বাংলাদেশের সেনা বাহিনী সম্পর্কে আমার অভিমত
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ০৫ জুলাই, ২০১৫, ০৯:৫৮:১৬ রাত
উইকিলিক্স বাংলাদেশ সম্পর্কিত অনেক তথ্য প্রকাশ করেছে যেগুলো অনেকের কাছে বিস্ময়কর মনে হয়েছে । উইকিলিক্স হতে প্রাপ্ত তথ্য হতে জানা যায়, হিজবুত তাহরীর ও জামায়াতে ইসলামীর লোকরা-সহ বিভিন্ন ভিন্ন মতাবলম্বী লোক সেনাবাহিনীতে রয়েছেন যারা বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করে তাদের মতাদর্শ অনুযায়ী বাংলাদেশকে পরিচালনা করতে ইচ্ছুক । আমার কাছে তাদের একর্মকান্ড অবাস্তব মনে হয় । তার কারণ আমি বেশ কিছু লেখায় উল্লেখ করেছি ।
জামায়াতের আমীর মরহুম গোলাম আযমের পুত্র সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আল আযমী
http://insaf24.com/archives/14251#sthash.B3AJQIdX.dpbs
http://chandpurtimes.com/%E0%A6%AF%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%80-%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87/
দৈনিক প্রথম আলো ১ম পৃষ্ঠার খবর
রোববার, ০৫ জুলাই ২০১৫, ২১ আষাঢ় ১৪২২, ১৭ রমজান ১৪৩
সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থানচেষ্টা ও সরকার উৎখাতের ব্যর্থ চেষ্টার পর চাকরিচ্যুত হিজবুত তাহরীরের আদর্শে বিশ্বাসী মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ও প্রবাসী ব্যবসায়ী ইশরাক আহমেদ - See more at: http://www.deshebideshe.com/news/details/53631#sthash.2skYCavL.dpuf
অনেকে বলে থাকেন সেনা বাহিনীর লোকরা আমাদের দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্হার পরিবর্তনে সাহায্য করবেন । আমার কথা হলো :
দেশের রাজনৈতিক অবস্হা পরিবর্তন করা কি সেনা বাহিনীর অন্যতম প্রধান কাজ ?
মইনুদ্দীন আর ফখরুদ্দীনের আমলে কত জন পরিবার নিস্হ হয়েছে এবং কত পরিবার ধ্বংস হয়েছে তা অনেকের জানার বাহিরে । তখন সেনা বাহিনীর অনেক লোক অনৈতিকভাবে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছিলো । তার ফলে হয়েছিলো পীল খানার বিডিআর বিদ্রোহ । আমাদের অনেকেই অনেক কিছুই জানি না বা ভুলে গেছি। মইনুদ্দীন – ফখরুদ্দীনের সময় চালের কেজি তখন ৮০ টাকা হয়েছিলো । আজব হলেও সত্য, অনেক সাংবাদিকের মতে ফকরুদ্দীন ছিল আমেরিকার নাগরিক । এই কারণে তিনি বাংলাদেশের কোন শাসনতান্ত্রিক কোন পদ লাভ করতে পারেন না । সুতরাং তার প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ ছিল অবৈধ । কিন্তু মইনুদ্দীন – ফখরুদ্দীনের সময় ফখরুদ্দীন এই নিয়ম ভেঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা হয়েছিলেন ।
আপনাদের অনেকেই এসব ভুলে গেছেন হয়তো ???? !!!!
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ ও উচ্চাভিলাষী কিছু সামরিক কর্মকর্তা রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করান। এতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন বাংলাদেশে তত্কালীন জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি রেনাটা লক ডেসালিয়ান ও ক’জন পশ্চিমা কূটনীতিক। গণতন্ত্রবিরোধী এ ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় পরদিন ১২ জানুয়ারি ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে সেনাসমর্থিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে। নেপথ্যে মূল ভূমিকা পালনকারী তত্কালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেন নবম ডিভিশনের জিওসি লে. জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এবং দুই গোয়েন্দা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিন ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বারীসহ উচ্চাভিলাষী কিছু সেনা কর্মকর্তা।
স্বৈরাচারী জেনারেল এরশাদ ও আমার অভিজ্ঞতা :
স্বৈরাচারী জেনারেল এরশাদের সময় কারফিউ হলে সেনা বাহিনী কীভাবে জনগণকে নির্যাতন করতো তা অনেকেই ভুলে গেছেন ????!!! হয়তো অনেকেই তখন জন্মগ্রহণ করেননি । স্বৈরাচারী এরশাদের সময় আজ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখের চেয়েও ভয়াবহ ছিল । কিন্তু স্বৈরাচারী জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় থাকতে পারেনি ।
স্বৈরাচারী জেনারেল এরশাদের সময়ের একটা ঘটনা শেয়ার করছি । এক দিন টানা তিন দিন কারফিউ দেওয়া হলো । তখন দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ দেওয়া হতো । দোকান-পাট খোলা যেতো না । মানুষ অফিসে যেতে পারতো পরিচয়পত্র দেখিয়ে । স্কুল-কলেজও বন্ধ ঘোষনা করা হতো । এরকম একদিনের কারফিউতে আম্মা আব্বাকে বল্লেন : “বাড়িতে ভাল খাবার অনেক দিন খাওয়া হয় না । সবাই চিতল মাছ খাবে বলে গো ধরেছে । আর চালও নেই ।”
আব্বা আমাকে সাথে করে নিয়ে গেলেন । বাজারে লোক অনেক । কারণ অনেকেই অনেক দিন বাজার করতে পারেননি । অনেকেই তাদের ছোট ছেলেদের নিয়ে এসেছে কারফিউ কাকে বলে তা বোঝানোর জন্য ।
আমি আব্বাকে বলেছিলাম : “কারফিউ কাকে বলে ? “ তিনি বলেছিলেন : কারফিউকে বাংলায় বলে সান্ধ্য আইন । এই সময় ঘর হতে বের হওয়া যায় না । বের হলে সেনা বাহিনীর লোকরা গুলি করবে ।
আমি বল্লাম : “সেনা বাহিনীর লোকরা গুলি করবে কেন ?”
আব্বা বল্লেন : “বড় হলে বুঝতে পারবে । আমরা বাজার করে তাড়াতাড়ি বাড়ি যাই । তারপর তোমাকে অনেক কিছু বলবো । নাহলে সেনা বাহিনীর লোকরা এসে আমাদের গুলি করবে ।”
তার এই কথা শুনে আমি চুপ করে থাকলাম । বাবা তড়িঘড়ি করে একটা চিতল মাছ কিনলেন । আর ১০ কেজি চাল কিনলেন । লাল শাক আর লাউ কিনলেন । আমরা রিক্সা পেলাম না । অনেক কষ্টে দুই হাতে দুইটা বাজারের থলে হাতে নিলাম । আব্বা দুই হাতে নিলেন চিতল মাছ আর চালের ব্যাগ ।
হঠাৎ দুইটা পিক আপ করে সেনা বাহিনী আসলো । আসা মাত্রই লোকদের আলোপাথাড়ি লাঠি পেটা শুরু । আর লোকরাও তাদের বাজার সদাই রেখে বা কিছু নিয়ে বা না নিয়ে যে যার মতো পালাচ্ছিলো । আমি আমার আমার খারাপ অবস্হা আর লিখছি না । সে দিন আমরা বাড়িতে ফিরেছিলাম শূণ্য হাতে ।
