হালচালঃ ২৪ আগস্ট, ২০১৪ ইং

লিখেছেন লিখেছেন মামুন ২৪ আগস্ট, ২০১৪, ০২:৫০:২১ দুপুর

আমাদের মানার অভ্যাস কবে হবে?

এক.

একজন মন্ত্রীর প্রকাশ্যে ধুমপান করা নিয়ে সামাজিক মাধ্যম এবং নিউজ মিডিয়াগুলোতে বেশ আলোড়ন চলল কিছুদিন। এরপর সাংবাদিকদের সম্পর্কে ওনার মন্তব্য নিয়েও অনেক লেখালিখি হল। আমার আজকের প্রসঙ্গ ওনাকে নিয়ে নয়। তবে ধুমপানের ব্যাপারটা তার ক্ষেত্রে এতো বেশী আলোচনা পাবার কারণ হল, তিনি একজন জনপ্রতিনিধি এবং দায়িত্বশীল একটি পদে রয়েছেন। কিন্তু যেভাবে প্রকাশ্যে চলছে ধুমপানের মহোৎসব, তাতে কি আমরা একটুও বিচলিত হচ্ছি? পরোক্ষ ধুমপানে অধুমপায়ীরা যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেটিও উপেক্ষা করবার মত নয়। আমাদের দেশে আইন তৈরী হয়েছে, কিন্তু মানা হচ্ছে কোথায়? আর এই না মানার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে অনেক জটিলতা। একই সাথে আইনের অবমাননা করা হচ্ছে প্রকাশ্যে। যদি মানাএত না পারা যায়, তবে কেন এই আইন করা? সিষ্টেমের ভিতরে এই না পারার ব্যর্থতাকে খুঁজে বের করে পদক্ষেপ নেয়া দরকার।

দুই.

আমাদের বাংলাদেশীদের মানার যোগ্যতা আসলেই কম। কিছুটা রয়েছে না মানার একগুঁয়েমি মনোভাব, কিছুটা অবহেলা আর কিছু রয়েছে উদাসীনতা। পোশাক শিল্পের সাথে জড়িত হবার সুবাদে একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে অ্যাক্সেসরিজ অর্ডার করতে হয় আমাকে। প্রায়ই এই কোম্পানির মার্কেটিং এর সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের সাথে আমার মোবাইলে কথা হয়। কথাবার্তার বেশীরভাগ সময়ই ওনাদেরকে মটর বাইকে পাই। রিঙ বেজে চলে। ওপাশ থেকে সাড়া না পেয়ে মাঝে মাঝে একটু বিরক্তও হই। তবে একদিন এক কর্মকর্তা আমাকে জানালেন, ' বাইকে চলন্ত অবস্থায় কথা বলার ব্যাপারে কোম্পানী থেকে বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে সবাইকে। কখনো জানতে পারলে চাকরি নিয়েই টানাটানি পড়ে যাবে'... শুনে আমি খুশীই হয়েছি। ওনারা যে কঠোরভাবে এই আইনটি মেনে চলেছেন, তাতে হৃদয়ের এক কোণে ভালোলাগার এক আবেশে যারপরনাই উৎফুল্ল হয়েছি। আজ সেই একই কর্মকর্তাকে কাজের প্রয়োজনে ফোন করলাম। তিনি মোবাইল রিসিভ করলেন। আওয়াজে বুঝলাম বাইকে রয়েছেন। সে কথা জিজ্ঞেসও করাতে বললেন, ' হ্যা, আমি বাইকেই আছি, বলেন অসুবিধা নাই।' একটু টাসকি খেয়ে গেলাম! পরক্ষণেই মনে পড়ল, তিনি অন্য কোম্পানিতে জয়েন করেছেন। সেখানে বুঝি এই ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু এই ‘চলন্ত অবস্থায়’ কথা না বলাটা যে চালক হিসেবে ওনার নিরাপত্তা বিধান করছে, একবারও এই শিক্ষিত মানুষটি ভাবলেন না। আগের কোম্পানিতে ‘মানতে বাধ্য করাতে’ মেনেছেন, এখন সেই বাধ্যবাধকতা নেই বলেই মানছেন না! বাহ! কি সুন্দর মনোবৃত্তি। আসলে আমাদেরকে ‘মাইরের’ উপরে রাখতে হবে। এখানে ‘মাইর’ দ্বারা আমি ‘বাধ্য করানো’ বুঝাতে চাইছি।

তিন.

ঢাকায় যখন বসবাস করতাম, বন্ধের দিনগুলোতে আমার ছোট ভাই এর সাথে বাইকে ঘুরতে বের হতাম। চালক হিসেবে আমার ছোট ভাই আইনকে মেনে চলতো অত্যন্ত কঠোরভাবে। হেলমেট একটি 'পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট'। এটি চালক এবং যাত্রী উভয়ের 'সেফটি'র জন্যই খুবই জরুরী। সেই সময়ে এবং এখনো পথে বের হলেই দেখি, হেলমেট বিহীন মটরবাইকে চলাফেরা করা চালক এবং যাত্রীদের। অত্যন্ত জরুরী এই রক্ষাকবজটি অবহেলায় বাইকের পিছনে কিংবা সাইডে পড়ে থাকে। আর যখনি 'মোবাইল কোর্ট' বসে কিংবা সামনে ট্রাফিক সার্জেন্টকে বেশ 'কর্মতৎপর' মনে হয়, তখনি হেলমেটকে আলগোছে তুলে মাথায় পড়তে দেখি। খুব দুঃখ হয়, যখন স্বেচ্ছায় আমরা আইনকে না মেনে ভয়ে বা বাধ্য হয়ে মানার অভিনয় করি।

এজন্যই বলেছিলাম, আমাদেরকে 'মাইরের' উপরে রাখতে হবে। তাহলে যদি মানতে মানতে একসময় অভ্যাস হয়। মনটা স্বচ্ছ হয়। ভিতর থেকে শ্রদ্ধা জাগ্রত হয়।

আর কোনো বিকল্প আছে কি?

Good Luck

বিষয়: বিবিধ

৭১৮ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

257743
২৪ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:৫৭
কাহাফ লিখেছেন : প্রায়ই শুনি বাক্যটা..... "মাইরের উপর ওষুধ নাই" এটার প্রয়োগ না হলে জনগণ ঠিক হবে না মনে হয়। Not Listening Not Listening Not Listening Not Listening
২৪ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০৩:০৬
201398
মামুন লিখেছেন : তাইতো মনে হচ্ছে। আপনি দেখুন না, ইসলামিক রাষ্ট্রগুলোতে কঠিন আইনের প্রকাশ্য বাস্তবায়নের জন্যই সেখানে তুলনামুলকভাবে অপরাধ কম হচ্ছে। আমাদের এখানেও যদি এই কঠোরতা থাকতো, বাসবিকই অনেক অপরাধ কমে যেতো। ধন্যবাদ আপনাকে।Good Luck
২৪ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০৩:২১
201409
আহ জীবন লিখেছেন : মামুন ভাই গণতন্ত্রের কি হবে তাহলে।
257762
২৪ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৪:০২
ফেরারী মন লিখেছেন : নিজেকে যতদিন না ঠিক করতে পারবো ততদিন এসব ঘটতেই থাকবে। শুধু আইন দিয়ে সবকিছু করা যায় না। সুন্দর লিখেছেন। ধন্যবাদ
২৪ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৪
201457
মামুন লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।Good Luck
257776
২৪ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৪:৪২
আজিম বিন মামুন লিখেছেন : খুব প্রয়োজনীয় একটা টপিক্স তুলে ধরায় প্রথমেই ধন্যবাদ আপনাকে।কিছুক্ষণ আগে ফেসবুকে নোমান ছাহাবের পেজে পড়লাম,"আমরা আল্লাহকে প্রভু হিসেবে মানি সত্যি,কিন্তু নিজেদের গোলাম হিসেবে মেনে নিতে পারিনি"আপনার আক্ষেপিত উক্তির সাথে যথেষ্ট মিল আছে কথাটির।সত্যি,শুধুমাত্র মানার যোগ্যতা না থাকায় সমগ্র মুসলিম জাতির আজ এই দুরাবস্হা।
২৪ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৫
201458
মামুন লিখেছেন : আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ। আল্লাহ পাক আমাদেরকে মানার তৌফিক দান করুন। শুভেচ্ছা আপনার জন্য।Good Luck
257789
২৪ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৫:৪২
মামুন লিখেছেন : গণতন্ত্র আসলে বাস্তবিক একটি নিকৃষ্ট সরকার পদ্ধতি। কারণ আদতে কখনোই জনগণের সরকার গড়ে উঠে না। আপনি আমাদের দেশের কথাই ধরুন। এ দেশে দুই দল ভোট কম-বেশী পেয়ে সরকার গঠন করে আসছে। ধরি, একবার আওয়ামী লীগ ৫৫% ভোট পেয়ে ক্ষমতায়। তাহলে বাকী ৪৫% ও যদি বিএনপি'র ধরি, তবে এই ৪৫% ভোটার কিন্তু আপনাকে চায়নি (যারা সরকার গঠন করেছে তাঁদের)। কিন্তু সরকার পদ্ধতি 'গণতান্ত্রিক'ই বলা হচ্ছে। কীভাবে এটা জনগণের সরকার হল। এ তো গেলো তত্ত্বগত দিক। আর একেবারে বাস্তবে আমরা দেখি, দুই পরিবারের মেয়াদান্তিক শাসন। নিজেদের দলের ভিতরেই গণতন্ত্র নেই। একই মানুষ দলের প্রধান যুগ যুগ ধরে!! এমন গণতন্ত্র কি আমরা চাই? @আহ জীবন? ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। Good Luck
২৫ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৬:৩০
201620
কাহাফ লিখেছেন : রিমান্ডে যাওয়ার সমুহ সম্ভাবনা ভাই এমন প্রকাশে...........=Happy =Happy =Happy
257993
২৫ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৮:০০
মামুন লিখেছেন : সত্যম শিবম সুন্দরম... সত্যর জন্য না হয় দুনিয়াবি কিছু রিমান্ড ভোগ করলামই। পরকালের চিরস্থায়ী রিমান্ডের চেয়ে এটা কি ভালো নয়? ধন্যবাদ আপনাকে। শুভেচ্ছা নিরন্তর। Rose Rose

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File