বিবেক বড় একলা......
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ০২ জানুয়ারি, ২০১৪, ০২:০২:১৬ রাত
আমাদের বাড়িতে ক্ষুদে বই পড়ুয়াদের অভাব নেই। কেউ কেউ আছে বাংলাও পড়তে পারে চমৎকার। এমন একজন সাহিত্য পাঠ করতে গিয়ে ষড় রিপুর কথা জানতে পারলো। নতুন শব্দ খুজে পাবার সাথে সাথেই অর্থ জানার জন্য ছুটে এলো। তাকে বোঝাতে গিয়ে অনেকদিন পর ষড়রিপু নিয়ে চিন্তা করলাম।
ষড়রিপু- কাম, ক্রোধ, ঘৃণা, মোহ, লোভ, হিংসা। কোথায় যেন পড়েছিলাম কাম হচ্ছে- চতুর বাজপাখী, ক্রোধ-দাউ দাউ দাবানল, ঘৃণা-বীভৎস গিরগিটি, মোহ-সুপ্ত আগ্নেয়গিরি, লোভ ক্ষুধার্ত তিমি, হিংসা-খিটখিটে হায়না। আর এদের ভিড়ে বিবেক কেবল একলা মানুষ।
সাইকোলজি নিয়ে কিছুটা পড়াশোনা থাকার কারণে প্রায়ই মানুষের ষড় রিপুকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়। সত্যি সত্যি কারো কারো মনের ভিতর উঁকি দিয়ে দেখতে পাই কিলবিল করছে ঘৃণা। বীভৎস সেই গিরগিটি অক্টোপাসের মতো চারপাশে শুঁড় ছড়িয়ে দিয়ে বিষিয়ে রেখেছে তাদের মনকে।
কল্যাণকামী হবার ইচ্ছে থেকে পাশে দাঁড়িয়ে সহানুভূতির যে শব্দগুলো বলি। তা মুখ থেকে বের হবার সাথে সাথে পুড়িয়ে রাখ করে দেয় কারো কারো ক্রোধের দাউ দাউ আগুন। আকণ্ঠ গিলে ফেলতে চায় কারো মনের লোভ। কারো হতাশাকে মনেহয় ব্ল্যাকহোল। উফফ কি শক্তি তাদের সেই হতাশার বাণীতে। আশার শব্দগুলোকে শুষে নিতে চায় সম্পুর্ন রূপে।
কারো মনকে মনেহয় মরুভূমি। মাইলের পর মাইল ধূ ধূ মরুভূমি। কোথাও প্রাণের ছোঁয়া নেই। এমনকি কাঁটাযুক্ত একটা ক্যাকটাসও না। শুধুই মরীচিকা। কারো মন শুধুই পানিতে টইটুম্বুর। বিশাল এক সমুদ্র যেন। চোখে বাইনোকুলার লাগিয়েও সন্ধান মেলে না কোন দ্বীপের। থৈ থৈ কিংবা অথৈ পানির মহাসাগর।
কিছু কিছু মনে ঢুকতে গেলেই চাপা বোটকা গন্ধ এসে নাকে লাগে। বহু বছর আলোর কোন কিরণ প্রবেশ করেনি বলে ধূলোবালি জমে পুরু হয়ে থাকে যাদের মনের আসবাবপত্র গুলো। এখানে সেখানে মাকড়সার ঝাল। শত চেষ্টা করেও ভেতরে ঢোকা যায় না সেই মন গুলোর। প্রতি কদমে ওতঁ পেতে থাকে অজানা প্রতিকূলতা।
আবার কিছু কিছু মন যেন স্বপ্নপুরী। একদম রূপকথার রাজত্ব। ঝলমল করে যার নগর-বন্দর। কান পাতলেই শোনা যায় পাখীদের কিচির-মিচির, ঝর্ণার নিরবধি কূলকুল বয়ে চলা। দৃষ্টি প্রসারিত করলেই দেখা মেলে ফুলেদের বাগান, প্রজাপতিদের ছোঁয়া ছুয়ি খেলা, আকাশ জোড়া রঙধনু, পেখম মেলা ময়ূর, ঝিকিমিকি তারা।
বেশির ভাগ সময়ই এমন মনের অধিকারী হয় শিশুরা। শিশুদের মনে প্রবৃত্তি তার কালোজাদু চালাতে ব্যর্থ হয় বলেই হয়তো এত সজীব-পবিত্র ও রঙিন থাকে তাদের মন গুলো। শিশুদের বিবেক অনেকটা সদা জাগ্রত অতন্দ্র প্রহরীর মত। জন্মের সময় যেমনটা আসলে প্রতিটা মানুষেই নিয়ে আসে। আর একমাত্র জাগ্রত বিবেকই পারে প্রবৃত্তিকে বধ করতে।
যত বড় হতে থাকে মানুষ বিবেকে লাগতে থাকে গ্রহণ। একটা সময় প্রবৃত্তির আঁধারে পুরোপুরি ঢাকা পড়ে যায় বিবেক। মানুষ যেহেতু অভাস্থ্য হয়ে যায় তাই একটা সময় ভুলেই যায় তার বিবেকের অস্তিত্বের কথা। শুধু প্রবৃত্তির হয় তাদের পথপ্রদর্শক। তাই তারা জানতেই পারে না যে মানব জীবনের সার্থকতা নিহিত বিবেকের দায়বদ্ধতায়।
মানুষকে মানুষ হতে হলে তাকে তার বিবেককে প্রস্ফুটিত করতে হবে। কিন্তু ছয়টি শক্তিশালী প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে বিবেক একলা। অনেকটা আমি একা, বড় একা, আমার আপন কেউ নেই...এমন অবস্থা বিবেকের। ষড়রিপু প্রতি পদে পদে ব্যাহত করতে চেষ্টা করে মানুষের মনুষ্যত্বের বিকাশকে। বিবেকের তাই একমুহুর্তও বিশ্রাম নেই।
কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “হে মানব সম্প্রদায়। তোমাদের প্রভুর নিকট থেকে এসেছে উপদেশ এবং তোমাদের অন্তরের [ব্যাধির] উপশম এবং মুমিনদের জন্য পথ নির্দেশ ও রহমত।” (সূরা ইউনুস-৫৭)
এই আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে-“ সত্যবিমুখতা ও রীপু দ্বারা তারিত হওয়াই হচ্ছে আত্মার ব্যাধি। যার ফলে শেষ পর্যন্ত মানুষের আত্মিক মৃত্যু ঘটে। কুরআনের উপদেশ গ্রহণ করলে অন্তর সে ব্যাধিমুক্ত হয়। কারণ কুরআন হচ্ছে, আল্লাহ্র রহমত স্বরূপ। পৃথিবীর জীবনে যে জীবন বিধান মানুষের জন্য কল্যাণকর, তাই আছে কুরআনের নির্দেশে। আর "আল্লাহ্র ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পন" করাই এই বিধানকে নিজের জীবনে প্রতিফলিত করার একমাত্র উপায়।
বিষয়: বিবিধ
১৭৮১ বার পঠিত, ৩৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মজা পেলাম অনেক আপনার কথায়। আমিও কাউকে পড়তে দিতে চাই না নিজকে। এরজন্য নিজস্ব ভাষায় লিখি আমার বই।
আপনিও তাই করুন। যত বড় অনুবাদকই হোক না কেন পাঠোদ্ধার করতে পারবে না কিছুরই।
ভালো থাকুন।
ভালো থাকো আপুনি।
ভালো থাকুন আপুনি।
ভালো থাকো আপু।
আপনার জন্যও অনেক দোয়া রইলো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন