Rose Good Luck মানুষের ভিতরের অমানুষ Rose Good Luck

লিখেছেন লিখেছেন মামুন ২৪ অক্টোবর, ২০১৪, ০২:০১:২০ দুপুর



Good Luck দিনগুলো কেটে যায় হলুদ পাতার মত । বৈচিত্র্যহীন... বড্ড রসহীন ভাবে।

লায়লার কাছে মনে হয় কেন বেঁচে আছে সে? জীবন এতো জটিল কেন? নিজের ফ্ল্যাটের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে সে। মেয়েরা যার যার রুমে। মিজান জুমুয়ার নামাজ পড়তে গেছে।

একটু আগের ওর জ্বালা ধরানো কথাগুলো এখনো হৃদয়ে তুষের আগুন হয়ে ধিকি ধিকি জ্বলছে। মিজান মানুষের ভিতরে এক অন্য মানুষ। ওকে কি অমানুষ বলা যায়?

ভাবে লায়লা।

কেমন এক মুখোশের আড়ালে থাকে মিজান। আশেপাশের সকলের সামনে কতটা পত্নীবাৎসল ভাবটা খুব যত্ন করে ধরে রাখে। অফিস থেকে ফিরে মেয়েদেরকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে বের হয়। বন্ধের দিনগুলোতে ওদের তিনজনকে সাথে নিয়ে বাইরে খেতে যায়। এলাকায় সবাই মিজানকে একজন সজ্জন হিসাবেই জানে।

কিন্তু ওর আসল রুপ একমাত্র লায়লাই জানে। নিজের বেডরুমে মিজানের আসল রুপ বের হয়। ছোট খাট ভুল ত্রুটি কোনো ভাবেই সে মেনে নেয় না। পরিবারে টুকটাক ভুল মানুষমাত্রই করে থাকে। কিন্তু উঠতে বসতে গালাগালি, মারধোর এতো নিত্যকার ব্যাপার।

অথচ বিয়ের প্রথমদিকে এবং বিয়ের আগে ওকে যেভাবে দেখেছিল, তখন লায়লা এর কিছুই বুঝতে পারেনি। তখন ভালোবাসাময় প্রহরগুলো কেটে যেত নিরবচ্ছিন্ন। মিজানের ভিতরের অন্য মানুষটা তখন কোনোভাবেই লায়লার সামনে দেখে দেয় নাই।

সেই সময়ে মিজানের আবৃত্তি করা কবিতা কতটা প্রগলভ করে তুলত লায়লাকে!

মহাদেব সাহার "তোমাকে ছাড়া" কবিতাটির কথা কেন জানি এই মুহুর্তে মনে পড়ে গেল-

" তুমি না থাকলে বড়ো দুঃসময় যায়, সর্বত্র বন্ধুবিহীনভাবে

বাস করি

এই ঢাকা শহর ভীষণ রুক্ষ মনে হয়

কাউকে ডাকলে সাড়া দেয় না, সবাই আমার বিরুদ্ধাচরণ করে

তুমি না থাকলে এই বাড়িঘর শহরের লোকজন

সম্পূর্ণ আমার অপরিচিত মনে হয়

নিজেকেই নিজের অচেনা লাগে

মনে হয় দীর্ঘ দিন থেকে আমি যেন কোনো অজ্ঞাত অসুখে ভুগছি

তুমি না থাকলে বাস্তবিক আমি বড়ো কষ্টে পড়ি

বড়োই কষ্ট হয়।" - কিন্তু আজ সেই 'তুমি' থেকেও লায়লা বাস্তবিক আরো বেশী কষ্টে রয়েছে।

নারী হওয়া কি এই দেশে পাপ?

যে নারী, পুরুষের প্রতিটি মুহুর্তকে স্বপ্নীল ভালোবাসায় পরিপুর্ণ করে দেবার জন্য বিভোর থাকে, সেই পুরুষ কেন তার প্রতি নিজের স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের যথেচ্ছ প্রকাশ ঘটায়?

গ্রীলের ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে পাশের ফ্ল্যাটের মনির সাহেবকে আসতে দেখে চিন্তার গভীরতাকে ঠেলে বাস্তবে ফিরে আসে। এই লোকটিকে এলাকায় ঠিক সামাজিক বলা যায় না। হাজার মানুষের ভিতর থেকেও তাকে অতি সাধারণ একজন মনে হওয়াতে তাকে দেখাই যায় না। বাজারের ব্যাগ হাতে আসছেন।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবে লায়লা, মিজান শেষ কবে এভাবে বাজার নিয়ে এসেছে! বাজার যদিও কাছে , কিন্তু সে সব লায়লাকেই করতে হয়। বাসার কাছে থাকাতে লায়লাও সেভাবে কখনো ভাবে না। মিজান র‍্যাব এ কর্মরত। একজন সার্জেন্ট সে এই বাহিনীর। অফিসের কাজ ছাড়া আর লায়লাকে কষ্ট দেয়া ছাড়া ওর আর কোনো কাজই যেন নেই।

মনির সাহেব তার পরিবারের প্রতি খুবই ভালো ব্যবহার করেন। পাশের ফ্ল্যাটে একাকী থাকার সময়ে লায়লা পাশের ভাবীর কাছে সময় কাটাতে যায়। নিজের দুঃখ কষ্টকে যদিও শেয়ার করেনা, কারণ নিজের স্বামীর কথা অন্যকে শেয়ার করাটাও অন্যায়। এটাও এক ধরণের পর্দা মহিলাদের, যা সকলের সামনে তুলে ধরা যায় না। ওই ফ্ল্যাটে শালীনতার ভিতরে থেকেই লায়লা দেখেছে, মনির সাহেব তার বন্ধের দিনগুলোতে স্ত্রীকে কতটা সাহায্য করেন। রান্নার কাজে সাহায্য করেন, সব্জি নিজে কেটে দেন, মাছ কুটেন। অনেক সময় ময়লা কাপড়চোপড় ধুয়ে দেন। নিজের কাপড়চোপড় সবসময় অবশ্য তিনি নিজেই ধুয়ে থাকেন।

আর তার ব্যবহার খুবই অমায়িক। তিনি ভিতরে যেমন, বাহিরেও তেমন। সমাজে যেমন, বেডরুমেও তেমন। কোনো ধরণের মুখোশের তার প্রয়োজন পড়ে না। অথচ তাকে সবাই মিনমিনে স্বভাবের পুরুষ বলে থাকেন। তার সাথে অন্যরা মিশে না। আড়ালে ওনাকে বউয়ের কথায় উঠবস করা এক ভঙ্গুর পুরুষ বলে থাকে পরিচিত জনেরা। কিন্তু তাতে মনির সাহেব কিছু মনে করেন না।

এলাকায় মিজানের বন্ধু এবং শুভানুধ্যায়ীর সংখ্যা মনির সাহেবের থেকে বেশী।

আমাদের বর্তমান সমাজেও কি মিজানদের জন্য এই সংখ্যা ক্রমশঃ বেড়ে চলছে না?

নিজের ভাবনা চিন্তার ভিতরে ক্লেদাক্ত বর্তমানকে ঘিরে লায়লা নামের এক নারী নিজের অন্তঃপুরে প্রবেশ করে। নামাজ শেষ হয়েছে। মিজানের আসার সময় হল। দুপুরের খাবার পরিবেশন করতে হবে। তরকারিতে লবণ কি ঠিকমত হয়েছে কিনা আবার দেখতে হবে... ...। Good Luck

----------------------------------------------------------

Rose Good Luckআমাদের আশে পাশে লায়লাদেরকে নিরন্তর এই মানসিক যাতনা সয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। যদিও আমরা এই দেশে ইসলাম ধর্মাবলম্বী বেশী। মিজানের মত পুরুষেরা নিজ ধর্মের অন্যান্য বিধান সঠিকভাবে পালন করলেও, নিজের অন্তঃপুরে এসেই কেন জানি ধর্মের শিক্ষাটা ভুলে যায়। মানুষের আড়ালে থাকা অমানুষ সত্ত্বাটা প্রকট হয়ে উঠে। তাইতো মিজানেরা পরিবারের গন্ডীতে থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রেই লায়লাদেরকে টর্চার করে যায়। কিছুটা ইচ্ছাকৃত ভাবে, কিছুটা বোঝার ভুলে আর কিছুটা নিজেদের জন্মলগ্ন থেকে সমাজে চলে আসা সিস্টেমে নারীদেরকে এরকম অবস্থায় পতিত দেখে দেখে।

তবে ইসলাম ধর্মে নারীদেরকে যতটা মূল্যায়ন করা হয়েছে, অন্য কোনো ধর্মে তততা করা হয় নাই। আমার আলোচনা সেই তুলনামূলক দিকটিতে বিস্তৃত করার কোনো ইচ্ছেই নেই। আমাদের মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আআমদের জন্য উত্তম আদর্শের প্রতীক। তিনি নিজে তার বিবাহিত জীবনেও দেখিয়ে গিয়েছেন কিভাবে নারী এবং স্ত্রীদের সাথে ব্যবহার করতে হবে। আমি পবিত্র হাদীসের দু'একটি রেফারেন্স এই ক্ষেত্রে তুলে ধরাটা যুক্তিযুক্ত মনে করছিঃ-

হাদিস-১

আবুহুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত:

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ঈমানওয়ালাদের মধ্যে পরিপূর্ণ মুমিন সেই ব্যক্তি, যার আচার-আচরণ উত্তম। আর তোমাদের মাঝে তারাই উত্তম যারা আচার-আচরণে তাদের স্ত্রীদের কাছে উত্তম। [তিরমিযি, হাদিস নং ১০৭৯]

হাদিস-২

আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত:

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মুমিন মু’মিনা(স্ত্রী)র প্রতি বিদ্বেষ রাখবে না। যদি তার একটি অভ্যাস অপছন্দনীয় হয় তবে আরেকটি অভ্যাস তো পছন্দনীয় হবে। [মুসলিম হাদিস নং- ১৪৬৯, ২৬৭২]

হাদিস-৩

আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত:

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ঈমানওয়ালাদের মধ্যে পরিপূর্ণ মুমিন সেই ব্যক্তি যার আচার-আচরণ উত্তম এবং নিজ পরিবারের জন্য অনুগ্রহশীল। [তিরমিযি, হাদিস নং- ২৫৫৫]

তাহলে উপরের হাদীস অনুযায়ী এটাই প্রতীয়মান যে, ইসলামের শিক্ষা হলঃ-

১. মু’মিন পুরুষ তার মু’মিনা স্ত্রীর প্রতি বিদ্বেষ রাখতে পারবে না।

২. সদাচারী এবং স্ত্রী-পরিবারের প্রতি কোমল, নম্র, অনুগ্রহশীল হওয়া ঈমানের পূর্ণতার শর্ত।

৩. কোন পুরুষ যদি উত্তম হতে চায় তাকে অবশ্যই তার স্ত্রীর কাছে উত্তম হতে হবে।

আমরা মুসলমান। আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে আমাদের ঈমান- যে ঈমানের জন্য আমরা নিজেদের প্রাণ বিসর্জন করতেও কুন্ঠিত হই না- সেই ঈমানের পরিপূর্ণতার জন্য স্ত্রীর সাথে সদাচারী, নমনীয় এবং অনুগ্রহশীল হওয়া ছাড়া উপায় নেই। য়ার নিজেকে একজন আদর্শ মুসলিম তখনই বলতে পারব যখন নিজের স্ত্রীর সাথে আমার আচার-আচরণ উত্তম হবে।

আল্লাহপাক আমাদের সকলকে উপরের হাদীস অনুযায়ী জীবন গড়ার তৌফিক দান করুন-আমীন। Rose Good Luck

বিষয়: বিবিধ

১৬০৬ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

277802
২৪ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০২:১৫
কাহাফ লিখেছেন :
মনিরের আদলে গড়া আমাদের প্রিয় মামুন ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধাময় ভালবাস বেড়ে বেড়েই যাচ্ছে!
আত্মার উৎকর্ষতা ফিরিয়ে আনতে আমাদের- 'নান্দনিক লিখনী'র মাধ্যমে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছেন তিনিঁ।
আল্লাহ তাঁকে বরকতময় সুদীর্ঘায়ু দান করুন,আমিন।
২৪ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০২:৩৩
221699
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ কাহাফ ভাই।
তবে আমি মনিরের মত হতে পারি নাই। ইনশা আল্লাহ হবার ইচ্ছেটা পোষণ করছি। আপনার সুন্দর অনুভূতি রেখে যাবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
277818
২৪ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:৩১
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : সুন্দর বলেছেন। স্বামী স্ত্রীর মাঝে সম্পর্ক মধুর না হলে দুনিয়া ও আখিরাতে সব জায়গায় অশান্তি। তাই আসুন স্ত্রীদের বেশী বেশী ভালোবাসি।

লেখার জন্য Rose Rose
২৪ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৭
221705
মামুন লিখেছেন : সহমত আপনার সাথে।
সুন্দর অনুভূতি রেখে যাবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
277864
২৪ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:২৭
মোস্তফা সোহলে লিখেছেন : এখনও বিয়ে করিনি তবে এমন চিত্র অনেক দেখেছি
২৪ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৪
221739
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ। আপনার যুগল জীবন ইনশা আল্লাহ অনেক সুখের হোক সেই কামনাই করছি। জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
278176
২৬ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৪:৫৭
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : মিজানের মত এমন মুখোশের আড়ালে থাকা ব্যক্তির সংখ্যা কম নয়। সংসার টিকিয়ে রাখতে লায়লাদের মেনে নিতে হয়। কোরআন হাদিসের আলোকের বাস্তব ঘটনাগুলোকে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া। Good Luck Rose
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:০৬
221982
মামুন লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
ভালোলাগার অনুভূতি রেখে গেলেন, সেজন্য অনেক শুভেচ্ছা।Good Luck Good Luck
278207
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:০০
নাছির আলী লিখেছেন : মামুন ভাই আপনার লেখা পড়ে অনেক ভাল লাগে।

আপনার সুভকামনা করি।
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:০৭
221983
মামুন লিখেছেন : ভালোলাগার অনুভূতি রেখে যাবার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File