সমাধানের পথ একমাত্র সংলাপ
লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ২৯ জানুয়ারি, ২০১৫, ১২:৩৬:২৮ দুপুর
সংলাপের কথা উঠলেই একপক্ষ মনে করেন, বিএনপির সকল দাবী মেনে নিচ্ছে সরকার । বিএনপির কাছে আওয়ামীলীগের পরাজয় হয়েছে । আসলে কিন্তু তা নয় । কেননা সংলাপে বসলে আওয়ামীলীগের দাবীর পক্ষেও সিদ্ধান্ত স্থির থাকতে পারে । আওয়ামীলীগ কিংবা বিএনপির স্বার্থ রক্ষার জন্য নয় বরং দেশে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে গোটা দেশবাসীর স্বার্থ রক্ষার জন্যই সংলাপ একান্ত আবশ্যক । সংলাপে বসলেই যে সমস্যার পূর্ণ সমাধান হয়ে যাবে এমন আশা নাই তবে দেশে চলমান অস্থির অবস্থার অনেকটা কমে যাবে সেটা একরকম নিশ্চিত । আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি যদি সমাধানের উদ্দেশ্যে সংলাপের টেবিলে আসে তবে দেশ যেমন ধ্বংসের কবল থেকে রক্ষা পাবে তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও সম্পর্ক বজায় থাকবে । দু’টো বৃহৎ রাজনৈতিক দলের মনে রাখা উচিত, দেশ না বাঁচলে তাদের অস্তিত্ত্বও থাকবে না । রাজনীতি তো অনেক পরের কথা । যাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য রাজনীতি করা হয় সেই তারাই যদি ক্ষোভে ফেটে পরে তবে রাজনীতির চর্চা হবে কাদের নিয়ে ? তাইতো নমনীয় হতে হবে দু’দলকেই । পরস্পরের সাথে আলোচনায় বসলেই যে সম্মান চলে যাবে এমন কথা কোথাও লেখা নাই । জাতীয় নির্বাচন কার অধীনে এবং কিভাবে হবে সেটা পরের ব্যাপার আগে সংলাপের টেবিলে বসার সিদ্ধান্ত হোক । যেভাবে দেশ চলছে এভাবে কেবল ব্যর্থ দেশ চলতে পারে । কোন স্বাধীন দেশের চিত্র এমনটা হতে পারে না । মানুষ মরছে, সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে, সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টিসহ আরও কত কি । একটি স্বাধীন দেশ এভাবে কতদিন চলতে পারবে ? জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করে গণতন্ত্রের চর্চা চলে না । সংলাপ-সমঝোতা ছাড়া উদ্ভূত পরিস্থিতি সামলানোর অন্য কোন উপায় আছে বলে মনে হয় না । সংলাপে বসার অর্থ এই নয় যে, একদলের স্বার্থ পূর্ণতা পেল অন্যদল সব হারাল । মানুষের দৈহিক কিংবা বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতার চেয়ে মৌখিক ক্ষমতা অনেক বেশি । কথার মাধ্যমে মানুষকে বন্ধুত্বেও পরিণত করা যায় আবার চরম শত্রুতেও রুপ দেয়া যায় । দেশে রাজনৈতিক কর্তাব্যক্তিদের পরস্পর কথা চালাচালিতে একে অপরকে চিরশত্রুতে পরিণত করছে । অথচ এটা পরিহার করা অত্যাবশ্যক । সংলাপে বসলে আওয়ামীলীগের স্বার্থহানি কিংবা বিএনপির স্বার্থ উদ্ধার হবে এমনটা নয় বরং দল দু’টো রাজনৈতিক দলের মতাদর্শের দূরত্ব কমে এসে গণতন্ত্রের সঠিক রাস্তায় হাটার দিশা পাবে । অন্যদিকে যেভাবে দেশের অস্থিতিশীলতা শুরু হয়ে বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি চেপে বসেছে তাও দূর হবে । তবে সংলাপের বসার পূর্বে দু’টো দলকেই অন্তত বদ্ধমূল দাবী পরিহার করে ত্যাগের মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে । অবরোধ, হরতাল মাথায় নিয়ে দেশ সঠিকভাবে চলতে পারে না । আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি যদি দাবী করে, তারা গণমানুষের সেবক তবে চলমান উত্তপ্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে সংলাপের টেবিলে বসা উচিত । এতে তাদেরও যেমন কল্যান তেমনি দেশবাসীরও মুক্তি ।
বেগম জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে স্বান্তনা দেয়ার উদ্দেশ্যে বেগম জিয়ার গুলশান কার্য্যালয়ে গিয়ে দেখা না পেয়ে ফিরে এসেছেন । অনেকেই মনে করছেন, শেখ হাসিনাকে দেখা না দিয়ে খালেদা জিয়া নিজেই সংলাপের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছেন । যারা এমনটা মনে করেন তাদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে একমত নই । এতে সংলাপের রাস্তা বন্ধ হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না বরং সংলাপে না বসার জন্য একটি অযৌক্তিক ইস্যু তৈরি করা যায় মাত্র । গুলশানে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতির সময় পুত্রের মৃত্যু শোকে কাতর বেগম জিয়াকে ডাক্তারের পরামর্শে ঘুমের ইনজেকশান দিয়ে ঘুম পড়িয়ে রাখা হয়েছিল বলে জানানো হয়েছে । তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আসার পরেও বিএনপির কোন জেষ্ঠ্য নেতা তাকে দেখা না দেওয়া কিংবা গুলশান কারর্য্যালায়ের প্রধান ফটকটি বদ্ধ করে রাখা উচিত হয়নি । অবশ্য বিএনপির তরফ থেকে দাবী করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর আগমনের সংবাদ তারা জানতেন না । আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে যদি বিএনপির সে দাবীকে উপেক্ষা করা হয় তবে দাবী ভিন্নরুপ ধারণ করবে । কেননা বাংলাদেশের রাজনীতি যেহেতু ঘূর্ণায়মানভাবে আবর্তিত হয়ে শোধ নেয় সেহেতু এ ঘটনার রেশ জানতে আরেকটু পিছনে ফিরে যেতে হতে পারে । ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট বোমা হামলায় আহত তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে দেখার উদ্দেশ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যেতে চেয়েছিলেন । কিন্তু আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা রাস্তায় শুয়ে বেগম জিয়ার যাওয়ার পথকে বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিল । তবে দেশেবাসী এমন শোধের কিংবা অন্য কোন হীন স্বার্থের চরিতার্থের পূনরাবৃত্তি দেখতে চায়না । সকল যুক্তি তর্কের পরেও, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গুলশান কারর্যালয়ের ফটকে এসে এভাবে ফিরে যাবেন এটা কাম্য ছিল না । অন্তত বিএনপির একজন নেতাও যদি প্রধামন্ত্রীকে স্বাগতম জানিয়ে পরিস্থিতি খুলে বলতেন সেটাই মঙ্গলের হত । সব কিছুর পরেও বলব, ব্যক্তি স্বার্থের জন্য সংলাপ নয় বরং সংলাপ প্রয়োজন জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য ।
বর্তমানে দেশের সকল মানুষ সমস্যায় পতিত হলেও দ্বন্দ্ব মূলত আওয়ামীলীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে । এ দ্বন্দ্বের সমাধান জন্য দেশবাসী যখন কায়মনোবাক্যে প্রার্থনায় এবং দু’দল প্রধানের সুমতির খবর শ্রবনের অপেক্ষায় চাতকের মত অধীর আগ্রহে বসে আছে তখন দেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর কর্তাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে গোটা দেশবাসীকে হতাশ করছে । অনেক কথা বলা যায় এবং ব্যক্তিকে সংবিধান সে স্বাধীনতাও দিয়েছে কিন্তু সব কথা কি বলতে আছে ? সেসব কর্তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন নয় বরং শাসকের পরিবর্তনে এর ফল কত ভয়াবহ হতে পারে এবং তাতে ক্ষতিগ্রস্থ কারা হবে সেটা বিবেচনায় আনা দরকার । মানুষ মেরে ফেলার মত সহজ কাজ আজ আর কিছুই নাই তবে মানুষকে কি পাখির মত মারা যাবে ? হাতে অস্ত্র থাকলেই যে তা দিয়ে মানুষ মারতে হবে এমন কথা বলার পূর্বে বারবার ভাবা উচিত । মানুষ মারতে গিয়ে হয়ত টার্গেটকারীর বুক কম্পিত হয়না কারণ তাকে ওপর থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে কিংবা তার এটাই দায়িত্ব কিন্তু যে অস্ত্রের মাধ্যমে মানুষ মারা হচ্ছে সেটার যদি ভাষা থাকত তবে সেটার ক্রন্দনের শব্দ অবশ্যই কর্ণকে ঝংকারিত হত । যারা বোমা মেরে মানুষ মারে ওদের মত ঘৃণিত মানুষের আকাশে নিচে এবং যমিনের উপর দ্বিতীয়টি আর আছে বলে মনে হয়না । কবে যে এদেরে বিবেক জাগবে স্বয়ং স্রষ্টাই সেটা ভালো জানেন । মনে রাখা উচিত, মীমাংসা করতে উদ্যোগী হয়ে যারা দু’দলকে সংলাপ সমাঝোতার টেবিলে বসাবে তাদেরকে জাতি হাজার বছর শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে স্মরণ করবে । আর যারা দু’দলকে উস্কে দিবে তাদের ঠাঁই হবে ইতিহাসের ঘৃণ্য পাতায় ।
রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে সংলাপ ও সমঝোতার পথে হাটা উচিত । ক্ষমতার মসনদ কারো চিরস্থায়ী নয় আবার বিরোধীদলেও যুগ-যুগান্তর ধরে কাউকে কাটাতে হয় না । দেশের রাজনীতির মূলমন্ত্র যদি গণতন্ত্র হয় তবে সে গণতন্ত্র মানুষের নিরাপত্তার কথা, মানুষ কিভাবে সূখ-শান্তিতে থাকতে পারবে তার কথা বলে । গণমানুষের স্বার্থেই আজ সংলাপ হওয়া জরুরী । নির্বাচন কিভাবে হবে কিংবা কার অধীনে হবে তার সিদ্ধান্ত পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমেই কেবল হতে পারে । তবে যদিন মনোভাব থাকে, ‘সালিশি মানি তবে তালগাছ আমার’ তবে কষ্মিনকালেও সমস্যার সমাধান হবে না । দু’দলকেই সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষায়, নিরাপত্তা দানে ব্রতী হয়ে রাজনীতির মঞ্চে আসতে হবে । বক্তির চেয়ে দলের, দলের চেয়ে জাতির বেশি কল্যান সাধণের মনোবাসনা থাকা অত্যন্ত জরুরী । হরতাল, অবরোধ আহ্বান করা কিংবা এগুলো আহ্বানের উপলক্ষ্য তৈরি করে দেয়া গণতান্ত্রিক অধিকার বটে তবে মানুষ মারার অধিকার কোন মানুষকে দেয়া হয়নি । দেশের প্রতিটি মানুষ, রাজনীতির সুষ্ঠু চর্চার মাধ্যমে চলমান সমস্যার সমাধান চায় । আশা নয় বিশ্বাস, আওয়ামীলীগ ও বিএনপি উভয় দলই মানুষের আকুতি বুঝবে এবং খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে উদ্যোগ গ্রহন করবে । সবশেষে আরাফাত রহমান কোকোর মাগফেরাত কামনা করে এবং শোকাহত পরিবারকে উত্তম ধৈরর্য্য ধারণ করার অনুরোধ করছি । আরাফাত রহমানের মৃত্যু থেকে যেন সবাই শিক্ষা নিতে পারি । কে কতদিন বাঁচবে তা কেবল স্রষ্টাই ভালো জানেন তবে যতদিন বেঁচে আছি ততদিন যেন আমার/আমাদের দ্বারা কারো ক্ষতি না হয় । ক্ষনিক জীবনের কর্মকান্ডেই যেন আমাদেরকে হাজার হাজার বছর মানুষের মনে সম্মানের সাথে বাঁচিয়ে রাখে; ঘৃণায় নয় ।
রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
বিষয়: রাজনীতি
১৪৪৮ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন