গহিন জঙ্গলে খাটাশের মহত্ব আবিষ্কার! এক পিকুলিয়ার মানুষ, পর্ব-১৯ (রোমাঞ্চকর কাহিনী)

লিখেছেন লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু ০৮ জুন, ২০১৪, ০২:২১:১৮ দুপুর



অবশেষে ত্রিপুরা বন্ধুদের পীড়াপীড়িতে তাদের মেহমান হতে বাধ্য হলাম। এক গ্রীষ্মের ছুটিতে ১০ মাইল পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে তাদের গ্রামে পৌঁছলাম। তারা আগেই কথা দিয়েছিল দুধ, কলা, মুড়ি, খই, পেয়ারা, পেঁপে দিয়ে আমার মেহমান দারী করবে। ত্রিপুরা মারমাদের জীবন-যাত্রা, দর্শন, বিশ্বাস সম্পর্কে আমার আগে থেকেই পরিষ্কার ধারনা ছিল। পাহাড়িদের ভাষা স্থল ভাগের মানুষ থেকে আলাদা, প্রতি দশ মাইলের মধ্যেও আবার সেই ভাষার পরিবর্তন দেখা যায়। এমনকি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষাও এ ধরনের! যারা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা জানেনা, তাদের কাছে এই পার্থক্য ধরা সম্ভব হবেনা। যারা চট্টগ্রামের মানুষ, তারা দেখতেই পায় প্রতি উপজেলার ভাষা প্রয়োগ ও উচ্চারণে অনেক তারতম্য আছে। ঘটনাচক্রে আমাদের স্থানীয় বাজারে ডাক্তার বেশী থাকার কারণে বহু পাহাড়ি মানুষ, দীর্ঘ রাস্তা পরিভ্রমণ করে চিকিৎসার জন্য আসত। আমাদের নিজেদের একটি ঔষধালয় ছিল, সেখানেও পাহাড়িরা আসত। ছোটকালে খেলার বন্ধুদের সাথে পাহাড়িদের ভাষায় কথা বলে দুষ্টামি করতাম। বন্ধুরা সবাই ত্রিপুরা ভাষায় কথা বলায় বেজায় পটু ছিল। ফলে পাহাড়িদের সাথে কথা বলায় আমার তেমন কোন বেগ পেতে হয়নি। আমার মূল লক্ষ্য ছিল, পাহাড়ি এসব ওঝা বৈদ্য কিভাবে তাদের কাজ কর্ম সারে। আমি বন্ধুদের গ্রামে পৌছার পর বুঝতে পারি, আমার সম্পর্কে এরা আগে থেকেই সম্যক অবগত।

যেদিন আমি পাহাড়ে যাচ্ছিলাম, সেদিন সকল পাহাড়ি মিলে নদীতে মাছ ধরছিল। তাদের হাতে কোন জাল নাই, বর্শা নাই, বরশী নাই, বাঁশের ঢোল নাই। শত শত মানুষ খালি হাতেই মাছ ধরছিল! মাছগুলো মাতাল হয়ে, মানুষের আশে পাশে ঘুরঘুর করছিল! মানুষ টপাটপ মাছ ধরে ঝুড়িতে ঢুকাচ্ছিল! খালি হাতে এভাবে মাছ ধরার দৃশ্য আগে কোনদিন দেখিনি। বন্ধুদের গ্রামের এক বৃদ্ধ তান্ত্রিকের সাথে পরিচয় হল, যিনি আমাকে অনেক প্রশ্ন করলেন। আমি তার অনেক কিছুর উত্তর দিলাম। আমার উত্তরের অনেক কিছু তিনি বুঝেন নি। কেননা আরবি তাবিজের প্রকার, দোয়া, পরিচিতি তাদের কাছে বোধগম্য ছিলনা। তবে আমি তাদের অনেকগুলো বুঝেছি। তিনি আমাকে অনেক গাছের শিকড়, বিচি, ছাল দেখালেন যেগুলো দিয়ে ঔষধ, তাবিজ ও মন্ত্রের কাজে ব্যবহার হয়। তাকে প্রশ্ন করলাম, নদীর মাছকে কিভাবে মন্ত্রমুগ্ধ করা হল? তিনি বললেন, এটা কোন মন্ত্রের কাজ নয়। মাছ ধরার উক্ত নিয়মের নাম ‘মেল’ প্রথা! মাছ ধরার কয়েক ঘণ্টা আগে, নদীর উজানে মেল ছেড়ে দিতে হয়। মেল খেলেই মাছ মাতাল হয়ে যায়। ফলে খালি হাতেই মাছ ধরা যায়। যত বড় মাছই হোক না কেন, সে পানির উপরে মাতাল অবস্থায় ভেসে উঠবেই এবং মানুষের হাতে ধরা খাবে। জানতে পারলাম মেল একপ্রকার পাহাড়ি গাছের চামড়ার রস থেকে তৈরি হয়।

কাউকে প্রেমে আবদ্ধ করতে চুলের মত দেখতে, দুটি শিকড়ের ব্যবহার দেখলাম। নাম রাজা-রানী। মন্ত্রপড়ে ছেলে-মেয়ের নাম ধরে, পানি দেওয়া মাত্র সেগুলা মোচড়ানো শুরু করল! এক পর্যায়ে একটি চিকন লতা অপরটিকে পেঁচিয়ে ধরল। এ ধরনের প্যাচানোর ঘটনা ঘটলে বুঝতে হবে এই বিদ্যায় কাজ হবে। ভূর্জপত্রে লিখিত একটি তাবিজ সহ, উক্ত দুটি শিকড় তামার চোঙ্গায় ভরে নিয়ম মত ব্যবহার করলে কাজ দিবে। আমার চোখের সামনেই এটি ঘটল, তাই অবিশ্বাস করতে কষ্ট হল। স্বামী স্ত্রীর ভালবাসা দৃঢ় করতে, আরেক ধরনের বিচির ব্যবহার দেখলাম, সেটার নাম ‘মুনা-মুনি’। প্রতিটি বিচির গায়ে চোখের পাপড়ির মত দুটি পা আছে। মন্ত্র পড়ে পানি দেওয়া মাত্র, পা দুটি নড়াচড়া শুরু করল! যদি নড়াচড়া করে বুঝতে হবে তাহলে কাজ হবে ব্যবহার বিধি আগের মতই। পাহাড়ি বৈদ্যদের নিকট রাজমোহনী দানার ব্যবহার অনেক বেশী বলে জানলাম। ডালের চেয়ে একটু বড় আকৃতির গাছের বিচি, দেখতে অদ্ভুত, দুপাশে দুটি কান সদৃশ কিছু আছে, সামনে একটু নাকের মত, মাথায় যেন একটি তাজ আছে! বৈদ্যের দাবী দানাটি মানুষের মাথার মত! আমার কাছে অবিকল মানুষের মাথার মত না হলেও, এই ধরনের ব্যতিক্রম ধর্মী বিচি আমি অতীতে দেখিনি আজ পর্যন্ত দেখিনি। আসাম, কামরূপের অতি উঁচু পাহাড়ি অরণ্যে এসব পাওয়া যায় বলে তিনি জানালেন।

ক্ষতিকর বিদ্যাও রয়েছে, মানুষের ক্ষতি করার জন্য সেই মানুষের নখ, চুল বা ব্যবহার্য কাপড়ের অংশ বিশেষ সংগ্রহ করতে হয়। তারপর জিনিষ গুলো নরমুণ্ডের খুলির ভিতরে রেখে, মন্ত্রপড়ে সেগুলোকে আস্তে আস্তে আগুনের তাপ দিতে হয়। যখন নরমুণ্ডে রক্ষিত জিনিষ গুলোতে আগুনের তাপ লাগবে, যার ব্যবহৃত জিনিষে তাপ দেওয়া হচ্ছে, তার হৃদয় অভ্যন্তরে জ্বালা পোড়া শুরু হবে! এভাবে কল্যাণ অকল্যাণের নানাবিধ মন্ত্রের ব্যবহার, তিনি আমাকে দেখালেন। একজন বুড়িকে দেখলাম যিনি শুধুমাত্র মন্ত্রের মাধ্যমেই কাজ করেন। দাঁতের পোকা ফেলাতে তিনি নাকি অতীব দক্ষ! বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়, দাতে কোন পোকা নাই। প্রাণী বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে আমি নিজেও তাই বিশ্বাস করি।

এটা নিয়ে আমার একটি পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল; দুই দিনের প্রচণ্ড দাঁতের ব্যথায় কষ্ট পাবার পরে, খালাম্মা আমাকে শেফালী নামের এক মহিলাকে তলব করে আনতে পাঠালেন। পাঁচ মাইল দূরে হাসনাবাদ গ্রামে পৌঁছে দণ্ডায়মান এক মহিলাকে প্রশ্ন করলাম, শেফালীদের বাড়ী কোথায়? তিনি বললেন, আমিই শেফালী! তাকে বললাম, হাজি বাড়ীর মৌলানা সাহেবের বউ আপনাকে যেতে বলেছে, তাঁর দাঁতে প্রচণ্ড ব্যথা। মহিলাটি সংবাদ শোনা মাত্র ঘটনাস্থল থেকেই আমার সাথে রওয়ানা দিলেন। বাড়ী আসার পরে আমি নিজেই কলা পাতা, পান পাতা সংগ্রহ করে দিয়েছি! মহিলার চাহিদামত যাবতীয় উপকরণ আমি নিজেই জোগাড় করে দিয়ে তার কাজের ভুল ধরার অভিলাষে পর্যবেক্ষণ করছিলাম। মহিলা সাথে বহন করে আনা একটি শিকড় খালাম্মার কানে ঝুলিয়ে দিলেন! সম্ভবত এটি তার শাড়ীর আচলের মাঝে বাধা ছিল। তারপর পান দিয়ে হালকা ভাবে মাথায় বাতাস দিতে থাকলেন। দেখতে থাকলাম, পান পাতার হালকা বাতাসের গতির চেয়ে কমপক্ষে দশগুণ বেশী গতি প্রাপ্ত হয়ে, টপ টপ শব্দ করে এক একটি পোকা আছড়ে পড়ছে, কলা পাতার উপর! মহিলার কাজের ফাঁক ফোঁকর তালাশে আমার ইন্দ্রিয়ের প্রতিটি চোখ খাড়া রেখেছিলাম। তারপরও আমি তার কারসাজি বুঝতে পারিনি!

এই ধরনের খুবই ক্ষুদ্র পোকা ঝিঙ্গা, কোন্দা, কিংবা পটল জাতীয় সবজীতে হয়। মহিলা বাড়ীতে থাকা অবস্থায় আমি কিছু পোকা সংগ্রহ করে ফেলি। নিজের হাতে এক একটি পোকা নিয়ে সজোরে কলা পাতায় আছাড় মারছিলাম! নাহ! মহিলার মন্ত্রের মতো নিক্ষিপ্ত গতি হলনা, এমনকি সেই মানের শব্দও সৃষ্টি হলনা! মহিলা আমার কাজ দেখে হেঁসে বললেন! আমার কাজে অনেকে সন্দেহ করে, তবে তোমার মত পোকা আছাড় মেরে কেউ পরীক্ষা করেনি! তিনি বললেন, আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম, এভাবে মানুষের দাঁতের চিকিৎসা করতে। আমি তাই করি, তবে কোত্থেকে পোকা আসে আমি নিজেও জানিনা। যার দাঁতে পোকা নাই, তার দাঁত থেকে পোকা আসেনা। দাঁতের ব্যথা উপশমে মহিলা কিছু পথ্য দিয়েছিল, তিনি চলে যাবার পরে খালাম্মার দাঁতের ব্যথার উপশম হয়েছিল। আমার দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষনে দেখেছি, পাহাড়ী মানুষেরা দাঁতের চিকিৎসা এভাবেই করে থাকত, কোনদিন এলোপ্যাথিক ডাক্তারের কাছে আসতে দেখিনি। যাক, আসল ঘটনায় ফিরে আসি।

ত্রিপুরার সেই বৈদ্য আরো বিচিত্র ধরনের গাছের পাতা, লতা, দেখালেন। সেসবের বহু ব্যবহার বিধি প্রদর্শন করলেন। এসব কারণে পরবর্তীতে আমি উদ্ভিদ বিদ্যার প্রতি আগ্রহী হই এবং সাথে একটি ইউনানি ডিগ্রীও অর্জন করি। আমি যখন ডিগ্রীতে উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে পড়ি, তখন এসব গাছের পরিচিতি বের করার বহু চেষ্টা করেছি। আমাদের স্যার সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানির স্যারদের পর্যন্ত বহু বিরক্ত করেছি। আমি গাছের পিছনে ঘুরতে গিয়ে অন্যভাবে উপকৃত হয়েছি, তবে বৈদ্যদের দেখানো এসব গাছের পরিচয় বের করতে পারিনি! বৈজ্ঞানিক নাম Gloriosa Suparba নামে একটি লতার চারা জোগাড় করতে আট বছর ঘুরে সাফল্য পেয়েছিলাম কিন্তু উপরের এসব লতা-বিচির কোন সন্ধান পাইনি! বলা বাহুল্য এসব জিনিষের অনেকগুলো পীতাম্বর শাহের দোকানে পাওয়া যেত। একদা এসব সংগ্রহ করে কোন প্রকার মন্ত্র ছাড়াই যখন পানি ছিটালাম, দেখলাম রাজা-রানী পেঁচিয়ে যাচ্ছে, মুনো-মুনির পা নড়াচড়া করছে। বুঝতে পারলাম এসব মৃত লতার গায়ে যখন পানি লাগে, তখন পানি লতার কোষের মাঝে ঢুকতে চায়, ফলে সেটি নড়াচড়া করে। তখন বুঝতে পারলাম এখানে সবকিছুকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করা যাবেনা আবার কোন কিছুকে অবহেলাও করা যাবেনা। সামান্য সত্যের সাথে প্রচুর মিথ্যা একাকার হয়ে আছে। এখানে সত্যটা অবলম্বন আর মিথ্যাটাই ব্যবসা। তারপরও নিশ্চিত হলাম, চোখ-কান খাড়া রাখলে, বুদ্ধি বিবেক খাটালে গহীন অরন্যের জীবনের মাঝেও অনেক শিখার আছে।

আরের পাহাড়ি প্রসিদ্ধ বৈদ্যের সাথে পরিচয় হয়েছিল, যিনি আমার সহপাটির দাদা হয়। বুড়োর ঘরে বিদঘুটে দুর্গন্ধ, লজ্জায় নাকে হাত দিতে পারলাম না, আবার সহ্য করতেও কষ্ট হচ্ছিল। বন্ধু বললেন, তিনি একটি ডাক্তারি জানেন, এটা সেই ঔষধের গন্ধ! তার দাদা খাটাশের মল খাইয়ে, মহিলাদের সূতিকা, পচা জ্বর ভাল করেন। এই তথ্যটি আমার নিকট কদাকার ও বিদঘুটে মনে হল! বন্ধুটি বলল আমার দাদা এই ঔষধ বিক্রি করেই অনেক জায়গা সম্পদের মালিক হয়েছেন। মানুষ যদি উপকার না পাইত, তাহলে কি এই ঔষধের জন্য লাইন ধরত? বন্ধুকে দাদার পিছনে কাজে লাগিয়ে অনেক পীড়াপীড়ি করে, কাউকে না বলার শর্তে এই বিদ্যা ও তার চিকিৎসা পদ্ধতির রহস্য উদ্ধার করি।

আমরা তিন জন খাটাশের মল সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়ি। খাটাশ সর্বদা এক স্থানে পায়খানা করে, ফলে খাটাশের পায়খানা কোথায় আছে সেটা বন্ধুর দাদা আগে থেকেই জানতেন। তিনি অতি সন্তর্পণে খাটাশের মলের সূচালো অগ্রভাগের সামান্য মল তুলে সেটাকে পাকা কলার অভ্যন্তরে গেঁথে দিলেন। নিকটে দাঁড়িয়ে দেখলাম, নিশ্চিত হলাম, বন্ধুর দাদার গায়ের পরিচিত বিশ্রী গন্ধটা এখান থেকেই যায়। ইচ্ছে হচ্ছিল চোখ-মুখ বন্ধ করে এখনই দৌড় লাগাই। যেহেতু বিদ্যা শিখতে গিয়েছি, তাই পালাতে পারলাম না। তবে, আমাকে দশ মাইল দূরের বাড়ী ফিরে আসা পর্যন্ত এই ভয়ানক দুর্গন্ধ পিছু ছাড়েনি। বাড়ীর চাকর ‘হারুন’ ঠিকই ধরে ফেলেছিল! বলল, দূর! দূর! তুমি নিশ্চয়ই খাটাশের মল দলিয়ে এসেছ! কথা না বাড়িয়ে প্রশ্ন করলাম মুক্ত হবার উপায় কি? সে বলল, পুরো গায়ে কেরোসিন মাখ, কিছুক্ষণ রোদে দাঁড়িয়ে থাক, তারপর অ-ঘাটে (যেখানে সচরাচর মানুষ গোসল করেনা) গিয়ে গোসল কর। তাহলে দুর্গন্ধ অনেকটা চলে যাবে। আতঙ্কিত হয়ে প্রশ্ন করলাম, দুর্গন্ধ অনেকটা চলে যাবে মানের অর্থ কি? সে বলল এই গন্ধ ধুইলে যায়না, দুই দিন পড়ে এমনিতেই চলে যায়। এই অবস্থায় গায়ে কেরোসিন মাখলে; সহ্য করা যায়, ইজ্জত বাঁচার মত একটি নতুন একটি গন্ধের সৃষ্টি হয়। এভাবে দুদিন পরে তো এমনিতেই মুক্তি মিলবে।

বৈদ্যের এই ঔষধ খাওয়ার পদ্ধতি সহজ, চোখ-মুখ বন্ধ করে কলাটি গিলে ফেলা। ভুক্ত ভোগীরা জানাল, এই ঔষধে কাজ হয়। দেহে ফুরফুরে ভাব আসে, মনে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসে। ফলে মানুষ আবার তার স্বাস্থ্য ফিরে পায়। এই ঔষধের সুনাম সম্পর্কে স্থলভাগের মানুষেরাও অবগত। তারাও এই ঔষধ সংগ্রহ করে খায়। রোগী জানেনা এখানে কি ঢুকানো হয়েছে! যদি জেনে যায়, তাহলে রোগী উল্টো বমি করতে করতে নতুন রোগ বাধিয়ে বসবে। একদা আমাদের এক গ্রাম্য চাচী, আমার মুখে এই কথা মন দিয়ে শুনেছিল। তিনি চাকর ‘হারুন’ কে বাবা-ছেলে ডেকে, খাটাশের মল সংগ্রহ করে, তাঁর রুগ্ন মেয়েকে খাইয়েছিল! তার দাবী তিনি উপকার পেয়েছিলেন। একদা দেখলাম সেই চাচী খাটাশ মলের ব্যবসা নিজেই শুরু করে দিয়েছেন! বায়োলজির ছাত্র হিসেবে আমি নিজে খাটাশের মলের এই বিষয়টিকে বরাবর মাথায় রেখেছিলাম। বহু দিন পরে আসল তথ্য পেয়ে যাই যে, খাটাশের মলেও উত্তম গুন নিহিত আছে। পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ‘রাজকীয় কফি’ খাটাশের মল থেকেই তৈরি হয়! খাটাশ নিয়ে রম্য রচনার আড়ালে আমি আলাদা একটি প্রতিবেদন লিখেছিলাম। যে রচনার কারণে আমি পরিচিত ও বন্ধু মহলে ব্যাপক আলোচিত হয়েছিলাম। সোনার বাংলাদেশ ব্লগ ও ম্যাগাজিনে সর্বোচ্চ পঠিত রচনার মাঝে এটিও একটি ছিল।

আগের পর্ব: বৈরাগীর টিলার ‘ভোগ’ থেকে ভুত বিতাড়ন! এক পিকুলিয়ার মানুষ, পর্ব-১৮

প্রথম পর্ব: এক পিকুলিয়ার মানুষ! (রোমাঞ্চকার কাহিনী- ভূমিকা পর্ব)

বিষয়: বিবিধ

২৫৫৬ বার পঠিত, ৩৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

232320
০৮ জুন ২০১৪ দুপুর ০২:২৯
চোথাবাজ লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
০৮ জুন ২০১৪ দুপুর ০২:৫১
179014
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
০৮ জুন ২০১৪ দুপুর ০২:৫৫
179017
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : Frustrated Frustrated Time Out Time Out
232345
০৮ জুন ২০১৪ দুপুর ০৩:০০
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : মাছ ধরার টেকনিকতো হেভি।
খাটাশের রম্যরচনা এ ব্লগে দেয়া যায়না?Rolling on the FloorRolling on the Floor?
খাটাশের গন্ধ কেমনায় দুর করছিলেন?
কেরাসিন টেকনিক ইউজ করছিলেন?
নাকি কৌতুহল বসত অন্য কিছু ধরছিলেন?
এত ভালো লাগছে বলার বাহিরে আমিও আপনার সাগরেদ হতে মন চায়।
যদিও এত পিকলু জিন্দেগিতে হতে পারবোনা।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
০৮ জুন ২০১৪ দুপুর ০৩:১৭
179034
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : অন্য কোন একদিন খাটাশের রচনাটি যোগ করব। ছবি যোগ করতে সময় ব্যয় হয়। আপনি যদি ই-মেইল দেন তাহলে পিডিএফ পাঠাতে পারব।

কেরোসিন থেরাপী ব্যবহার করেই গন্ধমুক্ত হয়েছিলাম। আমার সাগরেদ হওয়ার চেয়ে জ্ঞানীর সাগরেদ হউন। সেটাই কল্যাণকর হবে। অনেক ধন্যবাদ।
232360
০৮ জুন ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৯
ছিঁচকে চোর লিখেছেন : খাটাশের মল সংগ্রহ করে, তাঁর রুগ্ন মেয়েকে খাইয়েছিল! তার দাবী তিনি উপকার পেয়েছিলেন।

ওয়াক ওয়াক
০৮ জুন ২০১৪ দুপুর ০৩:৫০
179060
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : ওয়াক! ওয়াক! অনেক ধন্যবাদ
232388
০৮ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আবার খাটাশ!!!!
তার জিবন রক্ষার জন্য যে আল্লাহতায়লা তাকে যে যোগ্যতা দিয়েছেন আমরা সেটার জন্যই তাকে ঘৃন্য করে ফেলেছি।
চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে অনেককে দেখেছি মাছের চারা তৈরির সময় পঁচান পান্তাভাত মিশিয়ে দেয়। এর ফলে মাছগুলি সত্যই মাতাল হয়। কিন্তু এভাবে হাত দিয়ে ধরা কখনও দেখিনি। কোঁচ দিয়েও এই ভাবে ভেষে উঠা মাছ মারতে দেখেছি। এটা কিন্তু ঠিক যে বিভিন্ন শিকড়বাকর এর মধ্যে বিভিন্ন গুন রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ ওঝা রাই এগুলির অপব্যবহার করেন। বিখ্যাত শিকারি পচাব্দি গাজির পিতা শিকারি মেহের গাজির বাঘের থাবার আঘাতে মুখের একাংশ আলাদা হয়ে যায়। ডাক্তাররা ঘা সেপটিক হয়ে মৃত্যুর আশংকা করেছিলেন। কিন্তু বনজ লতাপাতার সাহাজ্যে তার পচন ধরা ঠেকান ও ঘা শুকিয়ে যায় বলে পড়েছি। তিনি এর পরও অনেকদিন জিবিত ছিলেন।
০৮ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:০৪
179111
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : যে মেল প্রথার কথা বলছি, সেটা হালদা নদীর একেবারে উজানে ভারতীয় সীমান্তের কাছাকাছি এলাকার কথা বলছি। পরবর্তীতে কয়েক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিলে এটাকে নিষিদ্ধ করে দেন। মূলত এটা এক প্রকার হালকা বিষ। যার ফলে ছোট মাছ গুলোকে মরে যেতে দেখতাম।

ঘা শুকানোর, কাটার রক্ত বন্ধ হবার মত প্রচুর ঔষধী গাছ বাংলাদেশের প্রায় সব বনেই পাওয়া যায়। অনেক ধন্যবাদ।
232390
০৮ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৪
আহমদ মুসা লিখেছেন : বুঝতে পারলাম এখানে সবকিছুকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করা যাবেনা আবার কোন কিছুকে অবহেলাও করা যাবেনা। সামান্য সত্যের সাথে প্রচুর মিথ্যা একাকার হয়ে আছে। এখানে সত্যটা অবলম্বন আর মিথ্যাটাই ব্যবসা। তারপরও নিশ্চিত হলাম, চোখ-কান খাড়া রাখলে, বুদ্ধি বিবেক খাটালে গহীন অরন্যের জীবনের মাঝেও অনেক শিখার আছে।

সঠিক কথা বলেছেন। আমারও তাই মনে হয়। যারা বৈদ্যালী করে তাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী-গুণী তাদের কর্মফলে সত্যেতার কিছু আলামত দেখা যায়। বাকী কতক বৈদ্য আছে যাদের কর্মফলে কোন গুনাগুণ পাওয়া যায় না। মানুষকে ধোকা দিয়ে পয়সা কামানোটাই আসল লক্ষ্য।
০৮ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:০৪
179115
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : বেশীর ভাগ ওঝা বৈদ্যই ভূয়া। মানুষের বিশ্বাসকে পূজি করে তারা প্রতারণা করে মাত্র। অনেক ধন্যবাদ।
232391
০৮ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : দাঁতের পোকার ঘটনা অনেকের কাছেই শুনেছি। কিন্তু এটা কখনওই বিশ্বাসযোগ্যমনে হয়নি। কারন যে কারনে দাঁত ব্যথা করে সেই পোকা গুলি মুলত ব্যাকটেরিয়া। খালি চোখে দেখা যাওয়ার কথা নয়।
০৮ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:০৯
179123
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আমি নিজে বায়োলজির ছাত্র হিসেবেই বলেছি দাঁতের মাঝে কোন পোকা নাই। তারপরও আমার সামনে এটা ঘটতে দেখেছি। যারা শুকুর খায়, তাদের পেটে, কলিজায়, ফুসফুসে ফিতা ক্রিমির আক্রমণ হয়। কখনও সে সব ক্রিমি দাঁতের মাড়ি পর্যন্ত ভেদ করে চলে আসে।

সেটা অবশ্য আমার বর্ণিত সেই পোকা নয়। অনেক ধন্যবাদ।
232397
০৮ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৭
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : শেষ পর্যন্ত খাটাশের মল! আপনার ধৈর্য্য ও অধ্যবসায় আছে বেশ। চলতে থাকুক.....
০৮ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:১১
179124
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : এটা মহান আল্লাহর দয়া ও রহম। আমি যদি এটা উদঘাটন না করতাম তাহলে অনেকে তা জানত না। আবার যারা জানত তারা লিখনীর মাধ্যমে প্রকাশ করার সুযোগ না থাকার কারনে জানিয়ে যেতে পারত না। অনেক ধন্যবাদ।
232441
০৮ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৭
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : মহা সমস্যায় পড়েছি। কেমন করে লিখেন। সোনারবাংলায় মনে করতাম আপনাকে একজন ডাক্তার। তখন পড়তাম আর মন্তব্য করতাম। কিন্তু কখনো আপনি তার জবাব দিতেন না।
আপনার সাথে কথা হওয়ার পর সম্পর্কটা আগের চাইতে আরেকটু বেড়ে গেল। বহু চিন্তা করে পারছিনা আপনি আসলে কী?
যে ভাবে লিখছেন তাতে অনেকের সমস্যা হবে। একেবারে বাস্তব। এখনো আমাদের এলাকায় (সিলেট) এ সমস্ত কিছু করা হয়। কিন্তু পড়ে জানতে পারছি কেমন করে হয়।
বিশ্বাস আর অবিস্বাসের মধ্যে থেকে এতদিন যা জানতাম আজ তা একবারে স্পষ্ট মিলে যাচ্ছে। আন্তরিক মোবারকবাদ।
০৮ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৮
179157
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : সোনার বাংলাদেশে মন্তব্যের সুযোগ না থাকায় বেশী বেশী করে লিখতে পারতাম। তখন প্রতি সপ্তাহে একটি করে তথ্যবহুল প্রবন্ধ লিখেছি। এখন পারিনা কেননা এখন উত্তর দিতে হয়।

আমার এই লিখাটিই একটু ব্যতিক্রম হচ্ছে! এ ধরনের লিখা আর লিখবনা। কেননা এখানে আমাকে নিয়েই লিখে যাচ্ছি। তা ভাল-মন্দ যাই হোক, নিজের প্রচারই তো করলাম! তাই মাঝে মধ্যে চিন্তায় পড়ি উচিত আর অনুচিত নিয়ে ভাবি। এখানেই লিখাটির ইতি টানব কিনা চিন্তা করি। পরে সিদ্ধান্ত নিলাম তিন অধ্যায়ে লিখাটি শেষ করব, এটি দ্বিতীয় অধ্যায়। আর বেশী লম্বা করবনা অধিকন্তু নিজেকে নিয়ে লিখতে হয় এমন লিখা থেকেও বিরত থাকব। তারপরও জানিনা কবে নাগাদ শেষ হবে।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।
232466
০৮ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২২
এনামুল হক মানিক লিখেছেন : অনেক ভালো লাগলো.. ধন্যবাদ
০৯ জুন ২০১৪ সকাল ১০:৫৪
179374
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
১০
232638
০৯ জুন ২০১৪ সকাল ০৭:১৯
শেখের পোলা লিখেছেন : দারুন অভিজ্ঞতা অর্জন৷ সাথে আছি৷ধন্যবাদ৷
০৯ জুন ২০১৪ সকাল ১০:৫৫
179375
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
১১
232728
০৯ জুন ২০১৪ দুপুর ১২:৩৭
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : সত্যিই আপনি এক পিকুলিয়ার লোক.....।
০৯ জুন ২০১৪ দুপুর ০১:০৯
179423
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ।
১২
232776
০৯ জুন ২০১৪ দুপুর ০২:৪১
নেহায়েৎ লিখেছেন : গতকাল কিছু অংশ পড়েছিলাম। আজ পুরোটা শেষ করলাম। কত অদ্ভুত অদ্ভত কাজই না করে মানুষ! খাটাশের গু হতে দামী কফি!!!

শুনলেই বমি আসে।
১০ জুন ২০১৪ সকাল ১১:০৩
179829
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ।
১৩
234005
১২ জুন ২০১৪ রাত ০২:২৬
মাটিরলাঠি লিখেছেন : কফির কথা জানতাম, এবার জানলাম তার বিষ্ঠাও দামী। তবে সজ্ঞানে এই ওষুধ খাওয়া সম্ভব নয় মনে হয়।

অট. আমাদের উত্তরাঞ্চলে খাটাস বলে একধরণের বিড়াল জাতীয় প্রানীকে, দেখতে বাঘের মতো, রং কমলা হলুদ,সাইজে বনবিড়াল থেকে বড়। হটাৎ দেখলে বাঘ মনে হয়, এখন বিলুপ্ত। আপনি যে খাটাসের কথা বলেছেন তাকে এদিকে বলে নোঙর (সিভিট)।

১২ জুন ২০১৪ সকাল ১০:৪০
180707
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনি যে প্রাণীটির কথা বলেছেন সেটিও খাটাশ। বহু প্রজাতি আছে, চামড়া ও মুখ সুন্দর এবং শান্ত। হঠাৎ বিগড়ে গেলে মৃত্যু অবধি লড়তে থাকে। অনেক ধন্যবাদ।
১৪
234778
১৪ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:৫২
মোস্তাফিজুর রহমান লিখেছেন : ভাই খাটাসের কপির গন্ধ/ স্বাধ কিন্তু এখনো যায়নি, আবার খাটাশ নিয়ে এলেন!!
ধন্যবাদ,আচ্ছা ভাই আপনার লিখাগুলো বই আকারে প্রকাশ করবেন কিনা??
১৪ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৫
181438
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : খাটাশ তো ভাই মহা সম্মানীত একটি প্রাণী! বই বের হবে কিনা এখনও নিশ্চিত নই। দেশে গেলে হয়ত এ ব্যাপারে চিন্তা করে দেখতে পারি। অনেক ধন্যবাদ, ভাল থাকুন।
১৫
237663
২২ জুন ২০১৪ রাত ০৯:০৮
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : বেশ উপভোগ করলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।
২৩ জুন ২০১৪ দুপুর ১২:১৯
184412
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ, ভাল থাকুন।
১৬
266210
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০২:৪৩
আফরা লিখেছেন : দাতের পোকা দেখি নাই কিন্তু কানের পোকা দেখেছিলাম ।

১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:০১
209966
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আসলে কানেও কোন পোকা থাকেনা, বাহির থেকে কদাচিত ঢুকে পড়ে। অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File