ইন্তেকাল করেছেন মালয়েশিয়ার নিক আব্দুল আযীযঃ খলীফায়ে রাশেদীনের আলোকে ছিল যার জীবন
লিখেছেন লিখেছেন সালাম আজাদী ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১০:৫৮:৫৬ সকাল
গোটা তেইশ বছর (১৯৯০-২০১৩) মালয়েশিয়ার কেলানতানের (সরকারি নাম দারুল না’ঈম)মুখ্যমন্ত্রীর দ্বায়িত্ব পালন করা বর্তমান বিশ্বের এই খলিফায়ে রাশেদার উত্তরসূরী দাতু’ নিক আব্দুল আযীয বিন নিক মাত গত ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৫ সালে রাত ৯;৪৫ এ ৮৪ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না লিল্লাহে রাজিঊন। আল্লাহুম্মা আজিরনা ফী মুসীবাতিনা, ও ওয়াখলুফ লানা খায়রান মিনহা।
নিক আব্দুল আযীয এর আব্বা নিক মাত বিন রাজা বিনজার ছিলেন একজন ইসলামিক স্কলার এবং কেলান্তানের রাজধানী কোতা বারু থেকে ৭ মেইল দূরের গ্রাম পুলাও মেলাকা ইসলামি স্কুলের (পন্দো’ মেলাকা)প্রতিষ্ঠাতা। ইসলামের স্বর্ণ যুগের মত তিনিও ইসলামি শিক্ষার প্রথম পাঠ গ্রহন করেন পিতার কাছে ঐ স্কুলেই। এরপর কেলানতানের সে সময়ের শ্রেষ্ঠ আলিম গুরু খুরাসান এর কাছে ইসলামের মৌলিক বিষয়ের উপর পড়া শুনা করেন। এরপর সে সময়ের অন্যতম প্রধান ‘তুয়ান গুরু’ হাজি আব্বাস হাজি আহমাদের কাছে থেকে তেরেংগানুর মাদ্রাসা ইত্তিফাক্বিয়াহ তে পড়াশুনা করেন। ১৯৫২ সনে ২১ বছর বয়সে তিনি ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় ইসলামি শরিয়ার উপর প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করেন। ৫ বছর পর সেখানে থেকে রওয়ানা দেন কায়রোর উদ্দেশে, এবং বিখ্যাত ইউনিভারসিটি আলআযহার থেকে আরবী ভাষা ও ইসলামি শারিয়াতে একাধারে ব্যাচেলার ও মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬২ সালে তিনি স্বদেশে ফিরে আসেন এবং অধ্যাপনায় নিযুক্ত হয়ে যান। তিনি একাধারে মালে, আরবি, উরদু এবং তামিল ভাষায় ছিলেন খুবই ফ্লুয়েন্ট। ইংলিশ জানতেন, বুঝতেন তবে স্পিকিং এ ততটা শক্তিশালী ছিলেন না।
১৯৬৩ সনে তুয়ান সাবারিয়াহ তুয়ান ইসহাক কে বিয়ে করেন এবং তারা উভয়ে ছিলেন ১০ সন্তানের গর্বিত পিতা মাতা। ৬জন ছেলে এবং ৪ জন মেয়ে। ছেলে নিক মুহাম্মাদ আব্দুহু একজন জনপ্রিয় এমপি।
শিক্ষকতা এবং বাগ্মিতার কারণে তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সবার পরিচিত হয়ে ওঠেন, এবং সে সময়ের মালয়েশিয়ার একমাত্র ইসলামি আন্দোলন ‘পার্টি ইসলাম সেমালয়েশিয়া’ সংক্ষেপে PAS এ যোগ দেন। মিশরে থাকা কালীন সময়ে তিনি ইখওয়ান দ্বারা প্রভাবিত হন, পড়া শুনা শুরু করেন ইমাম আবুল হাসান নাদাওয়ী ও মাওলানা মাওদূদি (র) গণের বই পত্রাদি। ফলে সমকালীন বিশ্বে ইসলামি মূল্যবোধের ভিত্তিতে তৈরি ইসলামি রাস্ট্র গঠনে সংগ্রামী সিপাহসালার হিসেবে আবির্ভুত হন তিনি। ১৯৬৭ সালে কেলানতানের হিলির পার্লামেন্টারি সিটের বাই-ইলেকশানে তিনি পাসের পক্ষ থেকে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। এবং বিপুল ভোটের ব্যাবধানে আমনুর প্রার্থীকে পরাজিত করে রাজনীতির সিঁড়িতে পা রাখলেন। তার জনপ্রিয়তা এত বেশি ছিলো যে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে তিনি সেখান থেকে এমপি হয়েছেন। ফলে তাকে রাজনীতি থেকে বের করার জন্য ষড়যন্ত্র করে ঐ আসন অবলুপ্ত করা হয়। কিন্তু ১৯৮৬ সালে তিনি বাচো’ পার্লামেন্টারি সিট থেকে নির্বাচন করে আবারো এমপি হন। তিনি কেলানতান রাজ্যের উন্নতি কল্পে ইসলামি আন্দোলন ‘পাস’ কে ঢেলে সাজাবার চেষ্টা চালান এবং একে এক অপ্রতিদ্বন্দি দল হিসেবে মালয়েশিয়াতে পরিচিত করতে তৎপর হন। ১৯৯৮ সনে তিনি সেন্ট্রাল উলামা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন এবং সেই থেকে আমৃত্যু তিনি এই পদে বহাল ছিলেন।
১৯৯০ সনের জাতীয় নির্বাচনে তিনি কেলানতান রাজ্যকে মালয়েশিয়ার শক্তিশালী সরকারী দল বারিসন ন্যশনালের হাত থেকে ‘পাসের’ আয়ত্বে নিয়ে আসেন। পার্টিপ্রধান হওয়ার সুবাদে তিনি ‘মন্ত্রীবেসার’ বা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন এবং গত ২০১৩ সন পর্যন্ত একাধারে ২৩ বছর এখান থেকে কেও তাকে সরাতে পারেনি। এমনকি এখনো পর্যন্ত এই রাজ্যটি পাসের ই আয়ত্বে রয়েছে। তিনি ১৯৯১ সনে দাতু’ ইউসুফ রাওয়ার কাছ থেকে ‘পাসে’র প্রধান পদ লাভ করেন, এবং সমগ্র মালয়েশিয়া তে তিনি পাসের আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।
আমি ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত মালয়েশিয়াতে ছিলাম। আমার রূম মেইট ইয়ুসরি জাহরি ও বন্ধু জাফরের কল্যানে এই মহান আলিম কে সামান্য সময়ের জন্য দেখার সুযোগ হয়েছে। তবে তার সম্পর্কে জেনেছি অনেক। একবার নেগরি সিমবিলানের পাসের আমীর জালালউদ্দিন সাহেবের কাছ থেকে নিক আব্দুল আযীযের বেশ কিছু কথা শুনতে পাই। তিনি ছিলেন দাতু’র ক্লাশ মেইট। তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম কেলানতানে পাস তথা ইসলামি আন্দোলন কে বিজয়ী করার জন্য দাতু নিক আব্দুল আযীয কী সব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি তিনটি পদক্ষেপ কে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছিলেন।
প্রথমতঃ তিনি কেলানতানে এবং পরে সারা মালয়েশিয়ার ইসলামি মোর্চা গুলোকে খুব কাছাকাছি নিয়ে এসেছিলেন। তিনি তাবলীগের দিল্লীর মুরুব্বীদের কে দাওয়াত করে মালয়েশিয়াতে নিয়ে আসেন। এবং পলিটিক্সের ব্যাপারে তাদের সাথে একটা বোঝা পোড়া করেন। তিনি মুরুব্বিদের বলেনঃ আপনারা পলিটিক্স করেন না, ওটা আমরা করি। আপনাদের জন্য যে কাজ গুলো আমরা করবো তা হলো আমাদের সমস্ত মসজিদ গুলোকে তাবলীগের কাজের জন্য আপনাদের কাছে ছেড়ে দেবো। সেখানে মুসলমানদের নামাজি বানানো, ইসলামের মৌলিক জিনিষ শিখানো, এবং এদের চরিত্র সংশোধনের কাজ গুলোর দ্বায়িত্ব আপনারা নেন। আমরা অর্থ ও সুযোগ সুবিধা দিয়ে আপনাদের সার্বিক সাহায্য করবো। এমন কি আমাদের বড় বড় প্রোগ্রাম গুলোতেও আপনারা আসবেন। বয়ান দেবেন। তাদের যেভাবে আপনারা ভালো মনে করেন, রূহানিয়াত বাড়ানোর কাজে ব্যয় করবেন। পলিটিক্স করা যেহেতু হারাম না, কাজেই এটা করতে আপনারা কাওকে নিষেধ করবেন না। আর ভোট দেয়ার সময় কাকে ভোট দিতে হবে এটা না বলতে পারলেও, ‘ইসলাম বিরোধী কোন শক্তিকে ভোট দেয়া যাবে’ এটা অন্তত বলবেন না। আরেকটা কাজ আপনারা করবেন, তা হলো, আপনাদের মসজিদ গুলোতে আমাদের ঢোকার সুযোগ দেবেন। পলিটিক্সের ব্যাপারে কথা না বলতে দেন, ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা বা সেমিনার করার সুযোগ দেবেন।
উনার কথা এত যুক্তি যুক্ত ছিলো যে তাবলীগ জামাআত ঐ বৈঠকেই বসে তার সাথে একমত হয়ে যায় এবং তার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার জন্য দিল্লীর নিযামুদ্দিনের মুরুব্বিরা তাদের মালয়েশিয়ান দ্বায়িত্বশীলদের কে নির্দেশ দিয়ে যান। শুধু তাবলীগ না, যারাই ইসলামের কাজ করতো তাদের সাথে তিনি বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আলআরকাম গ্রুপের সাথে মতানৈক্য থাকলেও তিনি সদ্ভাব বজায় রাখতেন। আবীমের আনওয়ার ইব্রাহিম তাকে সব সময় শিক্ষকের মর্যাদা দিয়ে এসেছেন। এক স্মৃতি চারণায় আনওয়ার ইব্রাহিম বলেনঃ যখন ই ইসলামি ও রাজনৈতিক কোন ব্যাপারে আমি সিদ্ধান্ত নিতাম, তুয়াং গুরুর কাছে যেতাম। যখনই রাজনৈতিক সম্পর্কে কোন মারাত্মক বিভেদ দেখা দিত, তার হস্তক্ষেপ আমি কামনা করতাম। তার কোন কথা কেও ফেলতে চাইতোনা।
তিনি ইসলামি দল গুলোকে এক করতে যেয়ে যা ছাড় দিতেন, তার জন্য নিজ পার্টি পাসের কনফারেন্স গুলোতে তাকে অনেক হেনস্তা করা হয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ তিনি যদিও পরিপূর্ন ইসলামি রাস্ট্র বিধানে বিশ্বাসী ছিলেন, তা সত্বেও অমুসলিমদের ব্যাপারে ছিলেন খুবই সচেতন। পাসের ভেতরে তিনি সবার প্রবেশাধিকার দিয়েছেন, এবং তাদেরকেও বড় বড় দ্বায়িত্ব দিতে কার্পণ্য করেন নি। সবাইকে এক করার কাজে সারা জীবন ব্যয় করেছেন, ফলে তার ইসলামি দলকে অনেক গণমুখি করতে পেরেছিলেন। তার সম্পর্কে আজকে মালয়েশিয়ায় অমুসলিমরা যে দু:খ বেদনায় আহাজারি করছেন তা আসলেই চোখ খুলে দেয়।
তৃতীয়তঃ তিনি ‘পাস’এ আলিম দেরকেই বড় বড় পদ দিয়ে গোটা দেশের আলিম সমাজ কে কাছে নিয়ে আসেন, সেই সাথে বিভিন্ন পেশার উচ্চ শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী ও প্রভাবশালি লোকদের কাছেও নিজের গ্রহন যোগ্যতা নিয়ে আসেন। ফলে গোটা মালয়েশিয়াতে তার বিরোধী শক্তি ছিলো মূলত ইসলাম বিরোধী শক্তি অথবা মারাত্মক সেক্যুলার শক্তি। অধুনা মুসলিম দেশ গুলোতে সবচেয়ে বিপদ হয়েছে, ইসলামি আন্দোলন গুলো ধ্বংশ করতে, সেক্যুলার শক্তির চেয়ে ইসলামের অন্যান্য শক্তি গুলোও মারাত্মক ভূমিকা পালন করে। নিক আব্দুল আযীয সে দিক থেকে খুব ভালো অবস্থান তৈরি করেছেন।
তিনি ক্ষমতা পাওয়ার পাওয়ার পর যে সব কাজের মাধ্যমে ইসলামি রাস্ট্র ব্যাবস্থা কায়িমের চেষ্টা করেছেন তা মোটা মুটি ভাবে নিচের পয়েন্টে আলোচনা করা হলোঃ
১। মালয়েশিয়া সেক্যুলার দেশ হলেও তিনি নিজ রাজ্য কে ইসলামি করণে চেষ্টা করেছেন। ইসলামি হুদূদ ল’ প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক বার চেষ্টা করলেও ফেডারেল গভমেন্টের চাপে তাকে নতি স্বীকার করতে হয়েছে। এর পরেও ইসলামি শরীয়াতের অনেক বিষয় কে তিনি আপন রাজ্যে এমনকি ফেডারেল সরকারে ও ঢুকাতে পেরেছিলেন। যেমনঃ ইসলামি কোর্টকে ফেডারেল কোর্টের প্যারালাল করেছিলেন। এতে করে কেও যদি কোন ব্যাপারে সেক্যুলার কোর্টে না গিয়ে ইসলামি কোর্টে কেইস করতে চায়, তাকে সে সুযোগ মালয়েশিয়াতে দেয়া হয়।
২। ইসলামি জীবন আচরণের প্রতি তিনি বেশ কিছু আইন করেন। মেয়েদের স্কার্ফ ও শালীন বাজু মালায়ু পরার নির্দেশের সাথে সাথে, পুরুষের মন রঞ্জনের জন্য অতিরক্ত সাজ সজ্জা গ্রহন করাকে সরকারী অফিস সহকারীদের জন্য নিষেধ করে দেন। তিনি এটাকে ব্যভিচার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তার এই সব নীতির কারণে মালয়েশিয়ার মধ্যে তার রাজ্যে সামাজিক সমস্যা তুলনা মূলক ভাবে কমে যায়।
৩। দেশবাসিকে অযথা খরচ কমিয়ে দেশের আয় বৃদ্ধিতে অর্থ সংরক্ষন ও আভ্যন্তরিন অর্থ উন্নয়নের একটা রূপ রেখা তৈরি করেন তিনি। তিনি তার বেতনের অর্ধেক নিতেন, অর্ধেক দান করে দিতেন। সরকারি বাস ভবনে না থেকে নিজের খুব সাধারণ ঘরে থাকতেন। ১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ায় রিসেশনের সময় বিয়ে শাদি বা পার্টিতে অতিরিক্ত খরচ করতে নিষেধ করে ওই বছর নিজের প্রদেশকে রিসেশান মুক্ত রাখতে পেরেছিলেন, যা ছিলো ফেডারেল সরকারের জন্য একটা দৃষ্টান্ত। মাহাথিরের মত ইসলামি আন্দোলনের দুশমন ও তার এই নীতিকে পছন্দ করে ছিলেন।
৪। তিনি রিসেশান তথা অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের জন্য বিশ্বের কয়েকটি মোড়ল রাস্ট্রের পেশী শক্তির ব্যাবহার কে দায়ি করেন। তিনি মনে করতেন স্বর্ণের পরিবর্তে ব্যংক নোটের ব্যবহার বহু সমস্যার সৃষ্টি করেছে। যাদের রাজনৈতিক জোর যত বেশী, তারা এই কাগুজে নোট কে ফাঁকি দেয়ার মাধ্যম হিসেবে তত বেশী গ্রহন করে। বিশেষ করে ১৯৯৭ সালে জর্জ সরোস কর্তৃক মালয়েশিয়ার শেয়ার বাজার ধ্বংশ করে দেয়ার পরে তিনি এব্যাপারে বেশি উচ্চকণ্ঠ হন। পরে ২০১০ সাল থেকে তিনি কেলানতানে ইসলামি মুদ্রার প্রচলন করেন। যার নাম দেন দীনার ও দিরহাম।
৫। কেন্দ্রীয় সরকারকে বুঝিয়ে বিশেষ করে আনওয়ার ইব্রাহীমের বুদ্ধি ও সহযোগিতার কারনে মালয়েশিয়া তে ব্যাপক হারে ইসলামি ব্যাঙ্কিং ও ইন্সিউরেন্স কোম্পানি সমূহের পরিচিতি লাভ করে। দাতু নিক আব্দুল আযীয এগুলোর পৃষ্ঠ পোষকতাই শুধু করেন নি, কেলানতানে তার ঢল নামিয়ে ছিলেন। ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থাতেও তিনি দারুন ভূমিকা রেখেছেন। যদিও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে তার প্রদেশ খুব উন্নত হয় নি। কিন্তু সেখানে ধনী গরীবের ব্যবধান তিনি অনেক কমাতে পেরেছেন।
৬। আনওয়ার ইব্রাহীমের সাথে পিকেআর কোয়ালিশান করে তিনি ইসলামি আন্দোলনের আধুনিক ধারা কে নতুন ভাবে পরিচিত করে তোলেন। এই ধারা টা অনেকটা ইউরপীয়ান সেক্যুলার ধারার সাথে মিল রেখে করা। ইসলামি আন্দোলনের তার্কিশ সংস্করণ বলা যায়। এর মূল কথা হলোঃ ধর্মের ব্যাপারে যদিও ছাড় দেয়া হবেনা, তবু রাস্ট্রে যে যার ধর্ম মেনে চলতে পারবে। এই কোয়ালিশনে চাইনিজ ও হিন্দুরা যুক্ত হয়। এটা করতে যেয়ে তাকে ‘পাসের’ সংবিধান ও চেইঞ্জ করতে হয়েছে তখন। যেখানে ইসলামি রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা ও ইসলামি হুদূদ বাস্তবায়ন করার অভীপ্সা থেকে দূরে সরে আসতে হয় নিক আব্দুল আযীয কে। এটা মানতে গিয়ে তিনি নিজ পার্টির অনেকের বিরাগ ভাজন ও বিদ্রোহের সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু তার পরেও আনওয়ার ইবরাহীমের সাথে করা ঐক্য ভাংগেন নি। বর্তমান প্রধান মন্ত্রী তাকে অনেক চেষ্টা করেছেন আমনুর সাথে ঐক্য গড়তে। কিন্তু তিনি তা করেন নি।
তিনি ইন্তেকাল করেছেন প্রস্টেট ক্যান্সারে ভুগে। গত ১৩ তারিখে তার জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে মানুষের যে ঢল নামে তা ছিলো ঐতিহাসিক ও বিস্ময়কর। তার ইন্তেকালে উম্মাহ ইসলামি আন্দোলনের একজন সফল ব্যক্তিকেই শুধু হারায় নি, হারিয়েছে একজন মুরব্বি কে। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফিরদাওস দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
৩৬৫০ বার পঠিত, ৬৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই মহান ব্যাক্তিত্বর ইন্তেকালের সংবাদ শুনার পর থেকেই তার বিষয়ে একটি লিখার আশা করছিলাম। প্রয়োজনিয় তথ্য না থাকায় নিজে লিখার সাহস পাইনি। আমার মনে ছিল আপনি এবং আবু মাহফুজ ভাই হবেন এই জন্য উপযুক্ত মানুষ। নিক আবদুল আজিজ এর জিবন এ আমাদের জন্য বড় শিক্ষা রয়েছে।
আমি আপনার লেখার ভক্ত, আপনি লিখে ফেলুন আপনার জানা বিষয় নিয়ে।
মহান আল্লাহ দাতু’ নিক আব্দুল আযীয বিন নিক মাত-কে জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করুন।
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
আল্লাহতায়ালা তাঁকে খুলাফায়ে রাশেদার সাথে জান্নাতে মেহমান করে নিন!
নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা সত্বেও চোখ ভিজে গেল,
উম্মাহর মণি-মুক্তাগুলো তুলে নেয়া হচ্ছে-
উত্তম প্রতিস্থাপনের জন্য মা'বুদের দরবারে আকুল আবেদন জানাই!
আপনাকে ধন্যবাদ- জাযাকাল্লাহ..
এই সব ভালোবাসা এমনিতেই আসেনা, তাকে এই জন্য আমার ভালো লাগে। মালয়েশিয়ার পাস লীডারদের অনেককেই কাছ থেকে দেখেছি, ওদের পাশে গেলে দুষ্ট পোলারাও ভালো হয়ে যায়।Winking
ইসলামী আন্দোলনের মডেল মরহুম দাতু'নিক আব্দুল আজীজ কে আল্লাহ জান্নাতের মেহমান করে নিন!আমিন!
সুন্দর সাবলীল উপস্হাপনায় অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহু খাইরান!!
সাথে আপনাকে ও অনেক মুবারকবাদ।
পরম করুণাময় তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করুন। সেইসাথে আপনাকেও অনেক অনেক মুবারকবাদ।
আপনার মন্তব্য ' মালয়েশিয়ার পাস লীডারদের অনেককেই কাছ থেকে দেখেছি, ওদের পাশে গেলে দুষ্ট পোলারাও ভালো হয়ে যায়।' ভালো লেগেছে। প্রানভরে দোওয়া করেছি, হেঁসেছিও। তবে সেটা তৃপ্তির হাসি।
চোখ দিয়ে পানি এসে গেল। এমন কি মদিনার
জীবনেও একটা সময় পর্যন্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থা সেকুলার ছিল। যতটা আপোষ করা যায়। এর জন্য বিশেষজ্ঞ টিম রাখা দরকার, যারা পার্টির বাহিরে সারা বিশ্বের ইসলামিক মডেল গুলো নিয়ে রিসার্স করবে। আগামীতে বিশ্বে, ইসলামী বিপ্লবের প্লান তৈরির ব্যবস্থা নিবে। আশা করি, আপনি এর জন্য পরিকল্পনা সাথে থাকবেন। ইসলামী আন্দোলনের মডেল মরহুম দাতু'নিক আব্দুল আজীজ কে আল্লাহ জান্নাতের মেহমান করে নিন!আমিন!
নাকি? থাকলে জানাবেন? আমি দেশের বাহিরে থাকি। আল্লাহ ওনাকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করুন। আমিন।
জাযাকাললাহু খায়রান।
মাপলানা আব্দুর রহীম মনে হয় প্রথম আমীর। আমি আসলে খুব বেশি জানিনা।
জাযাকাল্লাহ খায়রান।।।
ধন্যবাদ স্বল্প পরিসরে অমন একজন বরন্য ব্যাক্তিকে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য। আল্লাহ ওনাকে কবুল করুক এবং বেহস্ত নসিব করুক।
আপনার লিখায় - সংগঠনের ব্যাপ্তি ও গ্রহনযোগ্যতা বাড়াতে - ওনার নেওয়া যে তিনটি উদ্দ্যোগ বা পদক্ষেপ এর কথা লিখেছেন - তা পড়ে আমি মুগ্ধ হয়েছি। ওনার বিচক্ষনতা আমাকে চমৎকৃত করেছে। মনে মনে কষ্ট পাচ্ছিলাম - কেন বাংলাদেশে অনুরূপ রিফর্ম করা গেল না - এটা ভেবে।
কষ্ট করে আমাদের জন্য এমন বিষয়ে লিখার জন্য আবারো আন্তরিক ধন্যবাদ।
إِنَّ اللَّهَ لَا يَقْبِضُ الْعِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنْ الْعِبَادِ وَلَكِنْ يَقْبِضُ الْعِلْمَ بِقَبْضِ الْعُلَمَاءِ
আল্লাহুম্মা আজিরনা ফী মুসীবাতিনা,ওয়াখলুফ লানা খায়রান মিনহা।
ভাল লেগেছে। অসংখ্য ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
মত যোগ্য নেতৃত্ব বর্তমান সময়ে খুবই প্রয়োজন ।
জাযাকাল্লাহু খায়রান
অনেক খুঁজেছি এই ইসলামী ব্যক্তিত্ত্বের জীবন বৃত্তান্ত।উইকিপেডিয়া,অন্যান্য ওয়েব পোর্টালগুলো।কিন্তু তার মৃত্যুর পর মহান আল্লাহ্ পাকের দয়ায় আর আজাদী ভাইয়ের পরিশ্রমের কল্যাণে তার জীবনবৃত্তান্ত এবং তার সফলতা সম্বন্ধে জানলাম ।লেখাটিতে আপনার আপনার অনেক তথ্যের প্রয়োজন হয়েছে ,আমি টপিকের বাইরে একটি প্রশ্ন করতে চাই ।এই তথ্যগুলো কি আপনি কোন বই থেকে সংগ্রহ করেছেন ?(যদি কোন বই থেকে সংগ্রহ করেন তবে আমাকে বইটির নাম সাজেস্ট করুন বইটি আমি কিনতে চাই ।)
শেষকথা:আপনার লিখনির হাত চমত্কার।ধন্যবাদ এমন একটি তথ্যপূর্ণ লেখা উপহার দেয়ার জন্য।তার জীবনের স্মরনীয় তথ্যগুলো,তার ছাত্রজীবন ,রাজনৈতিক জীবন ,বিধর্মী প্রজাদের প্রতি তিনি যে ব্যবহার করেছেন উত্তম রুপে ফুটে উঠেছে ,আল্লাহ্ আপনার কলমের জোড় দ্বিগুন বাড়িয়ে দিক সেই সাথে এই ইসলামী ব্যক্তিত্বের ও মহান রাজনীতিবীদের শূণ্যস্থান যেন প্রজাগণ তার আদর্শ মোতাবেকই পায় আল্লাহ্ সেই তৌফিক দান করুন।
জাযাকাল্লাহু খায়রান সুন্দর মন্তব্যের জন্য
জাযাকাল্লাহু খায়রান, আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য.....
মন্তব্য করতে লগইন করুন