হে আল্লাহ! আমার মামা মখাকে হেফাজত করো!
লিখেছেন লিখেছেন বিদ্রোহী রণক্লান্ত ০৩ মে, ২০১৩, ০৬:০৮:১৫ সকাল
আহ, তিনি যদি আমার মামা হতেন! তবে আল্লাহর নিকট প্রাণ খুলে দোয়া করতাম- হে আল্লাহ, তুমি আমার মামা মখাকে সহি সালামতে রাখো। দুষ্ট পোলাপানের অপপ্রচার থেকে হেফাজত করো। বিস্তারিত বলার পূর্বে বলে নেই- কেনো আমি তাকে মামা বলতে চাই?
সাধারণত কোনো শক্তিশালী মানুষকেই মানুষ মামা বানাতে চায়। প্রকৃতির বিক্রমশালী জন্তু জানোয়ারকেও আমরা মামা বলি। যেমন বাঘ মামা, সিংহ মামা। এমনকি সত্যজিৎ রায় এর মতো মহান ব্যক্তিও ওদেরকে মামা ডেকেছেন। তার ‘গোপী গাইন বাঘা বাইন’ ছবি কিংবা ‘হীরক রাজার দেশে’ এসবের কিছু উদাহরণ আছে।
সম্প্রতি সাভার ট্রাজেডি নিয়ে মামার একটি মুখ ফসকে বের হওয়া অপাঙক্তেয়, অপ্রয়োজনীয় এবং অসতর্ক মন্তব্যের পর দেশে সমালোচনার ঝড় বইছে। বুদ্ধিজীবী, সেমি বুদ্ধিজীবী, গৃহবধু থেকে চ্যাংড়া পোলাপান পর্যন্ত তাকে নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করছে। কেউ যদি কেবল সমালোচনা করতো তাহলে না হয় সহ্য করা যেত কিন্তু শক্তিশালী মানুষ নিয়ে ঠাট্টা মশকরা শুরু হলে বিশেষত চ্যাংড়া পোলাপানে করলে ব্যক্তিটির পাগল হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
এ প্রসঙ্গে আমার এক পাগলা মামার ঘটনা বলে নেই। অনেকেই চান্দু পাগলা বলতো। আসল নাম ছিল চাঁন মিয়া তালুকদার। বেশ হ্যান্ডসাম, ধনশালী এবং প্রভাবশালী লোক ছিলেন। ৫৫ বছর বয়সের সময় পাগল হয়ে গেলেন। তাও আবার চ্যাংড়া পোলাপানের কারণে। একদিন বাজার থেকে মামা ফিরছিলেন বড় একটি সবরি কলাগাছের চারা নিয়ে। লোকজন জিজ্ঞাসা করলো- তারুকদার সাব, চারা গাছের দাম কত? তিনি বললেন- দেড় টাকা। পাশেই ৪/৫ টা চ্যাংড়া পোলাপান ছিল। তারা ভারি আশ্চর্য হলো। কলা গাছ কেউ আবার দেড় টাকা দিয়ে কেনে নাকি! সময়টা ১৯৭৪ সাল। টাকার অনেক দাম। দেশে তখন দুর্ভিক্ষ চলছে। মানুষ ভাত পায় না। অন্যদিকে, চাঁন মিয়া তালুকদার দেড় টাকা দিয়ে কলাগাছ কিনেছে। মুহূর্তের মধ্যে খবরটি রাষ্ট্র হয়ে গেল ৩/৪ টি গ্রামের মধ্যে। চাঁন মিয়া তারুকদার রাস্তায় বের হলেই মানুষ জিজ্ঞাসা করে- কি গো তারুকদার সাব, আপনি নাকি দেড় টাকা দিয়ে কলা গাছের চারা কিনেছেন? প্রথম প্রথম তিনি খুব আহ্লাদিত বোধ করতেন। কিন্তু কিছুদিন যেতেই তারা কাছে এই বিসয় নিয়ে কেউ জিজ্ঞাসা করলেই ক্ষেপে যেতেন। মামার এই ক্ষ্যাপাটে অবস্থা দেখে চ্যাংড়া পোলাপান খুব মজা পেত। তাকে দেখা মাত্র বলে উঠতো- তালুকদার সাব, কলাগাছ দেড় টাকা। আর যায় কোথায়? তিনি শুরু করতেন অকথ্য ভাষায় গালাগালি। তারপর লাঠি নিয়ে বাচ্চাদের ধাওয়া দিতেন। বাচ্চারা ফিকফিক করে হাসতো আর দৌড়ে পালাতো। নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে লুঙ্গি উঠিয়ে প্রথমে সামনের অংশ দেখাতো তারপর ফাক করে পেছনের অংশ। ক’দিন পর মামাও পোলাপানের মতো শুরু করলেন একই কর্ম। লোকে নাম দিলো চান্দু পাগলা। এর কয়েকদিন পর মামা আচ্ছামতো এক দুষ্ট কিশোরকে কামড় বসিয়ে দিলো। ফলে তাকে শিকল পরিয়ে রাখা হলো।
ঘটনার এখানেই শেষ নয়। চান্দু মামার প্রতি দয়াপরবশ হয়ে তার এক বোন হঠাৎ কোনো এক বিকেলে তার শিকল খুলে দেয়। আর যায় কোথায়, মামা সোজা চলে গেলেন নিকটস্থ মসজিদে। লোকজন তখন আসর এর নামাজের সিজদায় ছিল। মামা লুঙ্গি খুলে সম্পূর্ণ ন্যাংটা হলেন। তারপর একটি মুগুর নিয়ে সেখানে ঢুকলেন। দূর্বল ঈমানের এক মুসল্লি সিজদারত অবস্থায় ঘাড় কাত করে তাকে দেখলো। অই অবস্থায় চিৎকার করে বলল, চান্দু পাগলা আইছে। আর যায় কোথায়। মসজিদে শুরু হলো হুড়োহুড়ি, লাফালাফি, চিৎকার চেচামেচি এবং ভোঁ দৌড়। মামা সুযোগ মতো ৪/৫ জনকে কামড় বসিয়ে দিলেন। এরপরের ঘটনা আরো মর্মান্তিক। যাদেরকে চান্দু পাগলা কামড় দিয়েছিল তাদের জন্য গ্রামে বাস করা কঠিন হয়ে পড়ল। লোকজন দেখলেই জিজ্ঞাসা করতো- কি ভাই, তোমারে নাকি চান্দু পাগলা কামড় দিয়েছে। তা কোন দিকে। খুব ব্যাথা পেয়েছো, ঘাঁ হয়েছে নাকি ইত্যাদি। মহিলারা তাদেরকে দেখে মুচকি মুচকি হাসতো। অই সব লোকের সঙ্গে কারো ঝগড়া হলেই খোটা দিত- তুমি এতো খারাপ যে চান্দু পাগলার কামড় খেয়েছো। এতো মানুষ থুয়ে তোমারে কি এমনি এমনি কামড়িয়েছে! পাগলেও বোঝে তুমি এতো খারাপ। ফলে অই লোকগুলোও গ্রাম ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে গেল।
এবার প্রসঙ্গে আসি। আমার মামা মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের একটি উক্তি নিয়ে বিশ্বব্যাপী বাঙালী চ্যাংড়া পোলাপান শুরু করেছে যাচ্ছেতাই দুষ্টুমি। বিশেষ করে ফেসবুকে। কেউ তার ছবিকে সুপার ইম্পোজ করে পাগলের রূপ দিচ্ছে। কেউ আবার শিকল পরাচ্ছে। এক গ্রুপ দাবী করছে পাগল সমিতির সভাপতির পদ থেকে লুলু পাগলাকে বহিস্কার করে মামাকে বসাতে। তার উক্তি নিয়ে অনেকগুলো ছোট ছোট ফিল্ম বানানো হয়েছে। চ্যাংড়া পোলাপানরা দল বেঁধে বড় বড় বিল্ডিংয়ের কাছে যাচ্ছে এবং ধাক্কা ধাক্কা করে নড়াবার চেষ্টা করছে। কেউবা আবার রশি দিয়ে টানছে এবং মামার নাম নিয়ে হেউয়ো হেইয়ো বোল তুলছে। এসব ভিডিও আপলোড করে ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছে।
অইসব কাজ শুধু বাংলাদেশেই হচ্ছে না। বিদেশেও হচ্ছে। আমি এখন আমেরিকার মিশিগান শহরে আছি। এক বাঙালী বাসায়। এই বাসায় দু’জন বাঙালী কিশোর আছে। তাদের ৫/৬ জন সমবয়সী বন্ধু মিলে এখানকার সিটি হলে গেল শ্যূটিং করার জন্য। মামার উক্তিকে স্ক্রিপ্ট ধরে তারা ফিল্ম তৈরি করবে।
আমি বাঙালীর হুজুগপ্রিয়তা এবং অস্থিরতা সম্পর্কে বেশ ওয়াকিফহাল। মামাকে নিয়ে যে মখা সিন্ড্রম ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে তা সহজেই থামবে বলে মনে হচ্ছে না। তাই পরম করুণাময় আল্লাহর নিকট দোয়া করছি- হে আল্লাহ, তুমি আমার মামাকে হেফাজত করো।
বিষয়: বিবিধ
২৫৭১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন