মুরতাদ কি, কেনো মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড?

লিখেছেন লিখেছেন আয়নাশাহ ০২ অক্টোবর, ২০১৪, ১২:৪৯:৪৮ দুপুর

অনেকের মনে একটা প্রশ্ন আছে কিন্তু প্রশ্নটা করতে পারছেন না হয় ঈমান হারা হওয়ার ভয়ে, নাহয় সমাজের ভয়ে না হয় অন্য কোনো কারনে।

প্রশ্নটা হলো, একজন মুসলমান যদি নিজের ধর্মকে ত্যাগ করে নাস্তিক হয়ে যায় বা ভিন্ন ধর্ম গ্রহণ করে তবে তাকে 'মুরতাদ' বলা হয় কেনো এবং এজন্য তার মৃত্যুদণ্ড দেবার দাবী করা হয় কেনো? এটা কি ব্যক্তি স্বাধীনতায় প্রতিবন্ধকতা না? ভিন্ন ধর্ম থেকে কেউ মুসলমান হলে কি ওই ধর্মাবলম্বীরা তাদের অনুসারী হিসাবে তাকে মৃত্যু দণ্ড দিতে পারে?

আমাদের উলামায়ে কিরাম সব সময় এবং সহজেই এমন প্রশ্নের জবাব দেন যে, আল্লাহ এদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেবার নির্দেশ দিয়েছেন এজন্যই মৃত্যুদণ্ড দেয়া উচিত। এখানে কোনো 'কেন' প্রশ্নের সুযোগ নাই। কিন্তু আসলেই কি তাই? মুসলমান হলাম, ঈমান আনলাম বলে কি আমার কোনও প্রশ্ন করার আধিকারও নাই? প্রশ্ন করলেই ঈমান চলে যাবে?

মোটেই না।

আসুন, দেখি ইসলাম ত্যাগ করলে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ফায়সালার পেছনে যুক্তি গুলো কি?

প্রথমেই আপনাকে বুঝতে হবে যে ইসলাম আর সব ধর্মের মতো অনুস্টান নির্ভর নিছক কোনও ধর্ম না। ধর্ম নামক অন্য মতাবাদগুলো তাদের অনুসারিদেরকে কিছু রসম রেওয়াজ যা রিচুয়াল শেখায় এবং তা পালন করলেই ব্যাস। জীবনের আর সব কাজ কারবার, ব্যবসা বানিজ্য সহ সবকিছু ব্যাক্তি তার ইচ্ছা বা অন্য কারো দ্বারা প্রণীত নিয়ম, আইন বা ইচ্ছা অনুযায়ি করতে পারে এবং সেটাই সঠিক মনে করা হয়। যত কিঞ্চিত ব্যাতিক্রম বাদে সবগুলো ধর্মের শিক্ষাই এরকম।

পক্ষান্তরে ইসলামের মৌলিক একটা ধারনা বা বিশ্বাস হল আল্লাহর সার্বভৌমত্ব যা প্রচলিত অন্য ধর্মে অনুপস্থিত। আর এই সার্বভৌমত্বের কারণে এর বিশবাসীরা বা অনুসারীরা আল্লাহর দেয়া আইন মানতে বাধ্য। যেমন করে একটি রাষ্ট্রও সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারি বলে জাগতিক ধারনা প্রচলিত। একটি রাষ্ট্রের নাগরিক হলে আপনি ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, সেই রাষ্ট্রের মৌলিক কিছু আইন মানতে বাধ্য। যেমন রাষ্ট্রের মুলনীতি, অখন্ডতা, স্বাধীনতা, সিমানা ইত্যাদি না মানলে বা ভিন্ন কোনো দেশের সাথে একাত্ন হয়ে নিজ দেশের ক্ষতি করতে উদ্যত হলে আপনাকে রাষ্ট্রদ্রোহি বলে মৃত্যুদণ্ড দেবার বিধান রয়েছে। এমন বিধান প্রায় সব রাষ্ট্রেই আছে। এই বিধানকে যদি যৌক্তিক মনে করেন তবে আল্লাহর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করার কারণে একজন মুসলমানের উপরও ঠিক এমনি ভাবে আল্লাহর দেয়া মৌলিক বিধানকে ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক আপনাকে মানতেই হবে। না মানলে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব অস্বীকার করার কারনে বা ভিন্ন কোনো ধর্মের বা মতবাদের সাথে যোগ সাজস করে ইসলামের ক্ষতি সাধন করার আপরাধে ইসলামও এই দণ্ড আরোপ করে রেখেছে। রাষ্ট্র তার একজন নাগরিককে যদি তার সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে গেলে বা অস্বীকার করলে শাস্তি দিতে পারে তবে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক আল্লাহর এই বিশ্বের একজন নাগরিক (বান্দাহ) কেন একই অপরাধ করে শাস্তি পাবে না? রাস্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রুহ করলে হয় রাস্ট্রদ্রুহিতা (Treason) এবং যে করে সে হয় রাস্ট্রদ্রুহী তেমনি ভাবে আল্লহর বিরুদ্ধে বিদ্রুহ করলে হয় আল্লাহদ্রুহিতা (আরবী ইরতাদ) এবং যে তা করে সে হয় আল্লাহদ্রুহী বা মুরতাদ।

হ্যা, একজন নাগরিক যদি জেনে বুঝে তার নাগরিকত্ব নিজ থেকেই বাতিল করে দেয় তবে সেই দেশ তাকে শাস্তি দিতে পারেনা কারন সে আর ওই দেশের নাগরিকই না। এভাবে যদি কেউ বালিগ হওয়ার পরই জেনে বুঝে ইচ্ছা করে আল্লাহকে সার্বভৌম মানতে প্রকাশ্যে অস্বীকার করে অর্থাৎ নিজেকে অমুসলিম ঘোষণা করে তবে ভিন্ন কথা। তবে শর্ত হল এই যে, সে মুসলমান হিসাবে পরিবার, সমাজ, এবং ইসলামি কোনও প্রতিস্টান থেকে সব সুবিধা নিয়ে পরে অস্বীকার করতে পারবে না। নিজেকে অমুসলিম ঘোষণা করার সাথে সাথে সে তার উত্তরাধিকার সহ সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে যেমন করে ভিন্ন দেশের নাগরিক সে দেশের কোনো সুযোগ সুবিধা পায় না।

অন্য ধর্মে সার্বভৌমত্বের ধারনা রাষ্ট্র বা ইসলামের মতো না থাকায় তারা তাদের অনুসারিদেরকে সেরকম শাস্তি দেবার অধীকার রাখেনা।

এখানে বিস্তারিত বলার সুযোগ নাই তাই একটি মাত্র যুক্তি পেশ করলাম।

বিষয়: বিবিধ

২৬৫৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

270818
০২ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০২:০৭

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 8870

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 764

"> লিটুয়ারা লিখেছেন : ধর্ম হচ্ছে মানুষের ব্যাক্তিগত বিশ্বারের ব্যাপার এটি রাষ্ট্রের কিছু না। আমাদের দেশের হিন্দু, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ......... রা কি দেশপ্রেমিক নন? সুতরাং কেউ যদি ব্যাক্তিগত ধর্মবিশ্বাস পরিবর্তন করে তাতে কি তার দেশপ্রেম মরে যাবে।

আপনারা আসলে ধর্মের একটি বর্বর বিধান কে সহিহ প্রমান করার জন্য যারপর নেই মরিয়া হয়ে যতসব কুযুক্তি হাজির করছেন। এতে কি ইসলামের লজ্জা এই সভ্য যুগে ধামাচাপা দেয়া যাবে??
270844
০২ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৮
আবু ফারিহা লিখেছেন : যাযকাল্লাহ.....................। সুন্দর করে বিষয়টি উপস্হাপনের জন্য।
270958
০২ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১১:২৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
271040
০৩ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৬:৩৯
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

অগ্রীম শুভেচ্ছে- কুরবানী ও ঈদ মোবারক
ত্যাগের আলোয় ব্যক্তি ও সমাজ জীবন আলোকিত হোক


ন্যায়সংগত কথা বলা আল্লাহতায়ালার কাছে প্রিয় হবার অন্যতম মাধ্যম

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File