তার প্রায় এক দশক পর প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ে আমার বাবা এক জন বড় সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন । আমরা ঢাকার সিএমএইচ-এ চিকিৎসা সুবিধা বিনা পয়সায় পাওয়ার সুযোগ পেলাম এবং অনেকটা বিনা পয়সায়ই সেনা বাহিনীর লোকদের মতো চাল-তেল-ডালসহ অনেক কিছু পেতাম ।
কিন্তু বাড়ির সবাই এসব ভোগ করলেও আমি ঘৃণা ভরে এসব প্রত্যাক্ষাণ করতাম । কিন্তু সেই সময়টায় সেনা বাহিনীর ভি আই পি ও ভিভিআইপি ধরনের লোকদের সামান্য হলেও দেখার সুযোগ কম বেশী পেতাম । তাদের অনেকেই আমার দিকে স্নেহের নজরে তাকাতো । কারণ আমাদের পরিবারকে তারা ভিভিআইপি মনে না করলে ভিআইপি মনে করতো এবং আমাদের পরিবারের লোকরাও তাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার নজরে দেখতো । কিন্তু আমার মনের মধ্যে ছিল তাদের প্রতি এক রাশ ঘৃণা আর ক্ষোভ । আব্বা সেনা বাহিনীকে কোন নজরে দেখেন তা আমার জানা নেই । তবে আমার বিয়ের জন্য কনে খুজার সময় অনেক ঘটককে বলে দিয়েছেন , আমার ছেলেদের জন্য কোন পুলিশ বা উকিলের মেয়ের খোজ নিয়ে আসবেন না, তাদের মেয়েরা যতই যোগ্য হোক না কেন ।
আমার মতে,
তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে সেনাবাহিনী কখনোই জনগনের বন্ধু হয় না । এরা দেশের জন্য পেরাসাইট হয়ে দাড়ায় । আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও তাই । আমাদের দেশ আক্রান্ত হলে সেনা বাহিনীর লোকরা সবার আগে এগিয়ে আসবে না । এগিয়ে আসবে জনসাধারণ । তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে কখনোই সেনাবাহিনী দেশ রক্ষায় প্রথম সারিতে ছিলো না । যেমন : ইরাক কুয়েত যুদ্ধের কথা ভাবুন । সে দেশ তেল সমৃদ্ধ , কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের দেশ নয় । সে দেশের শাসক সেনা বাহিনীকে দেশ রক্ষার দায়িত্ব দিয়ে সৌদি আরব চলে যান । কিন্তু সাদ্দামের এক হুংকারে সেনাবাহিনী উদাও হয়ে যায় । সাদ্দাম সৈন্য সামন্ত নিয়ে ইরাকে ঢুকে পড়েন । পাকিস্তানের কথা ভাবুন । মিশরের কথা ভাবুন । সেনা বাহিনী কখনো গণতান্ত্রিক শক্তির বা গণতান্ত্রিক দলের সাহায্যকারী হয় না বা হতে পারে না ।
অনেকে বলেন : বিদেশে আমাদের দেশের সেনা বাহিনী শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করে । তারা যথেষ্ঠ অমায়িক ও দক্ষ বলে বিদেশে পরিচিত ।
এক্ষেত্রে আমার অভিমত হলো : তারা এমনি এমনি বিদেশে যেয়ে সৎ আর অমায়িক সাজে না । কারন শান্তিরক্ষী হয়ে দেশে ফিরে নিজের জন্য নিয়ে আসেন কম করে হলেও ৭ হতে ২৫ লক্ষ টাকা । এজন্য বিডিআর বিদ্রোহের সময় বিআরএর লোকদের অন্যতম দাবি ছিল তাদেরও শান্তিরক্ষী মিশনে পাঠাতে হবে । ....... আমাদের দেশের সেনাবাহিনী শুরুর থেকেই বিতর্কিত । দেশ স্বাধীনের অর্ধেকটা সময় সেনা শাসনে কেটেছে । ...... আমাদের দেশের সেনা বাহিনী যা করেছে তা লোক দেখানোর জন্য । জনগণের ভালবাসা পাওয়ার জন্য নয় । সেনা বাহিনীর জন্য বাজেটের বরাদ্ধ করা টাকা কমিয়ে শিক্ষা ও স্বাস্হ্য খাতে ব্যয় করলে দেশের উন্নায়ন অগ্রগতি তরান্বিত হবে ।
সেনা বাহিনীর জন্য অস্ত্র গোলা বারুদ কেনাতে বড় ধরনের দুর্নীতি হয় । যেমন : রাশিয়ার থেকে মিগ বিমান কেনা । এসব বিমান কি চালু আছে এখন ? উত্তর অবশ্যই না । সেনা বাহিনী তৃতীয় বিশ্বের দেশের জন্য পেরাসাইট । আপনি অপারেশন ক্লিন হার্টের কথা স্মরণ করুন । ১-১১ এর কথা স্মরণ করুন । অপারেশন ক্লিন হার্ট নিয়ে একটা উপন্যাসও লেখা হয়েছে ।
বর্তমানে সেনা বাহিনী কীভাবে জনগণের পাশে থাকে :
বর্তমানে সেনা বাহিনী কীভাবে জনগণের পাশে থাকে তার প্রমাণ হলো এই লেখা -
http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=b50bf7fa3b6e58b984f41229edb0be3e&nttl=29122013252130
লিংকের খবরের স্ক্রীনশট দিলাম । অনেকে হয়ত লিংকে যেয়ে খবরটা পড়তে পারছেন না । স্ক্রীনশটটা ডাইনলোড করে পড়তে পারেন ।
ঢাকা মহানগরীর এক চতুর্থাংশ বলতে গেলে সেনানিবাস । রাতে অনেক এলাকার রাস্তা সেনা বাহিনী বন্ধ করে দেয় । সেনা বাহিনী জনসাধারণের স্বার্থের কথা মোটেই বিবেচনা করে না । বিশ্বের বড় বড় রাজধানী শহরগুলো এমন নয় ।
বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বিশ্বাস ও ধর্ম ইসলামকে অবজ্ঞা করার পাশাপাশি হেয় করার প্রবনতা বিদ্যমান ।
সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইসলামের বিধান অনুযায়ী পোষাক পড়া বিশেষত মেয়েদের মাথায় ও বুকে ওড়না ব্যবহার করা নিষিদ্ধ । যেমন : ঢাকার আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ । (ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী মাথা ও বুকে ওড়না এবং ঢিলা জামা পরাকে হিজাব বলা হয় । ইসলামে পোষাকের এমন নিয়ম ফরজ বা অবশ্য করণীয় কাজ । )
ঢাকার আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ- এহিজাব নিষিদ্ধকরনের বিজ্ঞপ্তী । সেনাবাহিনী পরিচালিত আর্মড ফোর্স মেডিক্যাল কলেজে (afmc) হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে ।
এই কলেজের ওয়েব সাইট হলো : http://www.afmcbd.com ।অথচ এই কলেজের এক তৃতীয়াংশ মেয়ে হিজাব করতো । সেনাবাহিনীর লোকদের অভিমত : হিজাব করা মেয়েরা জামায়াতে ইসলামীর লোক । বাস্তব অবস্হা হলো জামায়াতে ইসলামীর লোকদের কাছে নিকাব করা ফরজ । নিকাব হলো মুখ ঢেকে রাখার কাপড় । অথচ এসব মেয়েদের কেহই মুখ ঢেকে চলাফেরা করতো না ।
আমর্ড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজের হিজাবী ছাত্রীদের একাংশ
https://www.youtube.com/watch?v=4WgPJ_Bxu7o
https://www.youtube.com/watch?v=3_tsODi2qFA
https://www.youtube.com/watch?v=LNhWI-gL2DM
https://www.youtube.com/watch?v=2APfO9dtm6s
এই ভিডিওগুলোরর মতো মেয়েদের ওড়না পড়া ও পোষাক পরাকে হিজাব বলা হয় । হিজাব করা মেয়েদের ফরজ ।হিজাব যারা করেন তাদের বলা হয় হিজাবী বা মুহাজ্জাবাহ্ ।
এভাবে মুখ ঢাকাকে বলা হয় নিকাব পরা । নিকাব যারা পড়েন তাদের বলা হয় নিকাবী । নিকাব পরা ফরজ নয় । কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর লোকদের মতে এবং বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের ওহাবী ও আহলে হাদিস সম্প্রদায়ভুক্ত পুরুষ লোকদের মতে মেয়েদের মুখ ঢাকা বা নিকাব পরা ফরজ । বাংলাদেশে খুব কম লোকই ওহাবী ও জামায়াতের মতবাদে বিশ্বাসী । নিকাব পরা মেয়েদের বা মহিলাদে দেখতে ভীষণ বিশ্রী । এজন্য বাংলাদেশের মেয়েরা নিকাবী মেয়েদের পছন্দ করে না । উপরন্তু বেশীর ভাগ নিকাবী জামায়াতে ইসলামী করে ।
পুলিশ বাহিনীর লোকদের সম্পর্কে কিছু না বল্লেই নয় :
আমার কাছে কোন সেনা সদস্য বা পুলিশকে মানবিক গুনাবলী সম্পন্ন মানুষ বলে মনে হয়নি । বাহ্যিকভাবে তারা মানুষ ও মনুষ্যত্ববোধ প্রদর্শন করলেও তাদের পরিবারিক জীবন এবং ছেলে-মেয়েদের সাথে তাদের সম্পর্ক এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে তাদের সম্পর্কও ভাল নয় ।
ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন আমল ও পাকিস্তান আমলে সেনা বাহিনী ও পুলিশকে যে পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, ঠিক সেই একই পদ্ধতি এখনও তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় । তারা কোনক্রমেই জনগণের বন্ধু হতে পারে না ।
পুলিশ সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি । আমার এক বন্ধু পুলিশের বড় কর্মকর্তা । সে পুলিশে চাকুরী পাওয়ার পর আমি নিজেই তার সাথে দুরত্ব বজায় রেখে চলছি । আমার এক দাদু (আমার বাবার কাক) ছিলেন পুলিশ । তার ছেলেও পুলিশ । আমার এক খালুও পুলিশ । আমার দুই মামা (মায়ের খালার ছেলে)পুলিশ । তাদের দুই ভাগ্নেও পুলিশ । যাদের কথা বলছি তাদের সবার পদবী এস আই থেকে এ এস পি পর্যন্ত ।
আমি যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য গিয়েছিলাম । প্রথম হলে সিট পাইনি । শহরে তাদেরই একজনের বাসায় থেকে ক্লাস করতে যেতাম । বাসা ছিল জিআরপি-র কার্যালয়ের মধ্যে । তখন থেকেই পুলিশ এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবন যাপন কাছ হতে দেখার সুযোগ হয়েছিলো ।
আমার কাছে তাদের মানবিকবোধ সম্পন্ন মানুষ মনে হয়নি ।
আমার বন্ধু যখন সে বিসিএস দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ পায় এবং পুলিশ প্রশিক্ষণ একাডেমী হতে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে এলো ও কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে যাবে, তখন সে জানালো পুলিশে চাকুরী করছি ও করে যাবো কিন্তু সামান্য হলেও মানবিকবোধকে বিসর্জন দিতে হবেই । কারণ চাকুরীটাই এমন । আর এতে দুই নম্বরী থাকবেই । কারণ আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ১৯১২ সালের ব্রিটিশ ট্রেনিং ম্যানুয়েল অনুযায়ী । আর ট্রেনিং-এর সময়ও ধর্ম চর্চার সুযোগ হয়ে ওঠে না ।
যাক । কয়েক বছর আমার এই বন্ধু চাকুরী করতে থাকলো । আমরা কাছ থেকে লক্ষ্য করলাম অপেক্ষাকৃত ভাল ছেলেরা তাকে এড়িয়ে চলা শুরু করছে বা বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে না বা আগের মতো যোগাযোগ রাখছে না । কিন্তু কিছুটা খারাপ ধরনের ছেলেরা তার সাথে ঘনিষ্টতা বৃদ্ধি করে চলছিলো । আমার কাছে একটা সময় মনে হলো, তার মধ্যে সামান্য হলেও পরিবর্তন চোখে পড়ছে । যেমন : আগে কোন বাজে শব্দ কথার মধ্যে ব্যবহার করতো না । এখন অবলীলায় খারাপ শব্দ ও যাকে তাকে লক আপে ঝুলানোর হুমকিও দেয় সে । এবারের ঈদগুলোতে আমি তার বাড়িতে যাইনি ।
এবার আসছি পুলিশের মানবিকতা ও পিতৃসুলভ আচরন প্রসঙ্গে । আমাকে আমার এক বন্ধু তার আরেক বন্ধুর বাসায় যেতে বল্লো । সেই বন্ধুর বন্ধুর বাবা ছিলেন পুলিশ । ঘটনাচক্রে আমি সেই বন্ধুর বন্ধুর বোনের সাথে কথা বলছিলাম তাদের বাসায় । এক সময় দেখলাম তার ( মেয়েটার ) বাবা আসলেন এবং তার মাথায় হাত রেখে আদর করলেন ও যাওয়ার সময় বল্লেন : আজ আমার রাতে ডিউটি পড়েছে, মা, আমার জন্য দুয়া করিস ।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম । তিনি কিসের ডিউটি করবেন এই শুক্রবার রাতে ? মেয়েটি বলতে চাননি । পরে জানলাম : ভদ্রলোক পুলিশ (তার পদবী সম্ভবত ওসি ) । তিনি রাতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কাজ করবেন । বাড়িতেও যে তিনি কয়েক ঘন্টার জন্য এসেছেন তাও ছুটি ছাড়াই ।
আমি যতক্ষণ কথা বলছিলাম, ততক্ষণ মনে হলো, এমন ভদ্র মেয়ে খুব কমই আছে । কিন্তু শুনেছি পুলিশের মেয়ে বলে অনেক ভাল ছেলেই তাকে বিয়ে করতে চায় না ।
ঠিক এমন ব্যাপার ঘটেছিলো আমার এক ফুফুর ক্ষেত্রে ।
আর পুলিশের ছেলেদেরও অনেকে ভাল চোখে দেখে না ।
তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছি পুলিশের ছেলেকে শিবির করতে ।
আমি মনে করি,
আমাদের দেশের রাজনৈতিক পরিমন্ডল পরিবর্তন হলেই এক সময় পুলিশ সম্পর্কে আমাদের বাজে ধারণা পরিবর্তন হবে । উপরন্তু পুলিশকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করে তাদের পেশাদারিত্ব বজায় রাখার দিকে সরকারকে নজর দিতে হবে । অন্যাথায় আমাদের দেশের জনগণ পুলিশের উপর যতটুকু আস্হা ও বিশ্বাস রাখে তাও বিলীন হয়ে যাবে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্হিতির অবনতি হতে থাকবে ।
উপসংহার :
আমি মনে করি, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেনা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কখনোই কল্যাণকর হয়নি । আন্তজার্তিক শান্তিরক্ষী মিশন ছাড়া আর কোন কিছুতেই বাংলাদেশের সেনা বাহিনীর সাফল্য নেই । দেশের উল্লেখযোগ্য অংশ সেনা ব্যারাক ও ক্যান্টমেন্ট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে । অথচ বিপুল পরিমান লোকের জন্য রয়েছে আবাসন সংকট । সেনা বাহিনীর জন্য বাজেটে বরাদ্ধ কমিয়ে জনগণের স্বার্থে বাসস্হান, স্বাস্হ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্ধ বৃদ্ধি করতে হবে ।
আর বাংলাদেশের জনগণকেই গণবাহিনী বানাতে হবে সাদ্দাম হোসেন সময়কার মতো ও সিরিয়ার বর্তমান সরকারের নিয়ম অনুযায়ী । এসব দেশে প্রতিটা নাগরিকের জন্য ৬ মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলকই নয়, তাদের নিয়মানুবর্তীতা ও আদর্শ নাগরিক হওয়ার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক । বাংলাদেশ যদি স্বাধীন সারভৌবম দেশ হিসেবে টিকে থাকতে চায় তাহলে বাংলাদেশকে এই নীতি মনে নেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই । অন্যথায় বাংলাদেশকে সিকিমের মতো ভাগ্য বরণ করতে হবে ।
২য় বিশ্ব যুদ্ধের সময় নরওয়ের সেনাবাহিনী ও শাসক দেশকে স্বাধীন রাখার ব্যাপারে কোন কাজ করেননি । সুতরাং জনগণকেও এধরনের উদাহরণ মনের মধ্যে বদ্ধমূল করতে হবে । কারণ শাসক সম্প্রদায়ের অনেকেরই আত্মীয় পরিজন বিদেশে থাকে এবং বিভিন্ন দেশের নাগরিক । তারা যদি দেশকে ভালবাসতো , তাহলে তারা বাংলাদেশি হয়ে দেশেই থাকতো । বিদেশের নাগরিকত্ব নিতো না ।
বিষয়: বিবিধ
২১৫৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন