আগামীতে আমাদের এলাকা মাজারের নগরী হিসেবে গ্রিনেস বুকে নাম উঠাবে
লিখেছেন লিখেছেন সিটিজি৪বিডি ০৯ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:৩৮:০৩ সকাল
আমাদের এলাকা মাজারের জন্য বিখ্যাত। এখানে অনেক মাজার আছে। ইলেকশনের আগে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতারা এই মাজারে দোয়া নিতে আসে। বড় বড় লোকেরা দামী দামী গাড়ী নিয়ে মাজারে এসে দোয়া নিয়ে যায়। আমার বাড়ী কোথায় কেউ জিজ্ঞেস করলে তার উত্তরে মাজারের নাম বললেই মাজার ভক্তরা বলে" আপনি বাবার দেশের মানুষ।"
দর্শনাথীঃ
প্রতিবছর বার্ষিক ওরশের সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ বাসযোগে মাজারে আসতে দেখা যায়। মাজার এলাকায় বড় বড় বিল্ডিং ও জমিতে প্যান্ডেল টাঙিয়ে তাদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করা হয়। নারী-পুরুষের জন্য আলাদা কোন থাকার ব্যবস্থা নেই। বিশাল প্যান্ডেলে ভক্তরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে মাজারের গান পরিবেশন করে। গানের তালে তালে নারী-পুরুষ এক সাথে নৃত্য ও করে। মাজারে সকল ধর্মের অনুসারীদেরকে আসতে দেখা যায়।
গরু-ছাগল-মহিসের মিছিলঃ
ওরশের সময় ভক্তরা দুর-দুরান্ত থেকে পায়ে হেটে ঢোল বাজিয়ে, মাইক বাজিয়ে, ব্যানার সহকারে গরু-মহিস-ছাগল-হাস-মুরগী ও অন্যান্য পশু নিয়ে মাজারে জিয়ারত করতে আসে। মাজার এলাকায় প্রবেশ করা মাত্রই ঢোলের আওয়াজ বাড়তে থাকে। মাজারের সামনে দাড়িয়ে থেকে গরু-ছাগল-মহিসের লম্বা রশি মাজারের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়। এই সময় ভক্তরা মাজারে প্রবেশ জেয়ারত করে। মাজারকে সাক্ষী রেখে তারপর মাজার কতৃপক্ষের কাছে উপহার সামগ্রী হস্তান্তর করে। মাজার কৃতপক্ষ মানত প্রদানকারীদেরকে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করে।
মাজারের ওয়ারিশদের সাথে সাক্ষাতঃ
প্রতিটি মাজারের জীবিত ওয়ারিশগন ওরশের সময় সুসজ্জিত রুমে নিজ নিজ আসনে সেজে গুজে বসে থাকে। তাদের রুমে বড় বড় দান বাক্স আছে। ভক্তরা লাইন ধরে সাক্ষাত করে টাকা প্রদান করে দোয়া নিয়ে থাকে। কেউ কেউ তাদের হাতে-পায়ে চুমো খায়, কেউবা তাদেরকে সিজদা করে।
মাজারে সিজদাঃ
কিছু কিছু ভক্ত মাজারে সিজদা করে থাকে। তাদেরকে কেউ বাধা দেয় না। অনেকে মাজারে কোরআন তেলোয়াত ও যিকির করে। ওরশ উপলক্ষে মাজারে কিছুক্ষন পর পর দোয়া মাহফিল ও যিকির হয়। এছাড়া প্রতি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারে দোয়া মাহফিল অনুষ্টিত হয়। শবে রবাত ও শবে কদরের রাতে ও মাজারে হাজার হাজার মানুষ ভীড় করে।
রান্নার জন্য বিশাল আয়োজনঃ
ইতি মধ্যে মাজার এলাকা কয়েক কিলোমিটার বিস্তৃত হয়েছে। রান্নার জন্য ও গরু-মহিস রাখার জন্য মাজারের বিশাল এলাকায় ঘর তৈরী করা হয়েছে। মাজার কর্তৃপক্ষ ভক্তদের আপ্যায়ন করার জন্য সব সময় প্রস্তত থাকে। ওরশের সময় শত শত ডেকসীতে গরু-মহিসের মাংস দিয়ে রান্না করে ভক্তদেরকে পরিবেশন করা হয়। টাকার বিনিময়ে এই খাদ্য সংগ্রহ করতে হয়।
মাইকের আওয়াজঃ
মাজারে আগত ভক্তদের প্রতিটি গাড়ীতে মাইক থাকে। মাইকে সারাক্ষন মাজারের গান চলতে থাকে। অনেক সময় মাইকের আওয়াজে নামাযের আযানও শুনা যায় না। মাজার এলাকায় মাইকের আওয়াজে মসজিদে নামায পড়তে ও কষ্ট হয়।
মেলার আয়োজনঃ
ওরশ উপলক্ষে মাজার এলাকায় মেলা বসে। স্থানীয় জনগন ও দুরদুরান্তা থেকে আসা ভক্তরা মেলার প্রধান ক্রেতা। মেলায় জুয়ার আসর ও বসে।
মাজারের ওয়ারিশদের বাসস্থানঃ
ভক্তদের দানের টাকায় ওয়ারিশরা শহরে বড় বড় অট্টালিকা তৈরী করে বসবাস করছে। ভক্তদের টাকায় দেশ বিদেশে ও তারা ঘুরে বেড়ায়। কোটি কোটি টাকার মালিক মাজারের ওয়ারিশরা মাঝে মধ্যে টাকা ভাগাভাগি করতে দিয়ে মারামারিতে লিপ্ত হয়।
মাজার এলাকায় মসজিদ ও মাজার ভবনঃ
দর্শনার্থীদের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য মাজারের পুরাতন দালান ভেঙ্গে নতুন দালান করা হয়েছে। এই দালান গুলো তৈরী করতে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়। অন্যদিনে মাজার এলাকায় মসজিদটি আগের মতই রয়েছে।
মাজারের কিছু কিছু দৃশ্য আমার খারাপ লাগেঃ
۞ যখন কাউকে মাজারে সিজদা করতে দেখি।
۞ যখন কাউকে মাজারের ওয়ারিশদেরকে সেজদা করতে দেখি।
۞ যখন মাজার এলাকায় গাজার আসর বসতে দেখি।
۞ যখন মাজার এলাকায় নারী-পুরুষকে একত্রে বসে নৃত্যর তালে তালে গান শুনতে দেখি।
ইসলাম প্রচারের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে শত বছর আগে এদেশে অনেক ধর্ম প্রচারকের আগমন ঘটে। তাদের মৃত্যুর পর তাদের কবরের উপর বিল্ডিং তৈরী করে মাজার তৈরী করা হয়। ইদানিং মাজারের পুরাতন বিল্ডিং ভেঙ্গে নতুন নতুন বিল্ডিং তৈরী করা হচ্ছে। তাদের সন্তানদের মৃত্যুর পর ও মাজার তৈরী করা হয়। একটি মাজার থেকে আজ অনেক মাজারের সৃষ্টি। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে আমাদের এলাকা মাজারের নগরী হিসেবে গ্রিনেস বুকে নাম উঠাবে।
বিষয়: বিবিধ
২১২২ বার পঠিত, ৪৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এইটা দেখে আমি ও আমার বোনরা হাসতে হাসতে শেষ।
আরেকটি আছে হযরত কাতাল পীর আগে পরে যেন আরো কি আছে।
বিশ্বাস না হলে আজই চেষ্টার উপর ট্রাই কইরা দেখবার পারেন। আপনেতো কিছুদিন পুর্বে চট্টগ্রাম গেছিলেন। মাগার বদনাশাহ মাজার থেকে কুনো ফয়েজ হাসিলের মহা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেন!!! আপনের লিগ্যা আমার আফসোস দরাজ হইয়া গেলু।
বিভিন্ন মাজারে দেখা যায় বাদ্য-বাজনার তালে তালে নারী-পুরুষ একসাথে নাচানাচি করে...তো নাচতে নাচতে এক মহিলার কাপড় খুলে যাচ্ছে, এমতবস্থায় পাশেরজন নাচার তালে তালে বলছে -
=> আপা কাপড় তো খুইল্লা গেল
তার উত্তর -
=> ব্যাপার না নিচে ছাইয়া আছে
বি:দ্র:মাজার কেন্দ্রিক এই ধরনের অনৈসলামিক কার্যক্রমকে অবিলম্বে বন্ধ করার করনীয় কি তা ভাবতে হবে।
সুন্দর টপিক নিয়ে লিখেছেন। ভালো লাগলো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন