বসনিয়ার সেব্রেনিৎসা গনহত্যার ২০ বছর। ভুলিনি, ভুলবো না।
লিখেছেন লিখেছেন চিলেকোঠার সেপাই ১২ জুলাই, ২০১৫, ১২:৪৬:০৯ রাত
কিছুদিন থাকে আনন্দের, মুক্তির, গর্বের। আবার কিছু দিন থাকে লজ্জার আর স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার। আজ ১১ জুলাই। পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম কলংকিত দিন। আজ থেকে ২০ বছর আগে জাতিসংঘের প্রত্যক্ষ সহায়তায় সার্ব বাহিনী জংলী কুকুরের মত হামলে পরে নিরস্ত সেব্রেনিৎসা বাসীর উপর। নিহত হয় ১০,০০০ এরও বেশি। আহত অসংখ্য। হাজার হাজার বসনিয়ান মেয়ে ধর্ষণ এর স্বীকার হয়। জঘন্য এই ঘটনা নিয়ে আমার এবারের লেখা। তথ্যসূত্র রেফারেন্স অংশে দেওয়া রয়েছে
শুরুর কথা-
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বলকান রাজ্য স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া, সার্বিয়া, মন্টিনিগ্রো এবং মেসিডোনিয়া নিয়ে যুগোস্লাভিয়ার গঠিত হয়।
১৯৮০ সালে যুগোস্লাভিয়ার অবিসংবাদিত নেতা ও রাষ্ট্রপ্রধান মার্শাল জোসেফ টিটোর মৃত্যুর পর রাজ্যগুলোর মধ্যে সমস্যা শুরু হয়। অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে যখন সার্বিয়ান নেতা স্লোবোডান মিলসভিক (Slobodan Milosevic) ক্ষমতায় আসে। স্লোবোডান সার্বদের প্রাধান্য দিয়ে অন্যদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরন করতে থাকে। জাতিগতভাবে সার্বিয়ানরা ছিল অর্থোডক্স খ্রিস্টান। অনেক আগে থেকেই সার্বিয়ানদের সাথে জাতিগত দ্বন্দ্ব ছিল ক্যাথোলিক খ্রিস্টান ক্রোট এবং মুসলিম বসনীয়দের সাথে। ১৯৯১ সালে স্লোভেনিয়া এবং ক্রোয়েশিয়া যুগোস্লাভিয়া থেকে বের হয়ে আসে এবং স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১৯৯২ সালের এপ্রিল মাসে বসনিয়াও স্বাধীনতা ঘোষণা করে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বসনিয়াকে স্বীকৃতি দেয়। স্লোবোডান এই স্বাধীনতা ঠেকাতে বসনিয়ার আক্রমন করে বসে। এবং গণহত্যা শুরু করে। ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সার্বিও আগ্রাসনে প্রায় দুই লক্ষ বসনিয়ান মারা যায়। ধর্ষণের স্বীকার হয় ৫০,০০০ বসনিয়ান মেয়ে। উদ্বাস্তু হয়েছিল ২০ লক্ষ নারী-পুরুষ।
সেব্রেনিৎসা গনহত্যা
জাতিসংঘ এই যুদ্ধ থামাতে উদ্যোগ! গ্রহণ করে। তারা দুর্বল বসনিয়ানদের অস্ত্র বিরতিতে চাপ দেয়। শান্তিরক্ষী পাঠায়। ১৯৯৩ সালে সেব্রেনিৎসা, জাপা, এবং গোরাজদে (Srebrenica, Zepa and Gorazde) শহর ৩ টিকে নিরাপদ অঞ্চল বলে ঘোষণা করে। জাতিসংঘের ডাচ শান্তিরক্ষী বাহিনী নিয়ন্ত্রন গ্রহণ করে সেব্রেনিৎসা শহরের। ১৯৯৫ সালে জুলাই মাসের ১৩ তারিখ শান্তিরক্ষীদের কোনো বাধা ছাড়াই ছোট্ট শহর সেব্রেনিৎসা আক্রমন করে সার্ব বাহিনী। ৬ দিন ধরে চলে তাদের পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ। সারাদিন-রাত জুড়ে। মসজিদ আর বাড়িগুলোতে শুধু ব্রাশফায়ার করা হয়, বাজারগুলো পরিণত হয় নিরব কবরস্থানে। সার্ব সেনা এবং মিলিশিয়ারা ধর্ষণ করে হাজার হাজার মুসলিম নারীকে। নির্দেশনা ছিল, প্রতিটা মুসলিম নারী যেন গর্ভে সার্বদের সন্তান ধারনে বাধ্য হয়। ইউরোপে হিটলার ছাড়া এত নৃশংসতা আর হত্যা আর কেউ চালায়নি, হিটলার চালিয়েছিল গোপনে আর সার্বরা চালায় প্রকাশ্যে। গ্রামের পর গ্রাম গণকবরে পরিণত করে সার্ব জানোয়ারগুলো। ৬ দিনে তারা ১০ হাজারেরও বশি বসনিয়ানকে হত্যা করে। এর মধ্যে ৮০০০ জনের পরিচয় চিহ্নিত করা গেছে। ১০০০ এর বেশি জনের চিহ্নিত করা যায়নি। নিহতের মধ্যে ৮০% এর বেশিই ছিল মুসলিম। সার্বদের গণহত্যার পরও যারা কোনরকম বেঁচে ছিল ১৯৯৪ এর শেষের দিকে প্রচন্ড শীত আর দূর্ভিক্ষে তাদেরও বেশীরভাগ মারা যায়।
এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ডের পরও জাতিসংঘ, EU সহ সব মানবাধিকার সংস্থাগুলো মুখে কুলুপ এঁটে বসে ছিল। মূলধারার আন্তজাতিক গণমাধ্যমগুলোও। (কারন সম্ভবত যারা নিহত হয়েছে তাদের বেশির ভাগই ছিল মুসলিম।) অস্বাভাবিক ভাবে নিরব ছিল মুসলিম বিশ্বও.........
সার্বিয়ার চালানো ২ বছরের গণহত্যায় বসনিয়ার প্রায় ৮০% মুসলমান জনসংখ্যা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, প্রায় বিভিন্ন এলাকার মাটি খুড়লে লাশের হাড়-খুলি বের হয়ে আসে এখনও।
রেফারেন্সঃ
http://www.history.com/topics/bosnian-genocide
https://www.youtube.com/watch?v=GFtQDc_Uzb8&feature=youtu.be
http://www.aljazeera.com/news/2015/07/srebrenica-bosnia-anniversary-150711094714679.html
http://www.rferl.org/fullinfographics/infographics/27114531.html
https://en.wikipedia.org/wiki/Bosnian_Genocide
বিষয়: বিবিধ
১৯৪৫ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
১। ওআইসি(ইসলামিক দেশ সমুহ)?
২। আল কায়দা?
৩। ইরান, সৌদি আরব, পাকিস্তান?
৪। ইসলামী জেহাদী গ্রুপ সমুহ?
৫। নেটো, আমেরিকা-ইউরোপ জোট?
তাই যদি সত্য হবে তো আপনাদের আল্লা তখন কি করছিলেন? তিনিও তো কুলুপ এটেই বসে ছিলেন। তিনি নাকি মনরুদ/ফেরাউন কে ঠেংগানি দিয়েছেন। আল্লা নাকি 'কুন' বল্লেই সব হয়ে যায়? তিনি একটু কষ্ট করে 'কুন' না বলে বরংচ বসে বসে মজা দেখেন, তাই না?? খামোখাই ইহুদী-নাসারা দের সাহায্যের আশায় গোস্বা করে কি হবে?
এই গনহত্যার পরেও তথাকথিত শান্তিবাদিদের কোন প্রতিক্রিয়া হয়নি। ডাচব্যাট বলে পরিচিত শান্তিরক্ষিদের আচরন ছিল সম্পুর্ন সার্বদের পক্ষে। উল্লেখ যোগ্য অনেক আপত্তির পর যখন বিহাচ এলাকায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষিদের মোতায়েন করা হয় তখন সেখানেও এই রকম হামলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ব্যানব্যাট এর দৃঢ়তায় তা ব্যার্থ হয়। এই সময় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষিদের প্রায় আড়াই মাস রেশন সরবরাহ বন্ধ ছিল। নিরাপত্তার অজুহাতে বিমান পথে রেশন সরবরাহ করেনি আনপ্রফর কর্তৃপক্ষ। এই যুদ্ধে অংশগ্রহন কারি সৈনিক এর মুখেই শুনেছি এই কথা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন