আসুন নিজেকে 'কুসুমোপযোগী' করে গড়ে তুলি
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০১:৪৩:০৪ দুপুর
" খুব সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিল। বিশাল একটা পার্কে অন্যান্য শিশুদের সাথে সে স্লিপারে চড়ছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠছে... নীচে নামছে... আবার উঠছে...।
একটা ডাকে ওর এই সুখস্বপ্ন ভেঙ্গে গেলো। বাড়ীর মালকিন ওকে ঘুম থেকে উঠতে বলছে। ফজরের আজানের সাথে সাথেই ওকে রোজ উঠতে হয়। ওর বয়সী এই বাসায় আরো দুটি ছেলেমেয়ে রয়েছে। তবে তাঁরা মালিকের ছেলেমেয়ে। আর মালকিন ওকে ডেকে দিয়ে নিজের বেডরুমে গিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। রাতের সকল এটো থালা-বাসন ওকে এখন ধুতে হবে। এরপর নাস্তার জন্য মালকিনের নির্দেশমতো অন্যান্য কাজগুলো করে রাখতে হবে। আর সবাই উঠলে সারাটা দিনের কাজ তো পড়েই আছে।
মাত্র আট বছর বয়সী কুলসুম এর প্রতিটা দিন ঠিক এইভাবেই শুরু হয়। দিনের বেলায় কাজ করতে গিয়ে একটু এদিক ওদিক হলেই চর-থাপ্পর তো মামুলি ব্যাপার। অনেক সময় বাড়ির মহিলা হাতের কাছে যা পায় তা-ই দিয়ে মারধর করে। গালিগালাজ কথায় কথায় তো রয়েছে-ই। ওকে খাবার খেতে হয় রান্না ঘরের ফ্লোরে বসে। আর মালকিন যেটুকু খাবার দেয় তাতে পেটের কোনাও ভরে না। ওর সামনে দিয়ে মালিকের ছেলেমেয়েরা কত কিছু খায়। তখন ওকে অন্যরুমে কিংবা বারান্দায় একা একা বসে থাকতে হয়। পেটে ক্ষুধা, চোখে ক্ষুধা, স্বপ্নে ক্ষুধা আর ওর ছোট্ট হৃদয়ে একটু ভালোবাসা... ভালো ব্যবহারের আশাটা উঁকি দিয়ে যায় বারবার। নিজের গরীব মা-বাবার কথা মনে পড়ে। তাঁদের উপর অভিমান হয়, কেন ওকে মানুষের বাড়িতে কাজের জন্য দিয়ে গেলো! ওর কান্না কেউ দেখতে পায়না। বাসাবাড়ির চার দেয়ালে সেই বোবা কান্না গুমরে গুমরে কাঁদে।"
না, এটা কোনো গল্পের প্লট নয়। আমাদের শহুরে জীবনের এক বাস্তব চিত্র এটি।
কুসুমের মতো শিশু গৃহকর্মীদের কথা আমাদের কারো অজানা নয়। আমাদের সাথেই তো কুসুমদের বসবাস। শিশু শ্রম নিষিদ্ধ হলেও আদতে কি তা বন্ধ রয়েছে?
সামনে কোরবানির ঈদ। এই সময়ে কুসুমদের আরো অনেক ব্যস্ত থাকতে হবে। নিজের প্রতিদিনের রুটিন কাজের বাহিরেও ঈদের এই কয়েকটি দিন ওদেরকে অতিরিক্ত কাজ করতে হবে।
আমরা অনেকেই নিজেদেরকে সাদা মনের মানুষ হিসেবে নিজের কাছে পরিচয় দিয়ে থাকি.. আত্মতৃপ্তি লাভ করি। কিন্তু আমার চোখের সামনেই এই যে নির্মমতা..বর্বরতা ঘটে চলেছে অহর্নিশি- সেদিকে কি কখনো খেয়াল রাখছি? খুবই স্বাভাবিক মনে হয় এই কুসুমদের দিয়ে প্রতিদিনের গৃহস্থালি কাজ করানোটি। হয়তো মনে মনে ভাবি, এদেরকে কাজে রেখে তো একদিক দিয়েই ওদের উপকার করছি। না হলে এইসব নদী-ভাঙ্গণ এলাকার দুস্থ মানুষগুলির সন্তানেরা না খেয়ে থাকত, নচেৎ রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষে করতো।
হ্যা, সেদিক থেকে ঠিকই আছে। কিন্তু যার উপকার করা, তাঁকে কেন টর্চার করা হবে? তাঁকে কেন নিজের গোলাম মনে করে সাধ্যাতীত কাজের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হবে? একবার কারো উপকার করলে, তাঁকে আজীবনই উপকার করে যেতে হয়। কিন্তু এই সত্যটি আমরা আমাদের ঘরের শিশু গৃহকর্মীদের বেলায় কেন অবলীলায় ভুলে যাই-ওভারলুক করি?
তাই আমাদের যার যার বাসায় যদি কোনো কুসুম থাকে, তবে ওদেরকে আমাদের নিজ সন্তানের মতো না পারি... অন্য কোনো এক বাবার সন্তান মনে তো করতে পারি। ওরা কাজের মানুষ বা গৃহকর্মী পরিচয়টা সামান্য সময়ের জন্য ভুলে গিয়ে একটু কল্পনা করি। আমার নিজের সন্তানকে ওর যায়গায় দাঁড় করাই। একটু ভালো ব্যবহার করি... ওরা গরীব হবার জন্য আমাদের কাছে আসে।এই চিন্তা যখনই আমাদের ভিতরে কাজ করা শুরু করবে, নিজেদেরকে সভ্য মানুষ তখনই ভাবতে পারবো। একজন সাদা মনের মানুষ হবার অন্তত একটা গুণ নিজের ভিতরে আনতে পারব যদি এই শিশুদেরকে আমরা মানুষ হিসাবে ট্রীট করে সেভাবে ওদের সাথে ব্যবহার করি। ওদেরকে বাসায় না রাখাটা সমাধান নয়। ওদের পরিবার এতোটা গরীব বলেই তো কুসুমেরা আমাদের বাসায় আসতে বাধ্য হয়। তাই সমস্যার সমাধান কুসুমদেরকে ওদের বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার ভিতরে নয়। বরং আমাদের নিজের চরিত্রকে 'কুসুমোপযোগী' করার ভিতরে।
সাদা মনের মানুষ হওয়ায় ব্রতী (আমি সহ) সকলে এদিকটা একটু ভেবে দেখলে কেমন হয়?
বিষয়: বিবিধ
১১১৫ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
"প্রত্যেকেই এক জন অভিভাবক,প্রত্যেককেই তার অভিভাবকত্ব সম্পর্কে জিগ্যাসা করা হবে।"
নববী এই বানী টা মাথায় রাখলে আমাদের অনেক বিষয় সহজ হয়ে যাবে।
কুসুমরাতো আমাদেরই অভিভাবকত্বে নাকি.....!!!
কুসুমদের পথচলা হোক কুসুমাস্তির্ণ এই শুভ কামনা.......।
সহমত আপনার সাথে।
আপনার দোয়া কবুল হোক-আমীন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
শুভেচ্ছা রইলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
ধন্যবাদ।
আমাদের পরিবারের তেমনি একজন গৃহকর্মী এখন টেকনিক্যাল গ্রাজুয়েশনের দ্বারপ্রান্তে-
আলহামদুলিল্লাহ, কথায় নয় শুধু-
কাজেও দেখানো সম্ভব হয়েছে
আপনার কলমের আঁচড়ে সমাজে কাঙ্খিত পরিবর্তন হোক-
ধন্যবাদ। আমি অভিভূত!!
আলহামদুলিল্লাহ! এই ঘটনাটি অন্যদের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। যে কেউ রেফারেন্স হিসাবে উল্লেখ করতে পারবে।
আপনার দোয়ায় আমীন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার দোয়া আল্লাহপাক কবুল করুন-আমীন।
শুভেচ্ছা রইলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার আশা আল্লাহপাক কবুল করুন-আমীন।
শুকরিয়ার জন্যও অনেক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন