এ বর্বরতার শেষ কোথায়? সংখ্যাগুরু হওয়াই কি মুসলমানদের অপরাধ?
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ১৯ নভেম্বর, ২০১৩, ১২:৩৮:৪২ দুপুর
এ লেখা যখন লিখছি, আমি সত্যি সত্যি কাঁদছি। কম্পিউটারের মনিটর ঝাপসা দেখছি। আমি আতঙ্কিত, আমি ক্ষুব্ধ, আমি ব্যথিত।
বরিশালে মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে পৃথক দুটি ঘটনায় ছয়জন মুসলমান শিশু কিশোরকে জবাই করেছে সংখ্যালঘু তকমা নিয়ে সহানুভূতি পাওয়া বর্বর সন্ত্রাসীরা। পৃথক এ দুটি ঘটনায় দুই জন নিহত ও বাকিদের অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক।
প্রথম ঘটনাঃ
ঘটনাস্থল বরিশালের চরকাউয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ। ব্যাডমিন্টন খেলায় তর্ক বিতর্ককে কেন্দ্র করে কয়েকজন হিন্দু যুবক পারভেজ নামের একটি মুসলমান ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে জবাই করে হত্যা করে। পরিকল্পিত বলছি। কারণ - সাথে করে তারা ছোরা নিয়েই এসেছিল। ব্যাডমিন্টন খেলার আগেও পারভেজ এর সাথে ঝগড়া হয়েছিল।বাবা সেলিম গাজী অভিযোগ করেন, ক্রিকেট খেলা নিয়ে কিছুদিন আগে পীযূষ, শান্ত, শ্যামল, ধীমানসহ কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর ছেলের হাতাহাতি হয়েছিল। ওই ঘটনাকে মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার ব্যাডমিন্টন খেলার সময় পরিকল্পিতভাবে পারভেজকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। বাধা দিতে গেলে শামীম গাজী ও জহিরুল ইসলাম নামক আরো দুজনকে কোপানো হয় যাদের অবস্থা আশংকাজনক।ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় হিন্দুপাড়ায় কিছু বাড়িঘর পোড়ানো হয়, তবে কেউ হতাহত হয়নি।এ ঘটনা নিয়ে প্রথম আলোর রিপোর্ট- ”খেলা নিয়ে খুন, তারপর হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন।” রিপোর্ট এর শিরোনাম শুনে মনে হয়- খেলা নিয়ে খুন করা কোন অপরাধ নয় তবে রক্তপাতহীন অগ্নিকান্ড বিরাট অপরাধ ।প্রতিবেদনটি শুরু হয়েছে মর্মস্পর্শী আবেগ দিয়ে-পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে গলায় রশি বাঁধা দুটি গরু। ধান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখানে-সেখানে পড়ে আছে গৃহস্থালি নানা সামগ্রী—সব পোড়া। ঘরের আশপাশে থাকা গাছের নারকেলগুলো পর্যন্ত পুড়ে গেছে। ভস্মীভূত ঘরগুলোর নানা জায়গা থেকে (ঘটনার ২৭ ঘণ্টা পর) ধোঁয়া বেরোচ্ছে। এই চিত্র বরিশালের চর কাউয়ার কালীখোলা গ্রামের পণ্ডিতবাড়ির। এক দিন আগেও যাঁদের বাড়িঘর ছিল, গতকাল শনিবার সেই হিন্দুদের পাওয়া গেল ত্রাণের লাইনে।সাথে পুড়ে যাওয়া একটি বাড়ির ছবি।
http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/75520/খেলা_নিয়ে_খুন_তারপর_হিন্দুদের_বাড়িঘরে_আগুন
হিন্দুদের আক্রমনে শহীদ পারভেজ গাজীর মা পারভীন বেগম বুকফাটা আর্তনাদ নিয়েবলেছেন, “পত্রিকা ও টিভিতে অপনারা শুধু একতরফাভাবে আগুনে পোড়া বাড়িঘরের ছবি দেখাচ্ছেন; কিন্তু আমার পারভেজকে যে মন্দিরের সামনে গাছের সাথে বেঁধে ঝুলিয়ে এবং রাস্তার ওপর ফেলে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে, সেই রক্তের ছবি কি আপনাদের চোখে পড়ে না? আমি আমার জায়গা-জমি সব বিক্রি করে হিন্দুদের বাড়িঘর পোড়ানোর ক্ষতিপূরণ দেবো, তবে আপনারা আমার পারভেজকে এনে দেন!”
এ ঘটনা নিয়ে পরষ্পর বিরোধী দুটি মামলা হয়েছে। হিন্দুরা যে প্রশাসনকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে হিন্দুদের মামলার আসামী সংখ্যা দেখলে স্পষ্ট হয়ে যায়। মুসলমানরা এক হত্যা মামলার জন্য আসামী করেছে ১৩ সন্ত্রাসী হিন্দুকে। সেখানে হিন্দুরা মামলা করেছে দেশ হাজার জনকে আসামী করে (http://www.amaderbarisal.com/news/55709.aspx) আর এতে হিন্দুদের জন্য ঘরছাড়া হয় এলাকার সমস্ত মুসলমান পুরুষ।
দ্বিতীয় ঘটনাঃ
এ ঘটনাটি আরো মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক। তিন শিশুকে জবাই করেছে নয়ন বালা নামক এক হিন্দু সন্ত্রাসী। একজন নিহত ও বাকি দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কিন্তু এ ঘটনা নিয়ে মিডিয়ায় নেই কোন সংবাদ। দুই একটি অনলাইন মিডিয়া খবরটি দিয়েছে বিকৃতভাবে। যদিও এ হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত, কিন্তু মিডিয়াগুলো হিন্দু সন্ত্রাসী নয়ন বালাকে মাদকাসক্ত (প্রকৃতপক্ষে হত্যাকান্ডের সময় যাতে কোন দয়ামায়া না আসে এজন্য সে আগে মাদক সেবন করেছিল) বলে ঘটনার মোড় অন্যদিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে। শুধু তাই না, প্রশাসনের সমস্ত উর্ধ্বতন কর্মকর্তা (বরিশাল-১ আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস, বরিশালের পুলিশ সুপার মো. এহসান উল্লাহ, সহকারী পুলিশ সুপার অশোক নন্দী, সুদীপ্ত সরকার, , গৌরনদী থানার ওসি নাজমুল করিম) ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়। তবে নিহতের পিতা হিন্দু সন্ত্রাসী নয়ন বালা ছাড়াও তার বাবা অমল বালা, চাচা দুলাল বালা, চাচী রুনু বালা, পুস্প বালা, সুবর্ন বালাকে দোষী বলে উল্লেখ করলে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে।
পাঠকদের প্রকৃত ঘটনাটি বুঝার সুবিধার্থে জনৈক ফেসবুক ইউজার এর নোট ও একটি অনলাইন মিডিয়ার সংশ্লিষ্ট নিউজলিংক দিচ্ছি -
http://risingbd.com/detailsnews.php?nssl=c8f0521f5bda726a6f4380142e5b6e6a&nttl=24802#.UorzNSdp415
https://m.facebook.com/notes/des-wa/%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%B6-%E0%A6%A8%E0%A7%8B%E0%A6%9F-%E0%A6%8F%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%A8-%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%AE-%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%9C%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%87-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%B2%E0%A7%8B-%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%81-%E0%A6%B8%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%80%E0%A6%B0%E0%A6%BE-%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%B0%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A6%BF-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2/418307641632015/?refid=8&_ft_=qid.5947715624006839987%3Amf_story_key.-7335175175392537257&fbt_id=418307641632015&_rdr#s_81f5f12b6972168b46d5541e83629e00
খুবই প্রাসঙ্গিক কিছু প্রশ্ন-
১। জবাই করে পরিকল্পিত বর্বর হত্যাকান্ড বেশি অপরাধ নাকি স্বজন হারানো ক্ষুব্ধ জনতার রক্তপাতহীন অগ্নিকান্ড বেশি অপরাধ ? ( আমি মোটেও অগ্নিকান্ডকে সমর্থন করছিনা। কিন্তু একটু ভাবুন যার সন্তানকে জবাই করা হয়েছে, যে গ্রামের সন্তানকে জবাই করা হয়েছে তাদের ক্ষোভ আর অনুভূতির কথা একটু ভাবুন। আদৌ কি ভালো মন্দ বিবেচনা করার মত অবস্থায় তারা ছিলেন?)
২। ইত্তেফাকসহ কয়েকটি মিডিয়া জবাই এর কথা বললেও প্রথম আলো কেন স্রেফ কুপিয়ে হত্যার কথা বলছে?
৩। নিহত পারভেজ এর লাশের ছবি না দিয়ে পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ির ছবি দেয়ার উদ্দেশ্য কি? দুটি গরু হত্যার নিয়ে মর্মস্পর্শী মায়াকান্না কিন্তু পারভেজ এর নির্মম খুনকে কোন ঘটনাই মনে করা হচ্ছেনা কেন?
৪। ধরুণ পারভেজ নয়, কোন এক গ্রামের হিন্দু ছেলে নিহত হয়েছে অপর এক গ্রামের হিন্দু ছেলের হাতে। সেক্ষেত্রে ও কি অনুরূপ প্রতিক্রিয়া হতোনা? তখন কি মিডিয়া ঘটনা এতটা ফোকাস করতো নাকি এড়িয়ে যেত?
৫। নরসিংদীতে মেয়র লোকমান হত্যার পর আওয়ামীলীগ ছাত্রলীগ এর নজিরবিহীন তান্ডব, নৈরাজ্য ও রেলগাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় প্রথম আলোর রিপোর্ট ছিল- শোকের শহরে ক্ষোভের আগুন, যা অন্যায়ের প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থন। তাহলে কি শোকগ্রস্ত হয়ে ক্ষোভ জানানোর অধিকার শুধু আওয়ামীলীগ এর আছে? আর কারো নেই?
৬। সংঘাত উস্কে দিয়ে , বিদেশীদের কাছে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রাষ্ট্র প্রমাণ করে এসব মিডিয়া কাদের স্বার্থ রক্ষা করছে?
৭।প্রথম ঘটনায় উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে যে মিডিয়া লিডীং স্টোরি ছাপিয়েছে সে মিডিয়া দ্বিতীয় বর্বর ঘটনাটিকে কেন আড়াল করেছে?
৮। এদেশে কি সংখ্যাগুরুদের কোন অধিকার থাকতে নেই? ৯০% সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়েও কেন সংখ্যালঘু কর্তৃক নির্যাতিত হতে হবে? এমনকি নির্যাতিত হওয়ার পরও কেন মিডিয়ার হলুদ সাংবাদিকতার কারণে উল্টো দোষী সাব্যস্ত হতে হবে? কেন থানা পুলিশ কর্তৃক সংখ্যাগুরুদের হয়রানির শিকার হতে হবে?
৯। এ বর্বরতার শেষ কোথায়?
১০। সংখ্যাগুরু হওয়াই কি এদেশের মুসলমানদের অপরাধ?
প্রতিটি বিবেকবান মানুষকে একটু হৃদয় দিয়ে বিবেক দিয়ে চিন্তা করার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
বিষয়: বিবিধ
১৯৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন