পাবলিকের বোধোদয়
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ৩১ আগস্ট, ২০১৪, ০৯:০৩:৩০ সকাল
বাবা-মা কি মনে করে ওর নাম যে 'পাবলিক' রেখেছিল!
মনটা খুব খারাপ ছিলো সেদিন পাবলিকের।
সকাল থেকে আরো বেশী খারাপ হতে শুরু করলো যখন কুয়াশায় চারিদিক ঢেকে গেলো। আজ আর মামু'র আস্তানায় যাওয়া হবে না বোধহয়। ক'দিন হল এই মামু'র আস্তানায় যাচ্ছে সে।
কিসের জন্য যায়?
সর্বসমক্ষে সেটা বলার মত না। তবে এখন যেহেতু নিজে নিজে ভাবছে, বলা যেতে পারে।
নেশা করতে যায়। আরো ক্লীয়ার করে বললে, গাঁজার নেশা করতে যায়। কল্কিতে দম দিতে যায়। সে নিজেও জানে এটা ভালো কাজ না। তারপর ও... যায় সে।
বাসা থেকে বের হল। কেমন এক থমথমে অবস্থা। আর্মি নেমেছে ক'দিন হল। তাদের আনাগোনা কিছুটা হলেও সুস্থির পরিবেশ এনে দিয়েছে। যে হারে পেট্রোল বোমায় ঝলসানো শুরু হয়েছিল। আজ থমথমে অন্য কারণে। বিরোধী দলীয় নেত্রীর 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসী'র ডাকে এই দলের সমর্থকেরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকা আসছে। আর সরকারী দল ও তাদের অঙ্গসংগঠন সেই ঢাকামুখী জনতাকে বাঁধা দিতে বদ্ধপরিকর। কেউ পতাকা হাতে আসছে... তাদেরকে বাঁধা দিতে কেউ লাঠি হাতে অপেক্ষারত। আর লাঠিয়াল পুলিশ বাহিনী তো রয়েছেই। গোপন সুত্রে জানা যায়, নিরস্ত্র এই পতাকাবাহী জনতার ভিতরেই সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলের ছাপ মারা দলের সমর্থকেরাও ঘাপটি মেরে আসছে।
আসুক। তাতে ওর কি আসে যায়। ওর নিজের সাপ্লাইয়ের একটা ব্যবসা ছিলো। আর একটা বাস ছিল... অনেক কষ্টে ধার-কর্জ করে বাসটা নামিয়েছিল। কত আশা হৃদয়ে নেচে বেড়াচ্ছিল... কিন্তু একদিন পথের পাশে পার্ক করে থাকা অবস্থায় ওর হেল্পার ছেলেটা সহ কুলাঙ্গারদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় পূড়ে কয়লা হয়ে গেলো। বাসটি বীমা করানো ছিল না। একেবারে পথে বসে গেলো...
সাপ্লাইয়ের কাজটা ও নিয়মিত করা যাচ্ছিলো না ধারাবাহিক হরতাল-অবরোধের কারণে। ওর থেকে কত বড় বড় ব্যবসায়ীরাও গালে হাত দিয়ে বসে আছে... চিন্তা করতে করতে মামু'র আস্তানায় ঢুকে যায় সে... মাথা নীচু করে... মনের উপর একটা কালো পর্দা পড়ে যায়। যে কাজটি করতে যাচ্ছে, সেটাতে মনের সায় নেই। কিন্তু অভ্যাসে পরিণত হয়েছে এ ক'দিনে। উইথড্রয়াল সিম্পটম ও ভোগাচ্ছে।
আধা ঘন্টা পর...
পল্টনের কাছাকাছি এসে পড়েছে সে। কেমন এক ঘোরলাগা দৃষ্টি নিয়ে চারদিক দেখছে। এই কি ওর সোনার সেই দেশ? একটা আশান্তি থেকে মুক্ত থাকার জন্য ওদের পুর্বসূরীরা সেই '৭১ এ নিজেদেরকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন কি আজকের এই অশান্তি এনে দিতে? টলমল পায়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়...
লাঠি হাতে আর কোমরের কাছটায় অদ্ভুদভাবে ফুলে থাকা কিছু তরুন প্রবেশ পথগুলোতে দাঁড়িয়ে আছে। আরো একটু কাছে গিয়ে দেখার চেষ্টা করে। হ্যা, তাইতো। জয় দাদা না? চোখদুটো রগড়ে নিয়ে ভালোভাবে তাকায়। হ্যা, হ্যা, উনিই তো। ওনার কাছেই তো 'সব তথ্য থাকে'। কতবার ভেবেছে কিছু তথ্যের জন্য তার কাছে একবার যাবে। কিন্তু এতো ব্যস্ত থাকেন তিনি, যে ওর মতো নগন্যকে দেবার মত সময় কি তার আছে।
হঠাৎ শোরগোল ও মিছিলের স্লোগানের শব্দে সে পিছনে ফিরে তাকায়। লাঠির সাথে পতাকা বেঁধে একদল আসছে। তাদের সামনের নেতৃত্তে থাকা সাদা পোশাকের তরুনকেও কেমন চেনা চেনা মনে হচ্ছে। কাছে আসতেই দেখে, আরে এতো তারেক ভাইয়া! হ্যা যিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে ছিলেন। এতো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে গেলেন? ওনার বিরুদ্ধে সকল মামলায় বোধহয় উনি খালাস পেতে যাচ্ছেন। সেই খুশীতেই মনে হয় সুস্থ হয়ে গেছেন।
জয় এর নেতৃত্তে প্রবেশ পথরোধকারী গ্রুপ পজিশন নিয়ে নিয়েছে...
তারেক এর পতাকাবাহী দল ও প্রস্তুত...
একদল নেড়ি কুকুরের মতো একে অপরের মাংস খুবলে নেবার জন্য সকলে ঝাপিয়ে পড়লো...
চীৎকার... আর্তনাদ... গুলীর আওয়াজ... বারুদের গন্ধ... ঝরে পড়া রক্তের নেশা ধরানো গন্ধ... কান্না আর ফোফানোর বেদনাদায়ক শব্দ... এসব কিছুকে এক সাথে অনুভব করে সে।
আর বুকের সামনের অংশে এক প্রচন্ড আঘাত... তবে একটা ধাক্কার সাথে উড়ে গিয়ে পড়তে পড়তে সে দেখে রাজপথটা ওর মুখে এসে আঘাত করলো। এবারে সব পরিষ্কার হচ্ছে... ধীরে ধীরে। যাকে জয় মনে করেছিলো, সে ফাটানো খুলী নিয়ে ওইতো পড়ে আছে! মাথার মগজ বের হয়ে আছে... নিথর... নির্বাক। আর যাকে তারেক ভেবেছিলো, সে এক চোখ নিয়ে নীলাকাশের পানে একভাবে তাকিয়ে আছে। অন্য চোখটা এখন একটা গর্ত ছাড়া আর কিছু না। একটা বুলেট সেটাকে ছিড়ে নিয়ে বের হয়ে গেছে।
চেতন আর অচেতনের মাঝামাঝি এসে সে আরো পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারলো তারেক আর জয় এবং তাদের মায়েরা সবসময়ই নিরাপদে থাকবে। তাদের জন্য এই রাজপথ নয়। ওনারা ইশ্বরের মতো... থাকবেন ওয়াশিংটন ডিসি কিংবা লণ্ডনের মতো ভদ্রপল্লীতে। নোংরা এই বং নামের দেশে তাদের কি কাজ? এ দেশ তো টাকা কামানোর জন্য... আর বিয়ে সাদী কিংবা প্রাসাদোপম বাড়ি হবে সেখানে। হেথা নয় হেথা নয় অন্য কোথায়!
একেবারে অন্ধকার হয়ে যাবার আগে পাবলিক দেখতে পেলো তারেক ও জয় এক সাথে দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে। হাসিমুখে ওকে বলছে, 'বোকা!'
একটা অধ্যায় ছ্যাত করে শেষ হয়ে গেলো...
বিষয়: রাজনীতি
৮২০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন