আজব দেশের তাজব মিডিয়া এবং হবুচন্দ্রের সর্বশেষ নির্দেশ
লিখেছেন লিখেছেন মিনার রশীদ ০৬ মার্চ, ২০১৪, ০৪:১৪:২৬ বিকাল
রাজা হবুচন্দ্র আইন করেছিলেন যে তার রাজ্যটিতে এখন থেকে কেউ আর কান্নাকাটি অথবা চেচামেচি করতে পারবে না। এই রাজকীয় ডিক্রী জারির পর হাসপাতালে রোগীরা ব্যাথার যন্ত্রণায় না কেঁদে হাসা শুরু করে দেয় , পরীক্ষায় ফেল করে অথবা শিক্ষকের পিটুনী খেয়ে ছাত্ররা না কেঁদে খিল খিল করে হেসে ওঠে ।
ছোট্ট বেলায় এই কবিতাটি পড়ে মুশকিলে পড়ে গিয়েছিলাম। কারন এটা কীভাবে সম্ভব, তা মাথায় ঢুকছিল না।
এখন বুঝতে খানেকটা সহজ হয়েছে । কবি কিছু জিনিস খোলাসা করে বলেন নি। হবু চন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রীরা ছাড়াও মিডিয়া , র্যাব, রক্ষীবাহিনী , চাপাতি বাহিনী, পুলিশ, প্রশাসন ও আদালত ছিল যাদের কথা কবি উল্লেখ করেন নি। এরা সবাই মিলে এই অসাধ্যটি সাধন করেছিল।
আক্ষরিক অর্থেই বাংলা নামক দেশটি এখন হবুচন্দ্রের দেশ হয়ে পড়েছে। এতদিন বিভিন্ন নমুনা দেখে আমরা এই ধরনের কথা বললেও এবার সরাসরি প্রমাণ মিলেছে। প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুতের দাম যত ইচছা বাড়াবেন কিন্তু তােত দেশের মানুষ কোনরূপ চেচামেিচ বা কান্নাকাটি করতে পারবে না । দুিদন আগে সংসদে এমন একটি হবুচন্দ্রীয় নির্দেশ তিনি জারি করেছেন ।
এই মূল্যবৃদ্ধি মেনে নিতে তিনি জনগনকে কোনরূপ অনুরোধ করেন নি। বরং মূল্যবৃদ্ধিতে কোনরূপ চেচামেচি করতে বারন করেছেন । কারন ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন প্রমাণ করেছে যে এই 'বুদ্ধু' জনগনের কাছে কোনরূপ জবাব দিহিতার আর কোন প্রয়োজন পড়বে না। তিস্তা ইস্যু মনমোহন দাদার কাছে ডিফিকাল্ট কাজ হলেও এই 'ভারত রত্ন 'কে ঢাকার মসনদে বসিয়ে রাখা অত্যন্ত সহজ একটি কাজ!
গণজাগরন মঞ্চ আগে ডুবানো অবস্থায় ছিল। কয়েক বছর ধরে ভাসানো হয়েছে। এই সব গণডোবারন বা গনজাগরণ মঞ্চকে বিরানীর সাথে সামান্য টিরানী খাওয়ালেই অনেক কিছু হয়ে যায়। খরচ হয় কয়েক কোটি ,ফেরত আসে হাজার হাজার কোটি ।
মনমোহন তিস্তাকে কঠিন ইস্যু হিসাবে উল্লেখ করে আমাদেরকে আপাতত আঙুল চুষতে বলেছেন। সেই আঙুলটি ভালভাবে না চুষেই তোফায়েল অাহমেদ ট্রানজিটের বাকি কাজটুকু সম্পন্ন করতে শুধু এক পায়ে নয় - এক্কেবারে দুই পায়ে খাড়া হয়ে পড়েছেন। ইন্ডিয়াকে এটি দিতে না পেরে আমরা কী সুবর্ণ সুযোগ হারাচ্ছি তাও জাতিকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন এই চাপা সম্রাট।
এসব দেখে কী আর বলবো ? মনে হচ্ছে ধর্ষিতা ধর্ষকের দুয়ারের সামনে ধর্ষণের দাবিতে অনশন করছেন। আর আমরা দর্শক হয়ে তা চেয়ে চেয়ে দেখছি।
প্রধানমন্ত্রীর এই ধমকে কিংবা তোফায়েলের এই উতলা ভাব দেখে আমরা কাঁদবো না হাসবো তা নির্ভর করে মিডিয়ার উপর । কারন ১৬ কোটি মানুষের হাসা বা কাঁদার দায়িত্বটি নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন মিডিয়ার সর্বাধিক দুিতন শ লোক।
আর জাতীয় সংসদেরর কথা না বললেও চলে। এই সংসদটি এখন প্রকৃত অর্থেই 'সঙদের খোয়াড়' হয়ে পড়েছে। অবশ্য ইনুরা আগে বলতেন শুকরদের খোয়াড়।
কাজেই বিদ্যুৎ বিল বাড়লে তজ্জন্যে তারা কোন দুঃখে কাঁদতে যাবেন? তাদেরকে সংসদে নেয়াই হয়েছে এই ধরনের বিল বাড়ার পর (লোক দেখানো সামান্য প্রতিবাদের পর ) হাসার জন্যে। তাদের এই হাসি এই মুলুকের বাতাসে অবস্থিত সব নাইট্রোজেনকে নাইট্রাস অক্সাইড বা হাসির গ্যাস বানিয়ে ফেলবে। ফলে এই সঙদের অঙ্গভঙ্গি বা লেফট-রাইট মার্চ দেখে জনগণ এমনি এমনি হাসা শুরু করে দিবে ।
আজব সরকারের তাজব কিসিমের এই বিরোধী নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক মঞ্চে বসেছেন। তাতে এই পত্রিকাওয়ালা বা টিভি ওয়ালাদের কারো কারো দিলটি অত্যন্ত পুলকিত হয়ে পড়েছে । এই ধরনের দৃশ্য দেখিয়ে জনগণের দিলগুলিকেও শান্ত বানানোর প্রচেষ্টা শুরু হয়ে গেছে । পুরো রাজনীিতর বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ ও হতাশাকে কৌশলে এই আজব সরকারের অনুকূলে টানতে চাচ্ছে মতলববাজ এই মিডিয়া। ভাবখানা এই, খারাপ কী ? ভালই তো চলছে।
কুইক রেন্টাল সহ আরো কুইক অনেক রাস্তা দিয়ে 'কুইক মানি' বানানোর সুযোগ করে দিয়েছেন নিজেদের দরবেশ বাবাজী ও সাঙ্গপাঙ্গদের। আর তার সকল দায় এখন বহন করতে হচ্ছে জনগনকে।
এই ধরনেরর কুইক মানির যৎসামান্য মিডিয়ায় বিনিয়োগ ( সরাসরি অথবা বিজ্ঞাপনের নামে) করলেই এর বিরুদ্ধে কথা বলবার আর কেউ থাকবে না। এর প্রতিবাদে কোন সাগর-রুনী গজাতে থাকলে তাদেরকে সরিয়ে দেয়া হবে।
আবার এই প্রক্রিয়ায় যাদেরকে হজম করতে পারবে না সেই সব মাহমুদুর রহমানকে আদালতের মাধ্যমে খাঁচায় পুড়ে জীবন্মৃত করে রাখা হবে ।
কাজেই এসব শুধু চেয়ে চেয়ে না দেখে যে যেখানে আছি সেখানেই কিছু না কিছু কাজ করি।
বিষয়: বিবিধ
১১৮৮ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন