সড়ক দুর্ঘটনায় খুনের দায় কেউ নিচ্ছে না। তাহলে গরু ছাগল চিনলেই ড্রাইভার ?
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ৩০ নভেম্বর, ২০১৪, ১২:০৪:৪৩ দুপুর
অদক্ষ চালকদের লাইসেন্স প্রাপ্তি আরো সহজ হচ্ছে ,
সড়ক দুর্ঘটনার নামে খুনের হার বেড়েই যাচ্ছে
গরু ছাগল চিনলেই ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া যায়।
শাজাহান খানের মত যারা মুর্খের মত এ ধরনের কথা বলেন , তাদের মনে রাখতে হবে ৫০ ধরনের রোড সিগনাল আছে।
অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের হিসাব মতে, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর গড়ে ৩ হাজার ১১৭ জন নিহত হন। আর আহতের সংখ্যা ২ হাজার ৫৩৭ জন। তবে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রকৃত নিহত ও আহতের সংখ্যা অনেক বেশি বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
ড্রাইভার হতে হলে প্রথমে হালকা যানবাহন চালানোর জন্য তিন মাসের শিক্ষানবিস (লার্নার) লাইসেন্স নিতে হবে। তিন মাস পর লিখিত, মৌখিক ও প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হলে হালকা যানবাহন চালানোর লাইসেন্স দেয়া হবে। এ লাইসেন্সে গাড়ি, অটোরিকশা, জিপ, পিকাপ ভ্যান ইত্যাদি চালানো যাবে। তিন বছর হালকা যানবাহন চালানোর পর মাঝারি যানবাহন চালানোর লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। এভাবে মোট ৬ বছর গাড়ি চালিয়ে পরীক্ষায় পাস করার পর ভারী যানবাহন যেমন বাস, ট্রাক, লরি চালানোর লাইসেন্স পাওয়া যায়।
কিন্তু নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের চাপে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় অথরিটি'র (ডিটিসিএ) কেস স্টাডি প্রকল্পের অধীনে মোটরযান অধ্যাদেশ যুগোপযোগী করার নামে অদক্ষ চালকদের সরাসরি ভারী যানবাহনের লাইসেন্স দেয়ার জন্য লাইসেন্স নীতিমালা পরিবর্তন করা হচ্ছে।
পৃথিবীর সব দেশেই প্রথমে হালকা পরে মাঝারি এবং এরপর ভারী লাইসেন্স দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু কোনো মন্ত্রী বা কোনো বিশেষ ব্যক্তিকে খুশি করার জন্য লাইসেন্স বিধিমালা পরিবর্তন করা হলে তা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
দেশের আড়াই লাখ ভারী যানবাহনের লাইসেন্সের মধ্যে শ্রমিক ফেডারেশনের সুপারিশে এ পর্যন্ত এক লাখ ৮৫ হাজার লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। ফেডারেশনের সুপারিশের তালিকায় নাম দিয়ে লাইসেন্স করে দেয়ার নামে অনেক দালাল ধনী হয়ে গেছেন। তারা পাঁচতলা বাড়ি পর্যন্ত করেছেন।
পরিবহন সেক্টরে নিজেদের চাঁদাবাজি বৈধতা দেয়ার জন্য অনেক সময় চালকদের জন্য মায়াকান্না কাঁদেন। তার মধ্যে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।
পদে নৌমন্ত্রী কিন্তু নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের সুপারিশ করা অদক্ষ চালকদের লাইসেন্স দেয়ার জন্যই সড়ক পথে খুন করা হচ্ছে প্রতিদিন।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান জাল লাইসেন্সধারী ২৭ হাজার ৩৮০ জন অদক্ষ চালককে ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার সুপারিশ করেন। বিষয়টি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর সারাদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর পর স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং ওই লাইসেন্সের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। হাইকোর্টের আদেশের কারণে পরে সাড়ে ২৭ হাজার অদক্ষ চালকের লাইসেন্স করিয়ে নিতে ব্যর্থ হয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।
কিন্তু এরপরও থেমে থাকেন সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। থাকেননি সড়ক উপদেষ্টা পরিষদ, সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল এবং মালিক শ্রমিক ঐক্যপরিষদের প্রতিটি বৈঠকে তার সুপারিশ করা চালকদের সরাসরি লাইসেন্স দেয়ার জন্য আইন প্রণয়নে চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। পরে অনেকটা বাধ্য হয়ে ডিটিসিএ'র কেস স্টাডি প্রকল্পের অধীনে বিআরটিএ'র সড়ক সংক্রান্ত বিধিমালা অধুনিকায়ন করার নামে লাইসেন্স দেয়ার নীতিমালা নতুন করে প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়।
সূত্র জানায়, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের চাপে ইউনিয়নভুক্ত সদস্য হেলপার, কন্ডাক্টও থেকে শুরু করে বাস কাউন্টারের টিকিটম্যানরাও ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছেন। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রথম দফায় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের প্যাডে ২ জুন ২৪ হাজার ৩৮০ জনকে ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার জন্য বিআরটিএ'কে চিঠি দেয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ফেডারেশনের প্যাডে ২০১১ সালের ১২ জুলাই আরো ৩ হাজার মোটর শ্রমিককে ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার সুপারিশ করা হয়। উভয় আবেদনেই সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি হিসেবে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান 'জোর সুপারিশ করছি' লিখে পাঠান। তবে ফেডারেশনের প্যাডে সুপারিশ করা তালিকায় যাদের নাম আছে তারা আদৌ গাড়ি চালাতে পারেন কি না তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। এর আগেও শ্রমিক ফেডারেশনের সুপারিশে যাদের ভারী লাইসেন্স দেয়া হয়েছে, তাদের অনেকেই অদক্ষ ও অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাইসেন্সের জন্য যাদের নাম সুপারিশ করা হয়েছে তাদের অনেকেরই বয়ম ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। কিন্তু মেডিকেল সার্টিফিকেটে দেখানো হয় ২৫-৩০ বছর।
বিষয়: বিবিধ
১৭৩৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন