জান্নাত? জাহান্নাম ? সত্য?
লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ১১ আগস্ট, ২০১৫, ০৯:৪৫:০৫ সকাল
একবার নাস্তিক vs মুসলিমের একটা ডিবেইট শুনছিলাম। যদিও এই টাইপ ডিবেট গুলি কাদা ছোড়া-ছুড়িতে পরিণত হলে আর দেখতে ভালো লাগে না। তবে, এই ডিবেট টা বেশ ইন্টারেস্টিং ছিল। নাস্তিক ভদ্রলোক নানান কলা-কৌশলে মুসলিম ভাইটির ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিচ্ছিলেন। মাশাআল্লাহ্ ভাইটিও বেশ দারুণ ভাবেই তাকে সামলাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে নাস্তিক ভদ্রলোকটি বেশ হিংস্রভাবেই তার প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, “আচ্ছা, এই যে তোমার গড যে এত্ত দয়ালু, এত্ত ক্ষমাশীল, এত্ত মহান—কিভাবে এত্ত ভালো গড তারই বানানো মানুষকে পুড়িয়ে মারার কথা বর্ণনা করেন?"
প্রথমবার শুনার পর পর প্রশ্নটা ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়ে দিবার মত লাগলেও, একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায় যে, এটার উত্তর বের করা খুব কঠিন কিছু না। কেউ যখন আমাদেরকে ভালোবাসেন, সেই ভালোবাসা নানা ভাবেই প্রকাশ পায়। তার আদর-স্নেহে এটা প্রকাশ পায়, কেয়ারিং এটিটিউট থেকে এটা প্রকাশ পায়। ঠিক তেমনি ভাবে, কেউ কাউকে ভালোবাসলে সে কখনোই চাবে না, সে কোন বিপদে পড়ুক। তাই সে যখন তাকে কোন বিপদ থেকে ওয়ার্নিং দেয়, সেখানেও তার ভালোবাসার-ই প্রকাশ পায়।
আল্লাহ্ সুবহানুতা’আলা আমাদেরকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন, তাঁর ভালোবাসার মাত্রা কল্পনা করার মত আমাদের ক্ষমতাও নেই। তিনি ভালোবেসেই আমাদেরকে চামড়া পুড়ে খসে পড়া, আবার নতুন চামড়া গজিয়ে পোড়ানো, পুঁজের গাদে হাবুডুবু খাওয়া, ভয়ঙ্কর প্রাণীদের দংশন ইত্যাদি জাহান্নামের এমন গ্রাফিক চিত্র বর্ণনা করে ওয়ার্নিং দেন। যেন আমরা এগুলা শুনে মেনটালি এতটাই ডীস্টার্ব হয়ে যাই যে এগুলা থেকে নিজেদেরকে নিরাপদ দূরত্বে রেখে সেভাবেই কাজ করি। সেই ভয়াবহ বর্ণনা যেন শোনা পর্যন্তই আমাদের জন্যে থাকে, আমাদেরকে যেন তা কখনোই দেখতে না হয়। এটাও আল্লাহ্ সুবহানুতা’আলার আমাদের প্রতি ভালোবাসার-ই বহিঃপ্রকাশ। জাহান্নামের বর্ণনাও আল্লাহ্র রহমত!
আমি যদি কাউকে বলি যে, তোমাকে কোটি টাকা দিবো, জাস্ট তোমার হাত টা আগুনের ভিতর ২ মিনিটের জন্যে বসিয়ে রাখো! সে কি রাজি হবে? আগুণ পুড়িয়ে ছাই করে দেয় এটা ধ্রুব সত্য- এই সত্য যে জানে সে সেই অনুযায়ী আগুণ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবে।
আমাদের যতই জাহান্নাম নিয়ে ভাবতে কেমন কেমন জানি লাগুক না কেন, জাহান্নাম সত্য! জান্নাত সত্য! কিয়ামতের দিন সত্য। তেমনি আল্লাহ্র ভালোবাসাও সত্য। তিনি ভালোবেসেই আমাদের কে তৈরি করেছেন, খাওয়াচ্ছেন, পড়াচ্ছেন, সুস্থ রাখছেন এবং আমাদের জন্যে গাইডেন্স পাঠিয়েছেন যেন যেভাবে চললে আমাদের জন্যে সবচেয়ে ভালো হয়, সেভাবে যেন আমরা চলতে পারি।
আমরা ভুলে যাই যে, আমাদেরকে জাহান্নামে দিয়ে বা জান্নাতে দিয়ে আল্লাহ্ সুবহানুতা’আলার কিছু যায় আসবে না। আমাদের ইবাদাত-বন্দেগীর কিন্তু আল্লাহ্ সুবহানুতা’আলার কোন দরকার নেই, তিনি স্বয়ং সম্পূর্ণ। হাইয়ুল ক্বইয়ুম। বরং আমাদের নিজেদের বাঁচাতেই আমাদের আল্লাহ্ সুবহানুতা’আলার ইবাদাত করা দরকার।
আর কুর’আন শুধু আগুণে পোড়ার গ্রাফিক বর্ণনা দিয়েই ভর্তি না। সেখানে জান্নাতের বাগানের বর্ণনাও আছে, যার নিচ দিয়ে ঝর্ণা বয়ে যায় - মধুর ঝর্ণা, দুধের ঝর্ণা! লাল-নীল পাথরের প্রাসাদ আর ঝর্ণার পাড়ে বসে রসূল(সাঃ) এর সাথে গল্প করা!
সেই জান্নাতও সত্য! সেই জাহান্নামও সত্য!
আল্লহুম্মা আজিরনা মিনান্নার, আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআ’লুকাল জান্নাহ্
বিষয়: বিবিধ
১৪৬৩ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন