বারমুডা ট্রায়াঙ্গল কি রহস্য হয়ে থাকবে ? আসুন জেনে নেই বিজ্ঞান কি বলে

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি ১৬ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৭:২৪:২৪ সন্ধ্যা



বারমুডা ট্রায়াঙ্গল হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম রহস্যময় একটি জায়গা। এটি দূর থেকে দেখতে অন্যান্য জায়গার মতোই স্বাভাবিক বলে মনে হবে। এলাকার নাম ট্রায়াঙ্গল হবার কারন হচ্ছে এটি ত্রিভুজ আকৃতির আর বর্তমানে এটি পৃথিবীর অন্যতম অভিশপ্ত এলাকা বলে খ্যাতি লাভ করেছে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের অবস্থান আটলান্টিক মহাসাগরে। এর একপাশে অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা, আরেক প্রান্তে পুয়ের্টো রিকো এবং ওপর প্রান্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বারমুডা দীপ অবস্থিত। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মোট আয়তন ১১৪ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার অর্থাৎ ৪৪ লক্ষ বর্গ মাইল। এটি পৃথিবীর ২৫-৪০ ডিগ্রি উত্তর অংশ এবং ৫৫০-৫৮ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমার মধ্যে অবস্থিত।

কি এমন আছে এখানে? কেন এই স্থানটিকে এতো অভিশপ্ত বলা হয়? এর কোন সঠিক ব্যাখ্যা এখনো বিজ্ঞান দিতে পারেনি। কিন্তু কেন? এর পেছনে বিভিন্ন কারন আর ঘটনা আছে যা বিজ্ঞানকে কে হতবাক করে দেয়। আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের কিছু অবাক করা ঘটনা।

ঘটনা ১। সালটা ছিল ১৯৪৫ সালের ডিসেম্বর মাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫টি যুদ্ধ বিমান প্রশিক্ষণ নেবার জন্য উদ্দয়ন করে। কিছুক্ষণ পরেই তারা সেই ভয়ংকর বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের কাছে চলে যায় এবং কেন্দ্রে ম্যাসেজ দেয় যে তারা সামনে আর কিছুই দেখতে পারছে না যতদূর চোখ যাচ্ছে শুধু কুয়াশা আর কুয়াশা। অদৃশ্য হবার শেষ মুহূর্তে তাদের শেষ কথা ছিল “আমাদের বাঁচাও উদ্ধার কর এখান থেকে আকাশের কুয়াশা আমাদের কোথায় জানি নিয়ে যাচ্ছে” এর পর আর তাদের কাছ কোন ধরনের ম্যাসেজ পাওয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে তাদের উদ্ধার করার জন্য একটি উদ্ধারকারী দল সেদিকে পাঠানো হয় কিন্তু তাদেরকেও আর খুজে পাওয়া যায় নি। এর পরপরই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়



ঘটনা ২। এটি ১৯৬৭ সালের মে মাসের দিকের ঘটনা। কোনকিছু না বুঝেই একটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ তার নিয়মিত টহলের জন্য বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের দিকে রওনা হয়। ঠিক একইভাবে তারা বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের ভেতরে প্রবেশ করার পর তাদের বেতার তরঙ্গ পাঠানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং হুট করে এটি অদৃশ্য হয়ে যায়। পরবর্তীতে অনেক খুজাখুজি করার পরেও তাদেরকে আর কোথাও খুজে পাওয়া যাইনি। এই ঘটনার পরেই পুরো বিশ্বের কাছে এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল হয়ে ওঠে এক অজানা আতঙ্কের নাম।



ঘটনা ৩। সালটা ঠিক মন পরছে না যতদূর মনেহয় ১৯৬৬ দিকের ঘটনা হবে হয়তো। একটি সিঙ্গেল ডেকার বিমানের যাবার কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্রর অহিও থেকে কানাডার কোন একটি অঞ্চলে। পাইলট কে তার যাত্রাপথের যে দিকনির্দেশনা দেয়া ছিল তাতে তার নিদিষ্ট গন্ত্যবে পৌছনোর সময় লাগবার কথা ছিল প্রাই ৮ ঘণ্টার মতো। কোন এক অজ্ঞাত কারনে বিমানের পাইলট এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের সীমানাতে ঢুকে পড়ে। হটাঠ করে সে খেয়াল করে যে তার বিমানের কম্পাস আর কাজ করছে না এবং তার বেতার তরঙ্গর সিগন্যাল প্রাই অকেজো হয়ে গিয়েছে। এভাবে প্রাই ৩০ মিনিট চলতে থাকে একপর্যায়ে যখন তার কম্পাস কাজ করা শুরু করে তখন তিনি খেয়াল করেন, তার যে পথ প্রাই ৮ ঘণ্টাই পারি দেবার কথা ছিল সেটি তিনি এই ৩০ মিনিতে পাড়ি দিয়ে ফেলছেন অথচ তার বিমানের ফুয়েলও ঠিক একই রকম দেখাচ্ছে। তার যাত্রাপথের জন্য যতটুকু ফুয়েল দরকার ছিল সেটি প্রাই একই রকম আছে। এই ঘটনা উপলব্ধি করার পর তিনি হতবাক হয়ে যান। তিনি যখন বিমানে ছিলেন তখন খেয়াল করেন কোন এক চুম্বকীয় শক্তি তাকে রকেটের বেগে সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে আর তার বিমানের পাখাগুলো কেমন যেন গুছিয়ে যাচ্ছে সে এটি তার দেখার ভুল মনে করে। কিন্তু না এটি তার দেখার ভুল ছিলোনা। পরবর্তীতে সে এই ঘটনাটি তার কর্তিপক্ষকে জানায়। তারা এরপর এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা শুরু করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল এই ঘটনারও সঠিক ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারে না। তদন্ত শেষ না হয়েই থেমে যাই।

এমন অনেক অনেক ঘটনা আছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে কেন্দ্র করে। এই এলাকার একটি মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর সীমানার ভেতরে যখনি কোন জাহাজ বা বিমান এসে যাবে তখন তার বেতার তরঙ্গ পাঠানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে আর পরবর্তীতে ভূমির সাথে যোগাযোগ করতে না পারায় সেটি অদৃশ্য হয়ে যায়। তবে এমনটি সবসময় হয়না। এখন পর্যন্ত মার্কিন গবেষকরা তাদের সাধ্য অনুযায়ী গবেষণা চালিয়ে কোন কূল কিনারা করতে পারেনি। তারা মনে করে শুধুমাত্র এটি একমাত্র কারন হতে পারে না। এর পেছনে আছে আরও অনেক রহস্য। তবে কি সে রহস্য!তারা মনে করছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের ভেতরের আবহাওয়ার অবস্থা খুব খারাপ। এখানে সব সময় ঝড় বৃষ্টি হতে থাকে যার ফলে এই এলাকার ভেতরে যখন কোন জাহাজ প্রবেশ করে সেটি এই তীব্র ঝরের কবলে পড়ে হারিয়ে যায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা এই যুক্তিটি প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে যদি কোন জাহাজ ঝরের কবলে পড়ে হারিয়ে যায় তবে তার ধ্বংসাবশেস তো খুজে পাওয়ার কথা। কথাটা আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে এখনো পর্যন্ত হারিয়ে যাওয়া কোন জাহাজেরই ধ্বংসাবশেস খুজে পাওয়া যাইনি।

ধংশাবশেষ খুজে না পাবার ব্যপারে বিজ্ঞানীরা বলেন, বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে সমুদ্রের গভীরতা এতোটাই বেশি যে এখানে যদি কোন বিমান বা জাহাজ হারিয়ে যায় বা বিধ্বস্ত হয় তবে তার ধংশাবশেষ খুজে পাওয়া খুবই অসাধ্য একটি ব্যাপার। বর্তমানে আধুনিক প্রজুক্তি যেমন স্যাটেলাইট ব্যবহার করে যদি এর চিহ্ন খুজে পাওয়া যায় তারপরেও সেটি উদ্ধার করা প্রাই অসম্ভব একটি ব্যাপার।

ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করলে আমরা যেটি বুঝতে পারি সেটি হচ্ছে এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞান এর কোন সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি আর সেজন্য বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের আসল রহস্য এখনো রহস্য হয়ে আছে। তবে আমরা আশাবাদি যে বিজ্ঞান যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে করে হয়তো আর বেশিদিন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে না।

বিষয়: বিবিধ

২৯০২ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

357048
১৬ জানুয়ারি ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৪৬
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ পিলাচ
১৬ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:১২
296313
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ
357053
১৬ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:০২
শেখের পোলা লিখেছেন : এটা আল্লাহর নিদর্শণের একটিও হতে পারে৷ আল্লাহই এক দিন এর রহস্য উন্মোচন করে তার ক্ষমতার কথা মানুষকে মনে করিয়ে দেবেন৷ ধন্যবাদ৷
১৬ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:১৩
296314
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : জি বিষয়টা এমনও হতে পারে
ধন্যবাদ
357077
১৭ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০১:২৯
দ্য স্লেভ লিখেছেন : সেখানে ৩টি ভিন্ন স্রোত একত্রে মিলিত হয়েছে। আর পুরো এলাকার যে আয়তন তাতে ৮০টি বাংলাদেশ ঢোকানো যাবে। পুরো এলাকাটিই বিপজ্জনক নয়। বরং স্রোতের কেন্দ্রীয় অংশটা ভয়াবহ। সেটার পরিমানও বিশাল। আর সেখানে জাহাজ ঢুকলে বিপদে পড়া সম্ভাবনাই বেশী। ওটা হারিয়ে গেলে সাগরের গভীর তলদেশে চলে যায়। আর সেখানে ওটা খুজে পাওয়া সম্ভব নয়। জাহাজ ওই অংশটি এড়িয়ে চলাচল করে। স্থানটি মোটামটি চিহ্নিত। কখনও কখনও পৃথিবীর চম্বুকয়ি শক্তি সেখানে উল্টাপাল্টা হয়। তবে বিষয়টাকে যতটা রহস্যময় হিসেবে বিশ্বাস করা হয় ততটা ঠিক নয়। কিছু সত্য আর কিছু মিথ্যা কাহিনীও তৈরী হয়েছে এটার উপর
১৭ জানুয়ারি ২০১৬ সকাল ১০:৫৩
296334
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : জি :
হয়তোবা যেমন বলেছেন তেমন কিছু ও হতে পারে , তবে প্রাকৃতিক বলতে কিছু একটা থাকা স্বাভাবিক তাই নয় কি ?
১৭ জানুয়ারি ২০১৬ সকাল ১১:০৭
296336
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জি প্রাকৃতিকভাবে ওইখানে ওরকম। তিন স্রোতের মিলনে নিম্ন পাকের সৃষ্টি হয়েছে। এভাড়া চুম্বকীয় কিছু বিষয় রয়েছে যা কখনও সাধারন হিসাব গড়বড় করে দেয়।
357096
১৭ জানুয়ারি ২০১৬ দুপুর ১২:৫৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এর মত একাধিক এলাকা আছে। এমনকি আমাদের সেন্টার্টিন দ্বিপ এর দক্ষিনেও এমন জায়গা আছে। কিছুদিন অাগে হারিয়ে যাওয়া মালয়শিয় প্লেনটির বিষয়েও এখনও চুড়ান্ত কিছু পাওয়া যায়নি।
১৭ জানুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০২:০০
296344
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : মনে হয় তেমনই হবে
ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File