ধূমপানের কুফল।
লিখেছেন লিখেছেন কাজী আবু নাবিল ১৮ নভেম্বর, ২০১৪, ০৯:২১:৪২ সকাল
শারীরিক সুস্থতা ঠিক রাখতে ইসলাম আপনাকে ভালো ভালো খাবার ও পানীয় গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছে। পক্ষান্তরে যে সকল খাবার ও পানীয় গ্রহণ করলে আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে সে সকল জিনিস গ্রহণ করতে নিষেধ করেছে। যেহেতু ধূমপান আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর; সেহেতু আল্লাহ তা হারাম করেছেন এবং তা পরিহার করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ ধূমপান সার্বিক দিক দিয়ে ক্ষতি বয়ে আনে, বিশেষ করে শারীরিক, আর্থিক, সামাজিক এবং চারিত্রিক ক্ষতির দিক হল অন্যতম যা নিম্নে সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা করা হলো:
প্রথমত: শারীরিক ক্ষতি।
1. ধূমপানের ফলে গলায় এবং ফুসফুসে ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়, প্যারালাইসিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশী এবং যক্ষায় আক্রান্ত হয়। কারণ এতে নিকোটিন জাতীয় এক প্রকার বিষ রয়েছে।
2. মেডিক্যাল কলেজের একজন প্রফেসর ডক্টর কেনান আল জানী এক জনসভায় তার ভাষণে বলেন: ‘‘আমি প্রায় পঁচিশ বৎসর যাবৎ ক্যান্সারের চিকিৎসা করছি, তন্মধ্যে অধিকাংশ রোগী হচ্ছে ধূমপায়ী।
3. অন্য একজন বক্ষ বিশেষজ্ঞ বলেন: প্রায় নব্বই শতাংশ ক্যান্সার রোগী পাচ্ছি ধূমপায়ীদের মধ্যে।
4. ছাত্র এবং খেলোয়াড়দের জন্য ধূমপান ক্ষতিকর, ফলে দেখা যাচ্ছে অধূমপায়ীদের রেজাল্ট অধিক ভাল।
5. ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ছিদ্রগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসে ফলে শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হয়।
6. ধূমপানের ফলে বক্ষে ময়লার পর্দা জমে থাকে। তা যাচাই করতে আপনি একটি সিগারেট লক্ষ্য করুন। সিগারেটের সামনের দিকে সাদা যে তুলাটি থাকে সেটির কি অবস্থা হয়! সিগারেটটি পান করা শেষ হতেই সেটি সাদা থেকে লাল অতঃপর কালো আকার ধারণ করে। এ ভাবে যারা দিনের পর দিন সিগারেট পান করে যাচ্ছে তাদের কি অবস্থা হবে?
দ্বিতীয়ত: সামাজিক ক্ষতি:
1. ধূমপানের ফলে আবহাওয়া দূষিত হয়, বিশেষ করে ঘরে বা গাড়িতে থাকলে অধিক হয়, এতে আশে-পাশের লোক, নিজের ছেলে-মেয়ে এবং স্ত্রী ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
2. ধূমপান করার পর মাসজিদে গেলে সেখানে অধূমপায়ী মুসল্লি এবং ফেরেশ্তামণ্ডলী কষ্ট পায়। যার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হালাল জিনিস (কাঁচা পিয়াজ এবং রসুন) খেয়ে মাসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন, কেননা এর মধ্যে দুর্গন্ধ রয়েছে। আর সে জায়গায় হারাম জিনিস সিগারেট পান মাসজিদে যাওয়া?
তৃতীয়ত: আর্থিক ক্ষতি:
1. এতে টাকা পয়সা অপচয় করা হয়। বরং বহু দরিদ্র শ্রেনীর লোক মাদকদ্রব্য ক্রয় করতে গিয়ে ছেলে-মেয়েদেরকে সঠিক লালন পালন করতে পারে না, যে টাকা তাদের উপর খরচ করতো সে টাকা দিয়ে মাদকদ্রব্য ক্রয় করে তা সেবন করছে। আমাদের মধ্যে কেউ যদি দৈনিক একটি করে টাকা নদীতে ফেলে দেয় তাহলে মানুষ তাকে পাগল বলবে অথচ সে জায়গায় দৈনিক কত টাকা সিগারেটের মাধ্যমে আগুনে জ্বালিয়ে দিয়ে নিজের শরীরে কত ধরনের রোগ বয়ে আনছে! আমরা তা কিছু মনে করছি না।
2. সিগারেট কিনতে গিয়ে বহু টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে এবং তা পান করার ফলে শরীরে যে রোগ হচ্ছে তার চিকিৎসা করতে আরও বহুগুণ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে।
3. এ সিগারেটই অনেক সময় জামা-কাপড় পুড়ে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায় এমনকি পেট্রোল পাম্প এবং এর দ্বারা প্রিন্টিংপ্রেসে আগুন লাগারও কিছু প্রমাণ রয়েছে।
4. ফায়ার সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী ঘর-বাড়ী, দোকান-পাট, কল-কারখানা ইত্যাদিতে আগুন লাগার প্রায় ৭০% সিগারেটের আগুন থেকে হয়ে থাকে।
চতুর্থত: চারিত্রিক ক্ষতি:
1. ডক্টর জন ষ্টোন বলেন: ধূমপানের কারণে সাধারণত মেজাজ কর্কশ হয়ে থাকে, ফলে দেখতে পাবেন যারা অধিক ধূমপান করে তাদের মেজাজ কর্কশ, মুখে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ, লেনদেনে দুর্ব্যবহার এবং স্ত্রীর সাথে ঝগড়া-ঝাটি ইত্যাদিতে লিপ্ত।
2. ধূমপায়ী কখনো কখনো সামান্য একটি সিগারেট বা বিড়ির জন্য অন্যের নিকট হাত বাড়িয়ে থাকে ফলে কখনো খালি হাতে ফিরতে হয়, বিষয়টি লজ্জার হলেও সে এটি লজ্জা মনে করে না অথচ তাকে হয়তো এক লোকমা খাবারের জন্য কখনো কারো নিকট হাত বাড়াতে দেখা যায়নি যদিও ঘরে কোনো খাবার না থেকে থাকে।
3. মহিলাদের ক্ষেত্রে ধূমপানে মুখের সৌন্দর্য নষ্ট হয় এবং মুখ দুর্গন্ধ হয়।
পরিশেষে বলব: সার্বিক দিক থেকে ধূমপান আপনার জন্য ক্ষতিকর। আপনার জীবন, স্বাস্থ্য, ধন-সম্পদ সব কিছুই আপনার নিকট রাখা আল্লাহর আমানত, তা রক্ষা করা আপনার একান্ত কর্তব্য। আপনি ইচ্ছা করলে অতি সহজেই তা ত্যাগ করতে পারেন। মানুষ পারে না এমন কোনো কাজ নেই, কথায় আছে না ‘‘সাধ্য থাকলে উপায় হয়’’ আপনার সাধ্যকেও কাজে লাগিয়ে দেখুন না একবার। যদি কাজ হয় তবে আমার জন্য দো‘আ করতে ভুলবেন না কিন্তু।
(1)এই “ধূমপানের ক্ষতিসমূহ” ‘মোহাম্মদ জামীল যায়নু’—এর “ইসলামিক দিক নির্দেশনা” নামক বই থেকে কিছু কম-বেশী করে সংকলন করা হয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
১২৪৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন