নক্ষত্রেরা ফিরে গেছে

লিখেছেন লিখেছেন মামুন ১৮ আগস্ট, ২০১৪, ১২:৪৫:১২ রাত

সারাদিন কর্মব্যস্ত। সেই সাড়ে পাঁচটার পর নিজের বলে কিছু সময় পাওয়ার শুরু। আসলেই কি নিজের সময় বলে কিছু রয়েছে ওর জীবনে। অফিস আওয়ারের পরে বাসায় সময় দেয়া। বাসা বলতে বাসাই। এখনো যখন বাড়ি হয়ে উঠেনি, বাসাই বলতে হচ্ছে। ছোট্ট একটি শান্তির নীড়... কিন্তু ওর বাসাটা ছোট ঠিকই, তবে শান্তি রয়েছে কিনা... সেটি পরীক্ষার বিষয়। পাখির বাসা দেখে দেখে সেরকম একটা বাসার কল্পনা করেছে। কিন্তু পাখি কখন বাসা বাঁধে? যখন তাঁর সঙ্গীর প্রয়োজন হয় তখন? দু'জনে মিলে খড়-কুটো, পাতা আরো কত কি সংগ্রহ করে... তারপর হয় একটি নীড়।

অফিস থেকে ফেরার পথে একটা রেল লাইন পড়ে। এই রেললাইন ধরে হেঁটে হেঁটে ওর বাসায় পৌঁছে যাওয়া যায়। যেখান থেকে রেললাইনের শুরু, সেখানে রোজ রিক্সা ছেড়ে দেয়। তবে ভাড়া দেয় সেই বাসা পর্যন্ত, কারন রিক্সা ঠিক করে সে বাসায় যাবার জন্যই। কিন্তু এই যায়গায় এলে ওর যে কি হয়! তাই বলে প্রতিদিন? কি আছে ওখানে? এমন কিছু কি যা ওকে তাড়িয়ে বেড়ায়? দুটো ইস্পাতের সমান্তরাল বয়ে যাওয়া আর নুড়ি-পাথরের ইতস্তত বিচরণ... দু'পাশে বস্তির জনজীবন... নোংরা পুঁতিগন্ধময় ড্রেনের কালো জলের সন্তরণ - এসবের ভিতরে কী এমন থাকতে পারে?

মেয়েটি আজও রিক্সা থেকে নেমে এলো। মনে মনে ভাবল, 'মানব মন বড়ই বিচিত্র! অনেক কিছুই সেখানে থাকতে পারে, যা আমরা বাইরে থেকে বুঝি না।' এই যায়গায় কি রয়েছে তা একমাত্র সে নিজেই জানে।

একদিন সব কিছু ফাঁকি দিয়ে এক জোড়া নক্ষত্রের পতন হয়েছিল এখানে!

বাতাসে ছিল ভেজা কদমের মৃদু মাতাল গন্ধ... নিঃশ্বাস ছোঁয়া দূরত্ব... উষ্ণতা কি সুস্বাদু হয় অথবা সুপেয়? রেল লাইনের নুড়িগুলোর প্রাণহীন শরীর জানে সে প্রশ্নের উত্তর... দু'পাশের লতানো ঝোপ এক জোড়া মানুষের আদিম ভালোবাসায় বিস্মিত হতে হতে পরের জনমে মানুষ হবার প্রার্থনায় আকূল হয়েছে! শুধু একবারই...

তারপর নক্ষত্রেরা ফিরে গেছে আগের জীবনে!

হেঁটে হেঁটে সামনে আগায়... আর দেখে। সব কিছু আগের মতোই আছে... সেই নুড়ি বিছানো পথ... জংলী ঝোপে ফুটে থাকা ফুল... রাতের আকাশ... সেই আকাশে ওড়া সুদর্শণ পোকা... হব হব সন্ধ্যার অন্ধকারে ছিন্নমূল মানুষগুলোর ঝুপড়ি ঘরে কেরোসিন কুপির রহস্যময় আলো... মেয়েটি স্মৃতির ধুলা ঝেড়ে সেখানে বসে কিছুক্ষণ। নিজের অতীতটা খুব কাছ থেকে দেখে। সেখানে তাঁর মুখোমুখি বসে হীরের কুচি দেয়া চোখে হাসছে এক রুপবান যুবক!

সেদিন ছিল মেয়েটির জন্মদিন। ছেলেটি এলো জন্মদিনের উপহার নিয়ে। মেয়েটি হাত বাড়িয়ে ছেলেটির হাত ধরল... উপহারগুলো পড়ে থাকলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে।

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহারটা পেল মেয়েটি... তাঁর জানা হল সে একজন নারী!

এভাবেই নদীরা নারী হয়ে ওঠে, নারীরা নদী... এভাবেই সকল নদী ও নারী আজন্ম মেঘবতী... কেবলই নতজানু জল থেকে জলে... ... ... ।।

বিষয়: বিবিধ

৮২১ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

255368
১৮ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৩:৫২
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১৮ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৪
199248
মামুন লিখেছেন : ওয়েলকাম। আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ সুশীল।Happy
255385
১৮ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৪:৫৫
রাইয়ান লিখেছেন : অসাধারণ সুন্দর লেখা.... অনেক ধন্যবাদ আপনাকে !
১৮ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৪
199249
মামুন লিখেছেন : ওয়েলকাম রাইয়ান। আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
255389
১৮ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৫:১০
বাজলবী লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ।
১৮ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৫
199250
মামুন লিখেছেন : ওয়েলকাম। ধন্যবাদ আপনাকেও।Happy
255424
১৮ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৯:১৬
মামুন লিখেছেন : স্বাগতম সুশীল।
255427
১৮ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৯:১৮
মামুন লিখেছেন : ওয়েলকাম রাইয়ান Happy আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ!
255429
১৮ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৯:১৯
মামুন লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ বাজলবী Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File