হেফাজতের মহা সমাবেশে সাংবাদিকদের মারপিট : একজন প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দী।
লিখেছেন লিখেছেন মু নূরনবী ০৬ এপ্রিল, ২০১৩, ০৯:০২:১৭ রাত

ছবি : ইটিভির স্টাফ রিপোর্টার নাদিরা শারমিন
অনেক দিন পর মিছিলে সাউটিং করার চান্স পেয়ে তপ্ত রৌদে দাঁড়িয়ে সাউটিং দিতে কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়লে পাশেই ফুটপাতের আইল্যান্ডের উপর বসে পড়ি।
আমরা অবস্থান তখন পুরানা পল্টন মোড়ে। ঘড়িতে সময় সম্ভবত দুপুর দুইটা। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে এসএটিভির সাংবাদিক মহসীন কবির (পরে জেনে ছিলাম) লাইভ নিউজ এ সমাবেশের অবস্থা জানাতে গিয়ে বলে, এখন এখানে শ তিনেক লোকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অথচ সে সময় পুরানা পল্টন মোড় পার হয়ে উপস্থিতি প্রেসক্লাবের নিকট পর্যন্ত। সাথে সাথেই উত্তেজিত একজন বলে আপনার নিউজ কভারেজ করার দরকার নাই। আপনারা হলুদ সাংবাদিক। কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে ক্যামেরাম্যান লিকলিকে, বাবরি চুলো (নাম জানি না) একটু ভাব নিতে আসলে শুরু হয়ে যায় উত্তম-মধ্যম! মহসিন কবীর কিছুটা কম খাইলেও পাতলা খান (!) আর যায় কই...
দৌড়ে গিয়ে অনেককে নিবৃত করার চেষ্টা করি। একজনকে থামাই তো দশ জন আইসা ঝাঁইপা পড়ে! এভাবে মারতে মারতে পল্টন মোড় থেকে ফারস হোটেল/কস্তুরীর মোড় পর্যন্ত নিয়ে যায়। ২০/২৫ মিনিটের এই ধোলাইয়ে তার অবস্থা গুরুতর! তারপর কোনমতে ফারস হোটেলের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় ঢুকিয়ে দিয়ে উত্তেজিতদের একে একে নিবৃত করি।
দ্বিতীয় ঘটনাটা...
প্রোগ্রামের একেবারে শেষের দিকে। আমার অবস্থান যথারীতি পল্টনমোড়। তখন ঘড়িতে প্রায় চারটা ছুঁই ছুঁই। ইটিভির রিপোর্টার নাদিরা শারমিন (একটু আগে ব্লগ মাধ্যমে জানলাম) প্রোগামস্থলে এসেছেন নিউজ কভার করার জন্য। যথারীতি উগ্র ড্রেস, মাথায় একখান টিপ। এর উপর শাহবাগের পট্রি নিয়ে!!! এমনিতেই শাহবাগীদের উপর মুসলিম জনতা ক্ষ্যাপা! তিনি এসেছেন শাহবাগের পট্রি নিয়ে। আর যায় কই...কোন সদুত্তর না দিলে উত্তেজিত একজন কষে দিল একটা থাপ্পর। আমরা অনেকেই তাকে হেফাজত করে ড্যাবের একটা এম্বুলেন্সে ঢুকিয়ে দিই। কে শোনে কার কথা...পাব্লিক যেন এম্বুলেন্সই ভাইঙ্গা পালাইবো। বুঝলাম এখানে নিরাপদ না। এম্বুলেন্স থেকে নামাই কোনমতে বললাম..দৌড় মারেন। দিলেন দৌড়। পেছণে পেছণে পাব্লিকও দিলো ধাওয়া!!!
একটা কথা বলে রাখি, হাল আমলে আমাদের টিভি চ্যানেলগুলোর (গুটি কয়েক মেয়ে ছাড়া) রিপোটিং এ যারা বিভিন্ন প্রোগ্রামে যায়, এরা এত উগ্র ড্রেস পরে যে চোখ তুলে তাকানোর উপায় থাকে না। ওড়নার বালাইতো নাই, থাকলেও কাদের সিদ্দিকীর গামছার ন্যায়...!!! অথচ আজ যখন সকাল সাড়ে নয়টায় নটরডেমের সামনে অবস্থান করেছি দেখলাম, দুইজন বিদেশী মহিলা সাংবাদিক মাথায় স্কার্ফ পরে নিউজ কভারেজ করতে স্টেজের দিকে যাচ্ছে।
আমার একটি কথা মনে পড়ছে, ওরিয়ানা ফালাচি নামক সম্ভবত ইতালীর একজন সাংবাদিক ছিলেন, যিনি ইরানের বিপ্লবের পর ইমাম খোমেনীর সাক্ষাতকার নিতে গেলে বোরকা পরে গিয়েছিলেন। আপনাকে পরিবেশটা বুঝতে হবে।
কিন্তু আমাদের সাংবাদিকরা হলুদ সাংবাদিকতা আর অপসংস্কৃতির দাসত্বে এতটাই নিমজ্জিত হয়েছেন যে...মূল্যবোধ আর নিজেকে ভিন্ন কোন কিছু চিন্তা করা শুরু করে দিয়েছেন।
আমি সাংবাদিকদের এভাবে নির্যাতনকে সাপোর্ট করি না। কিন্তু মানুষের ও তো ধৈর্য্যের একটা সীমা আছে!
বিষয়: বিবিধ
৩১৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন