রাজনীতির নতুন বিনোদন : মন্ত্রীরা শুড মেইনটেইন সাম লেভেল অব শিষ্ঠাচার
লিখেছেন লিখেছেন আবু আশফাক ০৩ এপ্রিল, ২০১৪, ১০:০১:১৯ সকাল
ইদানিং বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিনোদনের মাত্রা একটু বেশি হচ্ছে বলেই মনে হয়। তবে রাজনীতিতে বিনোদনের শুরু ঠিক কবে থেকে তা অবশ্য গবেষণার বিষয়।
দেয়াল নাড়ানো তত্ত্বেরও বহু আগে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিনোদনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আমাদের বিখ্যাত এক রাষ্ট্রনায়ক নানাভাবে আমাদের বিনোদিত করতেন। সাইকেলে চড়ে অফিসে যাওয়ার কসরত দেখানো ছাড়াও তার গোয়েন্দারা হাজির হয়ে যেতেন এক সপ্তাহ আগে আর জুমার আগের রাতে স্বপ্ন দেখে তিনি ওই মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতেন। কবিতা রচনা করতেন। কোনো কোনো পীরের ব্যাপারে স্বপ্নে নির্দেশনা পেয়ে তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করতেন। তার বিনোদন এখনও অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন তিনি আমাদের বিনোদন জোগাচ্ছেন। যেদিন যে চরিত্রে অভিনয় করছেন কথা বলছেন সে চরিত্রের সঙ্গে মিল রেখে। এবং সবাই জানেন, তার কোন কথাই শেষ কথা নয়। তবুও আমরা তার কথাকে গুরুত্ব দেই। সেলুকাস! তবে কোন কিছুই আজ আর বিচিত্র নয়।
হরতাল সমর্থকদের নাড়ানিতে বহুতল ভবন ভেঙে যাওয়ার তত্ত্ব প্রচার করে আলোচিত হন একজন। আরেকজন গরু আর ছাগল চিনলেই ড্রাইভার হওয়া যায় মর্মে মত পেশ করে বিনোদনে নতুন মাত্রা যোগ করেন। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক নেতাদের দেখে হয়তো মনে হওয়াই স্বাভাবিক যে দেশের ড্রাইভার হতে এতটুকু যোগ্যতা হলেই চলে, কিন্তু গাড়ির চালকদের যোগ্যতা যে আরও বেশি প্রয়োজন সেটা তাদেরকে বুঝানোর হয়তো কেউ নাই। সড়ক খুনিদের, যাদের খামখেঁয়ালিতে অনেক সময়ই প্রাণ হারাণ নিরাপরাধ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে কোন হত্যা মামলা না হওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে ছিলেন দুই উজির। অনেকেই তাদেরকে উজিরে খামাখা আখ্যা দিলেও এই হত্যার লাইসেন্স দেয়ার অধিকার যে তারা কোথায় পেলেন তা বোঝা দায়।
নতুন সরকারকে কেউ কেউ অবৈধ সরকার বললেও এ সরকারের মন্ত্রীরা যেন বিনোদন দেয়ায় আরেক কাঠি সরেস! একসময় জোট সরকারের আলোচিত এক প্রতিমন্ত্রী ‘উই আর লুকিং ফর শত্রুজ’ ব্যবহার করে বিনোদন দিয়েছিলেন। সেটা বাংলাদেশের ডিজিটালাইজড মিডিয়ার কল্যাণে(!) এখনও সমানতালে বিনোদন দিয়ে যাচ্ছে। অথচ তার চেয়েও বিচিত্র বাক্য ব্যবহার করেও পূর্ণ মন্ত্রীরা সেভাবে লাইমলাইটে আসতে পারছেন না; এখানেও ঐ বিশেষ শ্রেণীর মিডিয়া ব্যক্তিত্বদেরই কল্যাণে।
মহাজোট সরকারের অর্থমন্ত্রী বিনোদন দেয়ায় বরাবরই প্রথম স্থান অধিকারকারীদের দলে। যদিও তিনি এই গুণ তারই একসময়ের গুরু আলোচিত সেই বিনোদন প্রেসিডেন্টের নিকট থেকে অর্জন করেছেন বলেই অনেকে মনে করেন। ইদানিং তিনি ‘উই আর লুকিং ফর শত্রুজ’কেও যেন হার মানিয়েছেন।
সম্প্রতি তিনি বলেছেন- ‘মন্ত্রীরা শুড মেইনটেইন সাম লেভেল অব শিষ্ঠাচার’। তবে আশার কথা হলো আমাদের সুশিল মিডিয়া এবার আর সেটাকে হেডলাইন করেননি। লিড নিউজতো বহু দুরে। তাদের ‘মন্ত্রীরা শুড মেইনটেইন সাম লেভেল অব শিষ্ঠাচার’ এর অনুবাদিত হেডলাইন হয়েছে- ‘মন্ত্রীদের শিষ্টাচার মেনে চলা উচিত’, ‘মন্ত্রীদের শিষ্টাচার থাকা উচিত’, মন্ত্রীদের শিষ্টাচার লেভেল মেনে চলা উচিত, মন্ত্রীদের শিষ্টাচার নিয়ে প্রশ্ন তুললেন অর্থমন্ত্রী ইত্যাদি।
এই অবস্থা দেখে ‘ডিজিটাল প্রেসিডেন্ট’ নামের এক ফেসবুক উইজার তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন- ’’‘মন্ত্রীরা শুড মেইনটেইন সাম লেভেল অব শিষ্ঠাচার’। এটা কোন ভাষা? বাংLish? আমাদের মিডিয়াগুলো এখন কোথায়? লিড নিউজ হয়না কেন, রম্য রচয়িতাদের এত আকাল কেন?
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর একবার বলেছিলেন- We are looking for শত্রুজ। ব্যস, আর যায় কোথায়? মিডিয়া সেটা নিয়ে লিড নিউজ থেকে শুরু করে মহাকাব্য রচনা করে ফেলেছিল।
কিন্তু বর্তমানে গোপাল ভাঁড়রা যখন প্রতিনিয়ত বাংLish ও হাস্যকর কথাবার্তা আওড়ান তখন এ মিডিয়ামোঘলদের আশ্চর্যজনক নীরবতা বড়ই রহস্যময় ঘটনা।‘’
শাকিল খান নামের একজন বলেছেন- ‘’যাক তাও ভালো আমাদের মনতিরি সাহেবরা ইংরেজীও পারে, বাজাকনা দেশের বারোটা তাতে তার কি!! সে তো ঠিকই টাকা ইনকাম করেছে।‘’
এর আগেও আমাদের এই যোগ্যতম মন্ত্রী 'আই অ্যাম একদম ফেডআপ'সহ নানা রকম বিনোদন আমাদের উপহার দিয়েছিলেন।
তবে এই সব বিশেষ মালদের সেৌভাগ্য (!) যে, তারা এতো সুন্দর বিনোদন দিলেও সেই ডিজিটালাইজড মিডিয়া আমাদের বিনোদনের মর্ম বুঝতে আর সাহায্য করছে না। যতই হোক, একপালের গরু কি না!!
বিষয়: বিবিধ
১৪২৫ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আঁই তো এই কথা হুইনা সাব ধর!!
আবালিস ইবলিসের মধ্যে পার্থক্য কি?
বিশেষ করে যখন টিভিতে খবর দেখি তখন
রঙ্গে ভরা বঙ্গ দেশ
তারই নাম বালাদেশ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন