প্লিজ ঘুম হয়ে যাও চোখে

লিখেছেন লিখেছেন নাবিক ৩০ জুলাই, ২০১৫, ০৯:০৩:২৯ সকাল



"প্লিজ ঘুম হয়ে যাও চোখে আমার মন খারাপের রাতে,

আমার রাতজাগা তারা তোমার আকাশ ছোঁয়া বাড়ি,

আমি পাইনা ছুঁতে তোমায় আমার একলা লাগে ভারী।"

ঘুম....... এটাযে আল্লাহর কতো বড় নেয়ামত সেটা একমাত্র নিদ্রাহীনতায় ভোগা মানুষেরাই বোঝেন। আমার বাবা প্রায় বিশ বছর যাবত নিদ্রাহীনতায় ভুগছেন। যৌবনে ওনার ছিলো প্রচণ্ড রকমের মাছ ধরার নেশা। রাত-বিরাতে মাছ ধরার নেশায় একা একা এমন সব যায়গায় চলে যেতেন, যেখানে দিনের বেলায় যেতেও অনেকে ভয় পেতো।

আমার দাদার বাড়ী গফরগাঁও থানার বামুনখালী গ্রামে। গ্রামের শেষ প্রান্তে ছিলো বিশাল এক বিল। (বিলটা এখনো আছে তবে আগের মতো এতো বড় নয়, মাটি ভরাট করতে করতে মানুষ এটাকে এখন একটা পুকুরের মতো বানিয়ে ফেলেছে) এক রাতে বাবা মাছ ধরতে গেলেন সেই বিলে। সেই রাতই ছিলো বাবার জীবনের মাছ শিকারের শেষ রাত।

মাছ ধরার সময় বিলের ধারে কিছু একটা দেখে তিনি প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলেন। এতো ভয় পেয়েছিলেন যে বাড়ীতে এসে তিনি অসুস্হ হয়ে পড়েন। একটানা কয়েক দিন উনার শরীরে ভীষণ জ্বর ছিলো। তবে কি দেখে তিনি এতো ভয় পেয়েছিলেন তা আজও আমাদের কারো কাছে বলেন না। এই ঘটনা আমি আমার দাদার কাছ থেকে শুনেছি।

সেই রাতের পর বাবার মাছ ধরার নেশা কেটে যায় চিরতরে। সেই সাথে ঘুমপরীও চলে যায় উনার দু'চোখের পাতা ছেড়ে। এই বিশ বছরে বহু ডাক্তার-কবিরাজ, পীর-ফকিরের চিকিত্‍সা বাবা নিয়েছেন। কিন্তু পরিপূর্ণ ঘুম আর কখনো ফিরে আসেনি। এখন ১৪ টাকা দামের একটা ট্যাবলেট খেয়ে প্রায়ই ঘুমাতে চেষ্টা করেন। এতে মাঝে মাঝে কিছুটা কাজ হয় বটে কিন্তু শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়।

উনি আফসোস করে যখন বলেন- "ইস একটা রাত যদি তৃপ্তি সহকারে ঘুমাতে পারতাম।" তখন আমার খুব খারাপ লাগে। আর মনে মনে আল্লাহকে বলি, "হে আল্লাহ আমার চোখেতো বেজায় ঘুম, আমার চোখের কিছু ঘুম নিয়ে তুমি বাবাকে দিয়ে দাও"

নিদ্রাহীনতা একজন মানুষের জন্য যে কতোটা খারাপ হতে পারে সেটা বুঝা যায়, নিদ্রাহীনতায় ভোগা কিছু লোকের আত্মহত্যা করে ফেলার ঘটনা থেকে। ইংল্যান্ডে এল্যান কক্স নামে একজন মেধাবী প্রকৌশলী ছিলেন। দীর্ঘ দিন যাবত তিনি নিদ্রাহীনতায় ভুগছিলেন। দিনের পর দিন তার চোখের পাতায় একফোঁটা ঘুম আসতো না। এজন্য তিনি সব-সময় বিষণ্ণ হয়ে থাকতেন। অবশেষে একদিন তিনি আত্মহত্যা করে চলে গেলেন চির নিদ্রার দেশে। এমন আরও বহু ঘটনা আছে।

বিশ্বখ্যাত দার্শনিক ডেল কার্নেগীও অনিদ্রায় ভুগতেন। তবে তিনি সেটা মন থেকে মেনে নিয়েছিলেন এবং অনিদ্রার সাথে বন্ধুত্ব করে নিয়েছিলেন। তিনি তার এক প্রবন্ধে লেখেন অনিদ্রা নিয়ে আমি মোটেই দুশ্চিন্তা করতাম না বরং এটাকে আমি সুযোগ মনে করতাম, যখন আমার ঘুম আসতোনা তখন আমি লেখালেখি ও বই পড়ে সময় কাটিয়ে দিতাম।

নিদ্রাহীনতায় ভোগা মানুষদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, "এটাকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করুন অযথা দুঃশ্চিন্তা করবেন না, এসময় কোনো কাজে লেগে থাকুন এবং সময়টাকে উপভোগ করুন।" কিন্তু সবাই কি আর সেটা পারে?

একদল গবেষক নিদ্রাহীনতার পাঁচটি অদ্ভূত বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন-

১) অনিদ্রা হতে পারে বংশগত:

রাতের পর রাত যে আপনি জেগে থাকছেন এর পেছনে আপনার বংশধারার হাত থাকতে পারে। ২০০৮ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, যেসব তরুণদের পিতামাতার ইনসমনিয়া আছে তারা ঘুমের ওষুধ বেশি ব্যবহার করে এবং তাদের মধ্যে মানসিক সমস্যার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা এবং আত্মঘাতী প্রবনতাও এদের মাঝে দেখা যায়।

২) অন্যান্য প্রাণীরও ইনসমনিয়া হতে পারে:

আপনার স্বামী/স্ত্রী যেভাবে অনিদ্রা নিয়ে আপনার কাছে নালিশ দিতে পারে পোকামাকড় তো আর সেটা করতে পারে না। কিন্তু পোকামাকড় এবং কুকুর-বিড়ালেরও অনিদ্রা হতে পারে।

৩) সোশ্যাল জেট ল্যাগ:

শুক্রবার ছুটি কাটানোর পর শনিবার অফিসে যাবার জন্য সকালে উঠতে কষ্ট হয় আপনার? এর মূল কারণ হল আপনি অন্য দিনের চাইতে শুক্রবার সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠেন।

গবেষণাতেই দেখা গেছে যাদের ঘুম থেকে ওঠার সময় এমন এলোমেলো তাদের মাঝে অতিরিক্ত ওজন বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়। একে গবেষকরা বলেন সোশ্যাল জেট ল্যাগ কারণ জেট ল্যাগের মতই অনিয়মিত ঘুমের জটিলতা দেখা দেয় এভাবে।

৪) নারীদের হরমোন অনিদ্রায় প্রভাব রাখে:

পুরুষের চাইতে নারীর অনিদ্রা হবার সম্ভাবনা দ্বিগুণ। গবেষকরা মনে করেন এর পেছনে হরমোনের হাত আছে। রাতে কম ঘুম এবং দিনের বেলায় ক্লান্তির সাথে যোগ আছে গর্ভাবস্থা এবং ঋতুচক্রের বিভিন্ন পর্যায়ের। এর সাথে আরও রয়েছে দুশ্চিন্তা এবং বিষণ্ণতার যোগ।

৫) দুর্লভ এক ধরণের অনিদ্রা থেকে হতে পারে মৃত্যু:

জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে এক ধরণের অনিদ্রা হয়ে উঠতে পারে মৃত্যুর কারণ। ১৯৮৬ সালের একটি গবেষণা থেকে ৫৩ বছর বয়সী একজন অনিদ্রা রোগীর কথা জানা যায়। দৈনিক তার মাত্র ২/৩ ঘণ্টা ঘুম হত।

দুই মাস পরে তার মাত্র এক ঘণ্টা ঘুম হতে থাকে। তিন থেকে ছয় মাস পর ঘুম একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়ে তার জন্য এবং তিনি প্রচণ্ড ক্লান্তিতে ভুগতে থাকেন। শরীর কাঁপা এবং শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাও দেখা দেয়। আট মাস পরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য একই ভাবে মৃত্যুবরণ করেন।

কিছু খাবারের কথা ডাক্তাররা বলে থাকেন যেগুলো মানুষের ঘুমের সহায়ক। যেমন:- দুধ, দই বা দুগ্ধজাত যে কোনো খাবার। কলা, তিসির বীজ, ছোলা, বুট, মটর দানা

ছোলা, বুট ও মটর দানা ভিটামিন বি-সিক্স সমৃদ্ধ। শরীরে ঘুমজাগানিয়া হরমোন মেলাটোনিন তৈরিতে খুবই কাজে আসে এই ভিটামিন বি-সিক্স।

বিষয়: বিবিধ

১৮৯০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

332619
৩০ জুলাই ২০১৫ সকাল ১০:২০
আবাবীল লিখেছেন : ঘুম না আসেলে ভেরা অথবা মেষ গননা করে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
৩০ জুলাই ২০১৫ সকাল ১১:১০
274883
নাবিক লিখেছেন : হুম এইটা খুব পুরোনো পদ্ধতি bt তেমন কাজের নয়। ধন্যবাদ।
৩০ জুলাই ২০১৫ সকাল ১১:২১
274885
আবাবীল লিখেছেন : তাহলে ১০০ থেকে ০ পর্যন্ত উল্টো গুনতে হবে, এতে নিশ্চই কাজ হবে।
৩০ জুলাই ২০১৫ সকাল ১১:৪৯
274889
নাবিক লিখেছেন : ওকে
332624
৩০ জুলাই ২০১৫ সকাল ১০:৪০
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : ভালো পরামর্শ দিলেন ধন্যবাদ। আমার অবশ্য বেশ ভালো ঘুম হয়
৩০ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৪:০৪
274920
নাবিক লিখেছেন : আল-হামদুলিল্লাহ ভালো ঘুম হওয়াটা খোদার নেয়ামত। এজন্য মহান রবের শুকরিয়া আদায় করা উচিত।
332640
৩০ জুলাই ২০১৫ দুপুর ১২:১৫
হতভাগা লিখেছেন : Tab. Dormicum 7.5 mg

0 + 0 + 1 ২/৩ সপ্তাহ

প্রতি রাতে ঘুমানোর ২ ঘন্টা আগে খেতে পারে
৩০ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৪:০৯
274923
নাবিক লিখেছেন : থ্যাংস ভাই Happy>-

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File