহারা মায়ের বুকের গভীরে যে শুন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তার শান্তনা আল্লাহ ছাড়া কেউই দিতে পারবে না।
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ২৪ জানুয়ারি, ২০১৫, ১১:০৮:৩০ রাত
সন্তান হারা মায়ের বুকের গভীরে যে শুন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তার শান্তনা আল্লাহ ছাড়া কেউই দিতে পারবে না।
আমি প্রোগ্রাম চলাকালীন সময়ে কোকের মৃত্যুর খবরটি পাই ।ইন্নানিল্লাহে ...রাজেউন।
আমি একজন মা । মাতৃত্বের অনুভুতি নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে নিজের নয়নেই দেখি অঝরে ঝরছে বর্ষন। সাথে আমার প্রান প্রিয় দ্বীনি বোনদেরও।
বিভিন্ন অনুষ্টানে ও কয়েক ঈদে বঙ্গভবনে বার বার সাহেবের সাথে যাওয়ার সুবাধে সদা হাস্যোজ্জল এই সন্মানিতা নেত্রীকে খুব কাছে গিয়ে দেখেছি । হৃদয়ের কাছের থেকে দেখতে দেখতে উনার জন্য হৃদয়ে কি এক ভালবাসা জন্ম নিয়েছে তা আমি জানি না । দেশের মানুষ কে কি ভাবছে তাও আমি জানি না । য়ামার লিখা পড়ে কে কি ভাববে তাও আমি জানি না । কারন আমি মনে করি একজন মানুষের মনের থেকে ভিন্ন ভিন্ন দলের প্রতি মত প্রকাশের ভালবাসা বা পছন্দ থাকতে পারে । কিন্তু একজনের হৃদয় অন্য একজন মানুষের প্রতি ভালবাসা জন্ম নেওয়ার সময় সমপূর্ন তার নিজের হৃদয়ের পছন্দের উপর নির্ভর করে ।এখানে ভালবাসা কে কোন দলের তা বিচার করে না ।ব্যক্তির কাজ কর্ম ভাল লাগা ও তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের উপর ভালবাসার তারতম্য হতে পারে । আর সেই বিশ্বাস হাজার জন তাকে হাজার বার খারাপ বললেও তা ভেঙ্গে যায় না।
আমি যখনই উনাকে দেখেছি আমি উনার মাঝে ও উনার ছেলের বৌ সাথে নাতনীদের মাঝে কোন উগ্রতা অশ্লীলতা দেখিনি । সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়ানো সব সন্মানিত মহিলাদের সাথে হাত মিলায়ে তিনি চেয়ারে বসলেন । দেশের অনেক কঠিন সময় তিনি শক্ত ভাবে দেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্বামীর মত খুব সহজেই জনগনের হৃদয়ে সাথে মিশে গেছেন। তিনি ইসলামের বা ইসলামের প্রতি যাদের ভালবাসা তাদের প্রতি অশ্রদ্ধা বা অন্যায় অত্যাচার জেল জুলুম কিছুই করেন নি । নিজের দলের মাঝে বহু নেতা উনার সাথে বা দলের সাথে মুনাফিক/ ডিগবাজ়ি খেলেছেন কিন্তু তিনি তাদের সাথে সব সময় সহনশীল আচরনেই করেছিলেন । নিজের ও ছেলেদের প্রতি যৌথবাহিনী বা স্বৈরাচার সরকারের নিষ্ঠুর আচরনেও দেশের বা গনগনের ক্ষতি হবে এমন কোণ সিদ্ধান্ত নেননি । বাড়ি ছাড়া করল তাতেও ধৈর্য্যশীল ছিলেন।
আজ আমার বার বার আখিকর্নার প্লাবিত হয়ে যাচ্ছে সেই ভালবাসা মাখানো চেহারা ছবিটা যতবার হৃদয়ের আয়নায় ভেসে উঠছে। প্রবাসী সন্তানের মারা তীরবিদ্ধ আহত পাখির মত সন্তানের জন্য দিবানিশি ছটপট করতে থাকে।প্রতিটি মুহুর্ত আল্লাহর কাছে সন্তানকে আল্লাহর হেফাজতে দিয়েওমৃগয়া মায়াবীনি হরিনীর মত কান চোখ খাড়া করে রাখেন।সন্তানের ফোণ আসলে দুনিয়ার সব মায়া ভুলে সন্তানের সাথে পাগলীনি এলো কেশীনি মায়ের চোখে জল মুখে হাসি নিয়ে কথা বলতে থাকে ।হাজার অসুথ্যতা ও দুঃখ বেদনা ভুলে সন্তান কে জানায় মা অনেক ভাল আছি ।তুমি ভাল থেকো বাবা ।কোন চিন্তা করনা।ভাল খাবার বা ভাল কিছুই সেই মায়ের করতে মন চায় না ।নয়নে নয়ন্মনি না থাকলে পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে যায় ।তার মধ্যে সন্তান চিরতরে পরবাসে যাবার খবর হলে তা কত কঠিন পরীক্ষা হয়ে দাড়ায়।আল্লাহ আমিও প্রবাসী সন্তানের মা তুমি মাফ কর ।এমন কঠিন পরীক্ষা আর কঠিন বোঝা কোন মাকে দিওনা।
কাঁদবেন না, মা কাঁদবেন না, সন্তান হারা মায়ের বুকের গভীরে যে শুন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা পুরন করতে আমি কেন এই পৃথিবীর কেউই পারবে না। তবে আল্লাহ তার জন্য সবরের মাধ্যমে উত্তম প্রতিদান পারবেন ।মানুষ আপনার জন্য কিছু করতে পারলে আমি সমবেদনার জ্ঞাপন করার সাথে সাথে আমার ছেলে ৫ টাই আপনাকে দিয়ে আসতাম। আপনাকে শান্তনা দেবার জন্য আমার মত আরো লক্ষ্য মা তাদের বুকের মানিক আপনার বুকে তুলে দিত ।কাঁদবেন না আপনি , ধৈর্য্যধারন করুন । এই চোখের পানির মুল্য দুনিয়ার কেউই দিতে পারবেন না । এই পানির মুল্য আল্লাহর কাছে অনেক বেশি । তাই সেজদায় সন্তানের মাগফেরাত চেয়ে কাদুন । আপনি আজ সেই মাদের কথা ভেবে দেখুন যেই মায়েরা তাদের আদরের সন্তানদের বুক এর উষ্ণ ভালবাসা থেকে আন্দোলনের ডাকে ঘর থেকে ময়দানে পাঠিয়ে ছেলের লাস ছাড়া আর মা ডাক শুনেনি ।আপনি জানেন সেই সব মাদের কে কান্না করতেও দেয়নি । স্বামী সন্তান একজন মহিলার সব চেয়ে প্রিয় সম্পদ ।তারা হাসি মুখে শাপলা চত্তরের আপনার ডাকে পাঠিয়ে দিয়েছিল ।আজো জানে না তাদের স্বামী সন্তানের লাস কোথায় আছে? আর কি হয়েছিল সেই দিন। তারা এখনো আশায় বুক বেধে আছে তাদের প্রিয়জন হারাবার বিচার স্বৈরাচার নিপাত যাবে আপনার আন্দোলনের ফসল হিসাবে ।তাই আপনি ভেঙ্গে না পড়ে তাদের কথা ভেবে ,দেশের রক্তপাত বন্ধের জন্য ,হাজার মায়ের বুক খালির কথা ভেবে শান্তনা নিন। হাজার কোক আপনাকে মা বলে ডাকার জন্য দাঁড়িয়ে আসেন।তাই ধৈর্য্য/সবরের বিকল্প কিছুই নেই।
কোকোর মৃত্যূ সংবাদ শুনার পর খালেদা জিয়াও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আল্লাহ বয়সে তার পক্ষে সন্তান হারানোর ধকল কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে কিনা সন্দেহ আছে। অন্যদিকে অনেকে ভাবছেন , কোকোর মৃত্যূতে বিএনপি মুষড়ে পড়বে ।আন্দোলনও থমকে যাবে । কোকো মারা গেছে, এদিকে তারেক রহমানও আর দেশে ফিরতে পারছে না। খালেদারও বয়স হয়েছে। এমন অবস্থায় খালেদা জিয়া মারা গেলে বিএনপির হাল ধরার মত কেউ থাকবে না। বিএনপির অস্তিত্ত্ব থাকবে না। ফলে দেশে একদলীয় শাসন কায়েমের পথে আর কোন বাধা থাকবে না...
তাই বঙ্গবন্ধুর মানষকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শোকার্ত মর্মাহত মা কে শান্তনা দিতে গেলেন ।আমি এটাকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখব না। বোনের দুখের দোষর আরেক বোন হতেই পারে ।কিন্তু আমি উনার ও আপনাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখব বাংলার হাজার মায়ের বুকের মানিকের রক্তে ভিজা আপনার পরনের শাড়ির নিচের লাল পাড় । সেই মাদের বুকের পাজরের সিড়িতে পা রেখে আপনি কতদুর উঠলে কোকর মাকে শান্তনা দিতে পারবেন । তারা তো একই শান্তনার পরিবর্তে সন্তানের লাসবিহীন মৃত্যু খবরের যন্ত্রনা।তাতে শান্ত না হয়ে দেখা মাত্র গুলি করে দিচ্ছেন সন্তানের নিথর দেহ। আপনার কারনেই কোক তার মায়ের বুকের শেষ উষ্ণ ভালবাসা চুমুটা কপালে নিয়ে বিদায় নিতে পারে নাই ।সেই মাকে কি বলে শান্তনা দিবেন ?এর সঠিক জবাব তিনি কোন কালেই দিতে পারবেন না।
আল্লাহ জিয়া পরিবারের সন্মানিত ব্যক্তিদের ধৈর্য্য ধরার তাওফিক দান করুন ।আর একই পরিবারের অন্য মৃতব্যক্তিদের সাথে কোককেও মাগফিরাত দান করে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন । দেশের জন্য অকাতরে নির্ভয়ে জীবন দেওয়া মুজাহিদদেরকেও মাগফিরাত দান করে প্রশান্ত আত্নাদের সাথে জান্নাতে শামিল করুন ।
বিষয়: বিবিধ
১৭৩০ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন