নাস্তিকতাঃ‬ একটি জঙ্গি ও ভ্রান্ত বিশ্বাস (৫ম পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ২৩ এপ্রিল, ২০১৬, ০৫:১০:২০ বিকাল

পূর্ববর্তী পর্বের লিঙ্কঃ http://www.bdnow.net/blog/blogdetail/detail/1980/ohidul/75991

গত কয়েকটি পর্বে নাস্তিকতার উৎপত্তি, ক্রমবিকাশ এবং এর একটি রূপ সেকুলারিজম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। পরবর্তী কোন অধ্যায়ে বাংলাদেশ এবং ভারতের প্রেক্ষাপটে সেকুলারিজমের নামে ধর্মনিরপেক্ষতার তত্ত্ব, চর্চা এবং বাস্তবতা সম্পর্কে আরো আলোচনার আশা রাখছি।

এ পর্বে নাস্তিকতার আরেকটি চরম রূপ কম্যুনিজম বা সমাজতন্ত্র নিয়ে আলোচনা করবো।

ইহুদী সন্তান কার্ল মার্ক্স এর ভ্রান্ত তত্ত্ব এ কম্যুনিজম। ইহুদীবাদের ষড়যন্ত্রের অংশরূপে খৃস্টধর্মের বিকৃতির সুযোগ নিয়ে যে এ মতবাদের উত্থান নয় সেটি নিশ্চিত করে বলা যায় না। এজন্য খৃস্টধর্মের উর্বর ভূমি ইউরোপকেই কম্যুনিজম আন্দোলনের জন্য বেছে নেয়া হয়। আপাত বিপ্লবী ও দরিদ্র শ্রমজীবি মানুষের পক্ষে শ্লোগানে মুগ্ধ ও বিভ্রান্ত হয়ে দলে দলে মানুষ খৃস্টধর্ম পরিত্যাগ করে কম্যুনিজমের পতাকায় সমবেত হয়। এসবকে মোকাবিলা করার মত কোন চ্যালেঞ্জ খৃস্টধর্ম দিতে পারে নি।

ধর্মকে শোষণের হাতিয়ার, বুর্জোয়াদের অস্ত্র, আফিমসদৃশ, উদ্ভট ও অবান্তর কল্পনা, বর্বর যুগের চিন্তার ফসল ইত্যাদি বলে ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছে এবং পরে তাদের এসব কথার সমর্থনে বিকৃত ধর্মশাস্ত্রের বিভিন্ন বাণী বর্ণনা উদীয়মান তরুণদের সামনে তুলে ধরেছে। সরলমতি তরুণ তরুণীরা সেগুলিতে বিভ্রান্ত হয়ে দলে দলে আশ্রয় নেয় সমাজতন্ত্রের ছায়ায়। কারণ বিকৃত খৃস্টান ধর্মের ধোঁয়াশাপূর্ণ ত্রিতত্ত্ববাদ ও বাইবেল এর পরস্পরবিরোধী বক্তব্যসমূহে বিভ্রান্ত হয়ে তরুণ প্রজন্ম আগে হতেই একটি যুতসই বিকল্প খুঁজছিল। কম্যুনিজমের প্রবল ঢেউ যখন আছড়ে পড়ে তখন খৃস্টধর্ম এতটাই বিকৃতি আর অচল হয়ে পড়ে যে তা কোন প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারে নি। একটি পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েই উদাহরণ দেয়া যাক।

সমালোচনা নয়, স্রেফ ইতিহাস আলোচনা প্রসঙ্গে সত্যকে সত্য বলে তুলে ধরার প্রয়োজনেেই এসব বলতে হচ্ছে।

বাইবেলে Doctrine of Atonement বা প্রায়শ্চিত্যবাদ নামক মতবাদে বলা হয়েছে, “যীশু নিজেই খৃস্টজগতের যাবতীয় পাপের প্রায়শ্চিত্য করে গেছেন; সুতরাং খৃস্টানরা যত পাপই করুক না কেন, তাদের কোনরূপ শাস্তি বা প্রায়শ্চিত্য ভোগ করতে হবে না”। আবার বাইবেল, যিহিস্কেল ১১ অ. ৩১পদ, ১৮অ.২০পদ এবং ২২অ৩১পদে যথাক্রমে লিখিত রয়েছে “যে প্রাণী পাপ করবে সেই মরবে(ক্ষতিগ্রস্ত হবে), পুত্র পিতার অপরাধ ভোগ করিবে না ও পিতা পুত্রের অপরাধ ভোগ করিবেন না। ধার্মিক আপন ধর্মের ফল ভোগ করবে ও দুষ্ট আপন দুষ্টমিল ফল ভোগ করবে।” বলাবাহুল্য ইহুদী ষড়যন্ত্রকারীরাও বাইবেলের এমন বিকৃতির সাথে নানা কূটকৌশলে জড়িত ছিল। সে যাই হোক, বাইবেলের এমন পরস্পরবিরোধী, অযৌক্তিক ও অবিশ্বাস্য বক্তব্যসমূহের কারণেই ধর্মবিরোধী কম্যুনিজম চক্র ধর্মকে ‘মিথ্যা’, ‘আফিমসদৃশ’, ‘বর্বরযুগীয়’ প্রভৃতি বলার সহজ সুযোগ পেয়েছিল।

কম্যুনিজম শুরু হতেই বিপ্লবের নামে চরমতম জঙ্গিরূপে আত্মপ্রকাশ করে। খুন, গুপ্তহত্যা, জনবহুল অঞ্চলে অকস্মাৎ হামলা এভাবে রাষ্ট্রীয় শক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে থাকে কম্যুনিজম শক্তি। জার্মান, ব্রিটিশ, পোল্যান্ড, ইতালী, রাশিয়ায় চলতে থাকে কম্যুনিজমের তৎপরতা। ১৮৪৫ সালের জানুয়ারিতে কার্ল মার্ক্স কর্তৃক প্রুশিয়ার রাজা ফ্রিডরিক উইলিয়াম ৪-কে হত্যার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে মার্ক্সসহ সকল কম্যুনিস্টকে প্যারিস থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তী কয়েকবছর বিশেষ করে ১৯৪৮ সালে ইউরোপজুড়ে প্রচুর গুপ্তহত্যা চলে সমাজতন্ত্রবাদীদের হাতে। এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত বলতে গেলে ধান ভানতে শিবের গীতের মত অবস্থা হয়ে যায়। তাই কলেবর বৃদ্ধি না করে সংক্ষেপ করার চেষ্টা করছি।

রাশিয়ায় অক্টোবর বিপ্লবের অনেক আগেই মার্ক্সবাদের প্রবক্তা কার্ল মার্ক্স ১৮৮৩ সালে মারা যান। এর পর নানা ঘটনা দূর্ঘটনায় বিশ্ব কম্যুনিষ্ট আন্দোলনের নেতৃত্ব আসে ভ্লাদিমির লেনিন এর হাতে। তিনি মার্ক্সবাদের সাথে নিজস্ব আরো কিছু চিন্তাধারা যোগ করেন। তার হাত ধরেই রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রী তল বলশেভিক পার্টির সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব অথবা বলশেভিক বিপ্লব সংঘটিত হয় ১৯১৭ সালে । এটি জুলিয়ান বর্ষপঞ্জী অনুসারে ২৫ অক্টোবর ১৯১৭ এবং গ্রেগোরিয়ান বর্ষপঞ্জী অনুসারে ৭ নভেম্বর ১৯১৭ তারিখে সেন্ট পিটার্সবার্গে একটি সশস্ত্র অভ্যুত্থানের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল। রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হন ভ্লাদিমির লেনিন। পার্টিতে লেনিনের পরে অবস্থান ছিল ট্রটস্কীর। কিন্তু নানা কূটকৌশলে ট্রটস্কীকে হটিয়ে ১৯২৪ সালে লেনিন এর মৃত্যুর পর রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন যোসেফ স্টালিন। ক্ষমতালোভী স্টালিন ১৯২৭ সালে ট্রটস্কীকে পার্টি হতে বহিষ্কার করেন ও ১৯২৯ সালে নির্বাসনে পাঠান। মেক্সিকোতে অবস্থানকালে ট্রটস্কী ১৯৪০ সালে আততায়ীর হাতে নিহত হন। তাঁর মৃত্যুর পেছনে স্টালিনের হাত আছে বলে অনেকে মনে করেন।

পৃথিবীর সেরা দশ ঠান্ডা মাথার খুনীর একজন হিসেবে যোসেফ স্টালিনকে বিবেচনা করা হয়। এক হিসেবমতে, যোসেফ স্টালিন কর্তৃক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ নিহত হয়। কম্যুনিস্ট বিরোধী বিবেচনায় নিজের অনেক বন্ধু, আত্মীয় স্বজন এমনকি অন্তদ্বর্ন্ধে নিজ দলের প্রচুর নেতাকর্মীকেও হত্যা করেন স্টালিন। তার এ কাজে প্রধান সহযোগী ছিলেন নিকিতা ক্রুশ্চেভ ১৯৫৩ সালে স্টালিন এর মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পরে কমিউনিস্ট পার্টির বিংশতি কংগ্রেসে (১৯৫৬) তৎকালীন সম্পাদক নিকিতা ক্রুশ্চেভ প্রথম সরব হন স্ট্যালিন এর গুপ্তহত্যার বিরুদ্ধে। অনেক তথ্য তিনি পার্টির সভায় তুলে ধরেন। এর মাঝে সভায় গুঞ্জরণ উঠলো। একজন বললেন-‘আপনিতো তখন তার সহযোগী ছিলেন। তখন চুপ ছিলেন কেন? এখন কেন বড় বড় বুলি আওড়াচ্ছেন?’ ক্রুশ্চেভ এবার গর্জে উঠলেন-‘কে? কে বললো এ কথা? তাকে গুলি করা হবে।’ এবার সবাই চুপ, পিনপতন নীরবতা। খানিকপরই মুখ খুললেন ক্রুশ্চেভ, ‘আপনারা এখন গুলির ভয়ে চুপ আছেন। সাহস করে কিছু বলছেন না। এ একই ভয়ে আমিও তখন চুপ ছিলাম।’

(চলবে…………..)

(পাদটীকাঃ এ পর্বটি একটু ছোট করে দিলাম। বড় লেখা অনেকেই পড়তে চান না। তাই এখন হতে পর্বগুলি ছোট ছোট করে হবে)।

বিষয়: বিবিধ

১৩২৩ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

366830
২৩ এপ্রিল ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:১০
তট রেখা লিখেছেন : ধন্যবাদ। চালিয়ে যান।
২৪ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ০৯:৫৯
304432
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : ইনশাল্লাহ, সাথেই থাকুন।
366831
২৩ এপ্রিল ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:১১
কুয়েত থেকে লিখেছেন : ধন্যবাদ লেখাটির জন্য কার্ল মার্ক্স এর ভ্রান্ত তত্ত্ব এ কম্যুনিজম ইহুদীবাদের ষড়যন্ত্রের অংশরূপে খৃস্টধর্মের বিকৃতির সুযোগ নিয়েই এ মতবাদের উত্থান। বিশ্বকে বিভ্রাতির জন্যই এদের উত্থান
২৪ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ১০:০০
304433
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ। সাথে থাকার জন্য শুভেচ্ছা।Good Luck
366834
২৩ এপ্রিল ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৪৭
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ পিলাচ
২৪ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ১০:০০
304434
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck
366835
২৩ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৮:০৪
শেখের পোলা লিখেছেন : অনেক পুরাণো ইতিহাস৷ তবুও পড়লাম৷ ধন্যবাদ৷ চলুক৷
২৪ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ১০:০০
304435
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ। আপনাকে নিয়মিত পাচ্ছি। অনুপ্রেরণাদায়ক মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ জানবেন।
366852
২৩ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৯:৪৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৪ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ১০:০১
304436
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ। আপনাকেও নিয়মিত পাচ্ছি। অনুপ্রেরণাদায়ক মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ জানবেন।
366885
২৪ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ০৭:৪১
নিমু মাহবুব লিখেছেন : "Tale of two cities " থেকেও সমাজতন্ত্রীদের হাজার হাজার নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রমাণ মিলে।
এই নাস্তিকরা সাম্যবাদের কথা বলে সবচেয়ে অসাম্য ও জংলিপনির সৃষ্টি করে।
২৪ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ১০:০১
304437
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : এরাই সবচেয়ে বড় জঙ্গি। জাযাকাল্লাহ।
370990
০৪ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:১৫
আবু নাইম লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
০৫ জুন ২০১৬ সকাল ০৯:১২
307881
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ।
371094
০৫ জুন ২০১৬ বিকাল ০৫:৪৫
ক্রুসেড বিজেতা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ,, ভালো লাগলো লেখাটি পড়ে, ধারা অব্যাহত থাকুক,, পবিত্র রমজানের শুভেচ্ছা ।
০৬ জুন ২০১৬ দুপুর ০৩:০৯
307991
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : আপনাকেও পবিত্র রমজানের শুভেচ্ছা মুহতারাম।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File