ঘর হতে দু্ই পা ফেলিয়া (শেষ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ১৯ মে, ২০১৪, ১২:৫৮:১৮ দুপুর
ঘর হতে দু্ই পা ফেলিয়া (প্রথম পর্ব)
রেস্টুরেন্ট হতে বের হয়ে বিদায় নিতে নিতে ঘড়ির কাঁটা রাত ১০ টা ছুঁই ছুঁই। বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় ১১ টা।
ইতিমধ্যে ব্লগার মেরাজ ভাই চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন সপরিবারে সে বিকেলেই। ভাবছিলাম স্টেশনে গিয়ে উনাকে রিসিভ করবো সবাই মিলে। কিন্তু বেরসিক রেলওয়ের সেবার মান এত উন্নীত হয়েছে যে, বি বাড়িয়া হতে চট্টগ্রাম আসতে সময় নিয়েছে মাত্র ৯ ঘন্টা!! পরে জানলাম, রাত দুটোয় মেরাজ ভাই চট্টগ্রাম এসে পৌছলেন।
পরদিন বান্দরবান যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গরমের কারণে বউ তীব্র আপত্তি করলো। আবার এদিকে কক্সবাজারে প্রিয় বন্ধুদের গেট টুগেদার এর তারিখ একদিন এগিয়ে আনা হলো। তাই বান্দরবান ট্যুর প্ল্যান ক্যানসেল করে পরদিন আমরা সাড়ে ছয়টায় রওয়ানা হলাম কক্সবাজার এর উদ্দেশ্যে। ঢাকা হতে ব্লগার মওলানা ইসহাক খান জুনিয়র খান সহ রওয়ানা দিয়েছেন ইতিমধ্যে, ফোনে কনফার্ম করলেন।
আমরা সকাল দশটার মধ্যেই পৌছে গেলাম কক্সবাজার। ছোটভাই এর রেফারেন্স এ উঠলাম Resort Islandia তে। অফ-সিজন, ৬০% কমিশন হোটেল ভাড়ার উপর। আমি পেলাম ৭৫% কমিশন। ৪০০০ টাকার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্যুট মিললো মাত্র ১০০০ টাকায়। বীচের মোটামুটি কাছেই। ছোট বারান্দার ছাড়াও বড় ড্রয়িং রুম ছিল আলাদা। বেড রুম হতে সাগর দেখা যায় খুব সুন্দরভাবে।
(এ মুহুর্তে ছবিগুলো নেই, পরে এড করবো ইনশাল্লাহ)।
বেডরুম হতে সাগর দেখতে দেখতে একটু রেস্ট নিচ্ছিলাম, ভাবছি লাঞ্চ শেষে বীচ দেখতে বের হবো। ভাবছি-আগামীকাল তো বন্ধুদের সাথে গেট টুগেদার, পরশুদিন মেরাজ ভাইসহ হিমছড়ি আর ইনানী বীচ দেখতে যাব।
এমন সময় অফিস হতে বেরসিক ফোন, জরুরী তলব। ছুটি বাতিল করে আসতে বলে। ফোনে যতটুকু সম্ভব সমাধান দিলাম। তারপরও ছুটি দু্ই দিন কাট করতে হলো। মনটাই বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল। বউয়ের সাথে শেয়ার করলাম। ভাবলাম, মন খারাপ করবে।
কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে বুদ্ধি দিলঃ বেড়াতে এসে এত রেস্ট নেয়ার দরকার নেই। বরং আজই হিমছড়ি আর ইনানী ঘুরে আসি। কাল সবার সাথে গেট টুগেদার শেষে বিকেলে আমরা চট্টগ্রাম ফিরে যাই। পরশুদিন গ্রামের বাড়ি আর তার পরদিন ঢাকা।
বউয়ের বুদ্ধিটা মনে ধরলো। ঘন্টা দুয়েক পর একটি ট্যাক্সি নিয়ে রওয়ানা হলাম হিমছড়ি আর ইনানীর উদ্দেশ্যে। কলাতলী মেরিন ড্রাইভ রোড ধরে এগিয়ে চলছে ট্যাক্সি। বামে পাহাড়, ডানে উন্মত্ত সাগরের শোঁ শোঁ গর্জন। পাহাড় ও সাগরের এমন সমন্বিত অপরূপ সৌন্দর্য্য এর পূর্বে আর দেখা হয়নি।
এক অপার বিস্ময়! এক বিরল দৃশ্য!!মহান আল্লাহর এক অসাধারণ নিদর্শন!!!
وَأَلْقَىٰ فِي الْأَرْضِ رَوَاسِيَ أَن تَمِيدَ بِكُمْ وَأَنْهَارًا وَسُبُلًا لَّعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ [١٦:١٥]
“এবং তিনি পৃথিবীর উপর বোঝা রেখেছেন যে, কখনো যেন তা তোমাদেরকে নিয়ে হেলে-দুলে না পড়ে এবং নদী ও পথ তৈরী করেছেন, যাতে তোমরা পথ প্রদর্শিত হও।”[১৬:১৫].
হিমছড়ি পেছনে ফেলে সোজা ইনানী বীচ চলে এলাম আসার পথে হিমছড়ি দেখবো বলে। এ ভরদুপুরে ইনানী বীচ এসে বিপদেই পড়লাম। পর্যটক একেবারে কম নয়, তবে ঠা ঠা রোদে সবার অবস্থা কাহিল। ডাব খেলাম, টুকটাক কেনাকাটা করলাম। রোদের জন্য ঘন্টাখানেকের বেশি থাকা সম্ভব হয়নি ইনানীতে। বুঝলাম কিছুটা বোকামি হয়েছে, ইনানী বীচে আসার সময় পারফেক্ট টাইম বিকেলে।
ইনানী বীচ--
ফেরার পথে এবার হিমছড়ি যাত্রাবিরতি করলাম। হিমছড়ির ঝর্ণাটা অসাধারণ লাগলো। প্রচুর ছবি তুললাম। বার্মিজ স্যান্ডেল, আচার, ফতুয়া, খেলনা আরো টুকটাক কেনাকাটা করলাম নিজেদের জন্য ও নিকটজনদের গিফট করার জন্য।
কক্সবাজার ফিরতে ফিরতে সাড়ে ৪টা বেজে গেল। জব্বর খিদে পেয়েছে। নিরিবিলি দেখে একটি রেস্টুরেন্ট এ গেলাম। নানা রকম ভর্তা ভাজি, শুঁটকি ও সামুদ্রিক মাছ দিয়ে লাঞ্চ করলাম বেশ তৃপ্তি সহকারে।
হোটেলে ফিরে দুই ঘন্টার মত বিশ্রাম নিলাম। সন্ধ্যার পর বের হলাম কলাতলী বীচের উদ্দেশ্যে। অন্ধকারে ডিভাইনে শুয়ে সাগরের শোঁ শোঁ গর্জন এর সাথে মন মাতানো ঠান্ডা বাতাস বেশ উপভোগ করার মতো। কয়েকঘন্টা ছিলাম। খেয়ে দেয়ে হোটেলে ফিরলাম। ইতিমধ্যে মেরাজ ভাই পৌছে গেছেন কক্সবাজার ভাবি আর উনার কিউট সুইট দুই বাচ্চাকে নিয়ে। একই হোটেলে পাশের স্যুটে আগেই বুকিং দেয়া ছিল। রিসিভ করে সকালে দেখা হবে বলে বিদায় নিলাম।
পরদিন সকাল ১০ টার মধ্যে ব্লগার চাটিগাঁ হতে বাহার ভাই, কামাল ভাই, জুনিয়রকে নিয়ে খান ভাই ও ব্লগার নজরুল ইসলাম ভাই উপস্থিত কক্সবাজারে। একটু আড্ডা শেষে সবাই হৈ হৈ করে আবার সাগরে নামলাম।
জুনিয়রকে নিয়ে দারুণ মেতেছেন খান ভাই।
আরো কিছু ছবি-
বীচ হতে ফিরে জুমার নামাজ পড়তে গেলাম সবাই।
জুমার নামাজে যাওয়ার পথে এ দুই সুপার হিরো ধরা পড়লো আমার ক্যামেরায়-
নামায শেষে এবার লাঞ্চের পালা। ঝাউবন রেস্তোরায় গেলাম সকলে। কোরাল মাছ, শুঁটকী ও কয়েক ধরনের ভর্তা, গরুর গোশতের কালাভুনা দিয়ে সবাই সারলাম দুপুরের লাঞ্চ। লাঞ্চের আগে আরো এক ধাপ আড্ডা হয়ে গেল রেস্টুরেন্ট এ বসেই।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল। এবার ফেরার পালা। মেরাজ ভাই থাকবেন আরো দুই দিন। বাকীরা বিদায় নিলাম। রওনা হলাম চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। বিদায় কক্সবাজার, বিদায়!
চট্টগ্রামে আমাদের সাথে সাক্ষাত করার জন্য কয়েকজন ব্লগার, লেখক ও কবি উপস্থিত ছিলেন, বিশেষ করে- হাসান বিন নজরুল ও সৈয়দ সালাহউদ্দীন মাহমুদ। কিন্তু যানজটে পড়ে অনাকাঙ্খিত দেরী হয়ে গেল। তবুও তারা অপেক্ষা করেছিলেন কয়েকঘন্টা পর্যন্ত বহদ্দারহাট টার্মিনালে। কিন্তু আমরা ভুল করে গাড়ি হতে নেমে গেলাম বহদ্দারহাট কাউন্টারে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। রাত তখন ১০ টা ছাড়িয়ে, সাথে বউ বাচ্চা, তাই বেশি অপেক্ষা করা সম্ভব হয়নি। দেখা হয়নি শেষ পর্যন্ত। আজ এ পোস্টের মাধ্যমে প্রিয় ভাইদের নিকট ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
বিষয়: বিবিধ
১৮৯১ বার পঠিত, ৩৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার লেখা পড়ে আর ছবিগুলো অনেক ভাল লাগল । অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
আপনিতো সম্ভবত প্রবাসী। দেশে আসলে কক্সবাজার বেড়িয়ে আসবেন, ভালো লাগবে অনেক।
আমার জীবনের শ্রেষ্ট অর্জন কিন্তু সাগর, একটি দু:সাহসী সমুদ্র অভিযান
চান্স যখন পেয়েছি একটু বাজিয়ে নিলাম নিজের ঢোল.... হা হা হা
প্রথম পর্ব পড়ুন, আপনার জন্য কিছু আছে সেখানে।
নাইলে আমারও একটা ছবি থাকত।
চট্টগ্রাম অবশ্য আমার খুউব প্রিয় শহর। এইচএসসি পাশের পর মেডিকেল কোচিং এর সুবাদে একটানা অনেকদিন ছিলাম চট্টগ্রাম। ফয়েজলেক হয়েই যেতাম জিইসি মোড় কোচিং করতে।
তখন ফয়েজলেক ছিল উন্মুক্ত। কোচিং এ আসা যাওয়ার পথে মাঝে মাঝেই ঢুঁ মারতাম প্রিয় ফয়েজলেক এ।
আমি জীবনের অধিকাংশ সময় দেশের বাইরে অথবা ঢাকায় থাকলেও চট্টগ্রাম আমারও খুব প্রিয়
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/1980/ohidul/45397#.U4Bf-Ha3TDc
মন্তব্য করতে লগইন করুন