Bee কয়েকজন সাদা মানুষ (ধারাবাহিক গল্পঃ পর্ব-১) Star

লিখেছেন লিখেছেন মামুন ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১০:৫২:৪৬ সকাল



Roseমুখবন্ধঃ

আমরা 'মানুষ' হয়ে এই পৃথিবীতে এসেছি।আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ জীব বানানো হয়েছে। অন্য সকল সৃষ্টির থেকে আমাদের এই শ্রেষ্ঠত্ব কেন? একটা হাতি প্রচন্ড শক্তি রাখে। তাঁর তুলনায় আমরা কত ক্ষুদ্র শক্তিধর! অথচ তার পিঠে চড়ে তাঁকে নিয়ন্ত্রন করছি। হিংস্র বাঘ-সিংহ-চিতার সামনে আমরা কত অসহায় বোধ করি। এদেরকেও পোষ মানাচ্ছি... খাঁচায় বন্দী করে আনন্দ লাভের জন্য প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছি।বিষাক্ত সাপও আমাদের বশে এসেছে।

এসব কীভাবে হচ্ছে?

আমাদের সাথে এইসব জীব-জন্তুর পার্থক্য এনে দিয়েছে একটি মাত্র জিনিস। আর তা হল 'বিবেক'। একে ব্রেইন বললে পুরোটা বোঝানো যাবে না। কারণ শিম্পাঞ্জি, বেবুন, ডলফিন-এদেরও ব্রেইন এবং নিজস্ব আঙ্গিকে ভাবার ক্ষমতা রয়েছে।কিন্তু ওদের সেই চিন্তা করার একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে।একটা পর্যায়ে গিয়ে ওদের চিন্তা-ভাবনা থেমে যেতে বাধ্য হয়। কিন্তু মানুষের বেলায় চিন্তার ক্ষেত্রটা অসীম। তাই সে আপাত দৃষ্টিতে ক্ষুদ্র হলেও চিন্তার জগতে অসীমতাকে লাভ করে বিবেকের দ্বারা নিয়ন্ত্রন করায় এক অজেয় শক্তির অধিকারী হতে পেরেছে। না হলে শুধু একটি হৃদয়, হাত-পা আর চোখের দ্বারা অন্য প্রানীদের মতই আচরণ করতো। আবার হিংস্রতার দিক দিয়ে মানুষ কোনো অংশেই ঐ সকল শ্বাপদদের তুলনায় কম নয়। এর প্রমাণ তো অহরহ দেখতে পাচ্ছি। না হলে সম্পদের দিক থেকে অনেক কিছু থাকার পরেও রানা নামের এক হিংস্র মানুষের স্বেচ্ছাচারিতা ও লোভের জন্য হাজারেরও বেশী নিরীহ মানুষকে কি মর্মান্তিক মৃত্যুকেই না বরন করে নিতে হল। অন্য একজন মালিকের নিজের সম্পদ রক্ষার নামে তালাবদ্ধতার শিকার হয়ে কতগুলো মানুষকে আগুনে পুড়ে মরতে হল তাজরীন ফ্যাশন নামের পোশাক কারখানাটিতে। শুধুমাত্র লোভের বশবর্তী হয়ে একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর কয়েকজন ট্রেইনড উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জের সেই নির্মম হত্যাকান্ড ঘটালেন। এরকম অনেক উদাহরণ দেয়া যেতে পারে।

কেন মানুষের দ্বারা এই হিংস্র কর্মকান্ডগুলো ঘটে চলেছে? উত্তর একটাই- এরা এদের বিবেকের সঠিক প্রয়োগ করছে না। আমাদের হৃদয়ে যে কোনো ইচ্ছার সুত্রপাত হয়। তাঁকে মানুষের ব্রেইন দক্ষ অ্যানালিস্টের মত বিশ্লেষন করে। আর এই দুই এর মাঝে অদৃশ্য বিবেক সব শেষে কর্মপহ্না নির্ধারণ করে। এই 'এক্সিকিউশন' আবার দুই ভাবে হয়ে থাকে। ভালো এবং খারাপ। অন্যভাবে বলতে গেলে সাদা এবং কালো। তবে একজন মানুষের অদৃশ্য বিবেক কি পুরোটাই ভালো বা খারাপ হতে পারে? অবশ্যই না। প্রতিটি মানুষের ভিতরেই ভালো-খারাপ মেশানো থাকে। না হলে সে মানুষ না হয়ে 'ফেরেশতা' বা 'শয়তান' হতো। সাধারণ অর্থে 'মানুষ' সবাই-ই ভালো। কিন্তু বিবেকের প্রয়োগের বেলায় সে সাদা-কালো হৃদয়ের অধিকারী হয়। তবে এটা আপেক্ষিক এবং কোনো মানুষের বেলায়ই এটা শেষ কথা হতে পারেনা। মানুষ বিবেকের দংশনে অনুতাপে দগ্ধ হয়ে কালো থেকে সাদা মনের মানুষে পরিণত হতে পারে যে কোন সময়ে। না হলে 'ইসলাম' ধর্মের প্রারম্ভিক যুগে সেই 'আইয়্যামে জাহেলিয়াতের' যুগে সেই সময়ের সর্বনিকৃষ্ট মানুষগুলো সর্বোৎকৃষ্ট সোনার মানুষে পরিণত হতে পারত না। নিজাম ডাকাতের মতো কেউ হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়ায় পরিণত হতে পারতেন না। তার মানে আমাদের ভিতরেই দুটো গুণ কিংবা দুটো 'ফর্মেশন'ই রয়ে গেছে।

তবে যখন কেউ বলে ' আমি সাদা মনের মানুষ নই' বা 'নিজেরাই নিজেদেরকে সাদা বলে সার্টিফাই করাতে লজ্জা বোধ করা'- এ ব্যাপারে কিছু কথা বলতেই হয়। আগেই বলেছি আমাদের সকলের ভিতরেই সাদা এবং কালো-উভয় গুণই এক সাথে রয়েছে। তাই কিছু খারাপ গুণের কারণে যে আমি একজন কালো মনের মানুষই রয়ে যাবো তা কি ঠিক? নিজের ভেতর থেকে নিজেকে উত্তরণের চেষ্টা না করে যেভাবে আছি তাতে গা ভাসিয়ে চলার ভিতরে সার্থকতা কোথায়? আমি সব সময়েই 'পজিটিভ' দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্বাসী। আর নিজেকে কালো মনের মানুষ মনে করা থাকাটা নেগেটিভ অ্যাটিচিউড। নিজেই যদি কালো মন নিয়ে থাকতে চাই এবং তাতে অটল থেকে আত্মতৃপ্তি লাভ করি, তবে কি কেউ আমাকে হাতে ধরে 'সাদা মন' করে দিতে আসবে? আর তুমি অধম বলে আমি উত্তম হব না কেন? অন্য কেউ একটা প্ল্যাটফর্ম করে যদি চেষ্টা শুরু করে, তাতে ক্ষতিটা কোথায়? কেন লজ্জা পেতে হবে?

'পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ থাকলেও একজন খারাপ বাবাকে পাওয়া যাবে না' হুমায়ুন আহমেদ এর কোনো এক লেখায় এরকম একটা কথা পড়েছিলাম। এই কথার ভিতরে অনেক কিছু লুকিয়ে রয়েছে। যখন আমি একজন বাবা হয়ে যাই, তখন আমার সন্তানের জন্য পৃথিবীর সকল ভালোগুণ গুলোকে ধারণ করেই তো আমি 'একজন সাদা মনের' মানুষে পরিণত হই। সকল বাবা-ই তাই হন। আর এক একজন বাবা কি এক একজন মানুষ নন?

গোয়েবলসীয় প্রচারনার ব্যাপারে আমরা সবাই-ই কম বেশী অবহিত। একটি মিথ্যে কথা বার বার প্রচার করলে, কানের কাছে বলা হলে একসময় হৃদয় সেটিকে সত্য বলে মেনে নেয়। তাহলে আমার ভিতরের কালো গুনগুলোকে ভিতরে না রেখে... 'আমি একজন কালো মনের মানুষ' বার বার না জপে 'আমি একজন সাদা মনের মানুষ' জপতে অসুবিধেটা কোথায়? যখন-ই আমি এরকম নির্দিষ্ট একটি প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে নিজেকে সাদা মনের মানুষ হিসাবে কল্পনা করবো; আমার বিবেকই তখন আমাকে খারাপ কাজগুলো থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবে। আর সব থেকে বড় আদালত হল মানুষের নিজের বিবেক। আমি বলছি না যে এভাবে নিজেকে সাদা মনের মানুষ ভাবতে থাকলেই একদিনে সবাই সাদা মনের মানুষ হয়ে যাবে... সাথে সাথে এটাও ভাববার কোনো অবকাশ নেই যে খারাপ গুণগুলো থাকায় সবাই-ই কালো মনের মানুষ। কিন্তু এই সাদা-কালো মেশানো মানুষগুলো অন্তত নিজেদেরকে সাদা মনের মানুষ হবার একটা চেতনাবোধ তো লাভ করতে পারে এভাবে ভাবার দ্বারা! আমাদেরকে একটা পর্যায় থেকে তো শুরু করতেই হবে। তবে এখুনি নয় কেন?

আমি নিজেকে একজন 'সাদা মনের মানুষ' বলতে লজ্জাবোধ করছিনা। কারণ আমার ভিতরের কালো অধ্যায়কে আমি খুব ভালো করেই জানি। তাই আমার নিজেকে সাদা বানোর প্রয়োজন অন্য সবার থেকে বেশী। নিজের চিন্তা-চেতনায় কালোকে অহর্নিশি সাদা দ্বারা অবলেপন করতে চাই। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে এই তৌফিক দান করুন-আমীন। Good Luck



Rose কয়েকজন সাদা মানুষ লিখার পটিভুমি...

আমি আমার লেখা-লেখির জগতে প্রথম এসেছিলাম আমার সেজো ভাই এর উৎসাহে... গত (২০০১ ইং মেয়াদকালীন) বিএনপি সরকারের আমলে। আমি কিছুদিন (প্রায় ৬ মাস) খুলনায় আমার আব্বা-আম্মার সাথে ছিলাম। সেই সময়ে কানসাট আন্দোলন হয়। বিদ্যুতের দাবীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট এর মানুষ আন্দোলন করলে পুলিশের গুলিতে কয়েক দফায় মোট ২০ জন নিরীহ গ্রামবাসী নিহত হয়। আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে। যারা এই আন্দোলনের নেত্রিত্ত দিয়েছিলেন তাদের উপর নির্যাতন ও বাড়ীঘরে অগ্নি-সংযোগ করা হয়।

আমার সেজো ভাই তখন কুইন্স ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা কমপ্লিট করে খুলনা জাজ কোর্টে প্র্যাক্টিস করছে।ওর একজন খুব কাছের বন্ধু যে এখন ঢাকা হাইকোর্টে প্র্যাকটিশ করছে- সে, আমি আর আমার সেজো ভাই সেই সময় এক সাথে সময় কাটাতাম। বিভিন্ন আলাপ-আলোচনা করতাম। এ ছাড়া Alliance for Justice (AFOJ) নামে একটি সংগঠন করেছিলাম। আমি সেই সময় ওটার সেক্রেটারি ছিলাম। দু'একজন ছাড়া এই সংগঠনটির বাকীরা ছিলেন এডভোকেট যারা খুলনা কোর্টে প্র্যাকটিশ রত ছিলেন। বিভিন্ন দুঃস্থ মানুষদেরকে ফ্রী আইনি সহায়তা করাই ছিল এর মুল উদ্দেশ্য।

কানসাটের এই নির্মম ট্রাজেডি আমাদেরকে খুব মর্মাহত করেছিল। আমার ভাই ও তার বন্ধু সেই এডভোকেট আমাকে একটা পরিকল্পনার কথা জানায়। সেটা হলো একটা 'নসিমন' (স্যালো মেশিনে চালিতো টেম্পু জাতীয় বাহন, যা মেইন রোডে নিষিদ্ধ) নিয়ে খুলনা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর কানসাট অভিমুখে রওয়ানা হব। সাথে একটা বিশাল ব্যানার থাকবে সেখানে এই নির্মম হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ থাকবে।

সবকিছু প্ল্যানমাফিক করা হল। একদিন সকালে খুব পরিচিত এক ভাই এর 'নসিমন' নিয়ে আমরা তিনজন কানসাট অভিমুখী রওয়ানা হলাম। ভালোই লাগছিল। কিন্তু খুলনার ফুলবাড়িগেট আসার পরেই আমাদে ব্যানার দেখে পুলিশের এক দল আমাদেরকে থামায়। তাদের সাথে কিছু যুবক ছেলেও ছিল। এরা তখনকার সরকারি ছাত্র সংগঠনের কর্মী। সবাই মিলে আমাদের ব্যানার -ফেস্টুন ছিড়ে ফেলে দেয়। আমাদের নসিমনের ড্রাইভারকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। আমাদের তিনজনকে লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করে। আমার সাথে একটি ক্যামেরা ছিল। সেটা ও সীজ করে। এভাবে আমরা কানসাটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্যাতিত হই।

বাসায় এসে বিমর্ষ আমি বসে আছি। আমার সেজো ভাই বলে, ' আপনি এইটা নিয়ে কিছু লিখেন। আমাদের লিখা তো আর দমায়ে রাখতে পারবে না। আর যে কোনো লিখাই যুগ যুগ থেকে যায়... যতোই সেন্সর করা হোক না কেন।' আমি সেদিন থেকেই 'কয়েকজন সাদা মানুষ' নাম দিয়ে এই লিখাটা শুরু করেছিলাম। পরবর্তিতে আমি আবার সাভারে আমার পরিবারের (দুই কন্যা ও বউ) কাছে ফিরে যাই। পান্ডুলিপিটি খুলনায় আমার সেজো ভাই এর কাছে থেকে যায়। এরপর দেশের রাজনীতিতে বিবিধ পরিবর্তন আসে... ক্ষমতার পালাবদল হয়। মোট কথা লিখার জগত থেকে অনেক দূরে সরে আসি। সেই পান্ডুলিপিটিও পরে হারিয়ে যায়।

এরপরে ফেসবুকে আইডি বানানোর পরে কয়েক বন্ধু এবং এক বড় ভাই এর উৎসাহে আমি আমার হাবিজাবি লেখাগুলো শুরু করি। তখন আমার জীবনের প্রথম এই লিখাটি আমাকে নস্টালজিয়ায় ভোগায়... আমি একটা ফেসবুক পেজও বানিয়েছিলাম এই নামে (কয়েকজন সাদা মানুষ)। নতুন করে লিখাটি শুরু করি। কিন্তু কয়েক পর্ব লিখে অন্য কিছু লিখার জন্য সেটা আবারো থেমে যায়। ... একদিন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হই... আগে এই লিখাটি শেষ করেই অন্য কোনো লিখায় হাত দিবো।

কানসাট অভিমুখে যাত্রা দিয়ে যে কাহিনী শুরু হয়েছিল... এবারের লেখায় সেটার বর্ণনা থাকছে না সরাসরি। তবে কাহিনীর সাথে লিঙ্কড হয়ে দু'এক যায়গায় আসতেও পারে।

একজন মেয়ে সহ ওরা খুব কাছের ক'বন্ধু ভার্সিটির লেখা পড়া শেষ করে যার যার জীবনযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। রামপালে তাপবিদ্যুৎ বানানোর বিরুদ্ধে ওরা সবাই সেই কানসাট আন্দোলনের মতো এবারো বাগেরহাটের রামপালে যাবার জন্য যার যার এলাকা থেকে গাজীপুরের ওদের বন্ধু সুজনের বাসায় একত্রিত হয়। এভাবেই কাহিনী শুরু। এর ভিতরে যার যার জীবনের গল্প প্রসংগক্রমে এসে যাবে।

কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে এই লিখাটি নয়। দল-মত নির্বিশেষে এ দেশের আমজনতার পক্ষ থেকে এই লিখাটি লিখলাম... Good Luck



Good Luck কয়েকজন সাদা মানুষ

এক.

Star হেলাল...

লঞ্চ ছাড়তে এখনো ১ ঘন্টা বাকী। ডেকের উপর চাদরটা বিছিয়ে ব্যাগটাকে বালিশের মত করে রাখল সে। আশপাশ এখনো ভরে নাই। তবে কিছুক্ষণের ভিতর ভরে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নাই। এক গ্রুপ এর ভিতরেই তাস নিয়ে বসে গেছে।সবাই স্টুডেন্ট মনে হচ্ছে। লঞ্চের জার্নিতে এই এক মজা। শুয়ে-বসে আরামে যাওয়া যায়।রুমালটা দিয়ে মুখ ঢেকে শুয়ে পরলো হেলাল। কোনো কিছুই দেখতে ইচ্ছে করছে না।

... ... ...

Star খালিদ

স্টিকটাতে শেষ টান দিয়ে ফেলে পা দিয়ে পিষে ফেললো।ট্রেনের হুইসেল পড়ে গেছে। যে কোনো সময় ছেড়ে যাবে। গুজাইয়্যার কাছ থেকে কয়েকটা রেডিমেট জিনিস ভরা সিগারেট নিয়ে নেয়া হয়েছে। ট্রেনে তো আর খাওয়া যাবে না। এজন্য আগেই স্টেশনের এক কোনে নোংরা একটা জায়গা বেছে নিতে হয়েছে খালিদকে। সবসময়ে ই তাই করতে হয়। জার্নিতে স্টিক থাকবে না, কল্পনাই করা যায় না। চোরের মত একটা সিগারেট ধরিয়ে টেনে শেষ করে বগির দিকে এগিয়ে যায়। সাপের মত নিস্পলক দৃষ্টি।

... ... ...

Star রুনা

ছেলে আর মেয়ে দুটো ই রুনাকে বাসে তুলে দিতে এলো। বড়টা ছেলে। ১৪ বছরে পা দিয়েছে। সেই তুলনায় মেয়েটাকে অনেক বড় ও পরিণত লাগে। মাত্র ১২ বছরে যেন সবার গার্জিয়ান। মাসুদ অফিসে। ও ইচ্ছে করলে আসতে পারত। কিন্তু সেই সব সময়ের মত...

একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস গোপন করল সন্তানদের কাছ থেকে। সব সময় ই তো এটা করে আসছে। ড্রাইভার বাস ছেড়ে দিলো। দৃষ্টিপথে ছেলেমেয়েরা একসময় ছোট হতে হতে মিলিয়ে গেলো।

... ... ...

Star রশিদ

অনেক্ষন ধরে শিকারটাকে ফলো করতে হয়েছে। খাউয়া টাইপের এই ভোম্বলটা। বাস স্ট্যান্ডের যতগুলো ফেরিওয়ালা ছিলো সবার কাছ থেকেই মনে হয় কিছু কিছু কিনে খেয়েছে। বাদাম-চানাচুর ভাজা-পপকর্ণ-বাদাম পাপড়ি এমনকি কুলফির আইস্ক্রীম খেয়েছে বাচ্চাদের মতো দু’বার। এখন ঘুমাচ্ছে। জানে ও না ওর মানিব্যাগের সব টাকা এখন রশিদের পকেটে।খালি মানিব্যাগটা পাশের ড্রেনে এক কোনা বের করে দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।এক সময় পকেটমারা ই ওর পেশা ছিলো। লেখাপড়া কম করে নাই। ডিগ্রী পাস করেছিল ভালো ভাবেই। কিন্তু...

ঢাকাগামী একটা বাসের ছাদে উঠে পড়লো রংপুরের এই মফিজ।এই নামে ওকে ডাকতো সুজন। এই সুজনের কারণেই আজ স্বাভাবিক জীবনে আসতে পেরেছে সে। তবে মাঝে মাঝে পুরনো পেশাটা একটু ঝালাই করে নেয়। যেমন আজকে করল। আশেপাশে তাকিয়ে চোরের মত একটা বিড়ি ধরিয়ে কান টুপিটা আরো ভালো করে নীচের দিকে নামিয়ে আনল।

... ... ...

Star সুজন

আজ একটু তাড়া অনুভব করে সুজন। বসের কাছ থেকে আজ ৫ টায় বের হবার পারমিশন আগেই নিয়ে রেখেছে। বন্ধুরা সবাই আসছে। কফিলকে আগেই বলে রেখেছে কি কি বাজার করতে হবে। কার কি পছন্দ তা তো সে ভালো করেই জানে।

খালিদ চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সেই সকালে রওয়ানা দিয়েছে। এখন বাজে ৪টা। শেষবার মোবাইলে কথা হল শনির আখরা এসেছে। হেলাল সদরঘাট এসে গেছে। একটা সিএনজি নিয়ে আসছে।রুনা খুলনা থেকে আসবে। এখনো পাটুরিয়া ফেরিঘাটের ওপারে। আর রংপুইরা মফিজ বাসের ছাদে ঘুমায়ে থাকে কিনা। ওর যা অভ্যাস। এই শালায় মোবাইল ব্যাবহার করে না।এক অদ্ভুত ক্যারেক্টার। আজো তাকে বোঝা হলো না।

নিজেকে ও কি বুঝতে পেরেছে সুজন?

কম্পিউটারের মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে আনমনা হয়ে যায়, সে নিজেও জানে না। এক লাফে সেই আট বছর আগের এক শীতের রাতে ফিরে যায় সুজন। Good Luck

(ক্রমশঃ)

বিষয়: সাহিত্য

১১৮৩ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

264216
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:২১
হতভাগা লিখেছেন : ঠিকই বলেছেন - সব মানুষের মনে সাদা ও কালো উভয় দিকই থাকে ।

তবে ..এটা এখন মানুষ নিজ নিজ সুবিধার্থে ব্যবহার করে ।
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৪৪
207727
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আপনি ঠিকই বলেছেন।
অনেক শুভেচ্ছা ব্লগে সাথে থাকার জন্য।Happy Good Luck
264218
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:২৬
কাহাফ লিখেছেন : "'আমি একজন সাদা মনের মানুষ' জপতে অসুবিধা কোথায়?নির্দিষ্ট একটি প্ল্যাটফর্মে দাড়িয়ে নিজেকে একজন সাদা মনের মানুষ হিসেবে কল্পনা করলে স্বীয় বিবেকই অনেক খারাপ কাজ হতে বিরত রাখবে।বিবেকই তো সবচেয়ে বড় আদালাত।"
অমিত সম্ভানাময় এই কথামালা কালোমনা মানুষদের সাদায়িত মননে আনতে ব্যাপক অনুপ্রেরণা দান করবে।
করুণাময় আল্লাহ আপনার মংগল করুন।
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৪৫
207728
মামুন লিখেছেন : আপনার কামনা যেন আল্লাহপাক কবুল করেন।
অনেক ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
264220
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:৩২
আতিক খান লিখেছেন : সাদা কালোর তফাত অনেক সময় খুব সূক্ষ্ম। এজন্যই একজন ব্যাংক লুটেরা সেই টাকায় হজ্ব করে ভাবে আমি নিষ্পাপ হলাম। আসলে সাদা মানুষ বলে কেউ নেই। চাঁদের ও ছোট দাগ থাকে। সাদা হবার এই চেষ্টা যেন চলে নিরন্তর।ধন্যবাদ।
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৫০
207764
মামুন লিখেছেন : সুন্দর ভাবে বুঝিয়েছ তুমি! কিন্তু কোনো নেগেটিভ কিছু দিয়ে কখনো কোনো পজিটিভ কিছু আশা করা যায়না। নেগেটিভ সবসময়ই নেগেটিভই নিয়ে আসবে (সুত্রের কথা ধরছি না)। লুটেরা ব্যাংক লুটের টাকায় হজ্জ করতে চাইলেও তা যে হবে না- এটা সে নিজেও জানে; কারণ নিজের বিবেককে কখনো ফাকি দেয়া যায় না। আর ইবাদতের প্রধাণ শর্ত হালাল আয়। তবে লুটেরা যদি অনুতাপের আগুনে পুড়ে খাঁটি হতে পারে, সে ক্ষেত্রেও ঐ লুটের টাকা কোনো কাজে আসবে না। হ্যা, সাদা মানুষ সচরাচর আমরা দেখছি না, কিন্তু তারা আমাদের আশে পাশেই রয়েছে। এরা মনের দিক থেকে এতোটাই সাদা যে, সাধারণ ভাবে কারো চোখেই পড়ে না। তাদেরকে দেখবার মত সেরক্ম চোখ আমাদের নেই।
তাই আমরা যারা কালো মন নিয়ে সাদা হবার চেষ্টা করছি, এই চেষ্টা নিরন্তর করে যেতে হবে।
ধন্যবাদ তোমার সুন্দর মন্তব্যের জন্য। অনেক শুভেচ্ছা।Happy Good Luck
264222
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:০৭
সন্ধাতারা লিখেছেন : Fantastic!!!!
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৫০
207806
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ আপু!
শুভেচ্ছা রইলো।Happy Good Luck
264239
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:২৯
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৫১
207765
মামুন লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।Happy Good Luck
264255
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৫১
ফেরারী মন লিখেছেন : কম্পিউটারের মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে আনমনা হয়ে যায়, সে নিজেও জানে না। এক লাফে সেই আট বছর আগের এক শীতের রাতে ফিরে যায় সুজন

চলতে থাকুক কি বলেন?
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৫০
207807
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ, হ্যা, চলতে থাকুক।Happy Good Luck
264294
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৬
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : মনকে সাদা করার প্রচেষ্টা চালু রাখতে হবে সর্বক্ষণ।
ভালো লাগলো আপনার লেখাটি। +
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৯
207829
মামুন লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ ব্লগে অনুভূতি রেখে যাবার জন্য।
অনেক শুভেচ্ছা।Happy Good Luck
264396
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০১:০৮
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : সাদা কালো সবই আসলে আপেক্ষিক, নীতির সাথে বাঁধা। আরেকটা সফল সিরিজের সূচনায় অভিনন্দন রইল। আশা করি এবার আর মাঝ পথে থেমে যাবেননা Happyশুভকামনা রইল Good Luck Rose
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৭:৫৪
207967
মামুন লিখেছেন : ঠিক বলেছেন, সবই আপেক্ষিক। তবে প্রত্যেক্টি ধর্মের সারবস্তু এবং সমাজের মৌলিক কিছু নীতিমালার নিরিখে সকল 'ভালো' কিছুই 'সাদা' এবং 'খারাপ' কিছুকেই 'কালো'ধরতে চেয়েছি। আর আপেক্ষিকতা কেবলি এক একজনের দৃষ্টিভঙ্গীর উপরে নির্ভর করে। ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গীর নিরিখে কখনো কালো সাদা মনে হলেও, সমষ্টিকভাবে কালো কখনোই সাদায় পরিণত হতে পারে না।
ধন্যবাদ আপনাকে।
ইনশা আল্লাহ মাঝ পথে না থেমে এগিয়ে চলার ইচ্ছেটা রয়েছে।
শুভকামনা আপনার জন্যও রইলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Happy Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File