খুব সহজেই পাই যাদের ভালবাসা
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান বিন আনোয়ার ২৬ আগস্ট, ২০১৪, ০৮:১৮:৫১ সকাল
ইদানিং একটা ব্যপার খেয়াল করছি। সিরিয়াস কোনো বিষয়ে লিখতে চাইলেই কলম আর সামনে এগুতে চায়না! ফলে সহজ এবং পরিচিত ঘটনাগুলোই সাধারণ অভিব্যক্তিতে লিখে রাখব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই যেমন আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই মোবাইল কতটুকু চার্জ হয়েছে সেটা পরীক্ষা করলাম। বেশ কিছুদিন ধরেই মোবাইলটা খুব ডিস্টার্ব শুরু করেছে। ভাল করে চার্জ হয়না। হলেও খুব বেশি সময় টিকে থাকেনা। মাঝেমাঝে অজানা কারণেই স্ক্রীণ লাফানো শুরু করে! মোবাইলের ব্যাটারি চেঞ্জ করতে নিয়ে গিয়েছিলাম। দোকানদারই বলে দিলেন, ব্যাটারিতে কোনো সমস্যা নেই। ফলে আমার এত শখের মোবাইল (স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট-২) হঠাৎ কেন এত অস্থিরচিত্ত ধারণ করেছে সেটা সমাধানের আপাতত সাধ্য আর হয়নি।
ঘুম থেকে উঠে নামাজ না পড়েই তিনটি 'ইসলামী সঙ্গীত' ডাউনলোড করেছি। বাহ, চমৎকার! চোর হলেও ঈমানটা ঠিক আছে! নামাজ না পড়ে ইসলামী গান ডাউনলোড করা! আল্লাহ যদি মাফ করেন! বাড়ির সবাই এখন ঘুমাচ্ছে। ফজরের নামাজ পড়ে সকাল ৭-৮টা পর্যন্ত ঘুমানো এ বাড়ির সবার নিয়মে দাঁড়িয়ে গেছে। নাহ, ভুল বললাম। একজন আছেন যিনি কখনোই ফজরের পর ঘুমাননা। তিনি আমার শ্রদ্ধেয় আব্বাজান। প্রতিদিন ফজর শেষে বাড়ীতে এসেই একটি 'মুসল্লা' এবং হাতে তাসবীহ-দানা নিয়ে বসে পড়াটা তাঁর অভ্যাস। ইশরাকের সময় হলে 'ইশরাকের নামাজ' পড়ে তারপর বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত হন। সেই বিভিন্ন কাজের তালিকায় সর্বাগ্রে বাজার করাটাই তাঁর কাছে প্রাধাণ্য পায় বলে আমার ধারণা।
পৃথিবীতে 'বাবা-মা'রা এত নিঃস্বার্থ কেন হয় আমার বুঝে আসেনা। গরুর গোস্তের ভুনা আমার পছন্দ বলে গত তিন দিন ধরে আমাকে আমার মা' এই প্রিয় মেন্যুটি রান্না করে খাওয়াচ্ছেন। এটা তিনি প্রায়ই করে থাকেন। অথচ আমার আম্মা অসুস্থ। আগুনের কাছে গেলে তাঁর হার্টে সমস্যা হয়। তবু তাঁর কোনো শঙ্কা নেই। আমাকে একটু ভাল-মন্দ খাওয়াতে পারছেন- এই খুশিতেই তাঁর সব অনাত্মীয়-অসুখের কথা তিনি বেমালুম-ভুলে যান। বাড়িতে স্থায়ী কাজের মানুষ নেই বলে আম্মাকে এখন প্রায়ই রান্না-বান্না করতে হচ্ছে। এটা যে আমার কাছে কতটা বেদনাদায়ক তা বোধকরি খোদা-মাবুদ'ই জানেন। ওদিকে আব্বাকে দেখেছি; সারাটা জীবন একা একাই কাজ করে বেড়ান। বাড়িতে আমরা পাঁচ-দশজন ছেলে-মানুষ থাকলেও তিনি কখনো আমদেরকে কাজের নির্দেশ দেননা। সামান্য দোকান থেকে লবন আনার জন্যও তিনিই ছুটে যান। এটা আমাদের জন্য অবশ্যই চরম অপমান ও অনুতাপের বিষয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য হল; আমরা তাঁর এমনই সন্তান যে, ভিতরে ভিতরে অনুশোচনায় ভুগলেও কাজের বেলায় কখনো তাঁকে একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিইনা। এতটা নিস্কর্মা আর অকৃতজ্ঞ ছেলে পৃথিবীতে মনে হয় কমই আছে!
যাইহোক, আর কিছু যেহেতু তাদের জন্য করার সাধ্য আমাদের নেই (!), তাই তাদের জন্য মন খুলে একটু দোয়াই করি। “رب ارحمهما كما ربيانى صغيرا” ও প্রভূ! আমাদের পিতা-মাতা আমাদেরকে যেভাবে সেই ছোটবেলা থেকে আদর-স্নেহে লালন-পালন করে আসছেন, তুমিও তাদেরকে এরচেয়ে বেশি মমতা ও ভালবাসা দিও। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
৮১৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন