আসুন নিজে নিজেই যাচাই করি : আমরা প্রিয়নবী (সা)এর কেমন উম্মত?(শেষ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ০৭ আগস্ট, ২০১৫, ০৭:৪৫:১৬ সন্ধ্যা
০৫ আগষ্টের পর..
১১। যে ব্যক্তি গোঁফ ছোট করবে না, সে আমার দলভুক্ত নয় :
রাসূল (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি গোঁফ ছোট করে না, সে আমার দলভুক্ত নয়।” (আহমদ, তিরমিযী, নাসায়ী)
হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, গোঁফ কেটে ফেলা ও দাঁড়ি লম্বা হতে দেয়া ইসলামের ফিতরাত বা স্বভাব সুলভ বিষয়াদির অন্তর্গত। অথচ অগ্নিপূজকরা যেহেতু তাদের গোঁফ লম্বা করে এবং দাঁিড় কেটে ফেলে, সেহেতু তোমরা তাদের উল্টোটা করো, তোমরা গোঁফ কেটে ফেল এবং দাঁড়ি লম্বা করো।” (ইবনে হিব্বান)
১২। যে ব্যক্তি মুসলমানদের কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেয় না, সে আমার দলভুক্ত নয় :
হযরত হোজায়ফা ইবনে ইয়ামান (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মুসলমানদের সামষ্টিক বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে না, সে আমার দলভুক্ত নয়।” (তাবরানী)
১৩। অন্য ব্যক্তিকে নিরাপত্তা দেয়ার পর হত্যা করল, হত্যাকারী আমার সাথে সম্পর্কহীন:
রাসূলে করীম (সা) বলেছেন, “যদি কেউ জীবন-প্রাণের অভয় ও নিরাপত্তা দিয়ে কাউকে হত্যা করে, তার সাথে আমার কোনই সম্পর্ক নেই, নিহত ব্যক্তি একজন কাফিরই হোক না কেন?” ( ইবনে মাযা)
১৪। যে নফসের মহ্বতে আল্লাহকে ভুলে যাবে সে আমার উম্মত নয় :
রাসূল (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি নফসের কারণে আল্ল¬াহকে ভুলে যাবে, (জেনে রাখ) তারা আমার দলভুক্ত নয়। আমার ও তাদের সাথে কোন প্রকার সম্পর্ক নেই।”
(তাম্বীহুল গাফেলীন-হাফেজ হাজার ইবনে আসকালানী, রহ.)
১৫। যে সংকীর্ণ স্বজনপ্রীতি (গোত্র প্রীতি, সম্প্রদায়প্রীতি, জাতীয়তাপ্রীতি) করে, সে আমার উম্মত ভুক্ত নয় :
হযরত যুবাইর ইবনে মুত’ঈম (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, “সে ব্যক্তি আমার উম্মতের কেউ নয় যে মানুষকে স্বজনপ্রীতির দিকে আহ্বান জানায়। সে ব্যক্তিও আমার উম্মতের মধ্যে শামিল নয়, যে স্বজনপ্রীতির ভিত্তিতে যুদ্ধ করে। আর সে ব্যক্তিও আমার দলভুক্ত নয়, যে সংকীর্ণ স্বজনপ্রীতির আদর্শে পক্ষপাত করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।” (আবু দাউদ)
অন্য হাদীসে আছে, “বিকৃত জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্দীপিত হয়ে যে অন্ধত্বের পতাকা হাতে নিয়ে যুদ্ধ করে, সে আমার মুসলিম দলভুক্ত নয়।” (মুসলিম)
১৬। যারা দাঁড়িতে গাঁট বাঁধে, তাদের ওপর আমার কোন দায়িত্ব নেই :
হযরত রোয়াইফা (রা)কে সম্বোধন করে রাসূল (সা) বলেছেন, “আমার পরে তুমি হয়তো অনেক দিন জীবিত থাকবে, তখন তুমি মানব জাতিকে জানিয়ে দিও, যারা দাঁড়িতে গাঁট বাঁধে ও অমুক অমুক কাজ করে, তাদের জন্যে মোহাম্মদ (সা)এর কোন দায়িত্ব ও সহানুভূতি নেই।” (আবু দাউদ)
১৭। রুকু সিজদা পুরোপুরি না করলে, সে রাসুলের তরীকার আওতা বহির্ভূত :
হযরত হুযাইফা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি একজন লোককে অপূর্ণ রুকু ও সিজদা করতে দেখলেন। লোকটি সালাত শেষ করলে, হুযাইফা তাকে বললেন, তোমার সালাত হয়নি। রাবী বলেন, আমার মনে হয়, হুযাইফা এও বলেছেন, যদি তুমি এ অবস্থায় মারা যায়, তাহলে মোহাম্মদ (সা)এর তরীকার বাইরে মারা যাবে।
(বুখারী-১ম খন্ড, হাদীস নং-৩৭৬)
অন্য হাদীসে যারা রুকু সিজদা করে না, তাদেরকে সবচেয়ে বড় নামাজ চোর বলে অভিহিত করা হয়েছে।
১৮। যে ব্যক্তি স্বামী-স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্ররোচনা দেয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয় :
রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন নারীকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে প্ররোচনা দেয় বা উস্কিয়ে দেয়(স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে ফাটল ধরায়) সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (আবু দাউদ)
১৯। যে অন্যজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে, সে আমার দলভুক্ত নয় :
মিথ্যা দাবী বা মামলা করা সম্পর্কে রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন বিষয় বা বস্তুর দাবী করে যাতে তার কোন অধিকার নেই, সে আমার দলভুক্ত নয়। সে জাহান্নামে তার ঠিকানা করে নিল।”
(মুসলিম থেকে মিশকাতে)
২০। ছিনতাইকারী বা প্রকাশ্যে লুটপাট কারী আমাদের দলভুক্ত নয় :
হযরত জাবির (রা) বলেছেন, “ছিনতাই কারীর হাত কাটা যাবে না। আর যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে ছিনতাই (প্রকাশ্যে লুটপাট) করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (আবু দাউদ থেকে মিশকাতে)
২১। রাসূলের সুন্নত অনুসরণ থেকে বিরত থাকলে, সে আমার দলভুক্ত নয় :
রাসূল (সা) বলেছেন, “কেউ যদি আমার সুন্নাহর অনুসরণ থেকে বিরত থাকে। তাহলে সে আমার কেউ নয়।” (বুখারী ও মুসলিম)
হযরত আবদুল¬াহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, “যে লোক আমার সুন্নত থেকে বিমুখ হবে-তা অনুসরণ করে চলবে না, সে আমার উম্মতের মধ্যে গণ্য নয়, নয় সে আমার পথের পথিক।”
বর্তমান মুসলিম সমাজে সুন্নতের নামে বিদআতের ছাড়াছড়ি। নামে সুন্নী কাছে বিদআতী। এরা আল্লাহর রাসূলের সুন্নতের চেয়েও এদের বিভিন্ন পীরদের তরীকাকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এসব বিদআতীদের সম্মান করা হাদীসের ভাষায় ইসলামকে ধ্বংস করার সমতুল্য।
হযরত ইবরাহীম ইবনে মায়সারা (রা) থেকে বর্ণিত,রাসূল (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন বিদআতীকে সম্মান করল, সে যেন ইসলামকে ধ্বংস করার কাজে সাহায্য করল।” (বায়হাকী থেকে মিশকাত)
অন্য হাদীসে রাসূল (সা)এর সুন্নত আকঁড়ে ধরার ছওয়াব একশত শহীদের সমতুল্য হবে বলে বর্ণনা আছে।
২২। যারা গুপ্তাঙ্গের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করে না তারা আমাদের দলভুক্ত নয় :
হযরত ওয়াছিলা (রা) এবং তাঁর থেকে হযরত তাবরানী (র) বর্ণনা করেছেন, “যে তার গুপ্তাঙ্গের লোম, নখ ও গোঁফ কাটে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।”
২৩। যে নারী ও পুরুষ পরস্পর সাদৃশ্য পোশাক পরে, তারা আমার দলভুক্ত নয় :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল(সা) বলেছেন, “ঐ সকল নারী আমার উম্মতের কেউ নয়, যারা পুরুষের পোশাক পরিধান করে এবং ঐ সকল পুরুষ আমার উম্মতের মধ্যে গণ্য নয়, যারা নারীর পোশাক পরিধান করে।” (মুসনাদে আহমদ)
আল্লাহ আমাদেরকে প্রিয়নবী (সা)এর সুন্নতকে আঁকড়ে ধরার এবং তাঁর নির্দেশিত পথে চলার তৌফিক দিন। আমিন।
[এখানে আমি ২৩টি বিষয় উল্লেখ করেছি। আরো অনেক বিষয় আছে, যা করলে রাসূল (সা)এর উম্মত নয় বলে ঘোষণা করেছেন। কারো নজরে আসলে এ বিষয়ে আশা করি লিখবেন। কোন ভুল চোখে পড়লে সংশোধনী সাদরে গ্রহণীয়।]
--------
বিষয়: সাহিত্য
১৩৩১ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগলো। জাজাকাল্লাহু খাইরান।
ছবির লোকটি বিশ্বাসী নয়।
লেখাটি খুবই ভালো লেগেছে অসংখ্য ধন্যবাদ।
১৬। যারা দাঁড়িতে গাঁট বাঁধে, তাদের ওপর আমার কোন দায়িত্ব নেই :
হযরত রোয়াইফা (রা)কে সম্বোধন করে রাসূল (সা) বলেছেন, “আমার পরে তুমি হয়তো অনেক দিন জীবিত থাকবে, তখন তুমি মানব জাতিকে জানিয়ে দিও, যারা দাঁড়িতে গাঁট বাঁধে ও অমুক অমুক কাজ করে, তাদের জন্যে মোহাম্মদ (সা)এর কোন দায়িত্ব ও সহানুভূতি নেই।” (আবু দাউদ)
-কেন ভাই? আরো ১১,১৬ ও ২২ নং কারণ। পাঠ করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ
খুব সুন্দর পোস্ট,
বিষয়গুলোকে একত্রিত করছেন
জাযাকাল্লাহ.....
মন্তব্য করতে লগইন করুন