সাগর-রুনি হত্যার দুই বছর পূর্ণ। বিচার হয়নি। তদন্তের ফল শূন্য।
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৯:৪৬:১৫ রাত
ভুমিকা - -গত ২০১২ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারির ভোরে পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বাদি হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ। চার দিনের মাথায় মামলাটি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়। তদন্তের ৬২ দিনের মাথায় উচ্চ আদলতে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। পরে উচ্চ আদালতের এক নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ই এপ্রিল মামলাটি র্যাবে হস্তান্তর করা হয়।
উচ্চ আদালতের এক নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ই এপ্রিল মামলাটি র্যাবে হস্তান্তর করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ৭৬ দিনের মাথায় ওই বছরের ২৬ এপ্রিল পুনঃময়নাতদন্তের জন্য সাগর-রুনির লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। এসময় তদন্ত সংস্থা র্যাব আরও কিছু আলামতসহ লাশের ভিসেরা নমুনা সংগ্রহ করে। এছাড়া একই বছর ১২ই জুন মাসে ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণাগারে আলামত পাঠানো হয়। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রথম দফায় কিছু প্রতিবেদন হাতে পেয়েছেন।
২০১২ সালের ১২ই জুন ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণাগারে কিছু আলামত পাঠানো হয়। বিপুল অর্থ ব্যয়ে করে ওই গবেষণাগারেই ডিএনএ নমুনা পাঠানো হয়। প্রথম দফায় পাঠানো এ আলামতের তালিকায় ছিল হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ছুরি, ছুরির বাঁট, সাগরের মোজা, একটি কম্বল, সাগরের পরনের প্যান্টসহ আরও কিছু কাপড়ের নমুনা। এরপর ১৭ই জুলাই দ্বিতীয় দফায় আলামত হিসেবে সাগরের হাত-পা যে কাপড় দিয়ে বাঁধা হয়েছিল সে কাপড় এবং রুনির পরনের টি-শার্ট। প্রথম দফায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এসব আলামত থেকে দু’জন ব্যক্তির সম্পূর্ণ ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া যায়।
ঘটনার পরপরই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের ঘোষণা দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন। এরপর ঘটনার তিন দিনের মাথায় পুলিশ সদর দপ্তরে আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার এক সংবাদ সম্মেলনে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ‘প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি’ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন। এছাড়া কয়েক দিনের মাথায় ডিএমপির মুখপাত্র মনিরুল ইসলামও হত্যাকাণ্ডের ‘মোটিভ’ নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে মন্তব্য করেন। তদন্ত সংস্থা ডিবি গ্রিল কাটা চোরদের দিকে ইঙ্গিত দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা ও ‘জজমিয়া’ সাজানোর বিষয়টি উঠে এলে ডিবি পরে বিষয়টি এড়িয়ে যায়। এছাড়া র্যাবের কাছে তদন্ত হস্তান্তরের পর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট শামসুল হক টুকু ১৯ মে , ২০১৩ বলেছেন, সরকার সাংবাদিক দম্পতি সাগর রুনিসহ সকল সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন করতে বদ্ধ পরিকর।সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে সরকার অনেক দূর এগিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন শুধু ডিএনএ টেস্টের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।’
২০১২ সালের ৯ই অক্টোবর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর সাগর-রুনি হত্যা ঘটনায় ৭ জনকে গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেন। এর মধ্যে পাঁচ জন রফিকুল, বকুল, সাইদ, মিন্টু ও কামরুল হাসান ওরফে অরুণকে মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণ চন্দ্র রায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ওই বছর আগস্ট মাসে গ্রেপ্তার করে ডিবি ও র্যাব। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো ছাড়াও সাগর-রুনির পারিবারিক বন্ধু তানভীর ও বাসার নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পালকেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়। কিন্তু দফায় দফায় তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি তদন্ত সংস্থা র্যাব। পরে তদন্ত সংশ্লিষ্ট র্যাব কর্মকর্তারা জানান, পলাতক থাকা আরেক দারোয়ান হুমায়ুন কবীর ওরফে এনামুলকে ধরতে পারলে সব রহস্যের সমাধান হবে। এনামুলকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ১০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু রহস্যঘেরা সে নিরাপত্তাকর্মী হুমায়ুন কবীর ওরফে এনামুলকে গ্রেপ্তার করা হলেও মামলার রহস্যজট খোলেনি।
বিষয়: বিবিধ
২২০৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যে সরকার হত্যায় বিশ্বাসী সে আবার বিচার করবে হত্যার?
শুধু একটাই দুঃখ আজও আমরা জানতে পারলাম না সাহারা খাতুনের ৪৮ঘন্টা কবে শেষ হবে ?
আদৌ কি হবে ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন