স্কুলের সেই দিনগুলো
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ৩০ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:৫৬:১৬ সকাল
স্কুল আমার কখনই ভাল লাগেনি। লেখাপড়া ছিল বিষাক্ত বিষ সম। শিক্ষকরা ছিল আমার কাছে কাল নাগ/নাগিনী। তারপরও কিছু কিছু কারনে স্কুলে যেতে হত বা বাধ্য হতে হত।বাপ ছিল বিরাট কড়া,সেটাও একটা বড় কারন। বেশীরভাগ ছাত্ররা ছিল স্থানীয় এবং স্কুল থেকেই ছুটির পরের কাজ কারবারগুলোর পরিকল্পনা সেরে ফেলতাম। ক্লাশ ফাইভ পর্যন্ত বাড়ির পাশের স্কুলে পড়েছি। যাওয়া আসার সুবিধার কথা ভেবে ক্লাশ রুমের পেছনের জানালার ৩টি রড ভেঙে ফেলেছিলাম আমরা কয়েকজন। রাস্তা ঘুরে যেতে ভাল লাগত না। স্কুলে গেলে ক্লাশ আমি ফাকি দিতাম না। তবে কেউ কেউ ক্লাশ ফাকি দিতে উক্ত জানালাটি ব্যবহার করত। বেমীরভাগ সময় আমার ক্লাশের পড়া হত। মাঝে মাজে মাইরও খেতাম। শয়তানির জন্যে ানেক মাইর খেয়েছি। শিক্ষকরা অন্যদের পেটালে তা দেখতে ভাল লাগত। কাছের বন্ধুদের পেটালেও মনে মনে মজা লুটতাম কিন্তু প্রকাশ করতাম না।....
একটি ঘটনা মনে পড়ছে অনেকগুলোর মধ্যে। ক্লাশ ৪ এর এক পরিক্ষার সময় ওই জানালা ভাঙা রুমে সিট পড়েছিল। আমরা বন্ধুরা পাশাপাশি বসার জন্যে বেঞ্চের উপর লাগানো স্টিকার তুলে ফেলতাম। শয়তানী করলেও স্টুডেন্ট খারাপ ছিলাম না,তাই অন্যরা আমার কাছে বসতে চাইত। আমি সাহায্য করতে কার্পন্য করিনি।অমিই পরামর্শ দিতাম কিভাবে এক স্থানে বসা যায়। ....তো পরিক্ষা চলাকালীন আমার একবার ব্যপক নিম্ন চাপের সৃষ্টি হল। সে সময় আমি যা তা খেতাম। আর বপক পরিমান তেতুল,টক ফলসমূহ খাওয়ার কারনে একটু গড়বড় হয়ে যেত। তেমনী এক গড়বড়ে পরিক্ষা দেওয়া মুষ্কীল হল।
তুরানী ম্যাডাম ছিলেন বেশ কড়া। লজ্জায় এবং ভয়ে ভয়ে বললাম ম্যাডাম আমাকে একটু টয়লেটে যেতে হবে। তিনি ঝাঝালো গলায় বললেন-২ ঘন্টা পার না হলে টয়লেটে যাওয়া যাবেনা। বললাম-অবস্থা খারাপ, যেতে না দিলে এখানেই কিন্তু হয়ে যাবে। তিনি তাড়াতাড়ি বললেন- আচ্ছা যা, এক মিনিটের মধ্যে চলে আসবি। আমি কথা না বাড়িয়ে পেছনের জানালা দিয়ে লাফ দিলাম বাগানের ভেতর। ম্যাডাম পেছন খেকে হাক ছাড়লেন-এই কি করিস ??..আমি হাওয়া হয়ে গেলাম্।
একদিকে পরিক্ষা,আরেক দিকে টয়লেট,দুটোই অতি জরুরী। টেনশন হতে থাকল,কারন পরিক্ষা বলে কথা ! তাই তাড়াতাড়ি ঝামেলা মুক্ত হওয়ার জন্যে বাগানেই একটা উত্তম স্থান দেখে বসে গেলাম। ...তারপর ইয়ে..সবকিছু বলা যাবেনা...।
খানিক পর জানালা দিয়ে আবার ক্লাশরুমে লাফ মারলাম। মাডাম বললেন-তুই বাগানে গেলি ক্যান ? নকল নিয়ে আসছিস নাকি ? আমি অন্তত নকলবাজ ছিলাম না। কথা শুনে গা জ্বলে গেল। বললাম ম্যাডাম আমি ইয়ে করতে গিয়েছিলাম্। তিনি বললেন-কোথায় করলি ? তিনি এমন প্রশ্ন করতে পারেন তা ভাবিনি। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে হাত দিয়ে বাগান দেখিয়ে দিলাম্। তিনি বললেন-এত তাড়াতাড়ি কিভাবে করলি ? কোথায় করলি? চল আমাকে দেখা !
আমি প্রমাদ গুনতে লাগলাম। পরক্ষনেই বললাম ,,না মানে তেলাদের বাড়ি করেছি। তিনি বললেন-ওই যে দূরে দেখা যাচ্ছে ওদের বাড়ি ? বললাম-হ্যা।
তা ওদের টয়লেট কোখায় ? বললাম-বাড়ির সামনের বাগানে। হুমম তা এত তাড়াতাড়ি অতদূর গিয়ে কিভাবে ফিরলি ? বললাম-আমি তাড়াতাড়ি করেছি।তারপর দৌড় দিয়ে আসলাম্। ম্যাডাম সময়ের কোনো হিসেব খুজে পেলেন না। বললেন-তুই পানি খরচ করেছিস ? বললাম -জি। কোথা থেকে পানি পেলি? এত তাড়াতাড়ি তুই করলি কিভাবে ???বললাম তেলাদের বাড়ি থেকে পানি নিয়ে দৌড়ে গিয়েছিলাম।...ম্যাডাম বললেন-তোর পকেট বের কর। দু পকেট বের করে দেখালাম যে কোনো চিরকূট নেই। তারপর আবার বললেন-তুই কি সত্যিই ..ইয়ে করেছিস ??? বললাম,জি ম্যাডাম সত্তি বলছি।......পানি কোথায় পেলি ? এত তাড়াতাড়ি কিভাবে করলি ?? ম্যাডাম অন্তত ৫/৬ বার আমাকে একই বিষয়ে পূণ:পূণ: জেরা করলেন। লজ্জায় আমার কান-মুখ লাল হয়ে গেল।..মনে হচ্ছিল মাটির নীচে চলে যাচ্ছি.....তারপর বললেন-আচ্ছা যা তোর জায়গায় গিয়ে বস্।
এতগুলো ছেলে মেয়েদের মধ্যে ম্যাডাম এমনভাবে প্রশ্ন করল যে-লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছিল। ক্লাশের প্রত্যেকটা চোখ আমাকে দেখছিল। আশপাশের কয়েকজন বন্ধু বলল-জি ম্যাডাম তেলাদের টয়লেট আছে....ওখানে টিউবওয়েলও আছে।
চিন্তা করছিলাম স্কুলের টয়লেটে গেলেই ভাল হত্। কিন্তু ৬ বছরের শিক্ষা জীবনে সেখানে কখনও যাইনি। একবার স্কুলের টয়লেটের ভেতরে ঢুকে দেখেছিলাম খুব নোংরা। সেটা দেখে মনে হয়েছিল বাগান এর থেকে অনেক উত্তম। .... আমাদের বাড়ি স্কুল থেকে মা্ত্র দেড়শ মিটার দূরে....অবশ্য এর অর্থ এই নয় যে-আমি বাগানেই অভ্যস্ত ছিলাম
পরদিন প্রতিশোধ নেওয়ার পালা। অবশ্য রাগ না থাকলেও প্রতিশোধ নেওয়া ছিল আমার একটা ট্রেডিশন বা বলা যায় অভ্যাস্। ....
কি আর করা,তেমন কিছু করিনি...যতদূর মনে পড়ছে শিক্ষকদের লাইব্রেরী রুমের তালা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকলাম। চেয়ার টেবিলের উপর হিসু করলাম। কিছু ফুলগাছ উপড়ে টেবিলের উপর কুটি কুটি করে রাখলাম...এদিক সেদিক কয়েকটা লাথি দিয়ে ..বোধহয় কাঠের স্কেল,চকগুলো ভাংলাম।....এসব প্রায়ই ঘটত তাই মনে করতে পারছি না কোন কারনে কোন আচরণ করেছিলাম।...
তবে সবথেকে বেশী মজা পেয়েছি আমাদের ক্লাশরুমের তালা ভেঙ্গে ভেতরে কয়েকজন মিলে আড্ডা মেরে দু রকম প্রাকৃতিক কাজ সমাধা করে।...বারবার সুইপার ডেকে যখন কর্তৃপক্ষ ক্লান্ত, তখন ক্লাশের মেয়েদের দিয়ে পরিচ্ছন্নতার কাজটি কারাতে দেখে হাসতে হাসতে আছাড় খেতাম্ । কেউ হাসির কারন জানতে চাইলে আরও বেশী হাসি লাগত....হাসতেই থাকতাম...
সত্যিই দিনগুলো ছিল হাসি আনন্দের....
বিষয়: বিবিধ
১২৭৭ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শিক্ষিকা-ছাত্রের মধ্যে কি এধরেনর কথা বার্তা হয় কখনও ? শিক্ষক হলে তাও একটা কথা ছিল ।
স্কুলকে কি টয়লেট হিসেবে ব্যবহার করতেন ?
আপনার ও ব্লগার ঈপ্সিতার লেখার ধরন প্রায় একই ।
নোংরা ও দুর্গন্ধময় লিখা না দিলে হয় না ? ভালই তো ভ্রমন কাহিনী ও খাবার নিয়ে লিখছিলেন।
কিন্তু ভাইজান দেখি ভেরি ডেঞ্জারাস আছিলেন! সেখান থেকে স্লেভ হইলে কেমনে????
বিজয় ইউনিজয় ফোনেটিক ইংরেজি
নাম: সূর্যের পাশে হারিকেন
মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন