##মুহাম্মদ ইয়াসিনঃএক পাকিস্থানী বাঙ্গালী কিশোরের সাথে আমার কথোপকথন-মাহবুব সুয়েদ
লিখেছেন লিখেছেন সমশেরনামা ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৫:০৭:৪০ সকাল
গতকাল বিকেল বেলা অলস সময় পার করছিলাম।হটাত করে 'মুহাম্মদ ইয়াসিন' নামক আইডি থেকে ফেবুতে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাই।তার ওয়য়ালে দেখলাম কায়েদ আজম মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহর ছবিতে ভরপুর।১৯ বছরের তরুন ইয়াসিনের সাথে শুরুতে হাই হ্যালো দিয়ে চ্যাট শুরু করলাম।মিনিট দুয়েকের মাজে সে মেসেঞ্জারে কল করল।বরিশালী টানে শুদ্ব বাংলায় (উর্দু মিশ্রিত) কথা বললাম মিনিট বিশেক।সে জানাল তার বাবার বাড়ি ঢাকায় আর মায়ের বরিশালে।জীবনে কোনদিন বাংলাদেশে আসেনি।তবে রক্তে বাঙ্গালীর ধারা বহমান থাকায় তার কথায় বাংলাদেশের প্রতি প্রচুর দরদ লক্ষ্য করলাম।১৯৮০ সালে তার বাবা আর মা পাকিস্থানে চলে যায় এবং বিয়ে করে।তার জন্ম সেখানে এবং সব ভাইবোনের।পেশায় ছাত্র এবং পার্ট টাইম জব করে।তার বাবা ট্রলার ব্যবসায়ি বেলুচিস্থানে।সে জানাল তারা কয়জন তরুন মিলে করাচীতে আন্দোলন করছে নাগরিকত্বের দাবীতে এবং নেটেও পেজ খুলেছে।সেখানে আমার লাইকের সুবাদে ই সে আমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছে।তার কথায় পাকিস্থানের প্রতি প্রচুর ক্ষোভ ঝরে পড়ল।বলল দেখুন আমাদের বাবা মা ছাড়াও হাজার হাজার লোক পাকিস্থানে এসেছে ৭১-১৯৮৫ পর্যন্ত পাকিস্থানকে নিজের দেশ ভেবে।কিন্তু আফসোসের বিষয় হচ্ছে এরা নাগরিকত্ব দেয়না অবশ্য টাকার বিনিময়ে নাকি পাওয়া যায়।বর্তমান নওয়াজ শরিফ সরকারের অন্যতম ওয়য়াদা নাকি ছিল 'বাঙ্গালীদের' নাগরিকত্ব দান।কিন্তু এত বছর পর ও তার কোন উদ্দোগ নেই।আমি ইয়াসিনকে বললাম তুমি কি ভাব পাকিস্থান ভাল নাকি বাংলাদেশ?সে জানাল বাংলাদেশ নাকি অনেক সুখে আছে।আমি তাকে বললাম চলে আস বাংলাদেশে।ক্ষনে আবার ভাবলাম ইয়াসিনের বাবা মা তো সেই ৮০সালে স্বেচ্চায় পাকিস্থানী হয়েছে তাদের সন্তানকে কি আমার দেশের ছোট আত্মার সরকার নাগরিকত্ব দেবে?যারা প্রায় ৪৫ বছর আগে ঘটে যাওয়য়া ঘটনার সুত্রে পিতার দোষে বা দলের দোষে পুত্র বা নেতাদের পাকিস্থানী সাজিয়ে ফাসিতে ঝুলাচ্ছে।যেখানে সরকারের উচিত ছিল এই বাঙ্গালীদের স্বেচ্চায় ফিরে আসাদের নাগরিকত্ব দেয়া।ইয়াসিন জানাল তারা সেখানে সবি পারে কিন্তু কোথাও কোন চাকুরি করতে গেলে তাদের নাগরিকত্ব আছে কি না তা জিজ্ঞেস করে আর বাঙ্গালী হলে একটু ডিসক্রিমিনেশনের স্বীকার হতে হয়।ইয়াসিন হয়ত জানেনা বা জানে চতুর পাকিস্থানীরা ১৯৭১ সালে যারা খাস রাজাকার বা গাদ্দার ছিল অর্থ্যাত যারা সত্যিকারার্থে পাকিস্থানী হয়ে গিয়েছিল তাদের কি মুল্যায়ন না করেছে।রাজা ত্রিদিব রয় ২০১২ সালে তার শেষ দিন পর্যন্ত পাকিস্থানে সম্মানসুচক ফেডারেল মন্ত্রির মর্যাদা পেয়েছিল।সিলেটের মাহমদ আলী ও তেমনি মন্ত্রি ছিল।নুরুল আমিন ভাইস প্রেসিডেন্ট এমনকি কায়েদে আজমের কবরের পাশে একমাত্র যার কবর রয়েছে সে হল এই পুর্ব পাকিস্থানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রি নুরুল আমিন।বাংলাদেশের ৭১এ জন্মযুদ্বের আসল বিরুধীতাকারি এবং পাক বাহিনীর মুল সঙ্গি যে বাঙ্গালীরা ছিল তাদের মুল হুতাদের বেশির ভাগই পশ্চিম পাকিস্থানে চলে যায় এবং সেখানে সুযোগ সুবিধা ভোগ করে।আর ফজলুল কাদের চৌঃ,গোলাম আজম, একে ইউসুফ,মাওলানা ইসহাক, খান এ সবুর খান, আব্বাস আলী খান প্রমুখ ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরুধী নেতারা যারা দুই পাকিস্থানের এক থাকার পক্ষে কমিটেড ছিল এবং রাজনৈতিক সিদ্বান্তের প্রতি সক্রিয় ছিল কিন্তু কোন প্রকার যুদ্বাপরাধ বা নিচু মানের চামচামি করেনি তারা ফিরে এসেছিল বা আদৌ যায়নি পশ্চিমাংশে।ভুট্রো অনেক সুযোগ সুবিধার ওয়য়াদা দিয়েছিল এদের কিন্তু এই সব লোক যাদের বেশীর ভাগই ছিল সম্ভ্রান্ত এবং রাজনৈতিকভাবে শরিফ প্রকৃতির লোক তারা পশ্চিমাংশে যাওয়া এবং সেখানে স্থায়ি হওয়াকে গ্রহন করেনি সংগত কারনে।তাছাড়া তাদের মনে হয়ত এমন ধারনাও বিরাজ করছিল যে আমরা রাজনৈতিক প্রশ্নে আর ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরুধী প্রশ্নে হয়ত ইউনাইটেড পাকিস্থানের পক্ষে ছিলাম কিন্তু আমরাতো কোন যুদ্বাপরাধ বা জনজীবনের হুমকি এমন কোন নিম্নমানের কাজের সাথে ছিলামনা।তারা যে কোন প্রকার যুদ্বাপরাধ বা ক্রিমিনাল কর্মের সাথে ছিলনা তার সবচেয়ে বড় প্রমান এরা স্বাধিন বাংলায় বার বার পার্লামেন্টে এসেছে তাদের এলাকার জনগনের ভোটে।প্রায় ৪৫ বছর পরেও আজ স্বাধিন বাংলায় দিল্লীর কু-চক্রান্তে যাদের ৭১র তকমা দিয়ে বিচারিক সাজা দেয়া হচ্ছে তাদেরও যদি দেখি দেখা যায় এরা ও তাদের নির্বাচনী এলাকায় সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব।যাক ইয়াসিনের প্রতি দোয়া রইল।বাংলা মায়ের সন্তানেরা সুখে থাক তা পৃথিবীর যেখানে ই হোক এই কামনা।।
বিষয়: বিবিধ
১২৩৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন