ব্রেইন ওয়াশ
লিখেছেন লিখেছেন হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ০ ১২ মার্চ, ২০১৪, ০৫:৪৫:২৪ বিকাল
সাদিয়া, একটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে পড়ে, থাকে ঢাকায় এই আত্মীয়র বাসায়। খুব শান্ত মার্জিত স্বভাবের মেয়ে। ক্লাস থাকলে ক্লাসে যায়, আর বাকি সময়টা বাসার বিভিন্য কাজে সহযোগিতা করে থাকে, পড়াশুনা করে, গল্প উপন্যাস পড়ে সময় কাটায়।
প্রেম ভালোবাসা এখনও হয়ে উঠেনি, যদিও হাজারটা প্রস্তাব এসেছিল, সে নাকচ করে দিয়েছে। তার আশংকা ছেলেরা দু দিন খুব মিষ্টি কথা বলবে, ভালোবাসার ঢং করবে, স্বার্থ পূরণ হলে কলার ছালের মত ডাস্টবিনে ছুড়ে মেরে হাওয়া হয়ে যাবে। সে তার অনেক বান্ধবীকে প্রতারিত হতে দেখেছে। তাই প্রেম করবেনা বলেই সিদ্দান্ত, নিয়েছে।
একদিন পারিবারিক এক অনুষ্ঠানে একটি ছেলের সাথে পরিচয় ঘটে, আলাপ চারিতায় দুজনার খুব সখ্যতা গড়ে উঠে, সাদিয়ার ছেলেটিকে ভালো লাগে। ছেলেতির নাম সোহেল, সেও কথা বার্তা, আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয় ভাললাগার বিষয়টি। ছেলেটি পড়ে ধাকার নাম করা একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিদায় নেয়ার সময় দুজনের মাঝে মোবাইল নাম্বার বিনিময়।
তারপর, মাঝা মাঝে মোবাইলে কথা হয়, আস্তে আস্তে কথা ঘন হতে থাকে। সকাল সন্ধ্যা দিন রাত, মোবাইল নিয়েই ব্যস্ত থাকে। সাদিয়ার মনে প্রেম করার স্বাদ জাগে, তবু তার বিবেক বাঁধা দেয়, না সাদিয়া, তুমি প্রেম করতে পারনা, ছেলেরা সব একি ধাতু দিয়ে গড়া। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বললেও সাদিয়ে সাবধানতা অবলম্বন করে। এখনও তার মন থেকে ছেলেদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দূর হয়নি।
এক সন্ধায় সাদিয়া জানার পাশে দাঁড়িয়ে, বাহিরে বৃষ্টি পরছিল, বৃষ্টিকে ছুঁয়ে দেখছে,উপভোগ করছে, এমন সময় হাতের মোবাইলটি বেজে উঠে, সোহেলের কল। বৃষ্টি হলে সবার মন কম বেশি রোমান্টিক হয়ে উঠে, সাদিয়ার হয়েছেও তাই, তার মাঝে সোহেল প্রেমের সরাসরি প্রস্তাব দিয়ে বসে। সাদিয়া আর না করতে পারেনি, প্রথমটায় কিছুটা লজ্জা পেলেও তা কেটে যাওয়ার পর সোহেল ইতিবাচক সাড়া দেয়। শুরু হয় জীবনের প্রথম প্রেম।
এ এক অন্য রকম অনুভুতি, ঘুমাতে পারেনা, দরজায় এসে সোহেল হাজির, খেতে পারেনা, সামনে এসে সোহেল ভেংচি কাটে, পড়তে পারেনা, বইয়ের পাতায় বার বার সোহেলের সুদর্শন চেহারা ভেসে উঠে। সাদিয়া দোটানায় পড়ে যায়,সে যা করছে তাকি ঠিক? মনে বলে চালিয়ে যাও, আর বিবেক তাকে ধংশন করতে থাকে, ছেলেরা একি রকম, তোমাকে পস্তাতে হবে, তুমি ঠকবে ইত্যাদি ইত্যাদি । মাঝে মাঝে সোহেলকে বলেই ফেলে, সোহেল, আমার ভয় করছে, তুমি আমার সাথে প্রতারণা করবেনাত? সোহেল কোরআন হাদিসের শপথ করে তাকে আশ্বস্ত করে।
তারপর----- দেখা সাক্ষাৎ, কখনো উদ্যান, কখনো পার্ক অথবা সিনেমা হলে। সাদিয়ে কেমন জানি শুন্যতা অনুভব করে, সোহেল পাশে না থাকলে অস্থির লাগে। তার শরীর যেন সোহেলকে পেতে চায়, কামনা বাসনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে, তবু সংযত হওয়ার চেষ্টা করে। সোহেল বিভিন্য সময় তার গায়ের অবাঞ্ছিত (বিয়ের পর বাঞ্ছিত) জায়গা গুলোতে হাত দিতে চায়, সাদিয়া বাঁধা দেয়, বলে, এই সব এখন নয়, বিয়ের পড়ে হবে, শুধুমাত্র হাত ধরা ধরিতেই সীমাবদ্ধ থাকে।
এইভাবে কতদিন! আগুনের পাশে মোম থাকলে তাতো গলবেই। সোহেলের শরীরী ঘ্রাণ তাকে মাতাল করে দেয়, সে আর আগের মত সোহেলকে বাঁধা দিতে পারেনা, উদ্যান, পার্কে অথবা সিনেমা হলের আলো আধারি পরিবেশে সোহেল দারুণ সুখ দিয়ে থাকে, মাঝে মাঝে এতো সুখের তাড়নায় তার মরে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু এই ভাবেও আর কতদিন! যতো পাই তত খাই, চাহিদা আরও তীব্র হতে থাকে।
একদিন গভীর রাতে সোহেল সাদিয়াকে কল করে বুঝায়, দেখ সাদিয়া, আমরা দুজন পস্পরকে ভালবাসি, বিশ্বাস করি, বিয়েত তোমাকেই করব, এবং বিয়ে করার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সুতরাং তোমার সাথে দৈহিক সম্পর্কে মিলিত হওয়াতে কোন বাঁধা নেই, ইসলামেও সে রকম কোন বিধি নিষেধ নেই। তাতে তুমি আমি দুজনেই প্রশান্তি লাভ করব। সাদিয়া বলে ভেবে চিনতে জানাবে।
সে ভাবে, হা ঠিকি তো, আমরা পস্পরকেই বিয়ে করছি, পড়ে করলে যে কথা আগে করলেও একি কথা। সোহেল কে তার সম্মতি জানিয়ে দেয়।
সাদিয়াকে নিয়ে সোহেল তাদের মেসে উঠে, বন্ধুদের বাহিরে পাঠিয়ে দেয়, জীবনে কারও কাছে সাদিয়ার নিজেকে ষোল আনা সমর্পণ। প্রতি সপ্তাহ অন্তর অন্তর সাদিয়ে আসে, তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে চলে যায়। আমার লিখা এখানেই শেষ করা যেত, কিন্তু তাতে পাঠকের চাহিদা পূরণ হলেও বাস্তবতা, সত্য অপ্রকাশিত থেকে যায়। সোহেলের সাদিইয়াকে আর আগের মত ভালো লাগেনা, পুরনো মাল মনে, যার মার্কেটে যতদিন ক্রেতার চাহিদা পূরণ করার সক্ষমতা ছিলও, ততদিন সবার কাছে কদর ছিল। সাদিয়াকে বিয়ে করে কি হবে, তার মধ্যে পাওয়া যাবেনা নতুন কিছু। আরবিতে একটি প্রবাদ আছে- প্রত্যেক নতুন জিনিস সুস্বাদু। সাদিয়া ঘাওয়া মাল। না হবেনা। তাছাড়া যে মেয়ে এতো সহজে বিয়ের আগে একটা ছেলেকে সব ঢেলে দিতে পারে, আরও কত লোকের সাথে না জানি এই সব করে বেড়ায়! অহেতুক সন্দেহ দানা বেঁধে উঠে সোহেলের মনে।
ধীরে ধীরে সাদিয়ার সাথে সব ধরণের যোহাযোগ বন্ধ করে দেয়। সাদিয়ার অনেক কষ্ট হয়, মন ভেঙ্গে খান খান হয়ে যেতে থাকে। এখনও শরীরের প্রতিটি জায়গায় সোহেলের আদরের চিহ্ন লেগে আছে, কেমন করে এই দেহ অন্যকে দান করবে!
সোহেল আর কখনই আসেনা, সাদিয়ার চোখ জলের ধারা বয়ে যায়, যে সতীত্ব কে রক্ষা করার জন্য এতো গুলো বছর সংগ্রাম করেছি, পরন্ত বেলায় এসে একি করলাম আমি! না, আমি ব্যভিচারিণী, নষ্টা, আমার এই নষ্ট দেহ যে ছুবে, তার পাপ হবে, আমি বরং চললাম না ফেরার দেশে.........
হে ভাই ও বোনেরা, তোমরা যারা এখনও প্রেম করনি, তবে সরবোচ্চ চেষ্টা কর না করতে, আর যারা ইতি মধ্যেই কারও সাথে ইনভল্ভ রয়েছ, কোন ছেলে/মেয়ের এই ধরণের ব্রেইন ওয়াশের স্বীকার হতে যেওনা।
আল্লাহ্ উত্তম হেফাজতকারী।
বিষয়: বিবিধ
১৭৬৩ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন