নবাব সিরাজের হত্যা কাহিনী....
লিখেছেন লিখেছেন ব্যর্থ জীবন ১১ অক্টোবর, ২০১৪, ১১:১৫:০৫ সকাল
অনেকদিন পর ভালো একটা লেখা লিখতে ইচ্ছে করছিলো তো তাই এই কাহিনীটি লিখলাম.........
এই কাহিনীটি পাঠ করলে হয়তো একটি সত্য ঘটনা জানা হবে আপনার..........
পলাশী যুদ্ধের পর রাজমহলে ধৃত হবার ফলে সিরাজ যখন বন্দী ছিলেন তখন তাঁর কক্ষে মোহাম্মদী বেগ উলঙ্গ তরবারী হাতে প্রবেশ করতেই সিরাজ অনুমান করেছিলেন তাঁর মৃত্যু সংবাদ আগত ।
তখন সিরাজ কাতর কন্ঠে বললেন-মোহাম্মদী বেগ! তুমি আমায় কতল করতে এসেছ? মোহাম্মদী বেগ নিশ্চুপ । নবাবের মুখের দিকে তাকাতেও যেন সে অপারগ! আবার রূদ্ধপ্রায় কন্ঠে নবাব বললেন-
আমাকে কি তোমরা সামান্য একটা অসহায় গরীবের মত বেঁচে থাকতেও
দেবে না? এইবার মুহাম্মদী বেগ গলাটা সামান্য পরিস্কার করে বললো- না, তারা দেবে না । নবাব যেহেতু বছর দেড়েক আগে ভুলক্রমে হুসেন কুলি খাঁ কে প্রাণদন্ডে দন্ডিত করেছিলেন, তাই বললেন, আমিও বাঁচতে চাই না, হুসেন কুলি খাঁর মৃত্যুর প্রতিশোধ হোক । বাংলা বিহার, উড়িষ্যা তথা সারা ভারতের দেদীপ্যমান আলোকবর্তিকা নবাব সিরাজউদ্দৌলা তাঁর কোটি কোটি দেশবাসীর চোখের আড়ালে অশ্রু মুছে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে আবার বললেন- আমাকে একটি বার সুযোগ দাও, আল্লাহর সন্নিধানে যাবার পূর্বে শেষ দুই রাকাত নামাজ পড়ে নেই । মুহাম্মদী বেগের চক্ষুদ্বয় তখন
বর্ষণোম্মুক । উত্তর দিতে পারে না । নবাব বুঝলেন, মৌনতা সম্মতির সমর্থক । তাই জীবনের অন্তিম প্রার্থনাময় নামাজে আত্মনিয়োগ করলেন । নামাজ তখনও শেষ হয়নি দূরে বাঁশির সংকেত শুনে মুহাম্মদী বেগ প্রার্থনারত অবস্থাতেই তরবারী চালনা করলো নবাবের পিঠের উপর । লুটিয়ে পড়লেন নবাব । অতঃপর আরও কয়েকটি আঘাত করলো মুহাম্মদী বেগ । নবাব সিরাজ শুধু একবার বলেছিলেন, আল্লাহ তুমি আমায় ক্ষমা করো । তারপর রক্তাক্ত সিরাজ শুধু আল্লাহ আল্লাহ করতে চির বিদায় নিলেন......
(ইন্না লিল্লাহী...........)
সিরাজকে হত্যা করে তাঁর মৃতদেহ একটা বস্তায় ভরে হাতির পিঠে চড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । সিরাজের স্ত্রী, মা এবং অনেক আত্মীয় তখন বন্দিনী । ইংরেজ কর্মচারীরা প্রভূর আদেশ অনুযায়ী সিরাজের খণ্ডিত দেহের বস্তা সেখানে পৌঁছে দিয়েছিল । নবাব পরিবারের উত্সুক মহিলাদের পক্ষ হতে একজন বস্তার মুখ খুলতেই দেখতে পেলেন তাতে আমও নেই বা অন্য কোন খাদ্যবস্তুও নেই, আছে সিরাজের দেহের ছোট্ট ছোট্ট টুকরোগুলো আর তার সঙ্গে খোলা চোখে তাকিয়ে থাকা সিরাজের কাঁচা কাটা মাথা । সিরাজ যেন তার গর্ভধারিণী মাকে শেষ দেখা করতে এসেছেন । সিরাজের হতভাগী মা প্রিয় পুত্রের মুখের দিকে এক পলক তাকাতেই অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন । জ্ঞান ফিরে এলে মীর জাফরের অনুচর গোলাম হোসেনের আদেশে তাঁকে পুনরায় কারারুদ্ধ করা হয় । পরে জয়নুল আবেদিন নামক এক দরিদ্র নাগরিকের অনুরোধে সিরাজের খন্ডিত দেহকে ভাগীরথী নদীর পাড়ে খোসবাগ নামক বাগানে তাঁর নানাজান আলীবর্দীর কবরের পূর্ব পাশে সমাধিস্থ করা হয় ।
তথ্যসূত্রঃ [শ্রীযুক্ত বাবু অক্ষয় কুমার মৈত্রের 'সিরাজউদ্দৌলা ও পুরনো কলকাতার কথাচিত্র, ৩৯৩ ও ৩৯৫ পৃষ্ঠা]
দু'আ করি যেন আল্লাহ তা'য়ালা তাঁকে জান্নাত নসীব করেন.........
আমার ফেসবুক আইডি লিংকঃhttps://m.facebook.com/oporicitogoyenda?fref=nf&refid=52&__tn__=C
বিষয়: বিবিধ
২৪৯৭ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন