মেকুর (ধারাবাহিক গল্পঃ পর্ব-৫)
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ০৩ অক্টোবর, ২০১৪, ১২:২৭:৫৯ দুপুর
আমার জীবন।সেই একই ছুটে চলা।
সকালের নাস্তা পর্ব সেরে ব্যাগ কাঁধে বের হওয়া।
ভাঙা সুরকি বিছানো রাস্তা বৃষ্টিতে কাদা হয়ে আছে।
জঘন্য লাগে হেটে যেতে। মসজিদের পাশ দিয়ে যেতেই হাফেজ সাহেবের সুললিত কন্ঠে উচ্চস্বরে কোরআন তেলাওয়াত। যাতে ভুলে না যান তার জন্য এই চর্চা। কম্যুউনিটি মসজিদকে পাশ কাটিয়ে প্রান্তিক গেইটের দিকে যাচ্ছি। পথে আমার সাথে আরো সেলাই দিদিমনি ও সেলাই বন্ধুরা খাবারের বাটি ক্ষণিকের যাত্রী।এদের কাঊকে আমি চিনি না। চলার পথে একটু দেখা। একটু হাসি। তাতেই না বলা হাজার কথা যেন প্রকাশ পায়।
একজন আর একজনকে পাশ কাটিয়ে যাই। কোন কোন সেলাই দিদিমনিদের এক ঝলক দেখায় মনের ভিতর কালো সাপ জেগে উঠে। ক্ষণিকের জন্য হলেও এটা যে পাপ তা বুঝি। কিন্তু একে ফিরানোর মতো সাধক এখনো হতে পারি নাই।
কিছু সেলাই বন্ধুদের উপর মনে মনে প্রচণ্ড রাগ হই। ওরা চলার পথে এখানে সেখানে থুথু ফেলে রোগের বীজ উপহার দিয়ে যায়। পরক্ষণেই আমার কুচকানো ভ্রু সমান হয় এক শিশুর স্কুলে যাবার পথে দুরন্তপনা দেখে। আমি ও ফিরে যাই আমার সেই সময়ে।
কসাইর দোকানে দুটো গরু বাঁধা। কিছুক্ষণ পরেই হয়ত জবাই করা হবে। ওদের নির্লিপ্ত চাহনি আমার মনে কোনো ভাবের উদ্রেক করে না। মাছ বাজারে কিচিরমিচির। সবাই দ্রুত কিনে ফিরতে চায়।
কোথায় ফিরবে? ফিরেই বা লাভ কি?
সেই তো আবার বের হতে হবে। আবার ফিরে আসা। এভাবে যাওয়া -আসায় একদিন ' পার্মানেন্ট চলে যাওয়া'। হৃদয়ে একটু কি দুঃখ বোধ হলো?
ফুটপাথে ঝাকায় লাউশাক নিয়ে বসেছে এক বুড়ো। তার ভিতর থেকে উকি দিচ্ছে সাদা লাউফুল। একটা ছবি তুলতে মন চাইলেও সময়ের বড় অভাব। পাশে এক লোক কচুর শাক নিয়ে বসেছে। প্রচুর আয়রণ এই শাকে।
আখ বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। আর সবাই কিনে খেতে খেতে চলেছে। চাবানো আখের খোসা ফেলে রাস্তা একাকার। মাছি আর পিপড়ার মহাউৎসব।
শব্জিওয়ালা তাদের দোকানের ঝাঁপি অনেক আগেই খুলেছে। এখন চলছে পানি ছিটানোর প্রতিযোগীতা। টু ইন ওইয়ান। ফ্রেশ থাকলো আবার ওজনেও বাড়ল।
চা এর দোকানে অফিসগামী ও খুচরা রাজনীতির আলাপকারীদের টিভিকে ঘিরে জটলা। চা-সিগারেটের সাথে সমানতালে তাদের মুখে চলছে রাজনীতিবিদদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার।
এভাবে চলছি প্রতিদিন।
সেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে এই নিরন্তর ছুটে চলা।
এই চলা ই জীবন।
'অন্তবিহীন পথে চলাই জীবন
শুধু জীবনের কথা বলাই জীবন'
তাই জীবনের কথা বলে যাই মনে মনে হেঁটে হেঁটে।
সেদি কথা হচ্ছিল আমার দেখা একজন ভালো মেকুর ফেবকের সাথে।ফেবক হল ফেসবুক লেখক। সংক্ষেপে ;ফেবক'।
ওনার লেখা আমার খুব ভালো লাগে। আমি খুব মন দিয়ে ওনার লেখা পড়ি। মাঝে মাঝে কমেন্ট করি। তবে লেখায় আমি এতোটা মুগ্ধ হই, যে কমেন্ট করার মত আসলে কিছু থাকেও না।
একজন ফেবকের আসল গুন হল 'হাতে সময় খুব কম' এমন পাঠকদেরকে তার লেখার ভিতরে টেনে নিয়ে আসা। কারণ সে যদি জাস্ট চোখ বুলিয়ে গেল, লেখার আসল উদ্দেশ্যই তো পুরণ হল না। একটু উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা খোলাসা হবে-
একজন লিখল-
''... একটা মাঠের পাশ দিয়ে গ্রামে যেতে হয়। বছরে একবার তো বাড়ীতে আসাই হয়। দু'পাশে ধানখেত আর মাঝের মেঠো পথটি আমার খুব পরিচিত। হাটতে থাকি যতক্ষণে না বাড়িতে পৌঁছাই। ...'
এই লেখাটায় পাঠক ততোটা মজা পাবে না। একজন মানুষ ধান খেতকে দুপাশে রেখে মাটির পথ ধরে তার গ্রামের বাড়ী ফিরছে- এতে নতুনত্ত কি আছে? ধুর বলে অন্য স্ট্যাটাসে চোখ বুলাবে। করুণা করে হয়তো একটা লাইক দিয়ে যাবে।তবে লাইক দেয়াটা তেমন কিছু না।
অন্য একজন ফেবক একই লেখাটাকে লিখল এভাবে-
'... প্রতিবারই দু'পাশে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেতের ভিতরের মেঠো পথটাতে ঢোকার সময় একটু থামি।পা দুটো কেন জানি থেমে যায়।আমার গ্রাম... আমার ভিতরের আমি এই মাটির গুণে আজকের আমিতে পরিণত হয়েছি। কেমন মায়ের ঘ্রাণ পাচ্ছি এখান থেকেই। যেখানটায় কিছু পাকা ধান বাতাসের ঝাপ্টায় মাটির সাথে মিশে আছে, তার অদুরেই তিনটি গরু। সাদাটা হলুদটার সাথে শিং দিয়ে শক্তি পরীক্ষা করছে। কালোটা বিরক্ত হয়ে পাকা ধান খাচ্ছে।দু'জন ধান কাটার কামলা মাথায় কাটা ধান নিয়ে যাবার পথে ধান খাওয়া গরুটার কাজ দেখে পাশের খালি মাথার জনকে কিছু বলতেই, সে এক চীৎকার দিলে কালোটা ধান খাওয়া বাদ দিয়ে একটু সরে যায়।
পিছনের সারি বাধা গাছ-পালার মাথার উপরে নীল আকাশ। সাদা তুলার মত মেঘের সাথে কিছু কালো মেঘ যেন গ্রামটাকে ভালোবেসে ছায়া দিয়ে রাখছে।
বড় সহজ-সরল যে এই মাটির মানুষগুলি!
অদূড়ে একটা বাড়ী। একজন লোক লাঠির দু'পাশে বাঁধা ধানের আটি নিয়ে কিছু্টা বাঁকা হয়ে আসছে। বিড়ি ফুঁকছে আর কাশছে। কাশির দমকে দমকে ব্যাথায় নীল হয়ে যাচ্ছে। তাকছও কষে একটান মারছে বিড়িতে।
কাঁধের ব্যাগটাকে আরো একটু রিল্যাক্স করে নিলাম।
মায়ের কাছে ছাড়া আর রিল্যাক্স কোথায়?" - এখন এই লিখাটি কি পাঠককে চুম্বকের মত ধরে রাখবে না?
প্রান্তিকের সাম্নের বটগাছটির নিচে চলে এলাম। মাথায় এই লিখাটি নিয়ে ভাবনা তখনো ডালপালা গজাচ্ছে। ধুত্তুরি বলে যায়গায় যায়গায় ভাঙ্গা সিমেন্টের বেদিটিতে আরো ছেলেমেয়েদের মাঝে বসলাম। কয়েকজন আমাকে দেখে কেন জানি বিরক্ত হল। তাদের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলাম। হয়ত ভেংচির মত লাগলো। এরা মুখ ফিরিয়ে নিলো। দ্বিতীয়বার আর আমার দিকে তাকালোই না। যেন আমি সেখানে নেই। আসলেও কি আমি কোথায়ও রয়েছি? কারো অনুভূতিতে বা জীবনে?
আজ কি ভাবনায় পেয়ে বসল নাকি আমাকে? আবার ভাবনার গভীরে চলে গেলাম।
কেন বেঁচে থাকতে ইচ্ছে হয়?
ছোট ছোট টুকরো কিছু মুহুর্ত... মনের ভিতরে ইচ্ছার কিছু আলোকতরঙ্গের নেচে উঠা। এর পর বুদ্ধির সিড়ি বেয়ে নেমে আসা
কিংবা উঠে আসা।এভাবে পৌনঃপুনিক ঘটে চলা।
কেন বেঁচে আছি?
বৃদ্ধ বাবা-মা'র জন্য? ওনারা তো নেই।
মেকুরানী ও মেকুর কন্যর জন্য? তারা তো সুদূর কানাডায়।
বন্ধুদের জন্য নাকি নিজের জন্য?
কিছু বিচ্ছন্ন টুকরো টুকরো মুহুর্তগুলোর জন্য? নাকি রক্তের ভিতর ইলেকট্রনের নাচন অনুভব করার জন্য?
এই মেকুর নিজেই কনফিউজড।
আমি সব সময়ই বন্ধুদেরকে নিয়ে আনন্দে কাটাতে চেয়েছি।
সেই আমার বুঝতে পারার বয়স থেকেই।অনেকের কিছু কিছু রাশি ভালো থাকে।কারো কন্যা রাশির জন্য মেয়েরা তার জন্য উন্মুখ থাকে। কারো মীন রাশি মাছ কে বড়শীতে টেনে নিয়ে আসে। এভাবে এক একজন এক এক রাশির গুণগ্রাহী হয়-যারা এটা বিশ্বাস করে।
আমার বন্ধু রাশি!
হ্যা, এটা একটা মেকুরিয়ো রাশি। এ জন্যই আমি বন্ধুদের দেখলে পাগল হই। তারা হয় কিনা জানি না। তবে দু'পক্ষ পাগল হলে তো ভীষণ সমস্যা।এ জন্য পাগলামির ভাগটা আমার ঘাড়েই থাকে কেন জানি।
তবে অধিকাংশ মানুষই আমাকে কেন জানি জোকার মনে করে।
একটা সময় ছিলো আমার ইমেজ এমন হয়ে গেলো, আমি একজন জোকার- সকলকে হাসানোই আমার কাজ। আমার ঘর-বাহির-এলাকা-চাকুরী ক্ষেত্র... বিয়ের পরে আত্মীয়দের নিকট... সব যায়গায়ই আমি একজন জোকার- না হয় খুব মজার একজন মানুষ। অফিসে সোজা (অন্য অর্থে ল্যাবা ) বস... কিংবা বলদ সহকর্মী। আমি এইসব যায়গায় সিরিয়াস হলেও সবাই হেসেছে। মজা পেয়েছে।
এ যেন জনি লিভার খুব সিরিয়াস চরিত্রে (রাশভারী প্রফেসর কিংবা ফিল্মের ভাইটাল রোল) অভিনয় করে যাচ্ছে, আর দর্শকেরা হেসেই খুন। যেখানে কান্না বা দুঃখ প্রকাশ পাওয়া উচিত, শুধুমাত্র জনির ইমেজের কারোণে পুরো চরিত্রটি মাঠে মারা যায়।
কিন্ত আমি সবসময় একজন ভালো বন্ধু হতে চেয়েছি। বরগুনা-খুলনা-পিরোজপুর-চট্টগ্রাম-ঢাকা এ সব যায়গায় আমার সার্কেল আছে। কিন্তু একজন মানুষ হয়ে উঠতে পারি নি মনে হয় আজো কোনো যায়গায়।
একটা হিন্দী ফিল্ম দেখেছিলাম। রাজকাপুরের। মেরা নাম জোকার। দুটি পর্ব ছিল। প্রায় ৫ ঘন্টার সিনেমা। আমি তখন এসএসসি পাস করেছি। তখনি দেখি। রাজকাপুর একে একে অনেককে ভালোবাসে। ওর মহিলা টীচার থেকে শুরু করে আরো কয়েকজন মেয়ে ওর জীবনে আসে। তবে রাজকাপুর একজন জোকার ছিলো। তাই ওর ভালোবাসা শেষ পর্যন্ত কোনো মেয়েই বুঝতে পারে না।... অনেক বছর পরে... সেই জোকার এখন অনেক বিখ্যাত জোকার। ফেলে আসা জীবনের প্রেমিকাদেরকে সে তার লাস্ট স্টেজ শোতে প্লেন ফেয়ার দিয়ে ইনভাইটেসন কার্ড পাঠায়।
দ্য ফাইনাল কাউন্টডাউন... একটা বেলুনের হার্ট নিয়ে স্টেজে জোকারের আগমন। সকল নায়িকারা তাদের হাজবেন্ডদেরকে নিয়ে সামনের সারিতে বসে আছে। গান শুরু হয়... "জিনা এহা, মারনা এহা- ইসকে সেবা জানা কাহা" - এক কঠীন সুর ও নস্টালজিক গান। এই গানের ভিতরেই এক জোকারের সারা জীবনের কষ্টকে তুলে ধরা হয়। আমার মনে হয়েছে পুরো সিনেমাটিকে না বানিয়ে শুধু যদি স্টেজের এই শোটিকও বানানো হত, তবেও দর্শকেরা সব বুঝতে পারতো... আবেদন এবং আবহ একই থাকতো।
আমি ওই প্রথম তারুন্যের বয়সে এই সিনেমাটিকে দেখে আবেগে আপ্লুত হতাম... রাজকাপুরের কষ্টে নিজে বিদীর্ণ হতাম। কত কেঁদেছি নিজের অজান্তে... সজ্ঞানে। এর পরে কিভাবে যেন নিজেকে জোকারের যায়গায় দেখতে পাই।
আমি ও তো একজন মানুষ!
একজন জোকার মানুষ!
একজন জোকার...
আমার লাল বউ এর কথা মনে পড়ে!
বিয়ের পর মেকুরাণীকে এই নামে ডাকতাম।
লাল বউ এখনো লাল আছে। কিন্তু মাঝে বয়ে গেছে অনেক সময়। জীবনের চাপে পড়ে ওর এই মেকুরকে সে যদিও ছেরে গেছে, তবে এখন কি ভাবে দেখে কে জানে? তবে প্রবাসে বসে আমার এই নির্বাসন কালে ওর হৃদয়ে এখনো কি চকিতে মোবাইলে ফোন করে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে-' কেমন আছ?' এ টুকুও যদি ওর জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হত!! তবে আমার হৃদয়ের ভিতরে আজো এই সংসার জীবনের কত ঘাত-প্রতিঘাতের পরেও ভালোলাগার ফল্গুধারা বইছে। কিন্তু ওইটুকুই। আর কেন জানি আগাতে পারি না। ঘর-সংসার-চাকুরী কি মানুষকে পাথরের প্রাণে পরিণত করে?
আমি ঠিক বুঝি না।
জোকার বলেই হয়তো বুঝি না।
আর লাল বউ জোকার হারানোর কষ্টে মনে হয় বোঝে না।
আমার সামনে এক বিশাল বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।
কিন্তু কাউকে শেয়ার করবো সে পথ ও নাই। এটা নিজেকে কুরে কুরে খাবে অহর্নিশি...
তারপর ও একজন জোকার হয়ে এই রঙ্গমঞ্চে আমি অভিনয় করে যাবো। বেলুনের হৃদয় নিয়ে... মুখে মুখোশের রঙ মাখা সং... একজন জোকার।
একজন পাপা!
একজন 'কেমন আছ' বলার সোজা মানুষ
একজন ল্যাবা বন্ধু
একজন বড় ভাইয়া...
কিন্ত আব্বা-আম্মা ছাড়া আর কারো কাছে
একজন মানুষ না!
পাশের ছেলেদের একজন সহপাঠিনীকে গান শোনাচ্ছে-
'এই একেলা জীবন
ভালো লাগে না আমার,
বিষন্ন দিনের শেষে
বিষন্ন রাতের শেষে...'- আর্কের টুলুর গান। (এই দূর পরবাসে)
নিজের মনের অবস্থা দেখে চমকে উঠি।
আমার কাছে কেন জীবনটা এমন একেলা মনে হয়? এইতো, একটু আগে হলের ছোট ভাইদের কাছ থেকে ফুর্তি করে এলাম। মন তবু কেন খারাপ হয়ে যাচ্ছে? কেন দিন-রাত বিষন্ন মনে হবে?
আগে ও দেখেছি, অনেক আনন্দের ভিতর থেকেও হঠাৎ হঠাৎ মন আনন্দ থেকে পালাই পালাই করে।
খুব কাছের বন্ধুকেও জিজ্ঞেস করে দেখেছি।
অভিজ্ঞতা থেকেও নিজে বুঝেছি।
অনেক ক্ষমতাবান কে পর্যবেক্ষন করেও জেনেছি।
মন- সবার ই পালাই পালাই করে। কোন কারণ ছাড়াই।এটা কেন হয়?
তৃপ্তি করে নিজের প্রিয় খাবার ভরপেটের পরে মশলা দিয়ে পান- এরপর নিজের বিছানায় প্রিয় লেখকের বই হাতে সাথে প্রিয় শিল্পীর গান!
এর পরে এক দীর্ঘ Sound Sleep দিয়ে উঠেও কেন মরে যেতে ইচ্ছে করে?
কেন মনে হয় কি যেনো ফেলে এসেছি?
কিসের যেন কমতি?
কোথায় যেন যাওয়া হল না?
তোমাদের হয় কিনা জানি না। তবে আমি প্রায় এইরকম বিষন্নতায় ভুগি।
ব্যাখ্যা খোজার চেষ্টা করি।
বিভিন্ন দিকে উঁকি মেরে দেখলাম। নাহ! কিছু পেলাম না।
এক সময় 'সিবা গেইগী'র (শব্দটার সঠিক উচ্চারন কি হবে আমার জানা নেই) "বিষন্নতা একটি মারাত্মক রোগ" এই অ্যাডটা দেখতাম। কি যেনো একটা ট্যাবলেট (মনে হয় 'নুডিওমিল') খেতাম তখন সখ করে নিজের ভিতর জোর করে টেনে আনা বিষন্নতা কে দূর করার জন্য।
আজ কিন্তু সত্যি সত্যি মন বিষন্ন!
এবার ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে দেখার চেষ্টা করলাম।
আমরা এক সময় রুহের জগতে ছিলাম। সেখানে কোটি কোটি বছর আমাদের সৃষ্টিকর্তার সাথে জড়িয়ে ছিলাম। তো তিনি আমাদেরকে তাকে এবং নিজেকে চেনার জন্য এই পৃথিবীতে পাঠালেন। কিন্ত ওই যে রুহের জগতের সাথে কোটি কোটি বছর অবস্থান করার ফলে আত্মা এবং সেই জগতের সাথে তৈরি হওয়া সম্পর্ক তো আর শেষ হয়ে যায় নাই। অদৃশ্য এক রিমোট কন্ট্রলের মতো তা আমাদেরকে চকিতে মনে করিয়ে দেয় সেই হারানো দিনগুলোর কথা। না হলে বন্ধুরা নিজেরাই ভেবে দেখুন, কোনো এমন নতুন জায়গা যেখানে আমরা জন্মের পরে কখনো যাই নাই, সেখানে গেলে কেন মনে হয়, "আরে, এখানে তো আগেও এসেছি!" কিংবা "এই পথ তো আমি চিনি"। কেন ঘুমের ভিতর রুহের জগতে ভ্রমনের পরে এই দুনিয়ায় এসে সামান্য সময়ের জন্য হলেও দুই জগতের মাঝা মাঝি অবস্থান করি?
অনেক কথা আছে প্রকাশ্যে জানানোর আদেশ নাই। এক পাগল আমাকে একবার বলেছিল, "এই রকম লক্ষ লক্ষ জগত আছে- সেখানে তোর মত লক্ষ লক্ষ মেকুর একই সাথে বাস করছে; কিন্তু কেউ কাউকে চিনে না-দেখে না- তবে সবাই ই বিরাজমান"।
আমার এই ব্যাখ্যা সম্পুর্ন ই আমার। এটা কে নিতে হবে এমন কথা নাই। তবে এই ক'দিন খুব ফুরফুরে মেজাজে রয়েছি- দুএকদিনের ভিতরে একটা নতুন যায়গায় যাবো। এখন তো মন খারাপ হবার কোন কারণ ই দেখছি না।
(ক্রমশঃ)
বিষয়: সাহিত্য
১০৩০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর ১ ঘন্টা পর বাড়ি যাচ্ছি। তবে নেটে থাকবো। আপনাকে সহ ব্লগের সকল ব্লগার ও ভিজিটরদের ঈদের অগ্রীম শুভেচ্ছা।
সুন্দর লিখুন এই শুভকামনা রইলো
অনুভূতি রেখে গেলেন, ধন্যবাদ।
আপনার দোয়া আল্লাহপাক কবুল করুণ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন