শেষ চিঠি... কেন এমন চিঠি হয়!
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ০২ অক্টোবর, ২০১৪, ১১:১৫:২৬ রাত
শীতকাল।
বউ দিবসে ফুরফুরা মেজাজ নিয়ে কোনাবাড়ী থেকে একটা ম্যাক্সিতে চন্দ্রার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। মাগরিবের নামাজ পড়ে নিয়েছি। এখন আর কোনো চিন্তা নাই। শীতকাল হওয়াতে সন্ধ্যা খুব তাড়াতাড়ি হয় এখন। তাই আগের মত বৃহস্পতিবারে মাগরিবের নামাজ কাযা হবার কষ্ট টা নেই।
একটু ক্ষিদেও পেল। তবে রাস্তার খোলা খাবার খাওয়ার অভ্যাস আমার নাই। বাদাম জাতীয় কিছু পেলেও না হয় খাওয়া যেত। চন্দ্রা নেমে স্ট্যান্ডে এক বাদাম বিক্রেতাকে পেলাম। ওর কাছ থেকে ২৫০ গ্রাম বাদাম কিনলাম। কাগজের ঠোংগায় বাদাম নিয়ে বিআরটিসি’র দোতলা বাসের উপরের তলায় ঊঠে একেবারে সামনের দিকের সিটে বসলাম। সবার উপরে থাকার একটা মজাই আলাদা। এটা যে থাকে সে-ই কেবল বুঝতে পারে। এই উপরে থাকা নিয়েই না দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট।
বাদাম খাবার নিয়ম হল, আগে ঠোঙা থেকে সব বাদাম নিজের যে কোনো একটা পাত্রে (নিজের পকেটও হতে পারে) রেখে, খাবার সময় খোসা গুলো সেই ঠোঙ্গায় রাখা। তাহলে আর বাদামের খোসায় যায়গা নোংরা হবে না। অনেককেই দেখি, বাসের ভিতরে বিদ্ঘুটে আওয়াজ করে বাদাম চাবায় আর এখানে সেখানে খোসা ফেলে। বাদামের লাল রঙের আবরণটাও ফু দিয়ে মানুষের শরীরে ফেলে। এরাও এক ধরণের গিদার। এদেরকেও বাংলা ওয়াস করা দরকার।
আমি বাদামের খোসা রাখতে গিয়ে কাগজের ঠোঙার উপরে একটা লেখার দিকে চোখ পড়ল। লাল কালি দিয়ে লেখা-
Read My Lips
ভালো করে এবার ঠোঙাটি চেক করে বুঝলাম এটা একটি প্রেমপত্র- যা এখন বাদামের ঠোঙা হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রেমপত্রটির ঠিক মাঝখানে লিপিস্টিক জাতীয় কিছু দিয়ে কোন প্রেয়সীর ঠোটের ছাপ আঁকা রয়েছে। হয়ত কোন এক প্রেমিকের জন্য একজন প্রেমিকার হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ছিল এই চিঠি- যা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।[প্রশ্ন আসতে পারে, কিভাবে বুঝলাম প্রেমিকার চিঠি? চিঠির শেষে লিখা নাম দেখে।] কারণ যদি সফল প্রেম হত, তবে আজ এই চিঠিটি এভাবে বাদামের ঠোঙা হিসেবে ইউজ হত না। কারো হৃদয়ের গোপন যায়গার সাথে সাথে খুব সেফ একটি স্থানে এই চিঠিটির আজ থাকার কথা। যদিও কারো গোপন চিঠি পড়া ঠিক নয়- তারপরও অচেনা হবার জন্য এবং লিখার প্রাসঙ্গিকতার জন্য দু’একটি লাইন তুলে দিলাম-
“ তুমি অবশ্যই আজ রাত ১০টার পরে ফোন করে আমাকে তোমার সিদ্ধান্তের কথা জানাবে। অনেক কিছু লেখার ছিল, কিন্তু পারছি না। ঠান্ডা মাথায় আমার কথা, সমস্যার কথা, ভবিষ্যত জীবনের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নাও... ... ... তোমার চিন্তায় আমার আর পড়াশোনা হবে না ”
চিঠির মালকিনের জন্য আমার হৃদয়ে একটু কষ্ট অনুভব করলাম। শেষ পর্যন্ত কেন চিঠিটি পেলোনা যার পাবার কথা ছিল? কিংবা যে পেয়েছিল সে-ই হয়ত বাদামের ঠোঙা ওর উৎকৃষ্ট স্থান ভেবেছিল!
এই ভাবনায় তাড়িত হয়ে আরও একটা বড় কষ্টের স্রোত স্বর্গ থেকে আমার হৃদয়ের দিকে ধাবিত হয়। দোতলা বাসটিও যেন তুমুল বেগে সেই গতির সাথে পাল্লা দিচ্ছে।
আমার ভাবনায় একজন অপরিচিতার হৃদয় নিঙড়ানো কিছু অনুভূতি শব্দাকারে ঘুরপাক খায়। সেই রাতে দশটার পরে তাকে কেউ কি ফোন করেছিল? সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল? উত্তর নেগেটিভ হবারই সম্ভাবনা বেশী।
নাহলে কি কিছু হিরন্ময় অনুভূতি বাদামের ঠোঙায় পরিণত হয়!
বিষয়: বিবিধ
১১৯৮ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
লাগবে নাকি মডু আফা একদম দেশী বাদাম।
ইতোমধ্যে ফেরারী মন ভাই নিশ্চয়ই বাদাম দিয়ে দিয়েছেন?
কান্না করবেন জানলে লিখাটা 'বাদাম না পাঠিয়ে' পষ্ট করতাম না।
শুভেচ্ছা রইলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
কি আর করবেন,নিজের জন্য কিছু বাদাম রেখে থাকলে সেগুলো শব্দ না করে খেতে থাকুন।
ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।
আপনাদেরকে মনে করিয়ে দিয়ে আপনাদেরকেই শুধু বিপদে ফেলি নাই। এখন আমার এখানে রাত বারোটা। আমার নিজেরই যে খেতে ইচ্ছে করছে
ধন্যবাদ সাথে থেকে অনুভূতি রেখে যাবার জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন