এক হাতে পান করার সময় অপর হাতের সাহায্য নেয়া
লিখেছেন লিখেছেন এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১২:৪৮:৪৫ রাত
এক হাতে পান করার সময় যখন অপর হাতের সাহায্য নেয়া হয়, তখন যে হাতের অংশ গ্রহণ বেশী থাকে সে হাতে পান করাই গণ্য হয়। অর্থাৎ পানির পাত্র যদি বড় হয়, অথবা হাত ফসকে গ্লাস পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, বা কোন জরুরতে ডান হাতে গ্লাস ধরে বাম হাতের সাহায্য নেয়া হয়, তাহলে ডান হাতেই পান করা গণ্য হয়। এতে কোন সমস্যা নেই।
আর যদি বাম হাতে গ্লাস বা পানির পাত্র ধরে ডান হাতের সাহায্য বা সামান্য স্পর্শ গ্রহণ করা হয়, তাহলে বাম হাতে পান করা গণ্য হয়।
শরীয়তে যা নিষেধ। কতক আলেম বাম হাতে পান করার নিষেধাজ্ঞাকে ইসলামী আদব, মোস্তাহাব ও সুন্নত পরিপন্থী হিসেবে দেখেছেন।
কতক আলেম বলেছেন ডান হাতে পান করা অবশ্য জরুরী, বিনা প্রয়োজনে বাম হাতে পান করা হারাম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বদা ডান হাতে পান করা, বাম হাতে পান করাকে শয়তানি কর্ম বলা এবং বাম হাতে পানকারীকে বদ দোয়া দেয়া ইত্যাদি দ্বিতীয় মতকে যথাযথ প্রমাণ করে।
মুসলিমে বর্ণিত, জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদিস “তোমরা বাম হাতে খেয়ো না, কারণ শয়তান বাম হাতে খায়” প্রসঙ্গে ইব্ন আব্দুল বারর রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন: “জাবের থেকে বর্ণিত হাদিসে বাম হাতে খাওয়া ও পান করার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এ কথা সর্বজন বিদিত যে, কোন বিষয়ে নির্দেশ দেয়ার অর্থ তার বিপরীত বিষয় থেকে নিষেধ করা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাম হাতে খাওয়া ও পান করার কঠিন নিষেধাজ্ঞা জেনে যে বাম হাতে খেল অথবা পান করল, অথচ ডান হাতে খেতে তার কোন সমস্যা ছিল না, বা কোন বাঁধা তাকে ডান হাত থেকে বিরত রাখেনি, সে অবশ্যই আল্লাহ ও তার রাসূলের নাফরমানি করল। যে আল্লাহ ও তার রাসূলের নাফরমানি করল সে পথভ্রষ্ট হল”।[12]
আমাদের দেশে বাম হাতে পান করার যে বদ অভ্যাস গড়ে ওঠেছে তা বৈধ নয়।
========
যেমন বাম হাতে গ্লাস বা পানির পাত্র উঠিয়ে ডান হাতের সামান্য স্পর্শ নিয়ে পান করা। কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় বাম হাতে গ্লাস তুলে ডান হাতের সামান্য স্পর্শ নেয় অতঃপর বাম হাতেই পানি পান করে। অর্থাৎ শুরুতে বাম হাতে পানির গ্লাস তুলল অতঃপর ডান হাতের স্পর্শ নিল, আবার মুখের স্পর্শ লাগার আগেই ডান হাত গ্লাস থেকে বিচ্ছিন্ন হল। এভাবে মূলত বাম হাতেই পান করা হল, বা ডান হাতের সামান্য সাহায্য নেয়া হল, বা বাম হাতের সাথে সাথে ডান হাতও নাড়াল, প্রকৃত পক্ষে যা বাম হাতে পান করাই গণ্য হয়।
কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় ডান হাতের স্পর্শ পর্যন্ত লাগে না! এভাবে আস্তে আস্তে বাম হাতে পান করার বদ অভ্যাস গড়ে উঠে।
আমাদের অনেকে যে অজুহাত বা কারণ দেখিয়ে বাম হাতে পান করেন,
শরীয়তের দৃষ্টিতে তা গ্রহণযোগ্য নয়।
**************************************
অনেকে বলেন ডান হাতে গ্লাস নিলে তাতে খাবার লাগে তাই বাম হাতে গ্লাস ধরি। এটা ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য কোন কারণ নয়।
গ্লাসে খাবার লাগলে কোন সমস্যা নেই, ধুলেই তা চলে যায়। বর্তমান যেহেতু সবাই আলাদা গ্লাস ব্যবহার করি, তাই এতে অপরের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
একাধিক ব্যক্তি একই গ্লাস ব্যবহার করার সময় হাত চেটে পরিষ্কার করে নিলে হয়, বা টিস্যু পেঁচিয়ে গ্লাস ধরা যায়। হোটেল, পার্টি বা নিমন্ত্রণ অনুষ্ঠানে সবাইকে আলাদা গ্লাস দেয়া হয়, বা ওয়ান টাইম ব্যবহারের জন্য কাগজ বা প্লাস্টিকের গ্লাস দেয়া হয়, সেখানে গ্লাসে খাবার লাগলেও সমস্যা নেই। দুঃখের বিষয় এ সুন্নতের বিপরীতে আমাদের দেশে বদ অভ্যাস কঠিন আকার ধারণ করেছে। কোন কারণ ছাড়াই আমরা বাম হাতে গ্লাস নিয়ে পান করি, যা সুন্নত পরিপন্থী ও নিন্দনীয় কাজ।
একটি আশ্চর্য বিষয়!
**************
আমরা খাবার সময় বাম হাতের ব্যবহারকে খুব খারাপ দৃষ্টিতে দেখি। খাবারের মাঝে গোস্ত বা মাছের কাঁটা ইত্যাদি ছেড়ার জন্য আমরা দাঁতের সাহায্য নেই, অনেকে পাশে থাকা সহপাঠীর সাহায্য পর্যন্ত গ্রহণ করি, তবু বাম হাত ব্যবহার করি না, অথচ এখানে বাম হাত ব্যবহার করার অনুমতি রয়েছে। তাই দাঁতে কষ্ট না করে বা অপরের সাহায্য না নিয়ে বাম হাতের সাহায্য নেয়াই অধিক শ্রেয়।
এ জন্য খাবার শুরুতে উভয় হাত ধুয়ে নেয়া সুন্নত। সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
بَرَكَةُ الطَّعَامِ الْوُضُوءُ قَبْلَهُ وَالْوُضُوءُ بَعْدَهُ “
“… খানার বরকত হচ্ছে তার পূর্বে ও পরে ওযু করা”।[13]
তবে মুখে খাবার অবশ্যই ডান হাতে তুলতে হবে। এ ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে বাম হাতের সাহায্য নেয়া বৈধ।
অনেকে বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণের প্রধান খাদ্য ছিল রুটি বা শক্ত খাবার। তাই খাবার সময় ডান হাতে গ্লাস ধরলে তাতে খাবার লাগত না, কিন্তু আমাদের অধিকাংশ খাবার তরল।
তাই আমাদের প্রয়োজন হয় বাম হাতে গ্লাস ধরা। বস্তুত বিষয়টা পুরোপুরি সঠিক নয়, যদিও তখনকার অধিকাংশ খাবার শুষ্ক ছিল, কিন্তু তরল খাবারও ছিল,
বিশেষ করে “সারিদ”
============
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় খাবার ছিল। গোস্তের শুরবায় রুটি ভিজিয়ে সারিদ তৈরি করা হয়, যা আমাদের ডাল-ভাতের ন্যায় তরল, কিন্তু তবুও কেউ কখনো বর্ণনা করেননি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাম হাতে গ্লাস তুলে ডান হাতের সাহায্য নিয়ে পান করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ছায়ার মত অনুসরণকারী সাহাবি ও জীবন সঙ্গিনী ঘরের স্ত্রীগণ পর্যন্ত দেখেননি তিনি বাম হাতে পাত্র নিয়ে ডান হাতে সামান্য ভর রেখে পান করেছেন!
যদি তারা দেখতেন অবশ্যই বর্ণনা করতেন। অথচ কম হলেও দিনে দুইবার তিনবার খাওয়া-দাওয়ার প্রয়োজন হয়, পানি তো তারচেয়ে বেশী! বরং আমরা দেখতে পাই খাবার দস্তরখানে তিনি নির্দেশ দিচ্ছেন:
” يا غلام سم الله وكل بيمينك وكل مما يليك “
“হে বৎস বিসমিল্লাহ বল, ডান হাতে খাও ও সামনে থেকে খাও”।
অতএব হাতে খাবার লাগা এমন অপারগতা নয় যে কারণে হারাম হালাল হয় ও নিষিদ্ধ কর্ম বৈধ হয়। তাই এসব অজুহাত পেশ করে বাম হাতে পান করা কোন মুসলিমের পক্ষে সমীচীন নয়।
সুতরাং ডান হাতে পানি পান করাই সঠিক ও সুন্নত মোতাবেক। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন।
আল্লাহ ভাল জানেন।
বিষয়: বিবিধ
১১৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন