বিদ্রোহির কৈফিয়ত
লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ১০ জুন, ২০১৭, ০১:০২:০৯ রাত
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। চার মাস পর সালাম দিলাম। চিঠি/কবর সিরিজটা যারা পড়েছেন তাদের অনেকেই হয়ত ভাবছেন, হাসানের মত কি নকীবটাও উধাও হয়ে গেল নাকি? আরে না না, উধাও হইনি। আমি কি অঙ্গিকার করি নাই যে, ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস কারী ফিরকাবাজদের মুখোশ উম্মোচন না করে, ওদের ধ্বংসের পথ তৈরি না করে আমি দুনিয়া ছাড়ব না। আমি বিশ্বাস করি দেড় হাজার বছরে ইসলামের যে বিকৃতি সাধন করা হয়েছে, দেড় হাজার বছরেও যে ডাক হয়নি দেয়া, যে কথা হয়নি বলা, যে গুমর হয়নি ফাঁস- আমি তাই করতে যাচ্ছি (ইনশাল্লাহ)। আমি বিশ্বাস করি, আমি যে ডাক দিতে যাচ্ছি এটাই ইসলাম ও উম্মাহর একমাত্র মুক্তির পথ, ইহ ও পারলৌকিক সাফল্যের পথ, কারণ এটাই কোরান সুন্নাহর একমাত্র সঠিক পথ। আমি হাতে নিয়েছি বিষের বাঁশি, সুর তুলেছি অগ্নিবীণায়, এই সুরে মাতাল হবে ছাত্র সমাজ, মাদরাসা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ, হেফাজত, শিবির, ছাত্রসেনা, ই শা ছা আ ইত্যাদি ইসলামের রিজার্ভ শক্তি যুব সমাজ। বস্তুত এ বইয়ের মাধ্যমে আমরা ইসলামি রেনেসা আন্দোলন, ঐক্য আন্দোলন, খিলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছি। আর এই আন্দোলনের বাহিনী হল যুব সমাজ ও ছাত্র সমাজ।
আগ্নেয় গিরির অগ্নোৎপাত ঘটাব, মরার হাড়ে প্রাণ নাচাব, এদের রক্ত কণিকায় আগুন জ্বালাব, এরা ঐক্যবদ্ধ হবে, পুর্ব পশ্চিমে মার্চ করবে, তাদেরকে বিভক্তকারী শয়তানরা পদদলিত হবে, পৃথিবী এদের পদতলে পিষ্ট হবে, অভিষেক হবে তাদের বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে। আমি বিশ্বাস করি, ফিরকাবাজরা ইসলামের মূল যে বার্তাটা আড়াল করে রেখেছে তা আমি উম্মোচন করতে পারব, আর তা অবলম্বনে ইসলামের যুব শক্তি জেগে উঠবে, আর তখনি পৃথিবীর কক্ষপথ বদলে যাবে। তা আমার জীবদ্দশায়ই হউক বা যত দেরিতেই হউক, ইসলামের ফরযন্দরা বিশ্ব নেতৃত্বের আসন গ্রহন করবেই ইংশাআল্লাহ। কাজেই এখন আমি বাজাব বিষের বাঁশি, আর সেটি হল ‘সত্য সমাগত মিথ্যা অপসৃত’। তারপর বাজাব আগ্নেয় বীণা, সেটি হল ‘এক বিংশতির যিশু’। আমি বিশ্বাস করি গ্রন্থ দু’টি উম্মাহর ঐক্য ও মুক্তির ম্যাগনাকার্টা।
যাই হউক, চার মাস পর হাজির হলাম। না না ঘুমিয়ে কাটাইনি, চিঠি/ কবর সিরিজটা গ্রন্থাকারে প্রকাশের লক্ষে সংশোধন করলাম। অপরিকল্পিত লিখা ও আজে বাজে বিষয় টেনে আনার কারণে এর অবয়ব হয়ে গিয়েছিল প্রায় হাজার পৃষ্ঠার মত। এটাকে কাট ছাট করে সংশোধন করতে আমার তিন মাস কেটে গেল, অবশ্য এখনো কিছু কাজ বাকি আছে। গত মাসে শুরু করলাম এক বিংশতির যিশু। কিছুদুর লেখার পর হঠাৎ চেতনা ফিরল এ আমি কি করছি, প্রেমের উপন্যাসে কোরান হাদীসের আলোচনা করতে যাচ্ছি, এটাতো জায়েয হবে না, তার উপর আল্লামা হুজুরদের বাশ খাওয়ার সম্ভাবনা তো আছেই। অগত্যা সেটাকে পৃথক একটা উপন্যাসের জন্য বরাদ্দ দিয়ে বাদ দিলাম। তারপর নতুন করে লিখা শুরু করলাম। এতে চিন্তার বিন্যাসটা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেল। কোরান হাদীসের আলোচ্য অংশটার নাম দিলাম ‘সত্য সমাগত মিথ্যা অপসৃত’। আর আন্দোলন বিপ্লব সংগ্রাম অংশটার নাম দিলাম এক বিংশতির যীশু। কারণ যিশুর লাস্ট সাফারের সাথে এর কেন্দ্রীয় চরিত্র হাসান মুসান্নার মিল থাকবে। উল্লেখ্য হাসান ও হাসান মুসান্না দুই ধারার সিরিজ রচনার দুটি কেন্দ্রীয় চরিত্র।
এখন প্রথমে শুরু করতে যাচ্ছি ‘জা’আল হাক্ব ওয়া যাহাক্বাল বাতিল- সত্য সমাগত মিথ্যা অপসৃত। এ গ্রন্থে দেখানো হবে ফিরকাবাজ নামক কীটেরা কিভাবে ইসলামকে ভিতর থেকে খেয়ে খোলা করে দিচ্ছে। তারপর ফিরকাবাজদের অপকর্ম, তারপর ঐক্যের পথ, তারপর উম্মাহর স্বার্থ ও সমগ্র মানবতার স্বার্থ খিলাফত ইশতিহার ও তা বাস্তবায়নের পথ ও পদ্ধতি। কাজেই প্রত্যেক মুসলমানের জন্য এই বই পাঠ করা ফরয এই জন্য যে, কোরান হাদীসের কষ্টি পাথরে বাজিয়ে দেখতে হবে আমরা মুসলমান আছি কি নাই। আবার জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেককে এই বই পাঠ করতে হবে এ জন্য যে, জানতে হবে খিলাফত বা ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থা সমগ্র মানবতার জন্য কি কল্যান দিয়েছে। কাজেই এ বই নিজে পড়ুন, প্রচার করুন, অন্যকে পড়তে উদ্বুদ্ধ করুন। সমগ্র ছাত্র সমাজ ও ইসলামি সংঘঠনের ছাত্ররাই ইসলামের কেন্দ্রীয় শক্তি। কাজেই এ বই আমি তাদের করকমলে ন্যস্ত করলাম এই আশায় যে, তারা কোরান সুন্নাহর দর্পনে নিজেদের অবস্থান নির্নয় করবে, সংশোধন হয়ে ফিরকাবাজদের নিপাত করে ঐক্য হবে, তারপর পৃথিবীতে তাদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করবে। এটাই যুব সমাজের কাছে আমাদের ও ইসলামের প্রত্যাশা। আর এ পথটাই আমি দেখানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। আল্লাহুল মুওয়াফফেকু ওয়াল মুয়ীন।
দ্রষ্টব্যঃ আমার পুর্বের কিছু পোস্টে কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, ফিরকাবাজরা আসলে কাফের নাকি? এ বিষয়ে উসুল হল, কোরান হাদীসের অকাট্য দলীল কেউ অস্বিকার করলে, অবজ্ঞা করলে কাফের হয়ে যায়। আর কোরান হাদীসের অসংখ্য নস দ্বারা ঐক্য ফরয বিভক্তি হারাম প্রমাণিত। এটা কেউ অস্বিকার করে না, অর্থাৎ এটা ইজমায়ে উম্মত। কাজেই ফিরকাবাজরা কাফির নাকি মুসলমান সেটা নিজেরাই বিবেচনা করুন। এ বিষয়ের আলোচনা সামনে আসছে।
বিদ্রোহির কৈফিয়ত
( লেখাটা আগে দেয়া হয়েছিল, এখন ‘সত্য সমাগত মিথ্যা অপসৃত’ গ্রন্থের ভুমিকার জন্য উপযোগি মনে করে আবার দিয়ে দিলাম)।
ভু-অভ্যন্তরে জমাটবাধা ধুম, গ্যাস, লাভা, পাথর, ছাই ভস্ম, ইত্যাদি ভূপৃষ্ঠের কোন দুর্বল ফাটল বা ছিদ্র পথ দিয়ে বের হওয়ার নাম আগ্নেয়গিরি। কারণ মাটি তা সহ্য করতে পারে না। এগুলি মাটির জন্য ক্ষতিকারক উপাদান। অনুরুপভাবে দেড় হাজার বছর ধরে ইসলামের অভ্যন্তরে যে ক্লেদ ছাই ভস্ম জমে উঠেছে তা কোন জ্বালামুখ দিয়ে বের করে দিলে ইসলাম বাঁচবে নয়তো মরবে। বাঁচার অর্থ হল দেড় হাজার বছর ধরে ক্রমে ক্রমে ইসলামের মধ্যে যে ক্লেদ অর্থাৎ বিদআত জমে উঠেছে সে গুলো বাদ দেয়া। আর এগুলো বাদ দিলে সকল মুসলমান এক হয়ে যাবে। অথবা বাদ না দিয়েও যদি তারা ইত্তেফাক মায়াল ইখতেলাফ করে অর্থাৎ মতবিরোধ নিয়েই ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায় তাহলে তারা চাইলে বা না চাইলেও এমনিতেই খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। তখন শুধু মুসলিম বিশ্বেই নয় সমগ্র পৃথিবীতেই ইসলামের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে।
আর ইসলাম মরার অর্থ হল প্রতিটি মুসলিম দেশে যে সর্বনাশা ও সর্বগ্রাসি ভ্রাতৃঘাতি হানাহানি চলছে তাতে মুসলমানরা যৎপরনাস্তি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। যেমন বাংলাদেশে সবাই মুসলমান, সবাই মসজিদে যায়, ইবাদাত বন্দেগী করে। কেউ মসজিদ মাদরাসা গড়ে, কেউ তদারক করে। কিন্তু তারা বিভিন্ন চেতনার বেলুন ফুলিয়ে হেফাজত, জামাত, আওয়ামী লীগ ইত্যাদি নাম ধারণ করে রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠেছে। তালেবানরা ইসলামের নামে পাকিস্তানে ১৫০ শিশু হত্যা করেছে । আইসিসরা নির্বিচারে শিয়া হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। সিসি আল আযহারের আলেমদের সহায়তায় ইসলামের সাইনবোর্ড লাগিয়ে ব্রাদার হুডের উপর চালাচ্ছে শতাব্দীর ভয়াবহ গণহত্যা। আর এমন ভ্রাতৃঘাতি জাতিকে আল্লাহ্ কখনো টিকিয়ে রাখেন না, ধ্বংস করে দেন, এটা আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি। কোরআনে এ সম্পর্কে অনেক আয়াত রয়েছে।
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ بَدَّلُوا نِعْمَتَ اللَّهِ كُفْرًا وَأَحَلُّوا قَوْمَهُمْ دَارَ الْبَوَارِ [١٤:٢٨]
তুমি কি লক্ষ কর না, যারা আল্লাহর নেয়ামতকে (ভ্রাতৃত্ব) কুফরে পরিণত করেছে এবং স্ব-জাতিকে সম্মুখীন করেছে ধ্বংসের আলয়ে।
যেমন তিনি সম্রাট নেবুচাদ নেজারকে দিয়ে ইহুদীদের প্রাচীন জেরুজালেম ও হালাকু খানকে দিয়ে বাগদাদ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। ঠিক তেমনিভাবে মুসলমানরা যদি এখনো সতর্ক না হয়, তাহলে আল্লাহ্ তা’লা তাদের উপর গজব ঢেলে দিবেন। তার গজব হিসাবে বার্মা অথবা ভারত বাংলাদেশ ধ্বংস করে দিবে। শাহ নিয়ামত উল্লাহর কোন ভবিষ্যৎ বানী ব্যর্থ হয়নি। তার একটি প্রফেসী হচ্ছে শীন আদ্যাক্ষরের কোন শাসকের আমলে ভারত বঙ্গোপসাগরের উপকূলে রক্ত গঙ্গা বইয়ে দিবে। কাজেই সাধু সাবধান! ভারত পাকিস্তান ধ্বংস করে দিবে, ইসরাইল মধ্য প্রাচ্য ধ্বংস করে কথিত প্রমিজ ল্যান্ড বৃহত্তর ইসরাইল গঠন করবে। ( আল্লাহ্ আমাদের ভুমিগুলি হেফাজত করুন) এই হল ইসলামের মৃত্যু।
তারপর হয়ত আল্লাহ্ জাতি বদলের প্রতিশ্রুতি মাফিক ইসলাম পাঠিয়ে দিবেন পাশ্চাত্যে ও দূর প্রাচ্যে অর্থাৎ চীন, জাপান ও রাশিয়ায়। কাজেই শুধু ইসলামের স্বার্থেই নয় আমাদের নিজেদের আত্মরক্ষার্থেই সতর্ক হতে হবে, আগ্নেয়গিরির মত ফেটে পড়তে হবে, পোড়িয়ে দিতে হবে সকল বিদাত ও ফিরকাবাজি। আর এ আগ্নেয়গিরির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে ফিরকাতন্ত্র এবং দাজ্জাল তন্ত্র।
তবে এক্ষেত্রে দাজ্জাল নির্দোষ, মূল কালপ্রিট মোল্লাতন্ত্র বা আলেম সমাজ। কারণ ইসলাম তো এমন এক সর্বব্যাপি ও সর্বগ্রাসি মতবাদ যাকে প্রকাশ হওয়ার সুযোগ দিলে স্বীয় জ্বোতির্ময় আভায় প্রাচি প্রাতিচি আলোকোদ্ভাসিত করে দিবে। বিশেষত ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থা। কিন্তু বিদআত ও ফিরকা সৃষ্টিকারী আলেমরা তা হতে দিচ্ছে না। মেঘের আবরে সূর্য ঢাকা পড়লে আকাশে চাঁদ তারা দেখা যায়, আবার সূর্য অস্ত গেলে চাঁদের রাজত্ব শুরু হয়। একইভাবে বিদাতি ও ফিরকাবাজ আলেমরা মেঘের ন্যায় ইসলাম রবি ঢেকে রেখেছে বিধায় দাজ্জাল ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার সুযোগ পেয়েছে। কাজেই দাজ্জালের ক্ষমতায়ন আর ইসলামের অবনমায়নের সিড়ি হচ্ছে আলেমরা। এ জন্যই এ আগ্নেয়গিরির (অত্র গ্রন্থ) জ্বালামুখে দাঁড়িয়ে আছে বিদাতি ও ফিরকাবাজ আলেমরা। আমার সর্বাত্নক আকাংখা ও প্রচেষ্টা হচ্ছে প্রত্যেক ফিরকার মতভেদ দূর করে অথবা মতভেদসহ ঐক্যবদ্ধ করে কেন্দ্রীয় খেলাফত বা কোন সংস্থা-সংগঠন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলাম ও উম্মাহর মুক্তি নিশ্চিত করা।
দেড় হাজার বছরে আলেম নামধারী ইসলামের এসব ভক্ষক উরফে রক্ষকরা ইসলামের কতটা বিকৃতি সাধন করেছে এ সম্পর্কে জ্ঞানবান সম্প্রদায়ের জন্য অত্র গ্রন্থ চিন্তার খোরাক। কিছু নমুনা--
১। ইহুদী খৃষ্ট আহবার রুহবানরা কিভাবে এবং কি কি বিকৃতি ঘটিয়েছিল সেগুলি নোট করুন এবং ফিরকাবাজ আলেমদের উপর প্রয়োগ করুন। দেখবেন হুবহু তো মিলে যাচ্ছেই তদুপরি আলেমদের অপকর্ম তাদের চেয়েও শতগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
২। ইহুদী খৃষ্ট পোরুহিত রাব্বীদের তিরস্কারে আল্লাহ্ তা’লা কোরআনে যেসব আয়াত নাযিল করেছেন সেগুলো বর্তমান আলেমদের উপর প্রয়োগ করুন, দেখবেন খাপের খাপ লেগে গেছে। এ জন্যই বলতে হচ্ছে, ইসলাম ধ্বংসকারী এসব ফিরকাবাজ বিদাতী আলেমদের যদি আল্লাহ্ তা’লা বিচার না করেন তাহলে কোরআনে আহবার রুহবানদের কঠোর অভিশম্পাতের কারণে তাকে তাদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক, উক্তিটি একজন পাদ্রির)।
৩। ইসলাম কী ? সে বলল, রাসূল নূরের সৃষ্টি, আপনি বললেন মাটির সৃষ্টি। অমুক বলল সাহাবায়ে কেরাম মি’ইয়ারে হক্ব, তমুক বলল মিয়ারে হক্ব নয়। ব্যস এগুলি ইসলাম হয়ে গেল? ইসলাম তো হল রাসূল ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে যা ছিল। রাসূল(সাঃ) বলেছেন- সর্বোত্তম যুগ হল আমার যুগ এবং এর পরবর্তি যুগ ও এর পরবর্তি যুগ। অর্থাৎ রাসূল, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীদের যুগ পর্যন্ত হল প্রকৃত ইসলাম। কাজেই এর নীচে নামার দরকারও নাই উচিতও নয়। তাই যদি হয় তাহলে রাসূল (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের ইসলামটা পৃথিবীর কোথাও আপনি দেখাতে পারবেন? পারবেন না, যা আছে হয়তো সরাসরি বিদআত অথবা বিদআত মিশ্রিত, প্রকৃত ইসলাম কোথাও নাই। আর এসব বিদাতের অনুসরনেই এতসব ফিরকার জন্ম হয়েছে।
কাজেই কল্পনায় যদি আমরা ধরে নেই, হযরত উমর (রাঃ) ও আলী (রাঃ) মুসলমানদের দেখতে পৃথিবীতে এলেন। এসে কি তারা নিজেদের রেখে যাওয়া ইসলামটাকে চিনতে পারবেন? আবার যখন দেখবেন, মুসলমানরা রাসূলের সৃষ্টি ত্তত্ব, সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণ তত্ত্ব ইত্যাদি হাজারটা ইসলাম বহির্ভুত আলতু ফালতু বিদাতের তত্ত্ব-উপাত্ত নিয়ে বিতর্ক করে হাজারটা ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। তারপর হেফাজত, জামাত, তরিকত, সুন্নী (বেরেলভীরা বাংলাদেশে সুন্নী নামে পরিচিত), আওয়ামী লীগ ইত্যাদি নাম ধারণ করে একে অন্যের রক্ত খাচ্ছে। আল কায়দা, তালেবান, আইসিস, বাদ্রার হুড, সিসি ইত্যাদিরা কাফেরদের সাথে প্রতিযোগিতা করে মুসলিম নিধনযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। আপনার কাছে প্রশ্ন, ঠিক তখন উমর (রাঃ) ও আলী (রাঃ) কী করবেন? আপনার কী মনে হয়, মক্কা মদীনার ইমাম ও তথাকার বিশ্ববিদ্যালয়, আল আযহার, তেহরান, দেওবন্দ ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ের আলেমগণসহ প্রত্যেক ফেরকার নেতৃস্থানীয় আলেমদের কারো দেহের উপর গর্দান আস্ত থাকবে ? ১০০% গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়, এদের কারো গর্দান আস্ত থাকবে না। কাজেই আপনার কী মনে হয়, উমর (রাঃ) ও আলী (রাঃ) এর দায়িত্ব কী আপনার আমার উপর অর্পিত নয়? অর্থাৎ উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করার ও রাখার ব্যাপারে দায়িত্বশীল নয়? আপনি কী আমরে বিল মারুফ ওয়া নেহী আনিল মুনকার ফরয মনে করেন না? এ কাজ না করলে কি আল্লাহ্র কাছে জবাব দিহি করতে পারবেন, হাউজে কাওসারের ধারে যেতে পারবেন? না, পারবেন না। সর্বোপরি এ জাতীয় আয়াতের কি জবাব দিবেন, ইরশাদ হচ্ছে –
﴿وَإِن طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا ۖ فَإِن بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَىٰ فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّىٰ تَفِيءَ إِلَىٰ أَمْرِ اللَّهِ ۚ فَإِن فَاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا ۖ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ﴾
﴿إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ﴾
৯) ঈমানদারদের মধ্যকার দু’টি দল যদি পরস্পর লড়াইয়ে লিপ্ত হয় তাহলে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও৷ তারপরও যদি দু’টি দলের কোন একটি অপরটির বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করে তবে যে দল বাড়াবাড়ি করে তার বিরুদ্ধে লড়াই করো যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে৷ এরপর যদি তারা ফিরে আসে তাহলে তাদের মাঝে ন্যায় বিচারের সাথে মীমাংসা করিয়ে দাও এবং ইনসাফ করো৷ আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন৷
১০) মু’মিনরা তো পরস্পর ভাই ভাই ৷ অতএব তোমাদের ভাইদের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক করে দাও৷ আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমাদের প্রতি মেহেরবানী করা হবে৷
আর এ জন্যই হেফাজত ও জামাত ট্রাজেডির পর দেওবন্দ ও জামাতের ফিরকাবাজ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। কারণটা একদম পরিস্কার। উপমহাদেশের বৃহৎ দুটি ফিরকা দেওবন্দ ও জামাত যদি ঐক্যবদ্ধ থাকত তাহলে তারাই ক্ষমতায় থাকত। তখন আর শাপলা ও জামাত ট্রাজ্যডিসহ ইসলাম ও ইসলামপন্থিদের উপর অন্যান্য আঘাত আসার কোন সুযোগই ছিল না। কিন্তু এ উভয় দলের ফিরকাবাজ আলেমরা কে কার নেতৃত্বে যাবে, কে কার আনুগত্য করবে, শুধু এতটুকু আত্মম্ভরিতার কারণে হাজার হাজার আল্লাহ্র বান্দা, রাসূলের উম্মত এবং আমাদের ভাইদের অবলীলায় মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিল। এখন প্রশ্ন হল, আলেম নামের এসব আত্মম্ভরি খুনি ফিরকাবাজদের ক্ষমা করলে আল্লাহ্ আমাদের ক্ষমা করবেন কি না ? কারণ--
১। ফিরকাবাজির কারণে এরা কাফের। (দলীল দেখুন আল-কোরানে বিভক্তিবাদ ও অত্র গ্রন্থ)।
২। শাপলা ও জামাত হত্যাকান্ডে এরা পরোক্ষ খুনি। (অত্র গ্রন্থে দলীল আসছে)।
৩। এসব হত্যাযজ্ঞের মূল দায় হচ্ছে এসব ফিরকাবাজদের আত্মম্ভরিতা, একে অন্যের নেতৃত্বে না যাওয়া। কাজেই আপনার কী ধারণা, এদের ক্ষমা করলে আল্লাহ্ কী আপনাকে ক্ষমা করবেন ?
তবে ফিরকাবাজরা তো ইহুদী খৃষ্টানের ন্যায় মনে করে ‘নাহনু আবনাউল্লাহ’ আমরা আল্লাহ্র বেটা, কাজেই তাদের সম্ভবত যুদ্ধের দরকার নাই। কারণ দেওবন্দীরা মনে করে বেহেস্ত তাদের, জামাত মনে করে জান্নাত তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি, তাবলীগ, তরিকত, সুন্নী সবাই মনে করে জান্নাত তাদের শ্বশুর বাড়ি, মানে সবাই আল্লাহ্র বেটা। কিন্তু আমি আল্লাহ্র এক মামুলী দাস। কাজেই আমার জবাব দিহির ভয় রয়েছে। কারণ আল্লাহ্র নির্দেশ হচ্ছে
- ﴿وَإِن طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا ۖ فَإِن بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَىٰ فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّىٰ تَفِيءَ إِلَىٰ أَمْرِ اللَّهِ ۚ ﴾
৯) ঈমানদারদের মধ্যকার দু’টি দল যদি পরস্পর লড়াইয়ে লিপ্ত হয় তাহলে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও৷ তারপরও যদি দু’টি দলের কোন একটি অপরটির বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করে তবে যে দল বাড়াবাড়ি করে তার বিরুদ্ধে লড়াই করো৷ যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে৷
অত্র আয়াতে কাতিলো অনুজ্ঞা- যার দ্বারা ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়। কাজেই ফিরকাবাজরা ঐক্য না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। উল্লেখ্য যে, এ যুদ্ধে আমার কলম শুধুমাত্র, একমাত্র কোরআন হাদিসের কথা বলবে। নিজের কথা বলবে না। এ অগ্নোৎপাতে যদি কোন ফিরকাবাজ পোড়ে ভস্ম হয়ে যায় তাহলে আমাকে দোষারোপ করা চলবে না। কারণ কোরআন হাদীসের আগুনে পোড়েছে, আমার কথায় নয়।
তদুপরি বর্তমান বিশ্বের সবচাইতে নির্যাতিত নিগৃহিত শ্রেণিটা হচ্ছে আলেম সমাজ ও ইসলামী দল সমুহ। ইসলামী বিশ্ব ব্যবস্থার ভয়ে দাজ্জাল তাদেরকে জঙ্গি, সন্ত্রাসী, মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক ইত্যাদি অপবাদ দিয়ে কোণঠাসা করে রেখেছে, সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। আর আলেম সমাজও নিজেদের অজ্ঞতা, মুর্খতা, কুপমুন্ডকতা ও ফিরকাবাজির কারণে নিজেদের বঞ্চনায় নিজেরাই ঘৃতাহুতি দিচ্ছে। কাজেই এখন আমি চাচ্ছি তাদের বিদআত ও ফিরকা নামক ক্যান্সার কেটে ফেলে দিয়ে তাদেরকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিস্টিত করতে। তাহলেই একমাত্র ইসলাম ও উম্মাহ দাজ্জালের কবল থেকে মুক্তি পাবে। সুতরাং আমি কাজ করছি ইসলাম, উম্মাহ ও ইসলাম পন্থীদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণের লক্ষে। অতএব আমার গঠনমূলক সমালোচনা দেখে- যাদের জন্য করছি চুরি তারাই যদি আমাকে চোর বলে তাহলে এটা মেনে নেয়ার মত নয়। এরপরেও যদি কেউ আমার পিছু লাগে, আমাকে বিতর্কিত করে, আমার ইহকাল নষ্ট করার চেষ্টা করে, তাহলে আমি তার পরকাল নষ্ট করে দেব।
স্বরণ আছে সক্রেটিসের কথা? মহামান্য সক্রেটিস লোকমান হাকিমের শিষ্যদের কাছে তাওহীদের দীক্ষা নিয়েছিলেন। তারপর গ্রীসের যুব সমাজের মাঝে তিনি তাওহীদের বানী প্রচার করতে থাকেন। তখন এথেন্সের রাষ্ট্র ক্ষমতা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনল, তিনি গ্রিসের দেবতাদের অস্তিত্ব অস্বিকার করে নতুন এক দেবতার (আল্লাহর) প্রবর্তন করতে চাইছেন আর যুব সমাজকে বিভ্রান্ত করছেন। জুরী বোর্ড তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করল। তখন তিনি দাঁড়িয়ে বলেছিলেন “আমি আমার ব্যক্তিগত স্বার্থের কথা চিন্তা করার আগে চিন্তা করেছি এথেন্সের স্বার্থ। এইভাবে আমি তোমাদের উপকার করতে চেয়েছি। উপকারিকে সরকারি ব্যয়ে ভরন পোষণের ভার গ্রহন করা হোক এই আমার শেষ ইচ্ছা”।
সক্রেটিস আল্লাহ্র একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তদ্রুপ আমিও সকল দল ফিরকা ঐক্যবদ্ধ করে ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে আল্লাহ্র সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছি। কাজেই আমাকে ভাতা দেওয়া হউক। বিশেষত সকল ইসলামী দল ফিরকা ও আলেম সমাজ দাজ্জালের হাতে নিপীড়িত নিষ্পেষিত, আমি তাদের মুক্তি কল্যাণ ও রাষ্ট্র ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠার জন্য আমার মেধা শ্রম শক্তি ব্যয় করছি বিধায় আমার সমালোচনা তো সুদূর পরাহত, এ মুহুর্তে প্রত্যেক দল থেকে আমার বরাবর ভাতা বরাদ্দ দেয়া হউক। বস্তুত আমার প্রাপ্তি তো---
وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَىٰ رَبِّ الْعَالَمِينَ ﴿الشعراء: ١٨٠﴾
আমি তোমাদের কাছে এর জন্য কোন প্রতিদান চাই না। আমার প্রতিদান তো বিশ্ব-পালনকর্তাই দেবেন। (২৬: ১৮০) (ধারাবাহিক)
বিষয়: বিবিধ
৮৯০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন