আমার বাবা-মা... আমার জান্নাত
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১২:১৩:৪২ দুপুর
মায়ের চেয়ে আপন কেহ নাইরে দুনিয়ায়
ইদানিং অফিসে কাজের ফাঁকে ফাঁকে গান শোনার এক বদ- অভ্যেস হয়েছে। একটু আগে শুনছিলাম নচিকেতার এই গানটি। কথাগুলো এমন যে কাজের ভিতরে থেকেও অন্যদের কান খাড়া হয়ে গেলো...
" ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার
মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার ওপার।
নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামি দামি
সবচেয়ে কমদামি ছিলাম একমাত্র আমি।
ছেলের আমার আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম
আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম।।
আমার ব্যবহারের সেই আলমারি আর আয়না
ওসব নাকি বেশ পুরনো, ফ্ল্যাটে রাখা যায় না।
ওর বাবার ছবি, ঘড়ি-ছড়ি, বিদেয় হলো তাড়াতাড়ি
ছেড়ে দিলো, কাকে খেলো, পোষা বুড়ো ময়না।
স্বামী-স্ত্রী আর আ্যালসেশিয়ান- জায়গা বড়ই কম
আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম।।
নিজের হাতে ভাত খেতে পারতো নাকো খোকা
বলতাম আমি, “না থাকলে কী করবি রে বোকা?”
ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদত খোকা আমার কথা শুনে
খোকা বোধ হয় আর কাঁদে না, নেই বুঝি আর মনে।
ছোট্টবেলায় স্বপ্ন দেখে উঠত খোকা কেঁদে
দু’হাত দিয়ে বুকের কাছে রেখে দিতাম বেঁধে
দুহাত আজো খোঁজে, ভুলে যায় যে একদম
আমার ঠিকানা এখন বৃদ্ধাশ্রম।।
এই একটি গানের কলির ভিতরেই লুকিয়ে রয়েছে একজন মায়ের মায়া-মমতা এবং সময়ের বিবর্তনে তার আদরের খোকার পাল্টে যাওয়া চেহারা দেখে দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয়ের করুণ আর্তি!
ভাবছি, ইচ্ছে করে এই কষ্টকে বুকে টেনে আনা হল না? অন্যদের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তাদেরও একই অবস্থা। ভাবাবেগে সকলেই কিছু না কিছু আপ্লুত। দেশের সকল বৃদ্ধাশ্রমগুলোকে ধ্বংস করে ফেলতে ইচ্ছে করছিল! কিন্ত তাতেই কি এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে?
তখন তো মা'কে রাস্তায় নেমে আসতে হবে।
আমাদের মতো সন্তান নামের এমন কিছু নরপশুদের হৃদয়ে বসে থাকা বৃদ্ধাশ্রমগুলোকে আগে ধ্বংস করতে হবে, তবেই কিছু পরিবর্তন আসলেও আসতে পারে। মা-বাবা'র ভরণপোষণ আইন তৈরী হয়েছে। দেরীতে হলেও এখন রাষ্ট্র নিজেই এগিয়ে এসেছে এ ব্যাপারে কর্তব্য স্থির করতে। এখন আমাদের উচিত হবে এই ব্যাপারে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করা। একজন অন্যজনের দিকে খেয়াল রাখা, কোনো মা কষ্ট পাচ্ছে কিনা এবং জানতে পারলে সকলে মিলে প্রথমে আলোচনার দ্বারা সমস্যা মিটানোর চেষ্টা করা। না পারলে সমাজ ও আইন তো রয়েছেই।
একটা কথা সবসময় মনে রাখতে হবে যে, নিজের বিবেকের থেকে বড় আইন আর কিছু নেই।।
বাবা তোমার কথা মনে পড়ে
ধূলায় দু'পায়ের গোড়ালি ধূষর হয়ে আছে।
গরমের সময়ে মাতাল করা হাওয়ায় গ্রামের মেঠো পথ ধরে ছুটে চলা কিশোরটি আজিজ মাতবরের বাড়ির সীমানায় এসে থমকে দাঁড়ায়। আম গাছটিতে প্রচুর আম ধরেছে। এই গাছটিতে কাঁচা-মিঠা আম ধরে। তাই গ্রামের সকল বিচ্ছু ছেলের দলের টার্গেট এই গাছটি। দু'পাশে তাকিয়ে দেখে কোনো মানুষ আছে কিনা। এমনিতেই এখন ভরদুপুর। হাঁসফাঁস গরমে সবাই হয় ঘরের ভিতরে শীতল পাটিতে পিঠ লাগিয়ে আছে, নয়তো আধাজুরির খাল পাড়ে গাছের ছায়ায় খালি গায়ে শীতল হচ্ছে। বেশ নীচুতে এক গুচ্ছ আম কিশোরটিকে প্রলুব্ধ করছে। গাছে উঠবে নাকি ঢিল ছুড়বে ভাবছে। শেষে ঢিল ছুড়েই উপরের দিকে লোভী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। একটি আম অন্যদের মায়া ত্যাগ করে ওর পায়ের কাছে পড়েই ফেটে গেলো। কাঁচা আমের ঘ্রাণে ওর জিভে জল চলে এলো।
একটু সামনে এগোলেই মাতবরদের শান বাঁধানো পুকুর। সেখানে বসেই আমটি ছিলে খাবে মনে করে এগোলো। পিছনের পকেট থেকে ঝিনুকের বানানো স্পেশাল আম ছিলার যন্ত্রটি হাতে নিয়ে সবে পুকুরের ঘাটলার কাছে এসেছে- বয়স্ক মানুষের গলার শব্দে চমকে উঠল। ওর হাতের ডান দিকে কয়েকটি নারিকেল গাছ। বেশ খানিকটা অযত্নে বেড়ে উঠা সবুজ ঘাসের গালিচাকে ছায়া দিচ্ছে তিনটি নারিকেল গাছ। সেই ছায়ায় বসে আছে মোতালেব দাদু। ওরই সমবয়সী রফিকের দাদু।
দু'হাতে মুখ ঢেকে কাঁদছেন তিনি।
আমটি বাম হাতে নিয়ে ঝিনুকের ছুরিটি ডান পকেটে ঢুকায়। কাছে গিয়ে দাদু'র কাঁধে হাত রাখে। কারো স্পর্শ পেয়ে মুখ থেকে হাত সরিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকালেন। কিশোরটিকে দেখে চিনতে পারলেন এবং দু'চোখ থেকে আরো কয়েক ফোটা জল নীরবে ঝরে পড়ল।
' কি হয়েছে দাদু? কাঁদছ কেন?'
কিশোরটির প্রশ্নের জবাবে বৃদ্ধটি আরো ডুকরে কেঁদে উঠেন। তাঁর শান্ত হতে কিছুক্ষণ সময় লাগে। কিশোরটি অপেক্ষা করে।
' আমারে আমার পোলা ও বউ ঘর থেকে বাইর কইরা দিছে... এই বুড়া বয়সে এহন আমি কই যামু?'
কি বলবে কিশোরটি বৃদ্ধটির এ প্রশ্নের উত্তরে?
তবে এই বয়সেই সে তাঁর নিজের কচি হৃদয়ে এক বিরাট আঘাত পেল। একজন অসহায় বৃদ্ধ বাবাকে তারই ছেলে ত্যাগ করেছে- যাকে কিনা সে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে! দু'হাত ধরে চলতে শিখিয়েছে! এতোটা বড় করেছে যে আজ কিনা সে নিজের জনককে ঘরের বাহির করে দেবার মত স্পর্ধা দেখাতে পারছে!!
মাথা নীচু করে কিশোরটি সেদিন সেখান থেকে চলে আসে। একজন অসহায় মানুষের চরম অসহায়ত্ব দেখেও সেদিন সে কিছু করতে পারেনি। তবে মনে মনে সেদিন সে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয় যে, ভবিষ্যতে যদি তাঁর সামর্থ হয় তবে সে এই অসহায় মানুষদের জন্য কিছু করবে।
সেই কিশোরটি বড় হয়ে তাঁর প্রতিজ্ঞার কথা ভুলে নাই।
গাজীপুরের মনিপুর-হোতাপাড়ায় সে সকল অসহায় বাবা-মা এর জন্য একটি বৃদ্ধাশ্রম করেছে। যেটি এখন স্বয়ং সম্পুর্ণ। আশ্রমের নিজের আয়েই সকল কর্ম-কান্ড চলে।
হ্যা, আমি খতিব আব্দুল জাহিদ ওরফে মুকুল স্যারের কথাই বলছি।
সেই কিশোরটিকে আল্লাহ পাক অনেক-অনেক বড় করেছেন। তাঁর দাড় করানো 'গিভেন্সী গ্রুপ' পোশাক শিল্পের প্ল্যাটফর্মে একটি পরিচিত নাম। তবে এতো অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েও বেশ সাদাসিদে জীবনযাপন করেন তিনি। সেটা তাকে কখনো সামনা সামনি দেখলেই বোঝা যায়।
আমাদের দেশের কিছু কুলাঙ্গার ছেলে-মেয়েদের হাতে অত্যাচারিত বাবা-মায়ের শেষ ঠাই হয় এই আশ্রমে- যেখানে একজন মুকুল সকলের সন্তান হয়ে তাঁদের সেবা করেন।
আমাদের সমাজে কত বিত্তশালী রয়েছেন। সকলেই যদি যার যার স্থান থেকে সমাজের ভালোর জন্য সামান্য একটু এগিয়ে আসেন, তবে দুখ-কষ্ট অনেকাংশেই দূর হতে পারে। তবে মুকুল স্যারের একটি কথা আমার মত এই অধমের কালো হৃদয়ে দাগ কেটেছে। তিনি বলেছিলেন-
' আমি ইচ্ছে করলে সারা দেশেই এরকম বৃদ্ধাশ্রম করতে পারি। কিন্তু তাতে করে পারিবারিক জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি চাই না আর কোনো বাবা-মা কোনো বৃদ্ধাশ্রমে থাকুক।'
তাই আমরা নিজেরা নিজেদের মনের ভিতরের সুপ্ত বৃদ্ধাশ্রমটিকে আগে ধ্বংস করবো। বাবা-মা'র জন্য একটি নিরাপদ বলয় গড়ে তুলবো। যাতে করে নিজের পরিবারের ভিতরে থেকেই বেশ সুন্দর ভাবে চলে যাওয়া আমার জনক-জননীর জন্য যেন আপ্লুত হৃদয়ে অনুভব করতে পারি-
'বাবা তোমার কথা মনে পড়ে...'
তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ও আমাদেরকে একইভাবে অনুসরণ করবে।
তবে দেখার বিষয় হল, আমরা আমাদের ভিতরের পশু-প্রবৃত্তিকে বধ করে আমার সন্তানদেরকে ও মানুষ বানাতে পারি- নাকি প্রবৃত্তির অনুসরণ করে নিজের মত পশু করেই রেখে যাই।।
... ... ...
সময়ের কষাঘাতে আর জীবন জীবিকার প্রয়োজনে কখন যে বাবা-মাকে ছেড়ে অনেক দূরে সরে এসেছি... আলাদা সংসার সংসার খেলায় মেতে উঠেছি, নিজেই টের পাইনি। যখন অনুভব করলাম, বড্ড দেরী হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, না আমি পারছি এখনকার সব কিছু ছেড়ে দিয়ে বাবা-মা'র কাছে গিয়ে থাকতে; না ওনারা পারছেন তাঁদের এখনকার- আমার শেকড় যেখানে গ্রন্থিত সেই যায়গা ছেড়ে আমার কাছে এসে থাকতে।
মাকে নিয়ে লেখার কিছুই নেই। মোট কথা একজন মা হলেন গুরুত্বের দিক থেকে আমার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহপাকের পরেই। তাই কোনো লিখনি বা ভাষা দিয়ে তার যে কোনো কিছুই আমি প্রকাশ করতে পারব না। তবে আমি নিজে যেহেতু একজন বাবা, আমার বাবার ব্যাপারে সামান্য কিছু অনুভূতি প্রকাশ করতে চাচ্ছি।
১৯৮৪ ইং সালে আমি ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে সুযোগ পেয়ে ভর্তি হই।
আমার জীবনকে সম্পুর্ণ ওলট-পালট করে দিয়ে চিন্তা-ভাবনার জগৎটাকে সহ আমি এক ভিন্ন যায়গায় এসে পড়লাম যেন। সবে ছয়টি ক্লাস পার করা বলতে গেলে এক শিশুই তো ছিলাম তখনো। সারাদিন ইচ্ছেমত ঘুরে বেড়ানো খুলনার চিরপরিচিত সেই মুক্ত পরিবেশ থেকে আমাকে নিয়ম-শৃংখলার এক আবদ্ধ ভূবনে পাঠানো হল। যেখানে স্বাধীনভাবে শ্বাস নেবার মতোও অবকাশ ছিল না। আর 'সিনিয়র' নামের কিছু দানব সদৃশ দু'পেয়েদের নিষ্ঠুরতায় সেই পরাধীন জগতটি আরো ভয়ংকর হয়ে উঠল আমার কাছে।
শেষ পর্যন্ত শারীরিক এবং মানসিক টর্চারে আমার ঠাই হয়েছিল যশোহর সিএমএইচ (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) এর কমিশন্ড ব্লকে। আমার 'প্লুরাল ইফিউসন' যাকে 'প্লুরিসি' ও বলা যায়, সেটি হয়েছিল। অবস্থা খুবই সিরিয়াস আঁকার ধারণ করে। আমি কেমন একটা ঘোরের ভিতর থাকতাম। আজ অনেক বছর হয়ে গেলেও আবছা আবছা সে সময়গুলোকে এখনো মনে করতে পারি।
আমার আব্বা তখন খুলনা কাস্টমস হাউসে 'প্রিভেন্টিভ অফিসার' পদে কর্মরত। প্রতিদিন খুলনা থেকে অফিস করে তিনি আমাকে দেখতে আসতেন। আমার সাথে কিছু সময় কাটিয়ে আবার বাসায় চলে যেতেন পরবর্তী দিনের অফিস করার জন্য। আমার জ্ঞান ফিরলে আমি আমার আব্বাকে আমার পাশে বসা দেখতে পেতাম। তখন খুলনা থেকে যশোর এর রাস্তা ছিল খুবই খারাপ। আর আমার আব্বা একটি মটর বাইক চালাতেন। সারাদিনের ক্লান্তিকে ঝেড়ে ফেলে বিকেল ৫টার পরে সেই বাইকটি নিয়ে প্রতিদিন আমাকে দেখতে চলে আসতেন সিএমএইচে!! এভাবে প্রায় ৪ মাস ওনাকে যাওয়া-আসা করতে হয়েছিল।
আজ আমি নিজেই সুন্দরী বাবু (মালিহা) এবং জ্ঞানী বাবু (লাবিবা)'র পাপা!
আজ আমার আব্বা থেকে অনেক দূরে রয়েছি... প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে।
মোবাইলে কথা হয়। তবে এখন আর তিনি সেইভাবে আমাকে চিনতে পারেন না। আমাদের চারভাই এর নাম্বার তাঁর মোবাইলে সেভ করা রয়েছে। তারপরও অনেকক্ষণ কথা বলার পরে হঠাৎ বলে উঠেন, " কে তুই?"। আসলে আব্বা আব্বার মতই রয়ে গেছেন। আমিই পালটে গেছি। না হলে আমি কেন তাকে দেখতে যেতে পারি না?
আমার দুই মেয়েকে ছেড়ে সপ্তাহের ৫ দিন ঘন্টাখানেক দূরত্তের পথ থাকতে আমার কেমন কষ্ট হয় সেটা এখন অনুভব করছি। আর আমার আব্বা আমাকে ছেড়ে এতোগুলো বছর হৃদয়ে কি যাতনা ই না অনুভব করছেন!
১৯৮৪ ইং সালে একজন বাবা তাঁর শত ব্যস্ততার মাঝেও তাঁর সন্তানকে প্রতিদিন সময় দিয়েছিলেন। এরপর আরো অনেকগুলো বছরও দিয়েছেন... যতদিন জীবিত থাকবেন দিয়ে যাবেন।
কিন্তু সেই সন্তান আজ বাবা হয়ে তাঁর জনকের জন্য কিছুই করছে না। এতটাই যান্ত্রিক জীবনে সে অভ্যস্ত যে হৃদয়টাও তাঁর যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। আসলে এখানে একজন ই বাবা!
দুই সন্তান এর জন্মনিবন্ধন কার্ডে আমার নাম লেখা থাকলেও আজো আমি বাবা হতে পারলাম না!! আমি কি একজন সুসন্তানও হতে পেরেছি?
কিছুদিন আগে আব্বা-আম্মা এসেছিলেন আমার সাভারের বাসায়। আব্বার ডায়াবেটিস থাকাতে প্রতিদিন ভোরে হাঁটতে যেতে হয়। আমি বৃহস্পতিবারে বেশ রাত করে বাসায় এসেছিলাম। আব্বা তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। আম্মার সাথে কথাবার্তা বলতে বলতে গভীর রাত হয়ে গেলো। সকালে ঘুমিয়ে আছি। আমার মোবাইল বেজে উঠল। ডিসপ্লেতে দেখি আব্বা লেখা উঠেছে। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সেই চির চেনা প্রিয় কণ্ঠস্বর বলে উঠল-
'-হ্যালো মামুন, আমি তো হারায়ে গেছি।'
আসলে সকালে হাঁটতে গিয়ে তিনি আমার বাসার এলাকা ছেড়ে অন্য এক এলাকায় চলে গেছিলেন। আমি তখন আধোঘুম আধো চেতন অবস্থার ভিতরে রয়েছি। তবে ওনার কথার অর্থ বোধগম্য হতে আমার কিছুক্ষণ সময় লাগল। আমি যখন বুঝতে পারলাম, নিজেকে জোর করে বিছানা থেকে টেনে তুললাম। তবে একটু বিরক্ত মনের ভিতরে দোলা যে দিয়ে গেলো, সেটা অনুভব করলাম। আরো কিছুক্ষণ ঘুমাতে চেয়েছিলাম আমি।
দ্রুত প্যান্ট পড়ে বের হলাম। এর আগে আব্বাকে রাস্তার যে কাউকে মোবাইলটি দিতে বললাম। একজন সহৃদয় পথচারী আমাকে জানালেন তিনি সেনওয়ালিয়া বড় পানির ট্যাংকির সাথে রয়েছেন। আমি একটি রিক্সা নিয়ে তার কাছে পৌঁছে গেলাম। তবে এভাবে হারিয়ে যাবার জন্য মনে মনে রাগ হচ্ছিলাম। রিক্সা থেকে নামতেই তিনি আমার দিকে তাকিয়ে তার ভূবনভোলানো হাসি দিলেন!
নিমিষেই সকল রাগ, বিরক্তি দূর হয়ে গেলো। নিজের জনককে রিক্সায় পাশে বসিয়ে বাসার দিকে রওয়ানা হলাম। তার শরীরের তখনকার সান্নিধ্যটুকু আমাকে কেমন এক বিচিত্র ভাবের ভিতরে নিয়ে গেলো। আমি কিছুক্ষণ আগের আমার ভিতরের বিরক্তিভাব এবং রাগের জন্য মনে মনে অনুতপ্ত হলাম। আমার ছেলেবেলায় আমি কতবার এভাবে হারিয়ে গেলে, তিনি আমাকে খুঁজে এনেছিলেন- তখন তো কখনো তিনি বিরক্ত হন নাই! তবে আজ কেন আমি???
আসলে বাবারা বাবা-ই থাকেন। তবে আমরা যখন বাবা হয়ে উঠি, ওনারা তখন আমাদের সন্তানের মত হয়ে যান। তখন কেন আমরা তাঁরা যখন বাবা ছিলেন, তাঁদের সেই সময়কার আচরণ করতে পারি না? সেদিন আমার ছোট কন্যা যদি হারিয়ে যেতো, আর সে আমাকে ফোন করে জানাতো- আমার মনের ভিতরেও কি একটুও বিরক্তিভাব কিংবা রাগের অনুভূতি আসত কি?
আসলে আমি আমার বাবার মত কিংবা অন্য বাবাদের মত 'একজন বাবা' হয়ে উঠতে পারি নাই। আদৌ আমি পারব কি?
বিষয়: বিবিধ
১৫০২ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একটু আগেই ফেবুতে আপনার এ লেখা পড়লাম।
মা-বাবার স্নেহময় নিস্পাপ চেহারা বেশী করে ভেসে উঠছে মনে।কিছুই তো করতে পারছি না তাদের সুখের জন্যে।
নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়া সন্তানদের- চিন্তার জগতে কিছু টা হলেও ধাক্কা দিবে এই লেখা।
সন্তানদের হুশ ফিরুক...........।
আমার নিজের হুঁশ আগে ফিরুক।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। আর আমার হয়ে আগামীকাল আপনার আব্বাকে সালাম জানাবেন, এবং প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর রওজা মোবারকেও আমাদের সবার পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করবেন।
ধন্যবাদ আপনাকে।
পিতা-পুত্র এক সাথে হজ্ব করার ইচ্ছা ছিল, কাগজ পত্রের জটিলতায় উমরাহ করাও সম্ভব হলো না।
অবশ্যই প্রিয় রওজা মোবারকে নামোল্লেখ করে সালাম পৌছাবো ইনশা আল্লাহ।
আমার জন্যে দোয়া চাই যেন হেদায়েত হতে পারি।
আপনার সালাম পৌঁছে দিবো ইনশা আল্লাহ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
ধন্যবাদ আপনার অনুভূতি এবং দোয়ার জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
ভালো লাগলো তোমার মন্তব্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
খুশী হলাম অনুভূতি রেখে গেলেন বলে।
ভালো থাকবেন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
চমৎকার আত্মসমালোচনামূলক লেখার জন্য ধন্যবাদ রইল
ভালো বলেছেন। কিন্তু আমরা কেন তাদের মত পারি না, আমরাও তো পিতা-মাতা হয়েছি।
আপনাকে সাথে থেকে অনুভূতি রেখে যাবার জন্য অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
আল্লাহপাক আপনাকে ভালো রাখুন-আমীন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
লেখাটা খুবই হৃদয়গ্রাহী হয়েছে
সকলের সকল দপয়েয় আ মী ন
সুন্দর অনুভূতি রেখে গেলেন এবং সকলের দোয়ায় শরীক হয়েছেন এবং নিজেও দোয়া করলেন- এজন্যো আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আল্লাহপাক কবুল করুন-আমীন।
পানি চলে আসছে। আল্লাহ আমাদের কে উত্তম পিতা এব
নেক সন্তান হবার তাউফিক দান করুন। আমিন
অনুভূতি রেখে গেলেন, জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন