তেলের দাম কমলে কী বাস ভাড়া কমবে ?
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ০৫ এপ্রিল, ২০১৬, ০৬:০৬:১২ সন্ধ্যা
আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করি যে, জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির কথাবর্তা শুরু হওয়ার সাথে সাথেই পরিবহণ মালিকরা ভাড়া বৃদ্ধি করে ফেলেন। যেমন বাজেটে যেসব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব রাখা হয়, বাজেট পাশের আগেই সেসব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটে থাকে স্বয়ংক্রীয়ভাবেই। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো জাতীয় বাজেটে যেসব পণ্যের মূল্য হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়, বাজেট পাশের পরও সেসব পণ্যের মুল্য কমেনা বরং আগের দামে কেনা আছে বলে দাবি করে দাম আদায় করা হয় বর্ধিতভাবেই। এই হলো আমাদের দেশের ব্যবসায়ী, পরিববন মালিক-শ্রমিকদের অশুভ চর্চা।
দেখা যায় যে, তেলের দাম বাড়ার সাথে সাথে বাস-মিনিবাস ভাড়াও বাড়ে। সরকার যদি প্রতি কিলোমিটার ১০ পয়সা ভাড়া বাড়ায়, পরিবহন শ্রমিকরা তার চেয়ে দশগুণ ভাড়া বেশী আদায় করে থাকে। জানা গেছে, গত ২৩ বছরে বাস ও মিনিবাসের ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪৫৩ শতাংশ। মূলত ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারণেই বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এ সময়ে ডিজেলের দামও বেড়েছে ৩৮২ শতাংশ। ১৯৯০ সালে ডিজেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ১৭ টাকা। ওই সময় বাসভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ছিল ৩২ পয়সা। এখন ডিজেলের দাম প্রতি লিটার ৬৫ টাকা। আর বাসভাড়া হয়েছে ১ টাকা ৪৫ পয়সা।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার কারণে বাংলাদেশেও সব ধরনের জ্বালানির দাম তিন ধাপে কমাতে যাচ্ছে সরকার। কিন্তু জ্বালানির দাম কমলেও এবার বাস-মিনিবাসের ভাড়া কমানোর ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী নন মালিকেরা। তাঁদের দাবি, বাসভাড়া কেবল তেলের দামের কারণে বাড়ে না। এর সঙ্গে আরও অনেক কিছু যুক্ত আছে। সেগুলোর দাম তো কমছে না। যদিও ১৯৯০ সাল থেকে যতবার তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, ততবারই বাসভাড়া বেড়েছে। তখন অন্য কোনো কিছুর দাম কমা বা বাড়ার হিসাব করা হয়নি। বিষয়টি সত্যিই মর্মপীড়া দায়ক।
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে বলা হয়েছে, ভাড়া কমানোর বিষয়টি নির্ভর করবে কতটুকু দাম কমল, তার ওপর। আর ভাড়া তো শুধু তেলের দামের ওপর নির্ভর করে না; এ ক্ষেত্রে ২৪টি উপাদান বিবেচনা করা হয়। আজ থেকে কয়েক বছর আগে এই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বেড়েছে। যন্ত্রাংশের দাম বেড়েছে। সবকিছু বিবেচনা করে যদি কমানো যায়, তবেই ভাড়া কমানো হবে।
ডিজেল বাসের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর যে পরিমাণ জ্বালানির চাহিদা রয়েছে, তার শতকরা ৪৫ ভাগই পরিবহন খাতের। বিআরটিএ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বাসভাড়া প্রতি কিলোমিটারের জন্য ৩২ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। ওই সময় ডিজেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ১৭ টাকা। তেলের দাম বাড়ার কারণে এরপর নয়বার বাসভাড়া বাড়িয়ে ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি সর্বশেষ প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১ টাকা ৪৫ পয়সা করা হয়। এ সময় তেলের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫ টাকায়।
অবশ্য বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তেলের দাম কমানোর কারণে একবার বাসভাড়া কমানো হয়। ওই সময় তেলের দাম ৫৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৪৮ টাকা করা হয়েছিল। এ ছাড়া ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তেলের দাম আরেকবার কমানোয় বাসভাড়া কমানো হয়েছিল। সে সময় তেলের দাম হয়েছিল প্রতি লিটার ৪৪ টাকা। অবশ্য বিআরটিএর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, দাম কমানোর পর ভাড়া কমানোর কথা বলা হলেও বাস্তবে সেটা কার্যকর হয়নি বলে ওই সময় অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল।
সাধারণ মানুষ ও যাত্রীরা বলছেন, এর আগে যতবার তেলের দাম বেড়েছে, ততবার ভাড়া বেড়েছে, কিন্তু তেলের দাম কমানোর পর কাগজে-কলমে ভাড়া কমানোর কথা বলা হলেও বাস্তবে ভাড়া কমেনি। তিনি বলেন, তেলের মূল্য কমানোর সুবিধা বাসমালিকেরাই শুধু পাবেন। সাধারণ মানুষ যদি এই সুবিধা না পায়, তাহলে দাম কমানোর প্রয়োজন নেই। অভিযোগ করা হয়, এর আগে তেলের দাম কমার পর মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করে মালিকেরা বলেছেন ভাড়া কমাবে, কিন্তু আদতে ভাড়া কমেনি। অথচ তেলের দাম বাড়লে ওই বাড়তি ভাড়ার সঙ্গে নতুন ভাড়া যোগ করে সরকার-নির্ধারিত হারের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া হয়ে যায়।
সরকার তিন ধাপে জ্বালানী তেলের দাম কমানোর প্রস্তাব করলেও পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ভাড়া কমানোর বিষয়ে কোন ইতিবাচক মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অথচ যতবারই জ্বালানী তেলের দাম বেড়েছে, সে অজুহাতে ততবারই বাস-মিনিবাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এখন যখন তেলের দাম কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে তখন সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে একেবারেই নিরব। তাই ভাড়া কমানো হবে বলে বিশ্বাস করতে পারছেন না দেশের সাধারণ মানুষ।
যদিও কেউ কেউ ভাড়া কমানো হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু আমাদের দেশের অতীতের দিকে তাকালে যা দেখা যায়, তাহলো কোন জিনিষের দাম একবার বেড়ে গেলে তা আর কমানোর রেকর্ড খুব একটা পাওয়া যায় না। তাই তেলের দাম কমানোর সাথে সাথে বাস-মিনিবাস ভাড়া আদৌ কমবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে।
বিষয়: বিবিধ
১০৭৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন