মহাজোট সরকারের ৪ বছরে ১৬ হাজার ৫৮৯ জন খুন : এমআরটি
লিখেছেন লিখেছেন হাসান ০৫ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৯:৪৫:১২ রাত
এক নজরে ৪ বছর
খুন : ১৬৫৮৯
রাজনৈতিক হত্যা : ৭৯০
আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে নিহত : ৪৫৯
গণপিটুনিতে নিহত : ৫৮৮
সাংবাদিক খুন : ১৭
সেন্টার ফর মিডিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এমআরটি) গবেষণা ও প্রশিক্ষণমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এমআরটি’র গবেষণা কার্যক্রমের অন্যতম লক্ষ্য। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের ৪ বছরে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের পরিসংখ্যান নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে দেশের প্রধান জাতীয় দৈনিকগুলোর সংবাদকে ভিত্তি ধরা হয়েছে।
খুন ১৬৫৮৯
বর্তমান সরকারের ৪ বছরে সারা দেশে খুনের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ১৬ হাজার ৫৮৯টি। সে হিসেবে প্রতিদিন গড়ে ১১ জনেরও বেশি খুন হয়েছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৯ সালে সারা দেশে ৪ হাজার ২১৯ জন, ২০১০ সালে ৩ হাজার ৯৮৮ জন, ২০১১ সালে ৩ হাজার ৯৭০ জন এবং ২০১২ সালের ৪ হাজার ৪১২ জন খুন হয়েছেন।
২০০৯ সালে ৪২১৯ জন
২০১০ সালে ৩৯৮৮ জন
২০১১ সালে ৩৯৭০ জন
২০১২ সালে ৪৪১২ জন
রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ৭৯০ জন
বর্তমান সরকারের ৪ বছরে সারা দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৭৯০ জন। আহত হয়েছেন ৫৯ হাজার ৬৫৫ জন। প্রতিদিন গড়ে ৪১ জন আহত হয়েছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলে গ্রুপিংয়ের কারণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শুধু আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হয়েছেন ১৫৩ জন।
২০০৯ সালে ২৫১ জন
২০১০ সালে ২২০ জন
২০১১ সালে ১৩৫ জন
২০১২ সালে ১৮৪ জন
ক্ষমতাসীনদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত ১৫৩
২০০৯ সালে ৩৮ জন
২০১০ সালে ৩৮ জন
২০১১ সালে ৩৮ জন
২০১২ সালে ৩৯ জন
উল্লেখযোগ্য দুটি সহিংসতা : ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ক্যাডারা নিজ সংগঠনের নেতা যুবায়েরকে হত্যা করে। সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে রাজধানীতে বিরোধীজোটের অবরোধের সময় ছাত্রলীগের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন নিরীহ পথচারী বিশ্বজিৎ।
আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে নিহত ৪৫৯
বর্তমান সরকারের ৪ বছরে সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে মৃত্যু হয়েছে ৪৫৯ জনের। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১০ জন বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই কথিত ক্রসফায়ার বা এনকাউন্টারে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
এছাড়া বিরোধীদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশি বাধা ও হামলা ছিল লক্ষ্যণীয়। বিশেষ করে বিগত বছরের প্রথম ও শেষ দিকে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি বিরোধী জোটের পূর্বঘোষিত মিছিলে পুলিশের গুলিতে ৪ জন এবং ৩০ জানুয়ারি রাজশাহীতে ১ জন নিহত হন। সর্বশেষ বিরোধীদের মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় শিবির কর্মী মুজাহিদ।
২০০৯ সালে ১৫৪ জন
২০১০ সালে ১২৭ জন
২০১১ সালে ৮৪ জন
২০১২ সালে ৯৪ জন
২০১৩ সালের শুরুতে এসে রাজনৈতিক দলের মিছিল সমাবেশ বানচালে সাউন্ড গ্রেনেড ও গ্যাস গ্রেনেডের নিয়মিত ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গণপিটুনিতে নিহত ৫৮৮
বর্তমান সরকারের ৪ বছরে সারা দেশে গণপিটুনিতে নিহত হন ৫৮৮ জন। সে হিসেবে প্রতি মাসে গণপিটুনিতে মৃত্যু ঘটেছে ১২ ব্যক্তির। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতার কারণেই আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা লক্ষ্যণীয়।
গণপিটুনিতে সাভারে ৬ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা স্মরণ করে এখনো আঁতকে ওঠেন অনেকে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক সন্দেহভাজনদের আটক করে, পরিবেশ তৈরি করে গণপিটুনি দিয়ে হত্যার মতো জঘন্য ঘটনাও ঘটেছে এ সময়।
একনজরে গণপিটুনি
২০০৯ সালে ১২৭ জন।
২০১০ সালে ১৭৪ জন।
২০১১ সালে ১৬১ জন।
২০১২ সালে ১২৬ জন।
৪ বছরে আলোচিত কিছু হত্যাকান্ড
আলোচিত হত্যাকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে-
সাগর-রুনি হত্যা
ঢাকায় সংসদ ভবন এলাকায় যুবলীগ নেতা ইব্রাহীম হত্যা
যাত্রাবাড়ীতে ব্যবসায়ী দম্পতিসহ ট্রিপল মার্ডার
গুলশানে বাসায় ঢুকে মা ও মেয়েকে গুলি করে হত্যা
মগবাজারে যুবলীগ নেতা ইউসুফ আলী সরদার হত্যা
খিলগাঁওয়ে প্রকৌশলী হত্যা
মহাখালীতে কর্মচারী নেতা সিদ্দিকুর রহমান হত্যা
খিলগাঁওয়ে গৃহবধূ কণিকা হত্যা
মিরপুরে ইডেন কলেজের ছাত্রী মেনকা হত্যা
স্বর্ণ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান হত্যা।
এসব হত্যা নগরবাসীর মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।
চার বছরে ১৭ সাংবাদিক খুন
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের শাসনামলের ৪ বছরে ১৭ সাংবাদিক খুন হয়েছেন। এসময়ে আক্রমনের শিকার হয়েছেন ৮৯৯ জন। এর মধ্যে ৫৮৬ জন সাংবাদিক আহত, ২২১ জন লাঞ্ছিত ও ২৬৯ জন হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এসময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ৬২ জন সাংবাদিকের ওপর হামলা, ৮ জনকে গ্রেফতার, ৩ জন অপহৃত ও ৬৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
২০১২ সালে খুন হয়েছেন ৫ সাংবাদিক
২০১২ সালে সারাদেশে নিহত হয়েছেন ৫ সাংবাদিক। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১২ রাজধানীতে নিজের বাসায় পরিকল্পিত ভাবে খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও তার স্ত্রী এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি।
এ সময়ে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজে প্রচারিত ‘সময়ের ভাবনা’ টকশোটি সরকারি চাপে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
৩ জানুয়ারি মহানগরীর মিরপুরে অবস্থিত মনিপুর স্কুলে অনিয়মের খবর সংগ্রহ করতে গেলে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় সংসদ সদস্য কামাল মজুমদার আরটিভির সাংবাদিক অর্পণা সাহাসহ কয়েকজনকে লাঞ্ছিত করেন।
৯ মে দৈনিক ভোরের ডাকের রিপোর্টার তুহিন সানজিদকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে র্যাব সদস্যরা।
২৬ মে রাজধানীর শেরেবাংলানগরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ছবি তুলতে গেলে পুলিশের বেধড়ক পিটুনির শিকার হন প্রথম আলোর ৩ ফটো সাংবাদিক।
২৯ মে আদালত প্রাঙ্গনে পুলিশ কর্তৃক তরুণী নির্যাতনের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশের নির্যাতনের শিকার হন ৩ সাংবাদিক।
এছাড়া সংবাদ প্রকাশের কারণে সরকারের আক্রোশের শিকার হয়ে অফিসে এখনো অবরুদ্ধ রয়েছেন দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
২০১১ সালে খুন হয়েছেন ৪ সাংবাদিক
২০১১ সালের ২৮ জানুয়ারি ৭৭ নয়াপল্টনের বাসায় খুন হন প্রবীণ সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ (৬০) ও তার স্ত্রী রহিমা খানম (৫৫)। এই হত্যাকাণ্ডের এক বছরের অধিক সময় পার হলেও এখনো বিচার শুরু হয়নি। একই বছরের ৭ ডিসেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কুকরাইল এলাকায় গলা কেটে হত্যা করা হয় দৈনিক ভোরের ডাকের গোবিন্দগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ফরিদুল ইসলাম রঞ্জুকে। ৭ এপ্রিল ঢাকার উত্তরা ও চট্টগ্রামের পোর্টকলোনিতে খুন হয়েছেন দুই সাংবাদিক। ৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের পোর্টকলোনি এলাকায় দৈনিক আজকের প্রত্যাশা, সাপ্তাহিক সংবাদচিত্র ও আজকের সূর্যোদয় পত্রিকার সাংবাদিক মাহবুব টুটুলকে হত্যা করা হয়েছে। একই দিন উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর সড়কে ১০ নম্বর বাসার বাসিন্দা সাপ্তাহিক বজ্রকণ্ঠের সাংবাদিক আলতাফ হোসেনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর ১১ দিন আগে থেকে নিখোঁজ ছিলেন সাংবাদিক আলতাফ।
২০১০ সালে ৪ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন
৯ জুন ২০১০ গুপ্তহত্যার শিকার হন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার সিনিয়র ক্যামেরাম্যান শফিকুল ইসলাম টুটুল। যদিও পরবর্তী সময়ে পুলিশ জানিয়েছে, তিনি ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হয়েছেন। ২০১০ সালের ২৮ এপ্রিল খুন হন বিশিষ্ট সাংবাদিক ফতেহ ওসমানী। সাপ্তাহিক ২০০০-এর সিলেট প্রতিনিধি ফতেহ ওসমানীকে ওই বছর ১৮ এপ্রিল কুড়াল ও রামদা দিয়ে কুপিয়ে আহত করার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় তার মৃত্যু হয়েছে। ২০১০ সালের ২৩ ডিসেম্বর প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হন বরিশালের মুলাদী প্রেসক্লাবের সভাপতি মনির হোসেন রাঢ়ী।
২০০৯ সালে নিহত হয়েছেন ৪ জন
ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় এনটিভির ভিডিও এডিটর আতিকুল ইসলাম আতিক, জুলাই মাসে ঢাকার পাক্ষিক মুক্তমনের স্টাফ রিপোর্টার নুরুল ইসলাম ওরফে রানা, আগস্ট মাসে গাজীপুরে ঢাকার সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক সময়-এর নির্বাহী সম্পাদক এমএম আহসান হাবিব বারী, ডিসেম্বরে রূপগঞ্জে দৈনিক ইনকিলাব সংবাদদাতা ও রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহসভাপতি আবুল হাসান আসিফ খুন হন।
এছাড়া সরকারের এ সময়ে সড়ক দূর্ঘটনায় আরো পাঁচজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। ২৯ মার্চ ২০১২ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা রিজেন্সি হোটেলের সপ্তমতলার একটি কক্ষ থেকে মিনার মাহমুদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
তথ্যসূত্র
বিষয়: বিবিধ
১১৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন