তিস্তা ও তিস্তা পাড়ের কাঁন্না পর্ব (৩)

লিখেছেন লিখেছেন shaidur rahman siddik ২৪ এপ্রিল, ২০১৪, ১০:০৪:৫৬ রাত

তিস্তা মরলেও কাঁন্না..মারলেও

কাঁন্না...পর্বঃ (৩) (প্লিজ একটু সময়

নিয়ে পড়ুন তিস্তা ও তিস্তা পাড়ের মানুষের

প্রেরণা ও কাঁন্না)

কেউ বা এসে গরুর গোসোল করাতে লাগলো আর কেউ বা এসে নতুন পানিতে গোঁসল করতে লাগলো।

চৈত্র মাসে বিয়ে হওয়া নতুন বউটি এতদিন হয়তো নদীর পানির জন্য পাগল ছিলো যে_ আমার বাবার বাড়ী তো দূরে,সৌভাগ্য আমার নদীর পাড়ের কোন এক ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে, নদীর পানি পেলে একটু গোঁসল দিবো।

তখন নতুন বঁধুটির মনের মাঁঝে কোন আঁছ লাগেনি যে_এই পানিতে গোঁসল করা মানে নিজের সংসারের জন্য গোঁসল করা।

হাঁস গুলিও মহা আনন্দে আছে.... নতুন পানি নতুন সাঁতার কতদিন থেকে যেন তারা নদীতে সাঁতার করতে পারে না।তাই নতুন পানিতে সাঁতার কাটা ও গোসলেই ব্যাস্ত সময় পার করেছে সারাটা দিন।কিন্তূ সঁন্ধার সময় হাঁস মালিক যখন দেখে আমাদের হাঁসগুলি নেই,তখন বেচারা একটু চিন্তাই পড়ে যায়, তখন ঐ ভাঁটির কোন এক গ্রামে হাঁসগুলীকে পায় হয়তো কেউ সারাজীবনের জন্য হাঁসটিকে হারিয়ে ফেলে এবং হাঁসটিও হারিয়ে ফেলে তার মালিক কে।

এদিকে যারা বোঁরো ধাঁন কেটেছে বা কেউ কাটেনি তারা মনে মনে আল্লাহকে স্বরণ করিয়ে বলে যে_যদি একটু পানি কমতো তাহলে ধাঁনগুলি খুব সুন্দর করে কেঁটে বাড়িতে আনতাম।

ঐ পাড়ায় আবার শোনা যায় অমুকের বাঁদামের গাছ গুলি পানিতে ডুবে গেছে...তাহা পানির তলে ডুবিয়া কাটিতে যাইয়া নিজের পাঁ কেঁটে ফেলেছে,ডাক্তার এসে কয়েকটি সেলাই দিয়েছে।

সেই সময়ে যারা ভুট্টা বুনেছে তারাই একটু একটু ফসলখুলো পেয়ে থাকেন,কারণ ভূট্টাগাজ ডুবে যায় কিন্তু গাছের আগাঁলে (উপরে) থাকা ভূট্টাগুলি হাত দিয়ে ছিড়ে নিয়ে আসে।

ঐ দিকে আবার ডাক আসে যে_আমার নৌকা টি এতদিন ধরে বাড়ীর ডাঁঙ্গায় তুলে রেখেছি,এখন তো নদীতে পানি হইছে...আমার নৌকাটি সবাই মিলে ঠেলা দিয়ে পানিতে নামিয়ে দিন।

ছেলে মেয়েরা যদিও সেই সময়ে নতুন পানি পেয়ে যদিও একটু আনন্দে থাকে....কিন্তু আনন্দে নেই তাদের বাবা মায়েরা।

তার মনে মনে একটু বেশিই চিন্তিত..কারণ যদি নদীর পানি আর দু একটি মাস পড়ে আসতো তাহলে আর কিছু ফসল ফলাতে পারতাম ভবিত্‍সতের জন্য।আর তারা চিন্তা করতো কি হবে এইটুকু ফসল দিয়ে যাবে কি ঐএকটা বত্‍ছর ....!

পানির মধ্য থেকে যতটুকু ধাঁন তুলে এনেছে কৃষক তা মাড়াই করে রোদে শুকাতে দিয়ে গৃহিনীরা ও নতুন বউয়েরা সেই সব নিয়েই সারাটি দিন ব্যাস্ত..আর পুরুষেরা ব্যস্ত মাড়াই করা ধাঁনের আঁটিগুলী রৌদ্রে শুঁকানো..যাহা গবাদী পশুর জন্য খাবারের উপযুক্ত করা।

আহ্ কি ঘ্রাঁণ........

নতুন বোঁরো ধাঁনের গন্ধে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো গ্রাম...ছোট ছো বাচ্চা থেকে শুরু করে নতুন বউয়েরা সেই ধানের চালের পিঠা বানিয়ে খেতে বাবা মায়ের বা শশুর শাশুরীর কাছে আগে থেকেই বায়ানা ধরে থাকে।

বাড়ীর গরুগুলিয় মনে হয় একটু খুশিই থাকে,কারণ নতুন ধাঁনের আটি আহা কি সুন্দর খেতে লাগবে...একদম কাঁচা রসে ভরা। অনেকদিন ধরে কাঁচা পোঁয়াল খেতে পারিনি.আজকে একটু মনের আনন্দে কাঁচা আটি খাবো।

তবে বধুটির আগেই বাড়ীর গৃহপালিত পশুটির স্বপ্ন আগে পূরণ হয়।কৃষক ও আনন্দ পায় যে__আজ তার আদরের গরুটিকে আজকে একটু কাঁচা ধানের গাছ খেতে দিতে পারবো।

গরু ও খুশি কৃষক ও খুশি...

এদিকে বৈশাকের একটু একটু পূর্বভাস দেওয়া শুরু করে দিয়েছে, সাদা বক গুলি নদীর উপর দিয়ে তার নিজের বাসার দিকে যাইতেছে,আকাশে মেঘ দেখা দিয়েছে,গলার রশি খুলে দেওয়া ছাগলগুলি একাই নিজের বাড়িতে ফিরতেছে....

তখন আবার হৈ হৈ রৈ রৈ ধাঁন তুলতে হবে (চলবে)

বিষয়: বিবিধ

৯২৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

212897
২৪ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১০:১৮
সন্ধাতারা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
212901
২৪ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১০:২২
shaidur rahman siddik লিখেছেন : সন্ধাতারা @ আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।কষ্ট করে পড়ার জন্য এবং মন্তব্য করার জন্য।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File