দুনিয়াত্যাগী রাজকন্যা
লিখেছেন লিখেছেন নাবিক ১৮ আগস্ট, ২০১৫, ০২:৫৮:১৯ দুপুর
বনী ইসরাঈলের এক রাজকন্যা ছিলো খুউব দ্বীনদার এবং পরহেজগার। তার দ্বীনদারীতা দেশময় প্রসিদ্ধ ছিলো। একবার এক রাজপুত্র তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলে সে কোনো প্রকার ভূমিকা ছাড়াই ঐ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। পরে সে তার দাসীকে বলে, আমার জন্য একজন ফকীর কিসিমের আবেদ-জাহেদ ও নেকপাত্র এনে হাজির কর।
দাসী অনেক সন্ধান করে একজন গরীব নেককার পাত্র এনে হাজির করলো। রাজকন্যা যুবককে সরাসরি বলল, আপনি যদি আমাকে বিয়ে করতে সম্মত হন, তবে এখনি কাজীর দরবারে চলুন। সেখানে আমাদের বিয়ে হবে। রাজকন্যার প্রস্তাবে যুবক সম্মত হলো এবং যথাসময় তাদের বিয়ে সম্পন্ন হলো। নবপরিণীতা রাজকন্যাকে গরীব যুবক তার জীর্ণ কুটিরে এনে উঠালো।
রাজকন্যা এই জীর্ণ কুটিরেই সন্ত্তষ্ট ছিলো। গরীব যুবকটি দিনভর মেহনত করে সন্ধ্যায় স্ত্রীর জন্য সামান্য আহার নিয়ে ঘরে ফিরতো। রাজকন্যা প্রতিদিন তা দিয়েই ইফতার করে আল্লাহর শুকুর আদায় করতেন। ঘটানা ক্রমে একদিন যুবক তার স্ত্রীর জন্য কিছুই সংগ্রহ করতে পারলো না। দিনশেষে চিন্তিত হয়ে সে ভাবতে লাগলো, স্ত্রী নিশ্চয়ই এখন আমার পথপানে চেয়ে অপেক্ষা করছে। আমি বাড়ী ফিরলে সে ইফতার করবে। অথচ আজ তার জন্য কিছুই সংগ্রহ করতে পারিনি। এই ভেবে মনে মনে সে খুব কষ্ট পেলো। কিন্তু স্ত্রীর ইফতারের জন্য কিছু সংগ্রহ করতে পারলোনা।
অবশেষে উজু কর দু'রাকাত নামাজ আদায়ের পর আল্লাহর কাছে সে আরজ করলো- "হে দ্বীন-দুনিয়ার মালিক আপনিতো ভালো করেই জানেন, আমি কখনো আপনার কাছে দুনিয়ার কোনো বস্তু প্রার্থনা করি না। কিন্তু আজ আমার অভুক্ত স্ত্রীর জন্য আপনার দরবারে হাত তুলেছি। আমার স্ত্রী দিনভর রোযা রেখে এই ইফতারের সময় আমার জন্য অপেক্ষা করছে। অথচ আমি তার জন্য আজ কিছুই সংগ্রহ করতে পারিনি। হে বিশ্বজগতের মালিক আপনার ধনভাণ্ডারে তো কোনো কিছুরই অভাব নেই। আমি আপনার কাছে রিজিক প্রাথর্না করছি। আপনিই সকল কে রিজিক দান করে থাকেন।" যুবকের এই মুনাজাত শেষ হওয়ার সাথে সাথে আকাশ থেকে একটি মুক্তা তার সামনে পতিত হলো।
সে আনন্দচিত্তে মুক্তাটি এনে তার স্ত্রীর হাতে দিলো। রাজকন্যা এই মুক্তা দেখার সাথে সাথে স্বামীকে জিজ্ঞেস করলো, "আপনি এটা কোথায় পেলেন? এমন অপূর্ব সুন্দর আর মূল্যবান মুক্তা তো আমাদের রাজমহলেও দেখিনি।" জবাবে যুবক আজকের ঘটে যাওয়া ঘটনাটি রাজকন্যার কাছে বর্ণনা করলো।
সব শুনে রাজকন্যা বলল, আপনি এখনি এই মুক্তা নিয়ে সেখানে চলে যান এবং কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে এরূপ দু'আ করুন- "হে আল্লাহ এই মুক্তা যদি আমাদেরকে দুনিয়ার রিজিক হিসেবে দিয়ে থাকেন, তবে এতে বরকত দান করুন। পক্ষান্তরে যদি আমাদের আখিরাতের অংশ থেকে দিয়ে থাকেন, তবে এখনি এটা উঠিয়ে নিন।"
যুবক রাজকন্যার কথামতো সেই স্হানে গিয়ে আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করলো। তার দু'আ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আল্লাহ মুক্তাটি আকাশে উঠিয়ে নিলেন। এরপর সে ঘরে ফিরে আসলো।
ঘটনার বিবরণ শুনে রাজকন্যা হাসিমুখে বললো, "মহান আল্লাহর শুকুর যিনি আমাদেরকে এমন বস্তু দেখিয়েছেন, যা আমাদের জন্য পরকালে সঞ্চিত রাখা আছে।"
বিষয়: বিবিধ
১৭৪৮ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তাত্ত্বিকভাবে গল্পটি ভালোই, জাযাকাল্লাহ.
কিন্তু বর্তমান সময়ের বাস্তবতা হলো-
'আধুনিক'দের সমান্তরালে 'ধার্মিক' ছেলেমেয়েরাও ভোগবাদী+ দুনিয়ামুখী, চাহিদার যোগানে টান পড়লে সব তছনছ হয়ে যায়!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন