কয়েকজন সাদা মানুষ (ধারাবাহিক গল্পঃ পর্ব-১)
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১০:৫২:৪৬ সকাল
মুখবন্ধঃ
আমরা 'মানুষ' হয়ে এই পৃথিবীতে এসেছি।আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ জীব বানানো হয়েছে। অন্য সকল সৃষ্টির থেকে আমাদের এই শ্রেষ্ঠত্ব কেন? একটা হাতি প্রচন্ড শক্তি রাখে। তাঁর তুলনায় আমরা কত ক্ষুদ্র শক্তিধর! অথচ তার পিঠে চড়ে তাঁকে নিয়ন্ত্রন করছি। হিংস্র বাঘ-সিংহ-চিতার সামনে আমরা কত অসহায় বোধ করি। এদেরকেও পোষ মানাচ্ছি... খাঁচায় বন্দী করে আনন্দ লাভের জন্য প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছি।বিষাক্ত সাপও আমাদের বশে এসেছে।
এসব কীভাবে হচ্ছে?
আমাদের সাথে এইসব জীব-জন্তুর পার্থক্য এনে দিয়েছে একটি মাত্র জিনিস। আর তা হল 'বিবেক'। একে ব্রেইন বললে পুরোটা বোঝানো যাবে না। কারণ শিম্পাঞ্জি, বেবুন, ডলফিন-এদেরও ব্রেইন এবং নিজস্ব আঙ্গিকে ভাবার ক্ষমতা রয়েছে।কিন্তু ওদের সেই চিন্তা করার একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে।একটা পর্যায়ে গিয়ে ওদের চিন্তা-ভাবনা থেমে যেতে বাধ্য হয়। কিন্তু মানুষের বেলায় চিন্তার ক্ষেত্রটা অসীম। তাই সে আপাত দৃষ্টিতে ক্ষুদ্র হলেও চিন্তার জগতে অসীমতাকে লাভ করে বিবেকের দ্বারা নিয়ন্ত্রন করায় এক অজেয় শক্তির অধিকারী হতে পেরেছে। না হলে শুধু একটি হৃদয়, হাত-পা আর চোখের দ্বারা অন্য প্রানীদের মতই আচরণ করতো। আবার হিংস্রতার দিক দিয়ে মানুষ কোনো অংশেই ঐ সকল শ্বাপদদের তুলনায় কম নয়। এর প্রমাণ তো অহরহ দেখতে পাচ্ছি। না হলে সম্পদের দিক থেকে অনেক কিছু থাকার পরেও রানা নামের এক হিংস্র মানুষের স্বেচ্ছাচারিতা ও লোভের জন্য হাজারেরও বেশী নিরীহ মানুষকে কি মর্মান্তিক মৃত্যুকেই না বরন করে নিতে হল। অন্য একজন মালিকের নিজের সম্পদ রক্ষার নামে তালাবদ্ধতার শিকার হয়ে কতগুলো মানুষকে আগুনে পুড়ে মরতে হল তাজরীন ফ্যাশন নামের পোশাক কারখানাটিতে। শুধুমাত্র লোভের বশবর্তী হয়ে একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর কয়েকজন ট্রেইনড উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জের সেই নির্মম হত্যাকান্ড ঘটালেন। এরকম অনেক উদাহরণ দেয়া যেতে পারে।
কেন মানুষের দ্বারা এই হিংস্র কর্মকান্ডগুলো ঘটে চলেছে? উত্তর একটাই- এরা এদের বিবেকের সঠিক প্রয়োগ করছে না। আমাদের হৃদয়ে যে কোনো ইচ্ছার সুত্রপাত হয়। তাঁকে মানুষের ব্রেইন দক্ষ অ্যানালিস্টের মত বিশ্লেষন করে। আর এই দুই এর মাঝে অদৃশ্য বিবেক সব শেষে কর্মপহ্না নির্ধারণ করে। এই 'এক্সিকিউশন' আবার দুই ভাবে হয়ে থাকে। ভালো এবং খারাপ। অন্যভাবে বলতে গেলে সাদা এবং কালো। তবে একজন মানুষের অদৃশ্য বিবেক কি পুরোটাই ভালো বা খারাপ হতে পারে? অবশ্যই না। প্রতিটি মানুষের ভিতরেই ভালো-খারাপ মেশানো থাকে। না হলে সে মানুষ না হয়ে 'ফেরেশতা' বা 'শয়তান' হতো। সাধারণ অর্থে 'মানুষ' সবাই-ই ভালো। কিন্তু বিবেকের প্রয়োগের বেলায় সে সাদা-কালো হৃদয়ের অধিকারী হয়। তবে এটা আপেক্ষিক এবং কোনো মানুষের বেলায়ই এটা শেষ কথা হতে পারেনা। মানুষ বিবেকের দংশনে অনুতাপে দগ্ধ হয়ে কালো থেকে সাদা মনের মানুষে পরিণত হতে পারে যে কোন সময়ে। না হলে 'ইসলাম' ধর্মের প্রারম্ভিক যুগে সেই 'আইয়্যামে জাহেলিয়াতের' যুগে সেই সময়ের সর্বনিকৃষ্ট মানুষগুলো সর্বোৎকৃষ্ট সোনার মানুষে পরিণত হতে পারত না। নিজাম ডাকাতের মতো কেউ হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়ায় পরিণত হতে পারতেন না। তার মানে আমাদের ভিতরেই দুটো গুণ কিংবা দুটো 'ফর্মেশন'ই রয়ে গেছে।
তবে যখন কেউ বলে ' আমি সাদা মনের মানুষ নই' বা 'নিজেরাই নিজেদেরকে সাদা বলে সার্টিফাই করাতে লজ্জা বোধ করা'- এ ব্যাপারে কিছু কথা বলতেই হয়। আগেই বলেছি আমাদের সকলের ভিতরেই সাদা এবং কালো-উভয় গুণই এক সাথে রয়েছে। তাই কিছু খারাপ গুণের কারণে যে আমি একজন কালো মনের মানুষই রয়ে যাবো তা কি ঠিক? নিজের ভেতর থেকে নিজেকে উত্তরণের চেষ্টা না করে যেভাবে আছি তাতে গা ভাসিয়ে চলার ভিতরে সার্থকতা কোথায়? আমি সব সময়েই 'পজিটিভ' দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্বাসী। আর নিজেকে কালো মনের মানুষ মনে করা থাকাটা নেগেটিভ অ্যাটিচিউড। নিজেই যদি কালো মন নিয়ে থাকতে চাই এবং তাতে অটল থেকে আত্মতৃপ্তি লাভ করি, তবে কি কেউ আমাকে হাতে ধরে 'সাদা মন' করে দিতে আসবে? আর তুমি অধম বলে আমি উত্তম হব না কেন? অন্য কেউ একটা প্ল্যাটফর্ম করে যদি চেষ্টা শুরু করে, তাতে ক্ষতিটা কোথায়? কেন লজ্জা পেতে হবে?
'পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ থাকলেও একজন খারাপ বাবাকে পাওয়া যাবে না' হুমায়ুন আহমেদ এর কোনো এক লেখায় এরকম একটা কথা পড়েছিলাম। এই কথার ভিতরে অনেক কিছু লুকিয়ে রয়েছে। যখন আমি একজন বাবা হয়ে যাই, তখন আমার সন্তানের জন্য পৃথিবীর সকল ভালোগুণ গুলোকে ধারণ করেই তো আমি 'একজন সাদা মনের' মানুষে পরিণত হই। সকল বাবা-ই তাই হন। আর এক একজন বাবা কি এক একজন মানুষ নন?
গোয়েবলসীয় প্রচারনার ব্যাপারে আমরা সবাই-ই কম বেশী অবহিত। একটি মিথ্যে কথা বার বার প্রচার করলে, কানের কাছে বলা হলে একসময় হৃদয় সেটিকে সত্য বলে মেনে নেয়। তাহলে আমার ভিতরের কালো গুনগুলোকে ভিতরে না রেখে... 'আমি একজন কালো মনের মানুষ' বার বার না জপে 'আমি একজন সাদা মনের মানুষ' জপতে অসুবিধেটা কোথায়? যখন-ই আমি এরকম নির্দিষ্ট একটি প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে নিজেকে সাদা মনের মানুষ হিসাবে কল্পনা করবো; আমার বিবেকই তখন আমাকে খারাপ কাজগুলো থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবে। আর সব থেকে বড় আদালত হল মানুষের নিজের বিবেক। আমি বলছি না যে এভাবে নিজেকে সাদা মনের মানুষ ভাবতে থাকলেই একদিনে সবাই সাদা মনের মানুষ হয়ে যাবে... সাথে সাথে এটাও ভাববার কোনো অবকাশ নেই যে খারাপ গুণগুলো থাকায় সবাই-ই কালো মনের মানুষ। কিন্তু এই সাদা-কালো মেশানো মানুষগুলো অন্তত নিজেদেরকে সাদা মনের মানুষ হবার একটা চেতনাবোধ তো লাভ করতে পারে এভাবে ভাবার দ্বারা! আমাদেরকে একটা পর্যায় থেকে তো শুরু করতেই হবে। তবে এখুনি নয় কেন?
আমি নিজেকে একজন 'সাদা মনের মানুষ' বলতে লজ্জাবোধ করছিনা। কারণ আমার ভিতরের কালো অধ্যায়কে আমি খুব ভালো করেই জানি। তাই আমার নিজেকে সাদা বানোর প্রয়োজন অন্য সবার থেকে বেশী। নিজের চিন্তা-চেতনায় কালোকে অহর্নিশি সাদা দ্বারা অবলেপন করতে চাই। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে এই তৌফিক দান করুন-আমীন।
কয়েকজন সাদা মানুষ লিখার পটিভুমি...
আমি আমার লেখা-লেখির জগতে প্রথম এসেছিলাম আমার সেজো ভাই এর উৎসাহে... গত (২০০১ ইং মেয়াদকালীন) বিএনপি সরকারের আমলে। আমি কিছুদিন (প্রায় ৬ মাস) খুলনায় আমার আব্বা-আম্মার সাথে ছিলাম। সেই সময়ে কানসাট আন্দোলন হয়। বিদ্যুতের দাবীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট এর মানুষ আন্দোলন করলে পুলিশের গুলিতে কয়েক দফায় মোট ২০ জন নিরীহ গ্রামবাসী নিহত হয়। আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে। যারা এই আন্দোলনের নেত্রিত্ত দিয়েছিলেন তাদের উপর নির্যাতন ও বাড়ীঘরে অগ্নি-সংযোগ করা হয়।
আমার সেজো ভাই তখন কুইন্স ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা কমপ্লিট করে খুলনা জাজ কোর্টে প্র্যাক্টিস করছে।ওর একজন খুব কাছের বন্ধু যে এখন ঢাকা হাইকোর্টে প্র্যাকটিশ করছে- সে, আমি আর আমার সেজো ভাই সেই সময় এক সাথে সময় কাটাতাম। বিভিন্ন আলাপ-আলোচনা করতাম। এ ছাড়া Alliance for Justice (AFOJ) নামে একটি সংগঠন করেছিলাম। আমি সেই সময় ওটার সেক্রেটারি ছিলাম। দু'একজন ছাড়া এই সংগঠনটির বাকীরা ছিলেন এডভোকেট যারা খুলনা কোর্টে প্র্যাকটিশ রত ছিলেন। বিভিন্ন দুঃস্থ মানুষদেরকে ফ্রী আইনি সহায়তা করাই ছিল এর মুল উদ্দেশ্য।
কানসাটের এই নির্মম ট্রাজেডি আমাদেরকে খুব মর্মাহত করেছিল। আমার ভাই ও তার বন্ধু সেই এডভোকেট আমাকে একটা পরিকল্পনার কথা জানায়। সেটা হলো একটা 'নসিমন' (স্যালো মেশিনে চালিতো টেম্পু জাতীয় বাহন, যা মেইন রোডে নিষিদ্ধ) নিয়ে খুলনা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর কানসাট অভিমুখে রওয়ানা হব। সাথে একটা বিশাল ব্যানার থাকবে সেখানে এই নির্মম হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ থাকবে।
সবকিছু প্ল্যানমাফিক করা হল। একদিন সকালে খুব পরিচিত এক ভাই এর 'নসিমন' নিয়ে আমরা তিনজন কানসাট অভিমুখী রওয়ানা হলাম। ভালোই লাগছিল। কিন্তু খুলনার ফুলবাড়িগেট আসার পরেই আমাদে ব্যানার দেখে পুলিশের এক দল আমাদেরকে থামায়। তাদের সাথে কিছু যুবক ছেলেও ছিল। এরা তখনকার সরকারি ছাত্র সংগঠনের কর্মী। সবাই মিলে আমাদের ব্যানার -ফেস্টুন ছিড়ে ফেলে দেয়। আমাদের নসিমনের ড্রাইভারকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। আমাদের তিনজনকে লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করে। আমার সাথে একটি ক্যামেরা ছিল। সেটা ও সীজ করে। এভাবে আমরা কানসাটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্যাতিত হই।
বাসায় এসে বিমর্ষ আমি বসে আছি। আমার সেজো ভাই বলে, ' আপনি এইটা নিয়ে কিছু লিখেন। আমাদের লিখা তো আর দমায়ে রাখতে পারবে না। আর যে কোনো লিখাই যুগ যুগ থেকে যায়... যতোই সেন্সর করা হোক না কেন।' আমি সেদিন থেকেই 'কয়েকজন সাদা মানুষ' নাম দিয়ে এই লিখাটা শুরু করেছিলাম। পরবর্তিতে আমি আবার সাভারে আমার পরিবারের (দুই কন্যা ও বউ) কাছে ফিরে যাই। পান্ডুলিপিটি খুলনায় আমার সেজো ভাই এর কাছে থেকে যায়। এরপর দেশের রাজনীতিতে বিবিধ পরিবর্তন আসে... ক্ষমতার পালাবদল হয়। মোট কথা লিখার জগত থেকে অনেক দূরে সরে আসি। সেই পান্ডুলিপিটিও পরে হারিয়ে যায়।
এরপরে ফেসবুকে আইডি বানানোর পরে কয়েক বন্ধু এবং এক বড় ভাই এর উৎসাহে আমি আমার হাবিজাবি লেখাগুলো শুরু করি। তখন আমার জীবনের প্রথম এই লিখাটি আমাকে নস্টালজিয়ায় ভোগায়... আমি একটা ফেসবুক পেজও বানিয়েছিলাম এই নামে (কয়েকজন সাদা মানুষ)। নতুন করে লিখাটি শুরু করি। কিন্তু কয়েক পর্ব লিখে অন্য কিছু লিখার জন্য সেটা আবারো থেমে যায়। ... একদিন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হই... আগে এই লিখাটি শেষ করেই অন্য কোনো লিখায় হাত দিবো।
কানসাট অভিমুখে যাত্রা দিয়ে যে কাহিনী শুরু হয়েছিল... এবারের লেখায় সেটার বর্ণনা থাকছে না সরাসরি। তবে কাহিনীর সাথে লিঙ্কড হয়ে দু'এক যায়গায় আসতেও পারে।
একজন মেয়ে সহ ওরা খুব কাছের ক'বন্ধু ভার্সিটির লেখা পড়া শেষ করে যার যার জীবনযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। রামপালে তাপবিদ্যুৎ বানানোর বিরুদ্ধে ওরা সবাই সেই কানসাট আন্দোলনের মতো এবারো বাগেরহাটের রামপালে যাবার জন্য যার যার এলাকা থেকে গাজীপুরের ওদের বন্ধু সুজনের বাসায় একত্রিত হয়। এভাবেই কাহিনী শুরু। এর ভিতরে যার যার জীবনের গল্প প্রসংগক্রমে এসে যাবে।
কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে এই লিখাটি নয়। দল-মত নির্বিশেষে এ দেশের আমজনতার পক্ষ থেকে এই লিখাটি লিখলাম...
কয়েকজন সাদা মানুষ
এক.
হেলাল...
লঞ্চ ছাড়তে এখনো ১ ঘন্টা বাকী। ডেকের উপর চাদরটা বিছিয়ে ব্যাগটাকে বালিশের মত করে রাখল সে। আশপাশ এখনো ভরে নাই। তবে কিছুক্ষণের ভিতর ভরে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নাই। এক গ্রুপ এর ভিতরেই তাস নিয়ে বসে গেছে।সবাই স্টুডেন্ট মনে হচ্ছে। লঞ্চের জার্নিতে এই এক মজা। শুয়ে-বসে আরামে যাওয়া যায়।রুমালটা দিয়ে মুখ ঢেকে শুয়ে পরলো হেলাল। কোনো কিছুই দেখতে ইচ্ছে করছে না।
... ... ...
খালিদ
স্টিকটাতে শেষ টান দিয়ে ফেলে পা দিয়ে পিষে ফেললো।ট্রেনের হুইসেল পড়ে গেছে। যে কোনো সময় ছেড়ে যাবে। গুজাইয়্যার কাছ থেকে কয়েকটা রেডিমেট জিনিস ভরা সিগারেট নিয়ে নেয়া হয়েছে। ট্রেনে তো আর খাওয়া যাবে না। এজন্য আগেই স্টেশনের এক কোনে নোংরা একটা জায়গা বেছে নিতে হয়েছে খালিদকে। সবসময়ে ই তাই করতে হয়। জার্নিতে স্টিক থাকবে না, কল্পনাই করা যায় না। চোরের মত একটা সিগারেট ধরিয়ে টেনে শেষ করে বগির দিকে এগিয়ে যায়। সাপের মত নিস্পলক দৃষ্টি।
... ... ...
রুনা
ছেলে আর মেয়ে দুটো ই রুনাকে বাসে তুলে দিতে এলো। বড়টা ছেলে। ১৪ বছরে পা দিয়েছে। সেই তুলনায় মেয়েটাকে অনেক বড় ও পরিণত লাগে। মাত্র ১২ বছরে যেন সবার গার্জিয়ান। মাসুদ অফিসে। ও ইচ্ছে করলে আসতে পারত। কিন্তু সেই সব সময়ের মত...
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস গোপন করল সন্তানদের কাছ থেকে। সব সময় ই তো এটা করে আসছে। ড্রাইভার বাস ছেড়ে দিলো। দৃষ্টিপথে ছেলেমেয়েরা একসময় ছোট হতে হতে মিলিয়ে গেলো।
... ... ...
রশিদ
অনেক্ষন ধরে শিকারটাকে ফলো করতে হয়েছে। খাউয়া টাইপের এই ভোম্বলটা। বাস স্ট্যান্ডের যতগুলো ফেরিওয়ালা ছিলো সবার কাছ থেকেই মনে হয় কিছু কিছু কিনে খেয়েছে। বাদাম-চানাচুর ভাজা-পপকর্ণ-বাদাম পাপড়ি এমনকি কুলফির আইস্ক্রীম খেয়েছে বাচ্চাদের মতো দু’বার। এখন ঘুমাচ্ছে। জানে ও না ওর মানিব্যাগের সব টাকা এখন রশিদের পকেটে।খালি মানিব্যাগটা পাশের ড্রেনে এক কোনা বের করে দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।এক সময় পকেটমারা ই ওর পেশা ছিলো। লেখাপড়া কম করে নাই। ডিগ্রী পাস করেছিল ভালো ভাবেই। কিন্তু...
ঢাকাগামী একটা বাসের ছাদে উঠে পড়লো রংপুরের এই মফিজ।এই নামে ওকে ডাকতো সুজন। এই সুজনের কারণেই আজ স্বাভাবিক জীবনে আসতে পেরেছে সে। তবে মাঝে মাঝে পুরনো পেশাটা একটু ঝালাই করে নেয়। যেমন আজকে করল। আশেপাশে তাকিয়ে চোরের মত একটা বিড়ি ধরিয়ে কান টুপিটা আরো ভালো করে নীচের দিকে নামিয়ে আনল।
... ... ...
সুজন
আজ একটু তাড়া অনুভব করে সুজন। বসের কাছ থেকে আজ ৫ টায় বের হবার পারমিশন আগেই নিয়ে রেখেছে। বন্ধুরা সবাই আসছে। কফিলকে আগেই বলে রেখেছে কি কি বাজার করতে হবে। কার কি পছন্দ তা তো সে ভালো করেই জানে।
খালিদ চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সেই সকালে রওয়ানা দিয়েছে। এখন বাজে ৪টা। শেষবার মোবাইলে কথা হল শনির আখরা এসেছে। হেলাল সদরঘাট এসে গেছে। একটা সিএনজি নিয়ে আসছে।রুনা খুলনা থেকে আসবে। এখনো পাটুরিয়া ফেরিঘাটের ওপারে। আর রংপুইরা মফিজ বাসের ছাদে ঘুমায়ে থাকে কিনা। ওর যা অভ্যাস। এই শালায় মোবাইল ব্যাবহার করে না।এক অদ্ভুত ক্যারেক্টার। আজো তাকে বোঝা হলো না।
নিজেকে ও কি বুঝতে পেরেছে সুজন?
কম্পিউটারের মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে আনমনা হয়ে যায়, সে নিজেও জানে না। এক লাফে সেই আট বছর আগের এক শীতের রাতে ফিরে যায় সুজন।
(ক্রমশঃ)
বিষয়: সাহিত্য
১১৮৩ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে ..এটা এখন মানুষ নিজ নিজ সুবিধার্থে ব্যবহার করে ।
আপনি ঠিকই বলেছেন।
অনেক শুভেচ্ছা ব্লগে সাথে থাকার জন্য।
অমিত সম্ভানাময় এই কথামালা কালোমনা মানুষদের সাদায়িত মননে আনতে ব্যাপক অনুপ্রেরণা দান করবে।
করুণাময় আল্লাহ আপনার মংগল করুন।
অনেক ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
তাই আমরা যারা কালো মন নিয়ে সাদা হবার চেষ্টা করছি, এই চেষ্টা নিরন্তর করে যেতে হবে।
ধন্যবাদ তোমার সুন্দর মন্তব্যের জন্য। অনেক শুভেচ্ছা।
শুভেচ্ছা রইলো।
চলতে থাকুক কি বলেন?
ভালো লাগলো আপনার লেখাটি। +
অনেক শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ আপনাকে।
ইনশা আল্লাহ মাঝ পথে না থেমে এগিয়ে চলার ইচ্ছেটা রয়েছে।
শুভকামনা আপনার জন্যও রইলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন